কোভিডকালে স্বরবৃত্ত অথবা প্রেমের শখ
মাস্ক পরিনি সোনার, মুখোশ রুপারও যে নাই!
সার্জিক্যালেই মুখটা ঢেকে তোমার সাক্ষাৎ পাই।
হঠাৎ হিজাব, শল্যবিদের বর্ম অন্য কালে,
এসেই কেন নিষেধাজ্ঞা হানো এই কপালে!
পুরুষ পাখি না হলেও জানি না নাচতে,
অমন নই রে। কোকিল কণ্ঠে মাঘেও পারি গাইতে।
বহুবর্ণিল মরদ পক্ষীর কোথায় বেগুনি রঙ
যাতে তন্বী মুগ্ধ, দেখে হবু সঙ্গীর ঢঙ?
বাজ-শকুনের আড়ালে যা রূপ সে আমার আছে;
মানুষ বলেই অপ্রকাশ্য, তোর যদিও কাছে!
সারা অঙ্গে থাকলে পালক কি আর অমন লাগে!
স্বয়ংবরার নির্বাচনে উল্লাস পুরোভাগে।
উভয় সংলাপ
কোন্ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে তবে পাথরে বসেছিলাম!
দেহে বাহুল্য জামার থাকেনি, ঊরুসন্ধির থোকা
অল্প না দেখে মুঝে উন্মাদ ভেবে যায় দূরে কারা?
জানার আগেই কে তুমি লহর তুলে বহমান, হেঁটে?
এসব কী কহ! চলমান আমি, নই রে তরঙ্গিত!
তোরই প্রেরণায় অনাবরণের সাধ সত্ত্বেও দেখা,
ঘণ্টি এবং ঘন রেশমের সব সিমেন্টে ঢাকা!
নির্মাণশ্রম সেরে বিশ্রাম স্নানের অপেক্ষায়?
ধুর, নির্বোধ মেয়ে কোথাকার! শরমে সৌরধূলি
না চিনে তফাতে কেন যাও সরে করতলে ঢেকে খনি!
জানো কি মিলনসমরই গোসল, আর, বাহুল্য সব?
চল্ বর্তুল দুই বুকে আগে মুখখানি মোর ঘষি।
শখ কত তোর! আগে বল, বেটা, এসেছিস কোথা হতে।
গুম্ফ দিঘল, দুই বাহুমূলে এত জঙ্গল কেন!
স্বেচ্ছায় আসা হয় না যেমন তেমনই বন্যজাত,
যতই পোশাকে আত্মগোপনে সচেষ্ট থাকা আজও!
মঙ্গল গ্রহে, হারানো হ্রদের চিহ্নে স্মৃতির রতি,
যা ছুঁয়ে এসেই লাল পর্বতকিনারে এখনো আমি।
তাই কি গৌর গতরে অহং, দুধে আলতার ধার?
গ্যালাক্সিযুবা? ডানা কই তয়? থাক, তবু কাছে আয়।
চল্ দু’য়ে উড়ি রমণাবদ্ধ, বাড়াই প্রেমের ঋণ;
শূন্যে, ভূ-ভাগে অঙ্গশ্রমিক, আর কী বেহতেরিন!
কথোপকথন
পুঁজিবাদী পর্বের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় কুসংস্কারের নাম প্রেম।
- হুমায়ুন আজাদ
গোমর ফাঁস হলে গোবর মারে মুখে,
অমন তরুণীর সঙ্গ আর নয়।
আমি তো নই স্বামী, সন্ততির দিকে
তাকিয়ে কেটে যাবে আয়ুর বাকি ভাগ!
কী সব ক’য়ে তেলেবেগুনে জ্বলতেই
আমাকে প্ররোচণা দিস কি চোখ বুজে?
কতক বন্ধুর ভিডিও চ্যাটে মেতে
দুষ্টুমির স্বাদ লুটছি অবসরে।
এতেই সন্দেহে, পুরুষ ব’লে তুই,
আলিঙ্গন ভুলে বিরাগে তৎপর!
না, মেয়ে, দুর্মুখ, ওদের নামধাম
লুকিয়ে বিঁধেছিস আমাকে নিগ্রহে।
নইলে গোলযোগ অন্য কোথা আর
অথবা ব্যত্যয় কিসের, তোর ধ্যানে!
আমার দুর্নামে মুখর কেন তোর
লোকেরা তল্লাটে! এমন অপমানে
কীভাবে নির্দ্বিধ থাকিস কালাকালে!
