পত্রালাপ
জামিরুল শরীফ
(শামসুজ্জামান খান স্মরণে)
চিরদিনের মতো প্রিয় এই বাংলা ছেড়ে চলে গেলেন।
এখনকি চিরদিনের মতো বাংলার বাইরে মগ্নচৈতন্য
হারিয়ে কাটবে দিন।
বিধাতার আশ্রমে, স্নেহের শামিয়ানার নিচে, নির্বাসনের
হাওয়ায় আরও কী কাজ আপনার। নির্জন মনস্বিতায়,
আর উপস্থিত ফর্দে বাঁচার সার্থকতা রপ্ত করেছিলেন।
এই বাস্তুভিটে পৃথিবীটার সামান্য অস্তিত্ব, যার একখণ্ড
ক্ষুদ্র মানবীয় আমিত্ব, যতদিন বাঁচা, ভোরের আকাশে
চোখ জাগানো, গানের কান, বইয়ের দৃষ্টি, খাঁ খাঁ গ্রীষ্মের
দুপুরে হঠাৎ বৃষ্টি, চোখের জলে, ডোবার জলে সুন্দর-
ফুল কচুরিপানার শঙ্কিত শোভা, তরু-বনশ্রী ছেড়ে পাখি
উড়ে যায়।
অভিমান করে লাভ নেই, দুঃখ রয়ে গেল মনে।
বেদনা চাপতে পারি না। বই নিয়ে বারান্দায় বসে ভাঙা উৎসব
দেখি।
সামান্য একটা কবিতা পাঠালাম- নীল গোলাপি আর
সোনালী সুতোর ছোটো কবিতাটি, কল্পনার ফ্রেমে বাঁধানো।
পরিপূর্ণ একটি আকাশ বৈশাখের রং-মাধুর্যে ভরা- জানি না
সুর বাদেও গানের সুর কথায় কেমন করে ধরা পড়ে।
পত্রালাপে প্রত্যুত্তর আরেকটি চিঠির দাবি জানাতে বাধে,
কিন্তু আমার যে অপেক্ষা আছে- স্মরণ করিয়ে দিলাম।
রক্তের অভিধানে লেখা
দুলাল সরকার
যখন বুঝে নিয়েছ বঞ্চনাই বিপ্লবের জম্ম দেয়...
যখন বুঝে নিয়েছ তোমার পবিত্র অভ্যাস
ওদের সেবায় নিয়োজিত লোনা ওঠা সতীর্থ ঘাম
ওরা মদের মতো পান করে,
তোমার ক্লান্ত শরীর বেয়ে কালিপড়া নিদ্রাহীন
দুচোখের লাল অশ্রু কোনো শ্বেতকায় ভল্লুকের রসদ জোগায়...
বুঝে নিয়েছ তোমার রক্তাক্ত লাশের সিঁড়িতে পা ফেলা
ওরা উঠে যায় শীর্ষে
বুঝে নিয়েছে তোমাকে ব্যবহার করেই ওরা বাজায় নিরোর বাঁশী,
হালের লাঙ্গল থেকে তুলে নেয় শস্যের মঞ্জুরী..
বুঝে ফেলেছে ঘামের মূল্য সোনার চেয়েও বেশি...
চোখ বাঁধা কলুর বলদ হয়ে ঘুরে ঘুরে
হঠাৎ তুমি জেনে গেলে প্রয়োজন রক্তের অভিধানে লেখা... পহেলা মে’র নতুন ইতিহাস
হাতুড়ে কাস্তে আঁকা পতাকায়... দিন বদলের
নতুন ডাক... শোষণহীন সমাজ গঠনে নতুন অঙ্গীকার...
আমার জীবনে যা ছিল
মাসুদ অর্ণব
এক জীবনে
মানুষ কত কিছুই তো বেচে!
