ধারাবাহিক রচনা : নয়
আহমেদ ফরিদ
(পূর্ব প্রকাশের পর)
১৪.
সেই অভিশপ্ত দিন
সেদিন মক্তবে গিয়েছি। আলিফ, বে, তে, ছে’র স্তর অতিক্রম করে ছিপারা পড়া শুরু করেছি। সেদিনও দুলে দুলে ছিপাড়া পড়ছি- ওয়াত্তিনি ওয়া যাইতুন...। ধনু হুজুরের জালি বেতের মারের ভয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। আমাদের সমস্ত মনোযোগ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় দক্ষিণ দিক থেকে আসা কিছু শব্দে। ধনু হুজুরের ‘খামোশ’ শব্দে আমাদের সমস্ত কলরব লহমার মধ্যেই থেমে যায়। ধনু হুজুর কান উৎকীর্ণ করে রাখেন। সাথে আমরাও। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আওয়াজ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দক্ষিণ দিক থেকে আসছে শব্দ। দ্রিম, দ্রিম, ফট ফট। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে শব্দে আমাদের কানে তালা লাগার উপক্রম হয়। আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না কিসের শব্দ এগুলি। ধনু হুজুর আমাদেরকে পালাতে অর্থাৎ আমাদেরকে যার যার বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি নিজ বাড়ির দিকে হনহন করে রওয়ানা দেন। আমরা পড়িমরি করে দৌড় লাগাই আমাদের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে। ততক্ষণে গোলাগুলির আওয়াজ আরো কাছে চলে এসেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখি মা অকারণে ছোটাছুটি করছে। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না বোধ হয়। আমাকে দেখে পাগলের মতো জড়িয়ে ধরে। বাবা বাড়ি ছিলেন না। মাঠে গিয়েছিলেন ধান পেকেছে কি না তা দেখার জন্য। আমি আর মা তখন দিশেহারা। কী করব, কোথায় যাবো! কিছুক্ষণের মধ্যে বাবা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বাড়িতে উপস্থিত হলেন। আমাদেরকে দেখে কষে এক ধমক লাগালেন: ‘এখনো তোরা বাড়িতে? পুব বন্দে দৌড়ইয়া যা। বড়মোড়ার খালে তলায় গিয়ে পড়ে থাক’ বলে প্রথমেই আমাদের সবকটা গরুর বাঁধন খুলে দিলেন। আমাদের একটা গরু ছিল খুব পাজি। এর নাম ছিল পাগলা দামা। সে মানুষকে অকারণে গুতাতো। পাগলা দামাটি ছিল বেশ বড়ো, তার শিংগুলো ছিল বাঁকানো আর অনেক লম্বা। পাগলা দামা কি আজ পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে গুঁতাবে? দুয়েকটাকে কি গুঁতিয়ে মেরে ফেলতে পারবে? আহা! আমি যদি আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে পেতাম আমাদের পাগলা দামা শিং দিয়ে গুঁতিয়ে কয়েকটা পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করছে তাহলে বড়ই ভালো লাগত। নাকি গুঁতা মারার আগেই বদ সৈন্যরা গুলি করে আমাদের পাগলা দামাকে মেরে ফেলবে? এসব কথা ভাবতে ভাবতে মায়ের হাত ধরে দৌড়াচ্ছি। গ্রাম থেকে বের হয়ে দেখি হাজার হাজার মানুষ মাঠে নেমে পড়েছে। পিলপিল করে মানুষ দৌড়াচ্ছে খালের দিকে। সারা মাঠে মানুষ আর মানুষ। পুরো মাঠ জুড়ে মানুষের কালো মাথা। সবাই দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে। কেউ কেউ প্রিয়জনদের নাম ধরে ডাকছে, কেউ কেউ দোয়া দরুদ পড়ছে, ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা...। হে প্রভু, আমাদেরকে আসন্ন বিপদ থেকে বাঁচাও।’ আমরা মা-ছেলে জনতার সাথে মিলে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছি। বাবার কী অবস্থা হবে তা আমাদের মাথায় আসছে না। ইয়া নফসি, ইয়া নফসি। এ যেনো হাশরের মাঠ। আপন প্রাণ বাঁচাও। নিজে বাঁচলে বাপের নাম। দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা বড়মুড়ার পুকুর পার হয়ে কুলারবন্দের খালে গিয়ে পৌঁছাই।
আমরা পড়িমরি করে দৌড় লাগাই আমাদের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে। ততক্ষণে গোলাগুলির আওয়াজ আরো কাছে চলে এসেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখি মা অকারণে ছোটাছুটি করছে। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না বোধ হয়। আমাকে দেখে পাগলের মতো জড়িয়ে ধরে
এটি ছোট্ট একটি খাল। মাঠের মাঝ দিয়ে উত্তর দক্ষিণে বহমান। প্রস্থে খালটি খুবই ছোট আর তেমন গভীরও নয়। তবে বর্ষার সময় খালটিতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। জাল দিয়ে এ খালটিতে আমি নিজে প্রচুর মাছ ধরেছি। এ খালটির পাড়েই আমাদের সবচেয়ে বড় জমিটি অবস্থিত। ফলে আমাকে অনেকবারই এখানে আসতে হয়েছে। খালটির সাথে আমার কেমন যেন একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আমাদের জমির ফসল দেখতে গেলে আমি বিনা কারণে খালটির পাড়ে এক চক্কর লাগাতাম। আজ জান বাঁচানোর জন্য খালের তলায় আশ্রয় নিতে এসেছি। তখন কার্তিক কি অগ্রহায়ণ মাস। খালের তলায় ছিপছিপে পানি। সবাই আশ্রয় নেয় খালের তলায়। আধা পানি আধা শুকনায় আমরা জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে পড়ি। কেউ একজন এমনই নির্দেশনা দিয়ে গেছে। কারণ মাথা দেখা গেলে পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলি মেরে কল্লা উড়িয়ে দেবে। আর কোনো চিৎকার চেঁচামেচি করা যাবে না। কান্নারত বাচ্চাদেরকে চুপ করাতে মায়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বয়স্ক যারা বিলাপ করছিলেন, তারাও চুপ মেরে গেলেন। এক ধরনের অস্বাভাবিক নীরবতা নেমে এলো খালের তলায়। এতো নীরবতা মনে রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দেয়। হঠাৎ করে নীরবতা ভেঙে খানখান হয়ে পড়ে এক নারীর কান্নায়। নাম তার বুধি। আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড়ো। মেয়েটি খুবই সুন্দরী এবং মাত্র কয়েক মাস আগে তার বিয়ে হয়েছে। বুধি আমাদের পাড়া সম্পর্কে ফুফু হয়। তার প্রসব বেদনা উঠেছে। সে চেষ্টা করেছির কান্না থামিয়ে রাখতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেনি। সবাই তাকে ধমকাচ্ছে, বুধি, চুপ কর, বুধি চুপ কর। বুধি ফুফু চুপ করার চেষ্টা করে। তার দমিত কান্না গোঙানির মতো হয়ে মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুধি ফুফু কান্না থামাতে ব্যর্থ হয়ে আরো জোরে চিৎকার করতে থাকে। বয়স্ক মহিলারা দোয়া ইউনুস পড়তে থাকে বুধি ফুফুর জন্য। আমরা হতবুদ্ধি। এ পরিস্থিতিতে কী করা যায়?
