alt

সাময়িকী

পৃষ্ঠাজুড়ে কবিতা

: বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১

হেমন্তের জ্যোৎস্নায়
অসীম সাহা
আকাশের কোথাও একটুকরো মেঘও নেই।
মাথার উপরে আগুনের মতো জ্বলছে মর্মস্নিগ্ধ চাঁদ
আর নিচে এই ধু-ধু দিগন্তের নিচে আমি একা বসে আছি-
যেন কোন সুদূর নক্ষত্র-আলোকের বিন্দু নিয়ে
মায়াবী চাঁদের সাথে অন্তরঙ্গ হবো বলে এ-আমার মগ্ন অভিসার।

এই তো সেই উজানচকের মাঠ, নিরিবিলি, যতদূর চোখ যায়
শিশিরের পারদ পেরিয়ে দেখা যায় ঘন সবুজের মত প্রেইরির সারি-
অবিচ্ছিন্ন-যেন যৌথ দেহের মতো মিশে আছে দিগন্তের প্রান্ত-সীমানায়।
গায়ে এসে ঝাঁপ দিচ্ছে যমুনার জল থেকে উঠে আসা হিমেল বাতাস।
চারিদিকে পড়ে আছে হেমন্তের খড়, ধান কাটা হয়ে গেছে বলে
কৃষকেরা ফেলে গেছে নি®প্রাণ দেহের খোলস। শিশিরের মতো মৃদুমন্দ ঘাম
শরীরের রোমকূপে রোমকূপে জাগিয়ে দিচ্ছে খুব ঘন শিহরন-
শিরশিরে অনুভূতির ভেতর থেকে জেগে উঠে একা একা নিষ্পলক
তাকিয়ে রয়েছি আমি হেমন্তের ঘোর-লাগা আকাশের মায়াবিনী চাঁদের শরীরে।

কতোদিন, কতোরাত এইভাবে কেটে গেছে যমুনার তীর-ঘেঁষে
জেগে থাকা উজানচকের মাঠে, হয়তো বা আরও কতো দিন-রাত,
শতাব্দী কিংবা সহস্র বছর পার হয়ে যেতে যেতে আমার শরীরজুড়ে
বল্মীকের মতো শুধু গজাবে শেকড়, এই দেহ হয়ে যাবে মিশরের
পিরামিড, গোধূলির কাম-রাঙা আগুন ছড়িয়ে ধূসর আকাশে ক্ষীণপ্রায়
ভেসে থাকবে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা ডিঙি নৌকোর মতো আরও এক চাঁদ-
আমি থাকবো না-নতুন কালের কোনো কবি এসে শুঁকবে এ-মাটি,
এই ঘাসে খুঁজে নেবে আমার কঙ্কাল, আমার অস্তিত্বহীন
এই আমি রয়ে যাবো হেমন্তের মাঠে একা নিরবধিকাল?

আকাশে অগ্নি-চাঁদ, হাওয়া এসে দোল খাচ্ছে হৃদয়ের গহন অতলে।
আর আমি নিশ্চুপ বসে বসে পান করছি হেমন্তের জ্যোৎস্নায়
প্রকৃতির মাতাল মদিরা-এইভাবে আমি আছি, আমি থাকি,
হয়তো বা আমি থাকবো অন্ধকার ভেদ করে অনন্তের পথ ধরে
চলে আসা পৃথিবীর একমাত্র কবি-যার সাথে আর কারো তুলনা হবে না।

সুন্দরের চাওয়া-পাওয়া
হাসান হাফিজ
চোখ চলে যায়
সুন্দরের দিকে
অমৃত-গরল দুঃখ পান করে
শূন্য হতে চায়।
নিঃস্ব হতে চায়।
চাইবেই। এটাই নিয়ম। স্বাভাবিকও।
চোখ যদি সুন্দর-আগুনে
পুড়ে ঝামা টেরাকোটা হয়
লোকসান কতোটুকু
দীর্ঘশ্বাস কতোটা গভীর হবে
কতো আর দীর্ঘস্থায়ী হবে
জানি না, জানার উপায় কিছু দুনিয়াতে নাই।
সুন্দরের মাঝে এতো সর্বনাশ
লুকিয়ে চুরিয়ে থাকে
গোপন সে বিষলতা
দুর্নিরীক্ষ্য কষ্টের আকর
সুন্দরের জন্যে হই অভিশপ্ত
সর্বস্বান্ত হতে থাকি
মন তবু থেকে যায়

আউলা ঝাউলা
এলানো অস্থির
হলে হোক, অশান্তি ও ঝড় যদি
নিয়তি নির্দিষ্ট হয়
না মেনে কী আছে গত্যন্তর?

উন্মাদ চোখে দেখি সব
হাফিজ রশিদ খান
বিষাক্ত হে দশফণাবিশিষ্ট ভুজঙ্গ
নিত্য তোমার নির্মোক রেখে যাচ্ছ খালপাড়ে

আবছা জঙ্গলে
আলোছায়ার খেলায়
হাজার রাখাল আর গ্রাম-মাতব্বর অল্পদূর থেকে দেখে
প্রতিদিনই হত্যা করে ওটা
খুশি মনে চলে যায় ওপারের হরিৎভূমিতে
তবু তারা পুরন্দর নয়

তার লেজ তবু ভুবন নাড়ায়
উগ্রবাদ মৌলতন্ত্র
প্রদোষের পুরাণের ছদ্ম পরিধান
জলবায়ুজ¦র রুদ্র দাবানল
আমার পাড়ায় হিন্দুবাড়ির কৃষ্ণের লাশ
কান্দাহারের ধূসর পথে অস্তিত্বের ঊর্ধ্বমুখী বিনিপাত
ড্রোনের পিছ পা উড্ডয়ন

আমি লক্ষ করি উন্মাদের চোখে
আর ছাই হচ্ছে দেখি দশফণাওলা ভুজঙ্গের কাটামু-
আমারই লেলিহ অগ্নিকাণ্ডে
এশিয়ায় দামেস্কে প্যালেস্টাইনে ও মিয়ানমারে ...