আমার তো বেচার মতো
তেমন কিছু নেই।
এবারই প্রথম আমার ঈদটা
বেচে দিলাম- কেমন জানি লাগছে;
যেমনটা লাগে নাই
কখনও কোনো ঈদে।
যেমনি হোক, আমারও একটা
ঈদ ছিল।
ছিল মা
ছিল বাবা
ছিল ভাই।
আমার জীবনে যা ছিল
সব মিলিয়ে এখন একটা ছোট্ট আকাশ।
১৯৮৪ : শঙ্খকে প্রথম দেখা
জাফর সাদেক
কৈশোর হয়ে, শৈশবে ভর করে ধীরে এগিয়ে এলো সে-সন্ধে
সাদা পাঞ্জাবি আর ধুতিতে আবছায়া কেবল যৌবনের সাজ
সন্ধ্যা বলতে কেবল ওটুকুই, স্মৃতিতে কোনও সন্ধে নেই আমার
গোটা পদ্মা গুটিয়ে, সব কড়ই গাছের ওপর হাত রেখে
পথে এগিয়ে এসে তাকে জানালো- হে চিরনমস্য স্বাগত
স্ফীত উদরে নড়তে না পেরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দূর হতে অভিবাদন
উত্তরে তিনি নদীচোখণ্ড হে আমার পা-ডোবানো অলস জল
কিন্তু মা “চন্দ্রপ্রভা” শ্রেষ্ঠ সন্তানকে বহুদিন পর কাছে পেয়ে
আঁচল লুটিয়ে দৌড়ে জড়িয়ে হলো আনন্দ-অশ্রুর ঢল প্রথম
বুঝতে পারি ইটপাথরের মা’রও চোখ শত ঝরনায়
সে-সন্ধেটা ছাড়া পদ্মার আর কোনও স্মৃতি আছে কি না
জানতে, পুরোযৌবন ব্যাধিঘোরে নদীতে কাটিয়েছি রাত
জীবনজুড়ে মনে করতে পারি না এখন অন্য কোনও সন্ধেমুখ
বাড়ি, পৃথিবীর বাইরে কোথাও
মুহম্মদ ইমদাদ
কাউকে জিজ্ঞেস করি না ‘বাড়ি কোথায়?’
মুখ দেখে একটা বাড়ি কল্পনা করে নিই
মনে হয়, বহুদিন ধরে আমি সে-বাড়িটি চিনি
কিন্তু সত্যি সত্যি কোনোদিন যদি প্রয়োজন
পড়ে বাড়িটির, খুঁজে দেখি, যেখানে ভেবেছিলাম
পৃথিবীতে সেই জায়গাটিই নাই।
আমি সবসময় ভেবেছি
মানুষের বাড়ি হবে পৃথিবীর বাইরে কোথাও!
বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১
পত্রালাপ
জামিরুল শরীফ
(শামসুজ্জামান খান স্মরণে)
চিরদিনের মতো প্রিয় এই বাংলা ছেড়ে চলে গেলেন।
এখনকি চিরদিনের মতো বাংলার বাইরে মগ্নচৈতন্য
হারিয়ে কাটবে দিন।
বিধাতার আশ্রমে, স্নেহের শামিয়ানার নিচে, নির্বাসনের
হাওয়ায় আরও কী কাজ আপনার। নির্জন মনস্বিতায়,
আর উপস্থিত ফর্দে বাঁচার সার্থকতা রপ্ত করেছিলেন।
এই বাস্তুভিটে পৃথিবীটার সামান্য অস্তিত্ব, যার একখণ্ড
ক্ষুদ্র মানবীয় আমিত্ব, যতদিন বাঁচা, ভোরের আকাশে
চোখ জাগানো, গানের কান, বইয়ের দৃষ্টি, খাঁ খাঁ গ্রীষ্মের
দুপুরে হঠাৎ বৃষ্টি, চোখের জলে, ডোবার জলে সুন্দর-
ফুল কচুরিপানার শঙ্কিত শোভা, তরু-বনশ্রী ছেড়ে পাখি
উড়ে যায়।
অভিমান করে লাভ নেই, দুঃখ রয়ে গেল মনে।
বেদনা চাপতে পারি না। বই নিয়ে বারান্দায় বসে ভাঙা উৎসব
দেখি।
সামান্য একটা কবিতা পাঠালাম- নীল গোলাপি আর
সোনালী সুতোর ছোটো কবিতাটি, কল্পনার ফ্রেমে বাঁধানো।
পরিপূর্ণ একটি আকাশ বৈশাখের রং-মাধুর্যে ভরা- জানি না
সুর বাদেও গানের সুর কথায় কেমন করে ধরা পড়ে।
পত্রালাপে প্রত্যুত্তর আরেকটি চিঠির দাবি জানাতে বাধে,
কিন্তু আমার যে অপেক্ষা আছে- স্মরণ করিয়ে দিলাম।
রক্তের অভিধানে লেখা
দুলাল সরকার
যখন বুঝে নিয়েছ বঞ্চনাই বিপ্লবের জম্ম দেয়...