খালের তলায় আমরা শুয়ে পড়েছি। বেশ দূর থেকে এক মহিলার বিলাপ ভেসে আসছে। মহিলাটির কেউ কি মারা গিয়েছে? পাকিস্তানি সৈন্যরা তার পরিবারের কাউকে গুলি করে মেরে ফেলেছে? আমরা এর কিছুই জানি না। কিছুক্ষণ পরে জানা গেলো পালানোর সময় মহিলাটি তার দুধের শিশু ভেবে বালিশ কোলে নিয়ে পালিয়ে এসেছে। অন্য মহিলারা ছিঃ ছিঃ করছে। এতো বেখেয়াল মহিলা? নিজের বাচ্চার চেয়ে জান বড়ো হলো? নানা সমালোচনা চলছে চারিদিক থেকে। মহিলাটি গ্রামে ফিরে যেতে চাচ্ছে। ‘আমাকে ছেড়ে দাও, আমাকে ছেড়ে দাও, আমার বাবুটাকে ওরা পুড়িয়ে মেরে ফেলল রে বলে’ বিলাপ করে যাচ্ছে। আমরা দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি অন্য কয়েকজন মহিলা তাকে জোর করে ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
গোলাগুলির আওয়াজ কিছুটা কমে এসেছে। গ্রামের দিকে তাকিয়ে দেখি আকাশে কালো ধোঁয়ার কু-লি পাক খেয়ে খেয়ে উড়ছে। সেই সাথে ফট ফট আওয়াজ। এ আওয়াজ গোলাগুলির নয় বুঝতে পারি। কিছুদিন আগে গ্রামে এক বাড়িতে আগুন লেগেছিল। সে বাড়ির ঘরগুলি ছিল টিনের। আগুনে টিনগুলি ফটাফট করে ফুটছিল আর উড়ে গিয়ে অনেক দূরে পড়ছিল। সে আওয়াজ টিনের বাড়ি পোড়ার আওয়াজ। আমাদের ঘরগুলিও টিনের। আমাদের বাড়িতে আগুন দেয়নি তো পাকিস্তানি সৈন্যরা! বুকটা ছ্যাত করে উঠে। বাবাকে বাড়িতে রেখে এসেছি। তার কী অবস্থা আল্লাহ জানেন। ভালো করে তাকিয়ে দেখি ধোঁয়া উড়ছে গ্রামের সর্ব দক্ষিণ আর সর্ব উত্তর দিক থেকে। আমাদের বাড়িটা গ্রামের উত্তর দিকে। আমাদের বাড়িতে আগুন দেয়নি। মুরুব্বিরা বলাবলি করছেন দক্ষিণ দিকের ধোঁয়া আসছে কাপ্তান মিয়া সাহেবের বাড়ি আর রায়ের বাড়ি থেকে। কাপ্তান মিয়া সাহেব আওয়ামী লীগের নেতা আর পার্লামন্টের সদস্য। রায়রা গ্রামের সম্পন্ন গৃহস্থ। রায়েদের এক ছেলে সম্পদ আর এক মেয়ে খুকী আমাদের সাথে পড়ে। বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। তাদের কোনো কিছু হয়নি তো? গ্রামের উত্তর দিকের আগুনটা লাগানো হয়েছে আলগা বাড়িতে। এটি আমাদের অবস্থান থেকে খুবই কাছে। মাত্র দেড় কি.মি. দূরে হবে। আমরা এখান থেকে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পাচ্ছি। এটি একটি মুসলমান বাড়ি। আমরা সবাই খুবই ভীত হয়ে পড়ি। আমাদের সবার বাড়ি কি পাকিস্তানি সৈন্যরা তাহলে পুড়িয়ে দেবে? আমাদের বুকে কাঁপন ধরে যায়। বাড়িঘর পুড়িয়ে দিলে আমরা যাবো কোথায়? এরা কি আমাদেরকেও মেরে ফেলবে? মেরে ফেললেও করার কিছু নেই। শুনেছি পাকিস্তানি সৈন্যরা অনেক মানুষ মেরে ফেলেছে। গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে, গ্রামগুলি মানুষ শূন্য করে ফেলেছে। নদীর বুকে হাজার হাজার লাশ ভেসে বেড়াচ্ছে। লাশের বুকের উপর কাক শকুন বসে লাশের মাংস ঠুকরে ঠুকরে, খুবলে খুবলে খাচ্ছে। অনেক মাছও পচা গলিত লাশ ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে। তাই অনেকেই নদীর মাছ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।
মাথার ভিতরে নানা ধরনের চিন্তা কিলবিল করছে। আমার বইগুলিও কি পাকিস্তানি সৈন্যরা পুড়িয়ে ফেলবে? আহা! আমার প্রিয় বইগুলি।