নারীর মর্যাদা বিষয় নয় মোটে?
হাওয়ার পুরোভাগে ছুটিছে কতো কথা!
কুসুর কেন তবে আমারই শুধু আজ!
তাছাড়া বউ নস কারোরই আজও তুই।
তবুও ডর কিসে হরেক রটনায়?
ফন্দি টের পাই, সেয়ানা তুই কতো!
শাদি কি সম্মান রাখার মাপকাঠি?
দোস্তপ্রীতি তোর প্রশ্নসাপেক্ষ,
রটিয়ে দেই তবে পবনলেজেমুখে?
আমার বদনামে বিয়ের পথরোধ?
বিবাহ-পরোয়ানা মানি না কখনোই।
ওসব ভুলে চল বুকের পর্বতে
হারাই তোর, খুলি আমার দরবার।
তোদের আছে শুধু মিনার লালসার।
নিকটে না এলে যে মায়াও কারাগার!
এখন সনেট নয়
অদম্য আদরাকাক্সক্ষা আছে কোন মরদের বল?
গোঁফ শুধু নয়, বাহুমূলের ঘাসেও বয়ে যায়
তোর জন্য শিহরণ, এমন রসিক পাবি কই?
আমি নির্মাণ শ্রমিক বলে তুই অনীহায় পটু!
কাবিননামার প্রতাপে বাধ্য করি, সে-সুযোগ নাই।
কতোদিন দেনমোহর হয়ে উঠতে খোদার কহর!
ওরকম বায়না থুয়ে গতরের আলনা থেকে, চল,
একে একে খুলে ছুড়ে ফেলি সব আজাইরা আজাব।
‘অন্যের জীবন কেন করিব যাপন!’ হেঁকে, আয়,
প্রাণপণ প্রতিজ্ঞা হেন পরস্পরের দিকেই দিই
ছুট যে-যার স্বরূপে। ক্রমশ দিঘলতর যেই
আমার রিরংসা, অমনি, দূর ফিলিস্তিন হতে এসে
পড়ে রক্তের চকিত ফিনকি উদ্যত দু’য়েরই গায়;
তোর পিঠ, স্তম্ভিত আমারই হাত, মুখ ও মাথায়।
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুন ২০২১
কোভিডকালে স্বরবৃত্ত অথবা প্রেমের শখ
মাস্ক পরিনি সোনার, মুখোশ রুপারও যে নাই!
সার্জিক্যালেই মুখটা ঢেকে তোমার সাক্ষাৎ পাই।
হঠাৎ হিজাব, শল্যবিদের বর্ম অন্য কালে,
এসেই কেন নিষেধাজ্ঞা হানো এই কপালে!
পুরুষ পাখি না হলেও জানি না নাচতে,
অমন নই রে। কোকিল কণ্ঠে মাঘেও পারি গাইতে।
বহুবর্ণিল মরদ পক্ষীর কোথায় বেগুনি রঙ
যাতে তন্বী মুগ্ধ, দেখে হবু সঙ্গীর ঢঙ?
বাজ-শকুনের আড়ালে যা রূপ সে আমার আছে;
মানুষ বলেই অপ্রকাশ্য, তোর যদিও কাছে!
সারা অঙ্গে থাকলে পালক কি আর অমন লাগে!
স্বয়ংবরার নির্বাচনে উল্লাস পুরোভাগে।
উভয় সংলাপ
কোন্ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে তবে পাথরে বসেছিলাম!
দেহে বাহুল্য জামার থাকেনি, ঊরুসন্ধির থোকা
অল্প না দেখে মুঝে উন্মাদ ভেবে যায় দূরে কারা?
জানার আগেই কে তুমি লহর তুলে বহমান, হেঁটে?
এসব কী কহ! চলমান আমি, নই রে তরঙ্গিত!
তোরই প্রেরণায় অনাবরণের সাধ সত্ত্বেও দেখা,
ঘণ্টি এবং ঘন রেশমের সব সিমেন্টে ঢাকা!
নির্মাণশ্রম সেরে বিশ্রাম স্নানের অপেক্ষায়?
ধুর, নির্বোধ মেয়ে কোথাকার! শরমে সৌরধূলি
না চিনে তফাতে কেন যাও সরে করতলে ঢেকে খনি!
জানো কি মিলনসমরই গোসল, আর, বাহুল্য সব?
