দুটি কবিতা
হারিসুল হক
দাম্পত্য-খত
কথা নেই। কথা যখন থাকে না তখন রুদ্ধবাক
প্রজাপতির মতো কিছু কাক দহলিজে জটলা পাকায়।
কাকদের ক্লান্তি নেই। ক্লান্তিহীন ঘোড়ার মতো ছোটা
এদের অভ্যেস। ঘোড়াদের চাবকাতে হয় পেটে এবং
পিঠে। কখনো কখনো মস্তকে। আর কাকরা ওড়ে
কারণবিহীন কারণে ছুটতে থাকে ঘর থেকে ঘরে
মন থেকে মনে
কথা নেই। কথা যখন থাকে না ভাবনা ভাসতে থাকে
মনে, বনে এবং গহনে। কথারা অবয়বহীন
অদৃশ্য অথচ শতপাখ বিশিষ্ট প্রাণি। এরা নড়ে
এবং নাড়ায়। এরা ভাসে এবং ভাসায় আর
সময় পেলেই...
আমি নিতান্তই মামুলি একটা বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম।
মানুষ আর পাখিদের ব্যাষ্টিক বিষয়গুলো পাশাপাশি
মেপে নিতে চাইছিলাম। দেখলাম পাখি ও মানুষ
উভয়েই ওড়ে এবং খাদ্যের অন্বেষণে যায় যোজন যোজন।
প্রতিরোধ পেলেই নড়ে এমনকি বেঁকে বসে।
আর পরাজিত হলে দৌড়ে যায় পাতার আড়ালে।
পাখিও সঙ্গ খোঁজে মানুষের মতো। ঘর বাঁধে।
অথচ দাম্পত্য-খত লেখে না আইনী কাগজে।
মেঘের প্রতাপ
তুমি বাড়ি ছিলে না। দরজা বন্ধ ছিলো।
দেবদারু অতন্দ্র সজাগ।
উঠোনে পাইথন লতা জড়িয়ে ধরেছে দেখি
স্বপ্নের হাঁস
তুমি বাড়ি ছিলে না।
বাড়ি মানে অন্তহীন প্রতীক্ষা এক
আঁধিলাগা-
নদীর ভেতরে সচঞ্চল দ্বিধার্ত হাঁস।
কখন যে নামে রাত।
রাতও বুঝি জলে ভাসা কুণ্ঠিত পাখির জোয়ার।
তুমি বাড়ি ছিলে না।
ছিল মেঘের প্রতাপ।
বুনোফুল
সালাম তাসির
কুড়িয়ে পাওয়া সম্পর্কগুলো
রাতের হৃৎপিণ্ড হলে
সদা প্রফুল্ল চাঁদ
লুকিয়ে রাখা স্বপ্নের মত
নৈর্ব্যক্তিক মনে হয়।
কিছু বুনোফুল পূর্বফাল্গুনী
কিছু ব্যর্থতা রাতের আঁধার
কিছু জোছনা লুকিয়ে রাখে চাঁদ
কিছু চোখ কাজল কালো মায়াবী।
শব্দ ধ্যানে কাটবে প্রহর
অন্ধ নদীর তলদেশ ছুঁয়ে
ঘুমিয়ে থাকে ক্রোধ
ব্রতকথার শৃঙ্খল ভেঙে
সন্ধ্যার সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে
প্রেম।
হৃদ কথন-১
জ্যাকি ইসলাম
এমন করে না ইমেলদা। যখন পয়লা
দেখি নজরে আগুন ছিলো অনলের।
গুরু তুমি। চোখকে শোষণ
করেও বাগে আনতে পারে নি নীলকণ্ঠ।
মনকে শোষণ করেও বর্গীর সন্ত্রাস
মোকাবেলা করতে পারি নি। কখন
তোমায় প্রথম দেখি! মধ্য আশিতে।
আশিতে আসিও না। আশি শেষ হচ্ছে হচ্ছে।
এক রাক্ষস টাইম। টাইমের গাড়ি।
রাজপথ।
টিয়ার ফেনা মুখরিত ঘ্রাণে তুমি ত্রস্ত।
সামরিক-সন্ত্রাসেই পহেলা
কাছে আসা। বাক্যগুলো
হারিয়ে যাচ্ছিলো ফায়ারিং স্কোয়ারে।
১৪৪ গজ দূরে দিস্তে দিস্তে ট্রাক
বুঝে ফেলি ভাষা এবং অপরাপর
বাক্য
রবীন্দ্রনাথ
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
রমণীয় রোদে মে মাসে দুপুর গেরুয়া বাউল
বীর বৈশাখ কৃষ্ণচূড়ায় আনে উৎসব