তোমরা যারা মাঠে আছো সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাও না হলে পাকিস্তানি সৈন্যরা মাঠে নেমে গুলি করে সবাইকে মেরে ফেলবে। বাড়ি গেলে কেউ তোমাদেরকে কিচ্ছু বলবে না। বয়স্ক গোছের এক লোক এসে ঘোষণা করলেন। আমরা তার ঘোষণার উপর ভরসা করতে পারছি না। লোকটা আমাদেরকে পাকিস্তানি সৈন্যদের বন্দুকের নলের সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে যাচ্ছে না তো? আমরা হতভম্ব। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। বাড়ি গেলে এরা যে আগুনে পুড়িয়ে মারবে না তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। মাঠে থাকলে গুলি করে মারবে আর বাড়িতে গেলে আগুনে পুড়িয়ে মারার সম্ভাবনা। কোন অপশনটা নিব? এটি ভাবতে ভাবতে কখন যে জনতার সাথে তাল মিলিয়ে মায়ের হাত ধরে গ্রামের উদ্দ্যেশ্যে পা বাড়িয়ে দিয়েছি তা জানি না। হাজার হাজার নারী আর বাচ্চা-কাচ্চা। নির্বিঘেœ মাঠ পেরিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। বাড়িতে গিয়ে দেখি বাবা ঘরের বারান্দায় একটা জলচৌকিতে বসে আছেন বিরস বদনে। আমাদেরকে দেখে তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচলেন, তাকে দেখে আমাদের ধরে প্রাণ ফিরে এলো। উড্ডীয়মান ধোঁয়ার পরিমান অনেকটাই কমে এসেছে। গোলাগুলির তেমন কোনো আওয়াজ নেই। তবে দুয়েকটি গুলি আমাদের টিনের বেড়ায় টুং শব্দে আছড়ে পড়ে। ভীতভাবে এদিক ওদিক তাকাই।
গুলি কি আমাদের গায়ে এসে লাগতে পারে? বাবাকে জিজ্ঞেস করি। বাবা বললেন, ঘরের ভিতরে থাকলে গায়ে গুলি লাগার সম্ভাবনা কম। আমি ঘরের ভিতরে চলে যাই। বাবা বারান্দায় জলচৌকিতে ঠায় বসে থাকেন। কী মনে করে ঘরের ভিতরে ঢোকেন না। বাবার মাথায় তেল চিটচিটে একটা সাধারণ টুপি, গায়ে গেঞ্জি। তাঁর বয়স তখন তিরিশ পঁয়ত্রিশের বেশি নয়। মুখে দাড়ি নেই, আর পাক্কা নামাজি হয়ে ওঠেননি তখনো। বাবা কি কারো জন্য অপেক্ষা করছিলেন? তাই মনে হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই উনারা এসে হাজির। এতোদিন তাদের গল্পই শুনেছি, এবার চাক্ষুষ দেখলাম। বিশাল আকৃতির সামনের সৈনিকটির গায়ের রঙ কুচকুচে কালো, তার পিছনের জন দেখতে সাধারণ। সামনের সৈনিকটির বিশাল মুখে ভাটার মতো একজোড়া হলদেটে চোখ। সে চোখের দিকে তাকালে পিলে চমকে যায়। সৈনিকটির মোচজোড়া উল্টো করে নাকের দিকে পাকানো। পিঠে স্টেনগান ঝুলানো। আমি জানতাম না এটি স্টেনগান। এর মাত্র কয়েকদিন পরেই এ অস্ত্রটি নেড়েছেড়ে দেখার আমার সুযোগ হয়। আমি একবার মিড়মিড় করে সৈনিকটির দিকে তাকাই। সে কি আমার বাবাকে গুলি করে দিবে? আগে বাবাকে তারপর আমাদেরকে? আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। কান পেতে রাখি আওয়াজ শোনার জন্য। বাবা উঠে দাঁড়িয়ে শুদ্ধভাবে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। সৈনিকটি কোনো উত্তর দিয়েছিল কি না মনে নেই। বাবার বিশুদ্ধ সালাম দেয়াটা মিরাকলের মতো কাজ করে। সৈনিকটি কোনো কিছু জিজ্ঞেন না করেই পিছনে ফিরে চলে যায়, সাথে তার চেলাটিও। সৈনিকটি কী মনে করে আমাদের বাড়িতে ঢুকে ছিল? আমাদের বাড়িটা পাড়ার যথেষ্ট ভিতরে। অন্য বাড়িতে সৈনিকটি ঢোকেনি। এর কী কারণ থাকতে পারে জানি না। সৈনিক দুটি চলে যাওয়াতে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেই। আবারো কি অন্য কোনো সৈনিক আসবে? ক্রমশ...
