সম্পর্কপ্রবাহ
আতাউর রহমান মিলাদ
তাঁর কথা যতই লিখি
ততোই আপন হয়ে ওঠেন,
এ এক আশ্চর্য নিয়ম
অবিশ্বাস্য রকম আত্মবিশ্বাসী মানুষ
নিজের ছায়ার চেয়ে
দীর্ঘ হয়ে ফোটেন।
যতদূর দৃষ্টি যায় প্রসারিত আলোর স্বভাব
শব্দরা জড়ো হয় অলীক কৌশলে,
মানুষের সঙ্গলোভে বাঁচার কাঙাল
জনপদে বহুকাল বাড়িয়েছি মাটির বিস্তার
অসীম আকাশ ছুঁয়ে হাতের আঙুলে।
পূরণ হবেনা শূন্যস্থান, কোনোকালে
জানি, সব ফেলে ওপারেই গণনার দিন,
অসীম সাহসের অকৃত্রিম ডানায় ওড়ে
তাঁর কাছে ফেরা হবে অনন্ত সন্ধানে
কালের পিঠে বেঁধে পাহাড়ের ঋণ।
মগ্ন জলের মন্দিরা
রহিমা আখতার কল্পনা
ভরা বরষায় তাপিত শরীর ভেজে মন্থর বৃষ্টিতে
উতল জোয়ারে মন মজে আছে ওই দুরন্ত ইষ্টিতে।
বরষা-কূহকে বাজে রিমিঝিম মগ্ন জলের মন্দিরা
অভিমান ভুলে চুপে কথা বলে মৃদু সুমন্ত সন্ধিরা।
কেঁদে ফিরে যায় তরুণ তাপস, তবু আনন্দী ঘুমন্ত
দেখেও দ্যাখে না, ভেসে গেছে পাড়, মন-সীমান্ত ডুবন্ত।
ভাঁটফুল ফোটে, বৃষ্টির সুচ বিঁধে যেন তার অন্তরে
কাঁপছে পাপড়ি পেলব শীতল, মৃদু হাসে কোন মন্তরে!
থির থির কাঁপে আকন্দ-ঝাড় গহীন গোপন আনন্দে
বরষা-বিভোর মাঝদুপুরেও তমসা নামছে সানন্দে।
বীজের গভীরে ঘুমভাঙা চোখে পৃথিবীর ছায়া স্পন্দিত
শেকড়ে আশার ওম লেগে আছে, আগামীর পথ নন্দিত।
জলের আদরে দলিত ফুলেরা- ম’রে বাঁচি তবু শ্রাবন্তী
উদাসী শ্রমণ, তারো ভেজে মন- বুঝে গেছে গৃহী সীমন্তী।
এসো ধারাজল, জ্বলছে অনল ধ্যানীর বুকের অন্দরে
ধূমল ঝড়েই ঢালো সোমরস ধু ধু রোদ-জ্বলা বন্দরে।
আমি তখন তিরিশ
খোরশেদ বাহার
আমি তখন তিরিশ
প্রথম প্রেমের মোহভঙ্গের এক পড়ন্ত বিকেলে
চরকায় বুনছি সুতো।
তুলোর পরশ মাখা হাতে ধবল জোছনার মতো কাগজে তোমার চিঠি
বাংলার সবুজ বন বীথিকার ছায়া হয়ে চোখে ভাসে।
একসাথে হঠাৎ সবগুলো সুতো ছিঁড়ে গেলে
বন্ধ চরকায় চক্ষু স্থির হয়ে আসে
মনেহয় অক্ষরগুলো বাবা-মা তুমি হাসু আর কামালের প্রতিচ্ছিবি।
আমারই চারপাশে
শাপলা শালুক ঝিলের জলে স্বাধীন বাংলাদেশ।
পাটগাতি মানিকদহ হয়ে গোপালগঞ্জ শহর
আজ এক রাজবন্ধীর দৃপ্ত পদচারণায় মুখর।
আমার বাড়ি আমার শহর
স্বাধীনতার সংগ্রামে উজ্জীবিত সকল প্রাণ
এই মাঠ এই নদী এই স্কুল র্কোট বিল্ডিং সব সব।
স্মৃতি বিজরিত এই শহরে
বাল্যস্মৃতি অজয় অমর অক্ষয় আমার মনের মনিকোঠায়।
তবুও প্রবঞ্চকের দল আমারই চৌদিকে নিত্য প্রহরায়
এ আমার জন্মভূমি প্রিয় মাতৃভূমি আমার
নগ্ন পায়ে খালি গায়ে হাজারো মানুষের
ভালোবাসার অশ্রুতে সিক্ত হয়ে
ধীর অথচ দৃপ্ত পায়ে আদালতে হেঁটে যাই আমি আমারই শহরে।