নতুন বছর পথে-প্রান্তরে ঘটনাবহুল
দ্রবণীয় সুখে সময় করেছে প্রজ্ঞা প্রসব।
নামগান জপে স্বকালের ধ্যানী মৌন তাপস
থমকে দাঁড়ায় পঁচিশে বোশেখ জোড়াসাঁকো ঘিরে
ঠায় থাকে চেয়ে সাধারণ মেয়ে অমিত সাহস
কুবলয় ছেড়ে অবিচল কবি না তাকায় ফিরে
রঙে-বৈশাখে রবি বাউলের জেগেছে হরষ।
দিওয়ান
তারিক মেহের
একদা আমার প্রেমিকজন্ম আমাকে অমরত্ব দিয়েছিল
কিন্তু মানুষ তো নশ্বর, জীবনকাল
তো আর প্রলম্বিত নয় অনন্তে।
তুমি চলে যাবার পর আমার ভেতরে
জাঁকিয়ে বসল নশ্বরতার ব্যাধি
একদিন চলে যাব জেনে,
একদিন যৌবন অস্তমিত হবার ভাবনা
আমাকে পরিণত করল ভ্রমরে
আমি সুনির্দিষ্ট ফুলের ধারণা পরিত্যাগ করে
ক্রমশ আস্থা রাখলাম চরাচরের
লাবণ্যমণ্ডিত ফুলসমূহের ওপর।
এখন সকল নারীর অবয়বে আমি তোমাকেই দেখি
যেমন করে একজন দিওয়ান যেদিকে তাকায়
খুঁজে পায় ঈশ্বরের ছায়া।
অন্ধকার কেনা আলো
এনাম রাজু
সারা শরীরে অসংখ্য দাগ লেগে আছে
লোম ঘরের দরজায় আঁকা পাপসমাচার
নিত্য এগিয়ে যাচ্ছে আমার লাশ
দেহটা যেনো লাশটানা কারাগার।
আমি একটি নিমগাছ হতে চেয়েছি
বিনিময়ে পেয়েছি রোদের বেত্রাঘাত
স্বপ্ন শেষে ভেঙে গেছে ঘুমের শহর
এখন আমি পাপোশের বুকভরা আর্তনাদ।
আমি হতে চেয়েছি দরজার প্রাণ রাত্রিচোখ
ভাগ্যের টানে ছুটতে হয়েছে হরিণের পেছন
এভাবে ছুটতে ছুটতে জ্বলেছি, জ্বালাতে প্রদীপ
আমি যেনো ভয় দেখানো ছায়া ঘেরা বন।
আমি এক অন্ধকার কেনা আলো খোঁজা নাবিক...
বর্ণপরিচয়
হাসান ইকবাল
সিলিকন সন্ধ্যায় এমব্রয়ডারি করা চাঁদ ঝরে পড়ে
তামার চিলেকোঠার ঘরে, চতুর্দশী চন্দ্রিমায়।
কথা ছিলো অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার পরে, দীর্ঘ ছুটির অবসরে
দূরবর্তী কোন দ্বীপে, তোমার দিঘল চোখের তীব্র তুষারে
প্রজ্বলিত হবে সহ¯্র রাতের দীপালি।
স্যানিটাইজার আর কতটুকু সুরক্ষিত রাখে
তার চেয়ে বেশি সুরক্ষা দেয় প্রকৃতি ও প্রেম।
তাই লোকালয়ের করুণ কোলাহল ছেড়ে
জনশূন্য নীরব নির্জন দ্বীপে, আমরা খুঁজে নিবো গহীন গ্যালাক্সি
বেঁচে থাকার বিশ্বাস, বেদনা ও বর্ণপরিচয়।
ধুয়ে নিচ্ছি হাত
মাহফুজা অনন্যা
জীবন থেকে ধুয়ে নিচ্ছি হাত, যেন আমি অস্বীকার করি,
অস্বীকার করি জমাট রক্তের ভিতর প্রজন্ম, কাল এবং অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
সময়কে রুটির মতো ভিজিয়ে খামির বানাই
এবং তা খেয়ে নিচ্ছি যেন পোড়া মাংস
ইতিহাস ও বাক্যের মরীচিকা থেকে ধুয়ে নিচ্ছি তালতাল সময়কে
যখন মরে যাচ্ছে সভ্যতা
ছেঁয়ে যাচ্ছে বিভ্রান্তির সুবর্ণ মাছি
আমি মাতৃভূমির মতো অসহায়
আমার মাথা নেই, মাথার নিচে বালিশ নেই
বিদ্যা-বীরত্ব লাশের মতো ঘুমায়
কিংবা আমি একটি ছোট নদী
কীভাবে ধরে রাখি সব কূল?
