alt

সাময়িকী

গুডবাই, স্যার!

সরকার আমিন

: বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১

কবি ও বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে লেখক-উপপরিচালক কবি সরকার আমিন

স্যার শব্দটা আমার মুখ থেকে সহজে [‘শিক্ষক’ ছাড়া] বের হয় না। সিরাজী ভাই ডিজি হয়ে আসার পরের দিন কথা হচ্ছে ফোনে। বললাম, ‘সিরাজী ভাই স্যার-টার কিন্তু ডাকবার পারুম না।’ হা হা করে হেসে উঠে বললেন, ‘আপনেরে কইছি স্যার ডাকতে?’ বললাম, ‘মিটিং-টিটিং-এ দুয়েকবার কমুনে।’ হা, তাঁকে প্রকাশ্যে কিছুই ডাকি নাই। কিন্তু ফোনে তিনি বরাবরই সিরাজী ভাই ছিলেন। বলতেন, ‘আরে সরকার আমিন, আইছি, মহাপরিচালক আর কদিন। এরপরে তো সেই ফুটপাতে বইসা চা খাওয়ার সম্পর্ক।’ বলাবাহুল্য, তিনি স্যার হবার চেষ্টা করেন নাই। তিনি কবি ছিলেন। বলতেন প্রায়ই, আমলা না-হয়া পারতেছি তো? বলতাম, পারতেছেন। প্রায় পৌনে তিন বছর তিনি বাংলা একাডেমিতে মহাপরিচালক ছিলেন। আমলা হননি। কবিই ছিলেন। কিন্তু সুদক্ষ নিষ্ঠায় দক্ষ প্রশাসকও ছিলেন। সবাইকে নিয়ে সমবেত চেতনায় তিনি একাডেমি চালিয়েছিলেন। বলতাম- আপনি তো শুধু কবি না, প্রকৌশলীও! একটা অদ্ভুত ভালোবাসার বন্ধনে একাডেমির সবাইকে বেঁধে ফেলেছিলেন।

কয়েকদিনই তো আগের কথা। দুপুরে জরুরি খবর পাঠালেন, যেন অবিলম্বে দেখা করি। চিন্তিত হলাম। এত জরুরি কেন! মহাপরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করি; দেখি তিনি নাই। “এখানে আসেন আমিন” ডাক দিলেন। দেখলাম মহাপরিচালকের কক্ষের ভেতরে ছোট্ট বিশ্রাম-চেয়ারে তিনি অর্ধশায়িত। বললেন, “মনের জোরে বেঁচে আছি। সর্ব অঙ্গে সমস্যা। ডাক্তারের কাছ থেকে ফিরলাম। কাউরে কইয়েন না।” বুঝলাম, মনটা হাল্কা করতেই আমার সাথে গল্প করতে চান। প্রাণ খুলে কথা বলতে শুরু করলেন। আমিও কিছু কথা বললাম। বললাম, “মানুষের দেহ মরে, আত্মা মরে না। কারণ আত্মার কোনো জন্ম নাই, মৃত্যু নাই।” তিনি শুনলেন, বললেন, “রুমি অনুবাদ করার সময় বিষয়টা ভালো কইরা বুছছি।”

এবার যেদিন হাসপাতালে গেলেন, সম্ভবত তার আগের দিন। ফোন করলাম। বললেন, বলেন। ‘উত্তরাধিকার’-এর (বাংলা একাডেমির সাহিত্যপত্রিকা) পরের সংখ্যাটা শামসুজ্জামান খানকে নিয়ে করলে কেমন হয়- জানতে চাইলাম। -“সরকার আমিন, আগামি দুই মাস কে যে আমরা বাইচা থাকুম ঠিক নাই। করেন। সংখ্যাটার কাজ শুরু কইরা দেন।” কানে কথাগুলো বাজতেছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বোধ হয় গন্তব্যের খবর জেনে গিয়েছিলেন।

ভালোবাসা, সিরাজী ভাই। গুডবাই, স্যার!