অতঃপর মনে পড়ে
জোছনাস্নাত সে উঠোনে প্রতীক্ষারত আমার জননীর মুখ।
রাত্রি জাগানিয়া ভোরে কুয়াশায় অপেক্ষমান প্রাণপ্রিয় বাংলার নারীসকল
কিংবা প্রত্যুষে শিউলিতলায় অবোধ শিশুর লুটোপুটি হুল্লোড়।
সবই আমার অতিচেনা দৃশ্যপট
প্রতিদিনের বাংলাদেশ।
দিগন্তবিস্তৃত আগামি হেমন্তের সোনালি সকাল।
তুমি মূলক ঝংকার
তানিয়া হাসান
একটা প্যারাসিটামল, ফায়ার সিলিন্ডার আর নিথর
বেডের পাশেও স্বপ্নে আসে তুমি মূলক ঘ্রাণ
আমরা সিসি ক্যামেরার আড়াল খুঁজি চমকে যেতে
বুকের ভাঁজে চমকায় সার্জারির সকল কার্যক্রম
ভীষণ রকম কেঁপে যায় পঞ্চতন্ত্র
নিশ্বাসে নিস্ব হয় নোনা স্বর
তুমি তুমি রসে ভিজে যায় লোমকূপ
ভিতরের দরজায় দৌড়ঝাঁপ
গত হয় কমপ্লেক্স
আমরাই শুধু উড়াই বর্ষা
হইনা বিরত ব্রতের হওয়ায়
মিলে যাওয়া চিত্রপটে কি জানি কি মূর্ছনায়
আমরা থেকে যাই গ্যালারি বা সিঁড়ির ঝংকারে
হয়ে যাওয়া উঠোন কিংবা কিংবদন্তি পাতায়
আমরা জাগি না জাগতিক জোয়ারে
যত্নে থাকে আনন্দ
রোদের প্রতিশব্দ হয়ে
ডানদুয়ার খোলা রেখে
কুমিরের সাথে সখ্যতায়
বা ডুবে যাওয়া পালঙ্কে
অমর শিশিরের অভিশাপে
অমর হয় ফাগুনের হাওয়া
প্রেমের অসুখ
হাসান হাবিব
শহর জুড়ে ছড়িয়ে আছে নুন আর জলের শব্দ
উত্তাপ এতোটুকু দাও প্রেমের অসুখ!
কালান্তর
কালান্তরে যাচ্ছি- ইচ্ছেগুলো উনিশ-বাইশে
গোলাপ বাঁচিয়ে রাখা পাখিজন্মের
বুকের সুগন্ধি
শার্ট হেঁটে পাচ্ছে বুকের সুগন্ধি
তাই চুলটা মধ্যরাতের
কবি
জানালায় বসে দুলছে
বিষণ্ন কবি
মদের গন্ধ আর সিল্কের কোমলতা
মধ্যরাতের উনুনে
সংসার
রাতের ঘড়ি শব্দ করে নাভির নীলচে আলোয়
পাশের বাড়ি ভীষণ আর্তনাদে দুলছে
নাকফুলের গন্ধ
করোনা কাব্য
মোশাররফ শরিফ
(প্রিয়জন কবি রোমেন রায়হানকে)
দেখা হলো বেশ মেঘের আড়ালে তুমি
রেলের সন্ধ্যাবাতি তোমার চোখের কোল
চিবুক, চড়–ইভাতির খুনসুটির খাতা চারুলতা
কুহকী করোনা, স্বপ্নের সোনালি পঙ্ক্তিমালা।
সন্ধ্যার শঙ্খধ্বনি রেলের হুইসেল বিবর্ণ বিকেল
বাহারি জামদানির জমিনে রুপোলি মেখলা
টিটি গার্ডের হুড়োহুড়ি তোমার বিদায় উৎসব
অস্তমান গোধূলিতে বেপথু একলা বালক।
শূন্যে শঙ্খচিল ওড়ে ঊরুর উল্কি সুতোকাটা ঘুড়ি
শেয়ালের হুক্কাহুয়া ঝোপঝাড়ে ঝিঁঝির গান।
এখনও জেগে আমি জেগে নাকি ঘুমে তুমি
কিংবা স্বপ্নের শিয়রে জীবনের আনাগোনা।
ওই দেখো আফ্রোদিতি নাচে সমুদ্র সৈকতে
দূরে রেললাইনের মিলনে হেসে ওঠে কিউপিড।
এখনো শিশুর সান্ত্বনা মাতৃস্তরে জেগে ওঠে পুরুষ
বেড়ে ওঠে ভ্রূণ মাতৃজঠরে, স্বপ্নের সোনার বাংলা।