দুর্ভাগ্যের গনক গনছে
কাকের নাড়িভুঁড়ি, ছাইপাঁশে সমুদয় সম্ভাবনা
পাগলের ফুসফুসের ভেতর শতাব্দীর দীর্ঘশ্বাস
কীই বা করার আছে ছোট্ট একটি জীবন,
জীবন থেকে ধুয়ে নিচ্ছি হাত, ধুয়ে নিচ্ছি জামা
রক্তে বসে আরাম করছেন শকুন, সিংহ-মামা
জল কাব্য
মিলি রায়
সেই কবেকার নির্জন ঘোর লাগা দুপুর
আকাশে মুখপোড়া মেঘের বিবর্ণ কোলাজ
দূরে তৃষ্ণার্ত চাতকের বিরহী হাহাকার
আর নৃত্যরত সময়ের ছায়ায়
জন্মান্তরের তৃষ্ণা নিয়ে, প্রতীক্ষায় ছিলাম আমি
কাঁচ পোকার ডানা ভেঙে টিপ পরাবে বলেছিলে আমায়।
তুমি আসোনি,
ঝরাপাতার মতো উড়ে গিয়েছিল প্রণয়ের প্রহর
জলভরা পোয়াতি মেঘের মতো ভারি আর ভেজা
মনে হয়েছিল বুকের ভেতর,
আমি দুহাত পেতে বসেছিলাম
তবু একফোঁটা বৃষ্টি এসে পড়েনি এই হাতে।
নক্ষত্রের আলো নির্জনতা ছুঁয়েছিল সেদিন
দুরন্ত বেলার সেই নিথর দুপুরটা
এখনো অপেক্ষা করে আছে এই বুকে।
রাংতায় মোড়ানো মিথ্যে যখন চোখের কার্নিশে
বিন্দু বিন্দু জলের জন্ম দেয়,
প্রগাঢ় ভালোবাসা তার নাম দেয় কান্না
বাউল পাখি স্নান সারে সেই জলে।
বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১
দুটি কবিতা
হারিসুল হক
দাম্পত্য-খত
কথা নেই। কথা যখন থাকে না তখন রুদ্ধবাক
প্রজাপতির মতো কিছু কাক দহলিজে জটলা পাকায়।
কাকদের ক্লান্তি নেই। ক্লান্তিহীন ঘোড়ার মতো ছোটা
এদের অভ্যেস। ঘোড়াদের চাবকাতে হয় পেটে এবং
পিঠে। কখনো কখনো মস্তকে। আর কাকরা ওড়ে
কারণবিহীন কারণে ছুটতে থাকে ঘর থেকে ঘরে
মন থেকে মনে
কথা নেই। কথা যখন থাকে না ভাবনা ভাসতে থাকে
মনে, বনে এবং গহনে। কথারা অবয়বহীন
অদৃশ্য অথচ শতপাখ বিশিষ্ট প্রাণি। এরা নড়ে
এবং নাড়ায়। এরা ভাসে এবং ভাসায় আর
সময় পেলেই...