চল্ বর্তুল দুই বুকে আগে মুখখানি মোর ঘষি।
শখ কত তোর! আগে বল, বেটা, এসেছিস কোথা হতে।
গুম্ফ দিঘল, দুই বাহুমূলে এত জঙ্গল কেন!
স্বেচ্ছায় আসা হয় না যেমন তেমনই বন্যজাত,
যতই পোশাকে আত্মগোপনে সচেষ্ট থাকা আজও!
মঙ্গল গ্রহে, হারানো হ্রদের চিহ্নে স্মৃতির রতি,
যা ছুঁয়ে এসেই লাল পর্বতকিনারে এখনো আমি।
তাই কি গৌর গতরে অহং, দুধে আলতার ধার?
গ্যালাক্সিযুবা? ডানা কই তয়? থাক, তবু কাছে আয়।
চল্ দু’য়ে উড়ি রমণাবদ্ধ, বাড়াই প্রেমের ঋণ;
শূন্যে, ভূ-ভাগে অঙ্গশ্রমিক, আর কী বেহতেরিন!
কথোপকথন
পুঁজিবাদী পর্বের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় কুসংস্কারের নাম প্রেম।
- হুমায়ুন আজাদ
গোমর ফাঁস হলে গোবর মারে মুখে,
অমন তরুণীর সঙ্গ আর নয়।
আমি তো নই স্বামী, সন্ততির দিকে
তাকিয়ে কেটে যাবে আয়ুর বাকি ভাগ!
কী সব ক’য়ে তেলেবেগুনে জ্বলতেই
আমাকে প্ররোচণা দিস কি চোখ বুজে?
কতক বন্ধুর ভিডিও চ্যাটে মেতে
দুষ্টুমির স্বাদ লুটছি অবসরে।
এতেই সন্দেহে, পুরুষ ব’লে তুই,
আলিঙ্গন ভুলে বিরাগে তৎপর!
না, মেয়ে, দুর্মুখ, ওদের নামধাম
লুকিয়ে বিঁধেছিস আমাকে নিগ্রহে।
নইলে গোলযোগ অন্য কোথা আর
অথবা ব্যত্যয় কিসের, তোর ধ্যানে!
আমার দুর্নামে মুখর কেন তোর
লোকেরা তল্লাটে! এমন অপমানে
কীভাবে নির্দ্বিধ থাকিস কালাকালে!
নারীর মর্যাদা বিষয় নয় মোটে?
হাওয়ার পুরোভাগে ছুটিছে কতো কথা!
কুসুর কেন তবে আমারই শুধু আজ!
তাছাড়া বউ নস কারোরই আজও তুই।
তবুও ডর কিসে হরেক রটনায়?
ফন্দি টের পাই, সেয়ানা তুই কতো!
শাদি কি সম্মান রাখার মাপকাঠি?
দোস্তপ্রীতি তোর প্রশ্নসাপেক্ষ,
রটিয়ে দেই তবে পবনলেজেমুখে?
আমার বদনামে বিয়ের পথরোধ?
বিবাহ-পরোয়ানা মানি না কখনোই।
ওসব ভুলে চল বুকের পর্বতে
হারাই তোর, খুলি আমার দরবার।
তোদের আছে শুধু মিনার লালসার।
নিকটে না এলে যে মায়াও কারাগার!
এখন সনেট নয়
অদম্য আদরাকাক্সক্ষা আছে কোন মরদের বল?
গোঁফ শুধু নয়, বাহুমূলের ঘাসেও বয়ে যায়
তোর জন্য শিহরণ, এমন রসিক পাবি কই?
আমি নির্মাণ শ্রমিক বলে তুই অনীহায় পটু!
কাবিননামার প্রতাপে বাধ্য করি, সে-সুযোগ নাই।
কতোদিন দেনমোহর হয়ে উঠতে খোদার কহর!
ওরকম বায়না থুয়ে গতরের আলনা থেকে, চল,
একে একে খুলে ছুড়ে ফেলি সব আজাইরা আজাব।
‘অন্যের জীবন কেন করিব যাপন!’ হেঁকে, আয়,
প্রাণপণ প্রতিজ্ঞা হেন পরস্পরের দিকেই দিই
ছুট যে-যার স্বরূপে। ক্রমশ দিঘলতর যেই
আমার রিরংসা, অমনি, দূর ফিলিস্তিন হতে এসে
পড়ে রক্তের চকিত ফিনকি উদ্যত দু’য়েরই গায়;
তোর পিঠ, স্তম্ভিত আমারই হাত, মুখ ও মাথায়।