শুক্রবার, ০৬ আগস্ট ২০২১
সম্পর্কপ্রবাহ
আতাউর রহমান মিলাদ
তাঁর কথা যতই লিখি
ততোই আপন হয়ে ওঠেন,
এ এক আশ্চর্য নিয়ম
অবিশ্বাস্য রকম আত্মবিশ্বাসী মানুষ
নিজের ছায়ার চেয়ে
দীর্ঘ হয়ে ফোটেন।
যতদূর দৃষ্টি যায় প্রসারিত আলোর স্বভাব
শব্দরা জড়ো হয় অলীক কৌশলে,
মানুষের সঙ্গলোভে বাঁচার কাঙাল
জনপদে বহুকাল বাড়িয়েছি মাটির বিস্তার
অসীম আকাশ ছুঁয়ে হাতের আঙুলে।
পূরণ হবেনা শূন্যস্থান, কোনোকালে
জানি, সব ফেলে ওপারেই গণনার দিন,
অসীম সাহসের অকৃত্রিম ডানায় ওড়ে
তাঁর কাছে ফেরা হবে অনন্ত সন্ধানে
কালের পিঠে বেঁধে পাহাড়ের ঋণ।
মগ্ন জলের মন্দিরা
রহিমা আখতার কল্পনা
ভরা বরষায় তাপিত শরীর ভেজে মন্থর বৃষ্টিতে
উতল জোয়ারে মন মজে আছে ওই দুরন্ত ইষ্টিতে।
বরষা-কূহকে বাজে রিমিঝিম মগ্ন জলের মন্দিরা
অভিমান ভুলে চুপে কথা বলে মৃদু সুমন্ত সন্ধিরা।
কেঁদে ফিরে যায় তরুণ তাপস, তবু আনন্দী ঘুমন্ত
দেখেও দ্যাখে না, ভেসে গেছে পাড়, মন-সীমান্ত ডুবন্ত।
ভাঁটফুল ফোটে, বৃষ্টির সুচ বিঁধে যেন তার অন্তরে
কাঁপছে পাপড়ি পেলব শীতল, মৃদু হাসে কোন মন্তরে!
থির থির কাঁপে আকন্দ-ঝাড় গহীন গোপন আনন্দে
বরষা-বিভোর মাঝদুপুরেও তমসা নামছে সানন্দে।
বীজের গভীরে ঘুমভাঙা চোখে পৃথিবীর ছায়া স্পন্দিত
শেকড়ে আশার ওম লেগে আছে, আগামীর পথ নন্দিত।
জলের আদরে দলিত ফুলেরা- ম’রে বাঁচি তবু শ্রাবন্তী
উদাসী শ্রমণ, তারো ভেজে মন- বুঝে গেছে গৃহী সীমন্তী।
এসো ধারাজল, জ্বলছে অনল ধ্যানীর বুকের অন্দরে
ধূমল ঝড়েই ঢালো সোমরস ধু ধু রোদ-জ্বলা বন্দরে।
আমি তখন তিরিশ
খোরশেদ বাহার
আমি তখন তিরিশ
প্রথম প্রেমের মোহভঙ্গের এক পড়ন্ত বিকেলে
চরকায় বুনছি সুতো।
তুলোর পরশ মাখা হাতে ধবল জোছনার মতো কাগজে তোমার চিঠি
বাংলার সবুজ বন বীথিকার ছায়া হয়ে চোখে ভাসে।
একসাথে হঠাৎ সবগুলো সুতো ছিঁড়ে গেলে
বন্ধ চরকায় চক্ষু স্থির হয়ে আসে
মনেহয় অক্ষরগুলো বাবা-মা তুমি হাসু আর কামালের প্রতিচ্ছিবি।
আমারই চারপাশে
শাপলা শালুক ঝিলের জলে স্বাধীন বাংলাদেশ।
পাটগাতি মানিকদহ হয়ে গোপালগঞ্জ শহর
আজ এক রাজবন্ধীর দৃপ্ত পদচারণায় মুখর।
আমার বাড়ি আমার শহর
স্বাধীনতার সংগ্রামে উজ্জীবিত সকল প্রাণ
এই মাঠ এই নদী এই স্কুল র্কোট বিল্ডিং সব সব।
স্মৃতি বিজরিত এই শহরে
বাল্যস্মৃতি অজয় অমর অক্ষয় আমার মনের মনিকোঠায়।
তবুও প্রবঞ্চকের দল আমারই চৌদিকে নিত্য প্রহরায়
এ আমার জন্মভূমি প্রিয় মাতৃভূমি আমার
নগ্ন পায়ে খালি গায়ে হাজারো মানুষের
ভালোবাসার অশ্রুতে সিক্ত হয়ে
ধীর অথচ দৃপ্ত পায়ে আদালতে হেঁটে যাই আমি আমারই শহরে।