আমি নিতান্তই মামুলি একটা বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম।
মানুষ আর পাখিদের ব্যাষ্টিক বিষয়গুলো পাশাপাশি
মেপে নিতে চাইছিলাম। দেখলাম পাখি ও মানুষ
উভয়েই ওড়ে এবং খাদ্যের অন্বেষণে যায় যোজন যোজন।
প্রতিরোধ পেলেই নড়ে এমনকি বেঁকে বসে।
আর পরাজিত হলে দৌড়ে যায় পাতার আড়ালে।
পাখিও সঙ্গ খোঁজে মানুষের মতো। ঘর বাঁধে।
অথচ দাম্পত্য-খত লেখে না আইনী কাগজে।
মেঘের প্রতাপ
তুমি বাড়ি ছিলে না। দরজা বন্ধ ছিলো।
দেবদারু অতন্দ্র সজাগ।
উঠোনে পাইথন লতা জড়িয়ে ধরেছে দেখি
স্বপ্নের হাঁস
তুমি বাড়ি ছিলে না।
বাড়ি মানে অন্তহীন প্রতীক্ষা এক
আঁধিলাগা-
নদীর ভেতরে সচঞ্চল দ্বিধার্ত হাঁস।
কখন যে নামে রাত।
রাতও বুঝি জলে ভাসা কুণ্ঠিত পাখির জোয়ার।
তুমি বাড়ি ছিলে না।
ছিল মেঘের প্রতাপ।
বুনোফুল
সালাম তাসির
কুড়িয়ে পাওয়া সম্পর্কগুলো
রাতের হৃৎপিণ্ড হলে
সদা প্রফুল্ল চাঁদ
লুকিয়ে রাখা স্বপ্নের মত
নৈর্ব্যক্তিক মনে হয়।
কিছু বুনোফুল পূর্বফাল্গুনী
কিছু ব্যর্থতা রাতের আঁধার
কিছু জোছনা লুকিয়ে রাখে চাঁদ
কিছু চোখ কাজল কালো মায়াবী।
শব্দ ধ্যানে কাটবে প্রহর
অন্ধ নদীর তলদেশ ছুঁয়ে
ঘুমিয়ে থাকে ক্রোধ
ব্রতকথার শৃঙ্খল ভেঙে
সন্ধ্যার সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে
প্রেম।
হৃদ কথন-১
জ্যাকি ইসলাম
এমন করে না ইমেলদা। যখন পয়লা
দেখি নজরে আগুন ছিলো অনলের।
গুরু তুমি। চোখকে শোষণ
করেও বাগে আনতে পারে নি নীলকণ্ঠ।
মনকে শোষণ করেও বর্গীর সন্ত্রাস
মোকাবেলা করতে পারি নি। কখন
তোমায় প্রথম দেখি! মধ্য আশিতে।
আশিতে আসিও না। আশি শেষ হচ্ছে হচ্ছে।
এক রাক্ষস টাইম। টাইমের গাড়ি।
রাজপথ।
টিয়ার ফেনা মুখরিত ঘ্রাণে তুমি ত্রস্ত।
সামরিক-সন্ত্রাসেই পহেলা
কাছে আসা। বাক্যগুলো
হারিয়ে যাচ্ছিলো ফায়ারিং স্কোয়ারে।
১৪৪ গজ দূরে দিস্তে দিস্তে ট্রাক
বুঝে ফেলি ভাষা এবং অপরাপর
বাক্য
রবীন্দ্রনাথ
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
রমণীয় রোদে মে মাসে দুপুর গেরুয়া বাউল
বীর বৈশাখ কৃষ্ণচূড়ায় আনে উৎসব
নতুন বছর পথে-প্রান্তরে ঘটনাবহুল
দ্রবণীয় সুখে সময় করেছে প্রজ্ঞা প্রসব।
নামগান জপে স্বকালের ধ্যানী মৌন তাপস
থমকে দাঁড়ায় পঁচিশে বোশেখ জোড়াসাঁকো ঘিরে
ঠায় থাকে চেয়ে সাধারণ মেয়ে অমিত সাহস
কুবলয় ছেড়ে অবিচল কবি না তাকায় ফিরে
রঙে-বৈশাখে রবি বাউলের জেগেছে হরষ।
দিওয়ান
তারিক মেহের
একদা আমার প্রেমিকজন্ম আমাকে অমরত্ব দিয়েছিল
কিন্তু মানুষ তো নশ্বর, জীবনকাল
তো আর প্রলম্বিত নয় অনন্তে।
তুমি চলে যাবার পর আমার ভেতরে
জাঁকিয়ে বসল নশ্বরতার ব্যাধি
একদিন চলে যাব জেনে,
একদিন যৌবন অস্তমিত হবার ভাবনা
আমাকে পরিণত করল ভ্রমরে
আমি সুনির্দিষ্ট ফুলের ধারণা পরিত্যাগ করে
ক্রমশ আস্থা রাখলাম চরাচরের
লাবণ্যমণ্ডিত ফুলসমূহের ওপর।
এখন সকল নারীর অবয়বে আমি তোমাকেই দেখি
যেমন করে একজন দিওয়ান যেদিকে তাকায়
খুঁজে পায় ঈশ্বরের ছায়া।
অন্ধকার কেনা আলো
এনাম রাজু
সারা শরীরে অসংখ্য দাগ লেগে আছে
লোম ঘরের দরজায় আঁকা পাপসমাচার
নিত্য এগিয়ে যাচ্ছে আমার লাশ
দেহটা যেনো লাশটানা কারাগার।
আমি একটি নিমগাছ হতে চেয়েছি
বিনিময়ে পেয়েছি রোদের বেত্রাঘাত
স্বপ্ন শেষে ভেঙে গেছে ঘুমের শহর
এখন আমি পাপোশের বুকভরা আর্তনাদ।
আমি হতে চেয়েছি দরজার প্রাণ রাত্রিচোখ
ভাগ্যের টানে ছুটতে হয়েছে হরিণের পেছন
এভাবে ছুটতে ছুটতে জ্বলেছি, জ্বালাতে প্রদীপ
আমি যেনো ভয় দেখানো ছায়া ঘেরা বন।
আমি এক অন্ধকার কেনা আলো খোঁজা নাবিক...