ধারাবাহিক রচনা : নয়
আহমেদ ফরিদ
বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১
(পূর্ব প্রকাশের পর)
১৪.
সেই অভিশপ্ত দিন
সেদিন মক্তবে গিয়েছি। আলিফ, বে, তে, ছে’র স্তর অতিক্রম করে ছিপারা পড়া শুরু করেছি। সেদিনও দুলে দুলে ছিপাড়া পড়ছি- ওয়াত্তিনি ওয়া যাইতুন...। ধনু হুজুরের জালি বেতের মারের ভয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। আমাদের সমস্ত মনোযোগ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় দক্ষিণ দিক থেকে আসা কিছু শব্দে। ধনু হুজুরের ‘খামোশ’ শব্দে আমাদের সমস্ত কলরব লহমার মধ্যেই থেমে যায়। ধনু হুজুর কান উৎকীর্ণ করে রাখেন। সাথে আমরাও। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আওয়াজ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দক্ষিণ দিক থেকে আসছে শব্দ। দ্রিম, দ্রিম, ফট ফট। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে শব্দে আমাদের কানে তালা লাগার উপক্রম হয়। আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না কিসের শব্দ এগুলি। ধনু হুজুর আমাদেরকে পালাতে অর্থাৎ আমাদেরকে যার যার বাড়িতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি নিজ বাড়ির দিকে হনহন করে রওয়ানা দেন। আমরা পড়িমরি করে দৌড় লাগাই আমাদের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে। ততক্ষণে গোলাগুলির আওয়াজ আরো কাছে চলে এসেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখি মা অকারণে ছোটাছুটি করছে। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না বোধ হয়। আমাকে দেখে পাগলের মতো জড়িয়ে ধরে। বাবা বাড়ি ছিলেন না। মাঠে গিয়েছিলেন ধান পেকেছে কি না তা দেখার জন্য। আমি আর মা তখন দিশেহারা। কী করব, কোথায় যাবো! কিছুক্ষণের মধ্যে বাবা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বাড়িতে উপস্থিত হলেন। আমাদেরকে দেখে কষে এক ধমক লাগালেন: ‘এখনো তোরা বাড়িতে? পুব বন্দে দৌড়ইয়া যা। বড়মোড়ার খালে তলায় গিয়ে পড়ে থাক’ বলে প্রথমেই আমাদের সবকটা গরুর বাঁধন খুলে দিলেন। আমাদের একটা গরু ছিল খুব পাজি। এর নাম ছিল পাগলা দামা। সে মানুষকে অকারণে গুতাতো। পাগলা দামাটি ছিল বেশ বড়ো, তার শিংগুলো ছিল বাঁকানো আর অনেক লম্বা। পাগলা দামা কি আজ পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে গুঁতাবে? দুয়েকটাকে কি গুঁতিয়ে মেরে ফেলতে পারবে? আহা! আমি যদি আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে পেতাম আমাদের পাগলা দামা শিং দিয়ে গুঁতিয়ে কয়েকটা পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করছে তাহলে বড়ই ভালো লাগত। নাকি গুঁতা মারার আগেই বদ সৈন্যরা গুলি করে আমাদের পাগলা দামাকে মেরে ফেলবে? এসব কথা ভাবতে ভাবতে মায়ের হাত ধরে দৌড়াচ্ছি। গ্রাম থেকে বের হয়ে দেখি হাজার হাজার মানুষ মাঠে নেমে পড়েছে। পিলপিল করে মানুষ দৌড়াচ্ছে খালের দিকে। সারা মাঠে মানুষ আর মানুষ। পুরো মাঠ জুড়ে মানুষের কালো মাথা। সবাই দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে। কেউ কেউ প্রিয়জনদের নাম ধরে ডাকছে, কেউ কেউ দোয়া দরুদ পড়ছে, ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা...। হে প্রভু, আমাদেরকে আসন্ন বিপদ থেকে বাঁচাও।’ আমরা মা-ছেলে জনতার সাথে মিলে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছি। বাবার কী অবস্থা হবে তা আমাদের মাথায় আসছে না। ইয়া নফসি, ইয়া নফসি। এ যেনো হাশরের মাঠ। আপন প্রাণ বাঁচাও। নিজে বাঁচলে বাপের নাম। দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা বড়মুড়ার পুকুর পার হয়ে কুলারবন্দের খালে গিয়ে পৌঁছাই।
আমরা পড়িমরি করে দৌড় লাগাই আমাদের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে। ততক্ষণে গোলাগুলির আওয়াজ আরো কাছে চলে এসেছে। বাড়িতে গিয়ে দেখি মা অকারণে ছোটাছুটি করছে। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না বোধ হয়। আমাকে দেখে পাগলের মতো জড়িয়ে ধরে
এটি ছোট্ট একটি খাল। মাঠের মাঝ দিয়ে উত্তর দক্ষিণে বহমান। প্রস্থে খালটি খুবই ছোট আর তেমন গভীরও নয়। তবে বর্ষার সময় খালটিতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। জাল দিয়ে এ খালটিতে আমি নিজে প্রচুর মাছ ধরেছি। এ খালটির পাড়েই আমাদের সবচেয়ে বড় জমিটি অবস্থিত। ফলে আমাকে অনেকবারই এখানে আসতে হয়েছে। খালটির সাথে আমার কেমন যেন একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আমাদের জমির ফসল দেখতে গেলে আমি বিনা কারণে খালটির পাড়ে এক চক্কর লাগাতাম। আজ জান বাঁচানোর জন্য খালের তলায় আশ্রয় নিতে এসেছি। তখন কার্তিক কি অগ্রহায়ণ মাস। খালের তলায় ছিপছিপে পানি। সবাই আশ্রয় নেয় খালের তলায়। আধা পানি আধা শুকনায় আমরা জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে পড়ি। কেউ একজন এমনই নির্দেশনা দিয়ে গেছে। কারণ মাথা দেখা গেলে পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলি মেরে কল্লা উড়িয়ে দেবে। আর কোনো চিৎকার চেঁচামেচি করা যাবে না। কান্নারত বাচ্চাদেরকে চুপ করাতে মায়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বয়স্ক যারা বিলাপ করছিলেন, তারাও চুপ মেরে গেলেন। এক ধরনের অস্বাভাবিক নীরবতা নেমে এলো খালের তলায়। এতো নীরবতা মনে রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দেয়। হঠাৎ করে নীরবতা ভেঙে খানখান হয়ে পড়ে এক নারীর কান্নায়। নাম তার বুধি। আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড়ো। মেয়েটি খুবই সুন্দরী এবং মাত্র কয়েক মাস আগে তার বিয়ে হয়েছে। বুধি আমাদের পাড়া সম্পর্কে ফুফু হয়। তার প্রসব বেদনা উঠেছে। সে চেষ্টা করেছির কান্না থামিয়ে রাখতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেনি। সবাই তাকে ধমকাচ্ছে, বুধি, চুপ কর, বুধি চুপ কর। বুধি ফুফু চুপ করার চেষ্টা করে। তার দমিত কান্না গোঙানির মতো হয়ে মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুধি ফুফু কান্না থামাতে ব্যর্থ হয়ে আরো জোরে চিৎকার করতে থাকে। বয়স্ক মহিলারা দোয়া ইউনুস পড়তে থাকে বুধি ফুফুর জন্য। আমরা হতবুদ্ধি। এ পরিস্থিতিতে কী করা যায়?