অতঃপর মনে পড়ে
জোছনাস্নাত সে উঠোনে প্রতীক্ষারত আমার জননীর মুখ।
রাত্রি জাগানিয়া ভোরে কুয়াশায় অপেক্ষমান প্রাণপ্রিয় বাংলার নারীসকল
কিংবা প্রত্যুষে শিউলিতলায় অবোধ শিশুর লুটোপুটি হুল্লোড়।
সবই আমার অতিচেনা দৃশ্যপট
প্রতিদিনের বাংলাদেশ।
দিগন্তবিস্তৃত আগামি হেমন্তের সোনালি সকাল।
তুমি মূলক ঝংকার
তানিয়া হাসান
একটা প্যারাসিটামল, ফায়ার সিলিন্ডার আর নিথর
বেডের পাশেও স্বপ্নে আসে তুমি মূলক ঘ্রাণ
আমরা সিসি ক্যামেরার আড়াল খুঁজি চমকে যেতে
বুকের ভাঁজে চমকায় সার্জারির সকল কার্যক্রম
ভীষণ রকম কেঁপে যায় পঞ্চতন্ত্র
নিশ্বাসে নিস্ব হয় নোনা স্বর
তুমি তুমি রসে ভিজে যায় লোমকূপ
ভিতরের দরজায় দৌড়ঝাঁপ
গত হয় কমপ্লেক্স
আমরাই শুধু উড়াই বর্ষা
হইনা বিরত ব্রতের হওয়ায়
মিলে যাওয়া চিত্রপটে কি জানি কি মূর্ছনায়
আমরা থেকে যাই গ্যালারি বা সিঁড়ির ঝংকারে
হয়ে যাওয়া উঠোন কিংবা কিংবদন্তি পাতায়
আমরা জাগি না জাগতিক জোয়ারে
যত্নে থাকে আনন্দ
রোদের প্রতিশব্দ হয়ে
ডানদুয়ার খোলা রেখে
কুমিরের সাথে সখ্যতায়
বা ডুবে যাওয়া পালঙ্কে
অমর শিশিরের অভিশাপে
অমর হয় ফাগুনের হাওয়া
প্রেমের অসুখ
হাসান হাবিব
শহর জুড়ে ছড়িয়ে আছে নুন আর জলের শব্দ
উত্তাপ এতোটুকু দাও প্রেমের অসুখ!
কালান্তর
কালান্তরে যাচ্ছি- ইচ্ছেগুলো উনিশ-বাইশে
গোলাপ বাঁচিয়ে রাখা পাখিজন্মের
বুকের সুগন্ধি
শার্ট হেঁটে পাচ্ছে বুকের সুগন্ধি
তাই চুলটা মধ্যরাতের
কবি
জানালায় বসে দুলছে
বিষণ্ন কবি
মদের গন্ধ আর সিল্কের কোমলতা
মধ্যরাতের উনুনে
সংসার
রাতের ঘড়ি শব্দ করে নাভির নীলচে আলোয়
পাশের বাড়ি ভীষণ আর্তনাদে দুলছে
নাকফুলের গন্ধ
করোনা কাব্য
মোশাররফ শরিফ
(প্রিয়জন কবি রোমেন রায়হানকে)
দেখা হলো বেশ মেঘের আড়ালে তুমি
রেলের সন্ধ্যাবাতি তোমার চোখের কোল
চিবুক, চড়–ইভাতির খুনসুটির খাতা চারুলতা
কুহকী করোনা, স্বপ্নের সোনালি পঙ্ক্তিমালা।
সন্ধ্যার শঙ্খধ্বনি রেলের হুইসেল বিবর্ণ বিকেল
বাহারি জামদানির জমিনে রুপোলি মেখলা
টিটি গার্ডের হুড়োহুড়ি তোমার বিদায় উৎসব
অস্তমান গোধূলিতে বেপথু একলা বালক।
শূন্যে শঙ্খচিল ওড়ে ঊরুর উল্কি সুতোকাটা ঘুড়ি
শেয়ালের হুক্কাহুয়া ঝোপঝাড়ে ঝিঁঝির গান।
এখনও জেগে আমি জেগে নাকি ঘুমে তুমি
কিংবা স্বপ্নের শিয়রে জীবনের আনাগোনা।
ওই দেখো আফ্রোদিতি নাচে সমুদ্র সৈকতে
দূরে রেললাইনের মিলনে হেসে ওঠে কিউপিড।
এখনো শিশুর সান্ত্বনা মাতৃস্তরে জেগে ওঠে পুরুষ
বেড়ে ওঠে ভ্রূণ মাতৃজঠরে, স্বপ্নের সোনার বাংলা।