বর্ণপরিচয়
হাসান ইকবাল
সিলিকন সন্ধ্যায় এমব্রয়ডারি করা চাঁদ ঝরে পড়ে
তামার চিলেকোঠার ঘরে, চতুর্দশী চন্দ্রিমায়।
কথা ছিলো অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার পরে, দীর্ঘ ছুটির অবসরে
দূরবর্তী কোন দ্বীপে, তোমার দিঘল চোখের তীব্র তুষারে
প্রজ্বলিত হবে সহ¯্র রাতের দীপালি।
স্যানিটাইজার আর কতটুকু সুরক্ষিত রাখে
তার চেয়ে বেশি সুরক্ষা দেয় প্রকৃতি ও প্রেম।
তাই লোকালয়ের করুণ কোলাহল ছেড়ে
জনশূন্য নীরব নির্জন দ্বীপে, আমরা খুঁজে নিবো গহীন গ্যালাক্সি
বেঁচে থাকার বিশ্বাস, বেদনা ও বর্ণপরিচয়।
ধুয়ে নিচ্ছি হাত
মাহফুজা অনন্যা
জীবন থেকে ধুয়ে নিচ্ছি হাত, যেন আমি অস্বীকার করি,
অস্বীকার করি জমাট রক্তের ভিতর প্রজন্ম, কাল এবং অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
সময়কে রুটির মতো ভিজিয়ে খামির বানাই
এবং তা খেয়ে নিচ্ছি যেন পোড়া মাংস
ইতিহাস ও বাক্যের মরীচিকা থেকে ধুয়ে নিচ্ছি তালতাল সময়কে
যখন মরে যাচ্ছে সভ্যতা
ছেঁয়ে যাচ্ছে বিভ্রান্তির সুবর্ণ মাছি
আমি মাতৃভূমির মতো অসহায়
আমার মাথা নেই, মাথার নিচে বালিশ নেই
বিদ্যা-বীরত্ব লাশের মতো ঘুমায়
কিংবা আমি একটি ছোট নদী
কীভাবে ধরে রাখি সব কূল?
দুর্ভাগ্যের গনক গনছে
কাকের নাড়িভুঁড়ি, ছাইপাঁশে সমুদয় সম্ভাবনা
পাগলের ফুসফুসের ভেতর শতাব্দীর দীর্ঘশ্বাস
কীই বা করার আছে ছোট্ট একটি জীবন,
জীবন থেকে ধুয়ে নিচ্ছি হাত, ধুয়ে নিচ্ছি জামা
রক্তে বসে আরাম করছেন শকুন, সিংহ-মামা
জল কাব্য
মিলি রায়
সেই কবেকার নির্জন ঘোর লাগা দুপুর
আকাশে মুখপোড়া মেঘের বিবর্ণ কোলাজ
দূরে তৃষ্ণার্ত চাতকের বিরহী হাহাকার
আর নৃত্যরত সময়ের ছায়ায়
জন্মান্তরের তৃষ্ণা নিয়ে, প্রতীক্ষায় ছিলাম আমি
কাঁচ পোকার ডানা ভেঙে টিপ পরাবে বলেছিলে আমায়।
তুমি আসোনি,
ঝরাপাতার মতো উড়ে গিয়েছিল প্রণয়ের প্রহর
জলভরা পোয়াতি মেঘের মতো ভারি আর ভেজা
মনে হয়েছিল বুকের ভেতর,
আমি দুহাত পেতে বসেছিলাম
তবু একফোঁটা বৃষ্টি এসে পড়েনি এই হাতে।
নক্ষত্রের আলো নির্জনতা ছুঁয়েছিল সেদিন
দুরন্ত বেলার সেই নিথর দুপুরটা
এখনো অপেক্ষা করে আছে এই বুকে।
রাংতায় মোড়ানো মিথ্যে যখন চোখের কার্নিশে
বিন্দু বিন্দু জলের জন্ম দেয়,
প্রগাঢ় ভালোবাসা তার নাম দেয় কান্না
বাউল পাখি স্নান সারে সেই জলে।