খালের তলায় আমরা শুয়ে পড়েছি। বেশ দূর থেকে এক মহিলার বিলাপ ভেসে আসছে। মহিলাটির কেউ কি মারা গিয়েছে? পাকিস্তানি সৈন্যরা তার পরিবারের কাউকে গুলি করে মেরে ফেলেছে? আমরা এর কিছুই জানি না। কিছুক্ষণ পরে জানা গেলো পালানোর সময় মহিলাটি তার দুধের শিশু ভেবে বালিশ কোলে নিয়ে পালিয়ে এসেছে। অন্য মহিলারা ছিঃ ছিঃ করছে। এতো বেখেয়াল মহিলা? নিজের বাচ্চার চেয়ে জান বড়ো হলো? নানা সমালোচনা চলছে চারিদিক থেকে। মহিলাটি গ্রামে ফিরে যেতে চাচ্ছে। ‘আমাকে ছেড়ে দাও, আমাকে ছেড়ে দাও, আমার বাবুটাকে ওরা পুড়িয়ে মেরে ফেলল রে বলে’ বিলাপ করে যাচ্ছে। আমরা দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি অন্য কয়েকজন মহিলা তাকে জোর করে ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
গোলাগুলির আওয়াজ কিছুটা কমে এসেছে। গ্রামের দিকে তাকিয়ে দেখি আকাশে কালো ধোঁয়ার কু-লি পাক খেয়ে খেয়ে উড়ছে। সেই সাথে ফট ফট আওয়াজ। এ আওয়াজ গোলাগুলির নয় বুঝতে পারি। কিছুদিন আগে গ্রামে এক বাড়িতে আগুন লেগেছিল। সে বাড়ির ঘরগুলি ছিল টিনের। আগুনে টিনগুলি ফটাফট করে ফুটছিল আর উড়ে গিয়ে অনেক দূরে পড়ছিল। সে আওয়াজ টিনের বাড়ি পোড়ার আওয়াজ। আমাদের ঘরগুলিও টিনের। আমাদের বাড়িতে আগুন দেয়নি তো পাকিস্তানি সৈন্যরা! বুকটা ছ্যাত করে উঠে। বাবাকে বাড়িতে রেখে এসেছি। তার কী অবস্থা আল্লাহ জানেন। ভালো করে তাকিয়ে দেখি ধোঁয়া উড়ছে গ্রামের সর্ব দক্ষিণ আর সর্ব উত্তর দিক থেকে। আমাদের বাড়িটা গ্রামের উত্তর দিকে। আমাদের বাড়িতে আগুন দেয়নি। মুরুব্বিরা বলাবলি করছেন দক্ষিণ দিকের ধোঁয়া আসছে কাপ্তান মিয়া সাহেবের বাড়ি আর রায়ের বাড়ি থেকে। কাপ্তান মিয়া সাহেব আওয়ামী লীগের নেতা আর পার্লামন্টের সদস্য। রায়রা গ্রামের সম্পন্ন গৃহস্থ। রায়েদের এক ছেলে সম্পদ আর এক মেয়ে খুকী আমাদের সাথে পড়ে। বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। তাদের কোনো কিছু হয়নি তো? গ্রামের উত্তর দিকের আগুনটা লাগানো হয়েছে আলগা বাড়িতে। এটি আমাদের অবস্থান থেকে খুবই কাছে। মাত্র দেড় কি.মি. দূরে হবে। আমরা এখান থেকে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পাচ্ছি। এটি একটি মুসলমান বাড়ি। আমরা সবাই খুবই ভীত হয়ে পড়ি। আমাদের সবার বাড়ি কি পাকিস্তানি সৈন্যরা তাহলে পুড়িয়ে দেবে? আমাদের বুকে কাঁপন ধরে যায়। বাড়িঘর পুড়িয়ে দিলে আমরা যাবো কোথায়? এরা কি আমাদেরকেও মেরে ফেলবে? মেরে ফেললেও করার কিছু নেই। শুনেছি পাকিস্তানি সৈন্যরা অনেক মানুষ মেরে ফেলেছে। গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে, গ্রামগুলি মানুষ শূন্য করে ফেলেছে। নদীর বুকে হাজার হাজার লাশ ভেসে বেড়াচ্ছে। লাশের বুকের উপর কাক শকুন বসে লাশের মাংস ঠুকরে ঠুকরে, খুবলে খুবলে খাচ্ছে। অনেক মাছও পচা গলিত লাশ ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে। তাই অনেকেই নদীর মাছ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।
মাথার ভিতরে নানা ধরনের চিন্তা কিলবিল করছে। আমার বইগুলিও কি পাকিস্তানি সৈন্যরা পুড়িয়ে ফেলবে? আহা! আমার প্রিয় বইগুলি।