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

গুডবাই, স্যার!

সরকার আমিন

কবি ও বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে লেখক-উপপরিচালক কবি সরকার আমিন

বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১

স্যার শব্দটা আমার মুখ থেকে সহজে [‘শিক্ষক’ ছাড়া] বের হয় না। সিরাজী ভাই ডিজি হয়ে আসার পরের দিন কথা হচ্ছে ফোনে। বললাম, ‘সিরাজী ভাই স্যার-টার কিন্তু ডাকবার পারুম না।’ হা হা করে হেসে উঠে বললেন, ‘আপনেরে কইছি স্যার ডাকতে?’ বললাম, ‘মিটিং-টিটিং-এ দুয়েকবার কমুনে।’ হা, তাঁকে প্রকাশ্যে কিছুই ডাকি নাই। কিন্তু ফোনে তিনি বরাবরই সিরাজী ভাই ছিলেন। বলতেন, ‘আরে সরকার আমিন, আইছি, মহাপরিচালক আর কদিন। এরপরে তো সেই ফুটপাতে বইসা চা খাওয়ার সম্পর্ক।’ বলাবাহুল্য, তিনি স্যার হবার চেষ্টা করেন নাই। তিনি কবি ছিলেন। বলতেন প্রায়ই, আমলা না-হয়া পারতেছি তো? বলতাম, পারতেছেন। প্রায় পৌনে তিন বছর তিনি বাংলা একাডেমিতে মহাপরিচালক ছিলেন। আমলা হননি। কবিই ছিলেন। কিন্তু সুদক্ষ নিষ্ঠায় দক্ষ প্রশাসকও ছিলেন। সবাইকে নিয়ে সমবেত চেতনায় তিনি একাডেমি চালিয়েছিলেন। বলতাম- আপনি তো শুধু কবি না, প্রকৌশলীও! একটা অদ্ভুত ভালোবাসার বন্ধনে একাডেমির সবাইকে বেঁধে ফেলেছিলেন।

কয়েকদিনই তো আগের কথা। দুপুরে জরুরি খবর পাঠালেন, যেন অবিলম্বে দেখা করি। চিন্তিত হলাম। এত জরুরি কেন! মহাপরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করি; দেখি তিনি নাই। “এখানে আসেন আমিন” ডাক দিলেন। দেখলাম মহাপরিচালকের কক্ষের ভেতরে ছোট্ট বিশ্রাম-চেয়ারে তিনি অর্ধশায়িত। বললেন, “মনের জোরে বেঁচে আছি। সর্ব অঙ্গে সমস্যা। ডাক্তারের কাছ থেকে ফিরলাম। কাউরে কইয়েন না।” বুঝলাম, মনটা হাল্কা করতেই আমার সাথে গল্প করতে চান। প্রাণ খুলে কথা বলতে শুরু করলেন। আমিও কিছু কথা বললাম। বললাম, “মানুষের দেহ মরে, আত্মা মরে না। কারণ আত্মার কোনো জন্ম নাই, মৃত্যু নাই।” তিনি শুনলেন, বললেন, “রুমি অনুবাদ করার সময় বিষয়টা ভালো কইরা বুছছি।”

এবার যেদিন হাসপাতালে গেলেন, সম্ভবত তার আগের দিন। ফোন করলাম। বললেন, বলেন। ‘উত্তরাধিকার’-এর (বাংলা একাডেমির সাহিত্যপত্রিকা) পরের সংখ্যাটা শামসুজ্জামান খানকে নিয়ে করলে কেমন হয়- জানতে চাইলাম। -“সরকার আমিন, আগামি দুই মাস কে যে আমরা বাইচা থাকুম ঠিক নাই। করেন। সংখ্যাটার কাজ শুরু কইরা দেন।” কানে কথাগুলো বাজতেছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বোধ হয় গন্তব্যের খবর জেনে গিয়েছিলেন।

ভালোবাসা, সিরাজী ভাই। গুডবাই, স্যার!

back to top