যখন বুঝে নিয়েছ তোমার পবিত্র অভ্যাস
ওদের সেবায় নিয়োজিত লোনা ওঠা সতীর্থ ঘাম
ওরা মদের মতো পান করে,
তোমার ক্লান্ত শরীর বেয়ে কালিপড়া নিদ্রাহীন
দুচোখের লাল অশ্রু কোনো শ্বেতকায় ভল্লুকের রসদ জোগায়...
বুঝে নিয়েছ তোমার রক্তাক্ত লাশের সিঁড়িতে পা ফেলা
ওরা উঠে যায় শীর্ষে
বুঝে নিয়েছে তোমাকে ব্যবহার করেই ওরা বাজায় নিরোর বাঁশী,
হালের লাঙ্গল থেকে তুলে নেয় শস্যের মঞ্জুরী..
বুঝে ফেলেছে ঘামের মূল্য সোনার চেয়েও বেশি...
চোখ বাঁধা কলুর বলদ হয়ে ঘুরে ঘুরে
হঠাৎ তুমি জেনে গেলে প্রয়োজন রক্তের অভিধানে লেখা... পহেলা মে’র নতুন ইতিহাস
হাতুড়ে কাস্তে আঁকা পতাকায়... দিন বদলের
নতুন ডাক... শোষণহীন সমাজ গঠনে নতুন অঙ্গীকার...
আমার জীবনে যা ছিল
মাসুদ অর্ণব
এক জীবনে
মানুষ কত কিছুই তো বেচে!
আমার তো বেচার মতো
তেমন কিছু নেই।
এবারই প্রথম আমার ঈদটা
বেচে দিলাম- কেমন জানি লাগছে;
যেমনটা লাগে নাই
কখনও কোনো ঈদে।
যেমনি হোক, আমারও একটা
ঈদ ছিল।
ছিল মা
ছিল বাবা
ছিল ভাই।
আমার জীবনে যা ছিল
সব মিলিয়ে এখন একটা ছোট্ট আকাশ।
১৯৮৪ : শঙ্খকে প্রথম দেখা
জাফর সাদেক
কৈশোর হয়ে, শৈশবে ভর করে ধীরে এগিয়ে এলো সে-সন্ধে
সাদা পাঞ্জাবি আর ধুতিতে আবছায়া কেবল যৌবনের সাজ
সন্ধ্যা বলতে কেবল ওটুকুই, স্মৃতিতে কোনও সন্ধে নেই আমার
গোটা পদ্মা গুটিয়ে, সব কড়ই গাছের ওপর হাত রেখে
পথে এগিয়ে এসে তাকে জানালো- হে চিরনমস্য স্বাগত
স্ফীত উদরে নড়তে না পেরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দূর হতে অভিবাদন
উত্তরে তিনি নদীচোখণ্ড হে আমার পা-ডোবানো অলস জল
কিন্তু মা “চন্দ্রপ্রভা” শ্রেষ্ঠ সন্তানকে বহুদিন পর কাছে পেয়ে
আঁচল লুটিয়ে দৌড়ে জড়িয়ে হলো আনন্দ-অশ্রুর ঢল প্রথম
বুঝতে পারি ইটপাথরের মা’রও চোখ শত ঝরনায়
সে-সন্ধেটা ছাড়া পদ্মার আর কোনও স্মৃতি আছে কি না
জানতে, পুরোযৌবন ব্যাধিঘোরে নদীতে কাটিয়েছি রাত
জীবনজুড়ে মনে করতে পারি না এখন অন্য কোনও সন্ধেমুখ
বাড়ি, পৃথিবীর বাইরে কোথাও
মুহম্মদ ইমদাদ
কাউকে জিজ্ঞেস করি না ‘বাড়ি কোথায়?’
মুখ দেখে একটা বাড়ি কল্পনা করে নিই
মনে হয়, বহুদিন ধরে আমি সে-বাড়িটি চিনি
কিন্তু সত্যি সত্যি কোনোদিন যদি প্রয়োজন
পড়ে বাড়িটির, খুঁজে দেখি, যেখানে ভেবেছিলাম
পৃথিবীতে সেই জায়গাটিই নাই।
আমি সবসময় ভেবেছি
মানুষের বাড়ি হবে পৃথিবীর বাইরে কোথাও!