তোমরা যারা মাঠে আছো সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাও না হলে পাকিস্তানি সৈন্যরা মাঠে নেমে গুলি করে সবাইকে মেরে ফেলবে। বাড়ি গেলে কেউ তোমাদেরকে কিচ্ছু বলবে না। বয়স্ক গোছের এক লোক এসে ঘোষণা করলেন। আমরা তার ঘোষণার উপর ভরসা করতে পারছি না। লোকটা আমাদেরকে পাকিস্তানি সৈন্যদের বন্দুকের নলের সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে যাচ্ছে না তো? আমরা হতভম্ব। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। বাড়ি গেলে এরা যে আগুনে পুড়িয়ে মারবে না তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। মাঠে থাকলে গুলি করে মারবে আর বাড়িতে গেলে আগুনে পুড়িয়ে মারার সম্ভাবনা। কোন অপশনটা নিব? এটি ভাবতে ভাবতে কখন যে জনতার সাথে তাল মিলিয়ে মায়ের হাত ধরে গ্রামের উদ্দ্যেশ্যে পা বাড়িয়ে দিয়েছি তা জানি না। হাজার হাজার নারী আর বাচ্চা-কাচ্চা। নির্বিঘেœ মাঠ পেরিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। বাড়িতে গিয়ে দেখি বাবা ঘরের বারান্দায় একটা জলচৌকিতে বসে আছেন বিরস বদনে। আমাদেরকে দেখে তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচলেন, তাকে দেখে আমাদের ধরে প্রাণ ফিরে এলো। উড্ডীয়মান ধোঁয়ার পরিমান অনেকটাই কমে এসেছে। গোলাগুলির তেমন কোনো আওয়াজ নেই। তবে দুয়েকটি গুলি আমাদের টিনের বেড়ায় টুং শব্দে আছড়ে পড়ে। ভীতভাবে এদিক ওদিক তাকাই।
গুলি কি আমাদের গায়ে এসে লাগতে পারে? বাবাকে জিজ্ঞেস করি। বাবা বললেন, ঘরের ভিতরে থাকলে গায়ে গুলি লাগার সম্ভাবনা কম। আমি ঘরের ভিতরে চলে যাই। বাবা বারান্দায় জলচৌকিতে ঠায় বসে থাকেন। কী মনে করে ঘরের ভিতরে ঢোকেন না। বাবার মাথায় তেল চিটচিটে একটা সাধারণ টুপি, গায়ে গেঞ্জি। তাঁর বয়স তখন তিরিশ পঁয়ত্রিশের বেশি নয়। মুখে দাড়ি নেই, আর পাক্কা নামাজি হয়ে ওঠেননি তখনো। বাবা কি কারো জন্য অপেক্ষা করছিলেন? তাই মনে হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই উনারা এসে হাজির। এতোদিন তাদের গল্পই শুনেছি, এবার চাক্ষুষ দেখলাম। বিশাল আকৃতির সামনের সৈনিকটির গায়ের রঙ কুচকুচে কালো, তার পিছনের জন দেখতে সাধারণ। সামনের সৈনিকটির বিশাল মুখে ভাটার মতো একজোড়া হলদেটে চোখ। সে চোখের দিকে তাকালে পিলে চমকে যায়। সৈনিকটির মোচজোড়া উল্টো করে নাকের দিকে পাকানো। পিঠে স্টেনগান ঝুলানো। আমি জানতাম না এটি স্টেনগান। এর মাত্র কয়েকদিন পরেই এ অস্ত্রটি নেড়েছেড়ে দেখার আমার সুযোগ হয়। আমি একবার মিড়মিড় করে সৈনিকটির দিকে তাকাই। সে কি আমার বাবাকে গুলি করে দিবে? আগে বাবাকে তারপর আমাদেরকে? আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। কান পেতে রাখি আওয়াজ শোনার জন্য। বাবা উঠে দাঁড়িয়ে শুদ্ধভাবে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। সৈনিকটি কোনো উত্তর দিয়েছিল কি না মনে নেই। বাবার বিশুদ্ধ সালাম দেয়াটা মিরাকলের মতো কাজ করে। সৈনিকটি কোনো কিছু জিজ্ঞেন না করেই পিছনে ফিরে চলে যায়, সাথে তার চেলাটিও। সৈনিকটি কী মনে করে আমাদের বাড়িতে ঢুকে ছিল? আমাদের বাড়িটা পাড়ার যথেষ্ট ভিতরে। অন্য বাড়িতে সৈনিকটি ঢোকেনি। এর কী কারণ থাকতে পারে জানি না। সৈনিক দুটি চলে যাওয়াতে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেই। আবারো কি অন্য কোনো সৈনিক আসবে? ক্রমশ...