সকালের রসদ কার্টুন
জলিল আহমেদ
রসদভর্তি এক কার্টুন সকাল এনে দেয়া হলো আমার নিবেদে
আমি সেই কার্টুন খুলে চেয়ে দেখি জানালাতে
নিত্যেরই কাক, বাতাসে রোদের স্বাদ
স্কুলের বাজানো বেল থেকে বেরিয়ে আসে শিশুদের
আলোকিত গ্রেফতার।
তাজা রক্তের হাইজাম্প হয়ে যায় ভাঁজ খোলা কাগজের খবরখানায়।

ওয়ানটাইম কার্টুন আর বদলানো যাবে না বলে
দিবসের থরে থরে জমে যাওয়া দুঃসহ জঞ্জালে
ভরে যায় সময়ের ভার, চাপা পড়া অসন্তোষ
চোখের ভুরুতে আঁকে প্রতিচিত্র তার।
তারপরও নেচে ওঠে আলোকের সেনা

পাতার কচিতে জমে সৃজনের স্তূপ
স্বপ্নদের হাওয়া এসে কার্টুনের ধুলোগুলো সরায় আমোদে, আমি তাই
সাজানো সকালগুলো জমা করি জীবনের খোলা ডিপিএস-এ।

সাজেক মেঘে ভেজা সেই চোখ
হাসান কল্লোল
সেই চোখ সাজেকের মেঘে ভেজা ছিল।
পাহাড়ের চূড়ায় ছলছল ভোরের আলোয়
সেই চোখে পলাতক মায়ার কাজল!
আহা আর একবার মৃত্যুর আগে
দেখতে পেতাম যদি তার
গভীর হ্রদের মতো টলটলে দৃষ্টির মেঘ-
হৃদয় ভাসিয়ে নেয়া পাহাড়ের ঢল!
এই মেঘে সুউচ্চ আবেগের কম্পমান জল
গেঁথে আছে তাই-
পিরামিডে প্রাচীন রোদের মতো
মহাকালের নীরব কলতান মাঝরাতে বাজে।

কোনদিন তাকে আর দেখবো না জেনে
জীবনের বাকি সব অবসর ভোরে
হেমন্তে সয়ম্ভরা তার গোপন দৃষ্টিগুলো
সাজেক ভ্যালির সিঁড়ি বেয়ে ওঠা স্মৃতির
লাল ইটে জড়িয়ে, পাহাড়ী জোৎস্নায় নির্মিত
কোমল আলমারিতে দিয়েছি রেখে!

কোনোদিন আর কোনোকালে দেখা
হবে না ভেবে
উপত্যকার ভাজে নানা রং ছড়িয়ে
সূর্য ওঠার বেলায় তবু কানে দোলে
সেই বাক্সময়ী চোখের আর্দ্র সংগীত আর
হৃদয়ের একূল ওকূল দুকূল ভেসে যায়।

শিকার
আসমা চৌধুরী
কখনো কখনো ঘুম আসে না
আমি তখন রাতকে বলি, চাঁদ করে দাও
শিকারে যাবো।
পাখির বাসার কাছে ঝুলে থাকা শাখা
তার ফাঁকে, দাঁড়িয়ে থেকে, মসৃণ থাবায়,
আঁচড়ে নেব স্বপ্নের ভিটা।

মাঝে মাঝে ঘুম না এলে শিকারে যাই
দূর থেকে দেখি মানব শরীর
কত তুচ্ছ প্রয়োজনে একলা হারায়
আমি চাঁদ ঢেকে যাই, মেঘের কামরায়...

হারিয়ে যাওয়া দেশ
প্রবালকুমার বসু
খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজার মতন করে
মৃতদেহের স্তূপের ভিতর একজন অন্ধ
কাকে যেন খুঁজছিল
দেহগুলো র‌্যাপারে জড়ানো
চিহ্নিত করার জন্য র‌্যাপারের ওপর একটা করে সংখ্যা
অন্ধ প্রতিটি দেহ ছুঁয়ে বুঝে নিতে চাইছিল
যাকে খুঁজছে সে-ই কিনা

একটি দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেন চেনা চেনা
পাশে অপেক্ষমাণ একজনের কাছে অন্ধ জানতে চাইল
র‌্যাপারে লাগানো সংখ্যাটি কত
লোকটি জানাল এই দেহের কোনো সংখ্যা নেই
বোধহয় বেওয়ারিশ

অন্ধ বলল আমি এই দেহটাই খুঁজছিলাম
তোমার কেউ হয়? জানতে চাইল লোকটি

দেহটির গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে অন্ধ বলল
এটাই তো আমার হারিয়ে যাওয়া দেশ

পাড় ভাঙা সনেটগুচ্ছ
বেবী সাউ

এখন সময় নেই। দূরে দূরে বর্ণমালা ডাকে।
কে কার নিজস্ব তার বেঁধে রাখে সুরে ছদ্মবেশে
আমি তা জানি না, দেখি, গোঁ গোঁ করে হয়তো এক ফাঁকে
আসে চার চাকার লরি, পিঠে বাঁধা তার অবশেষে
আমার আঙুল, ঘাম, যত্ন করে ভালবাসা রাখা।
কাকে ভালবেসেছিলে, এ প্রশ্নের নেই যে উত্তর-
অন্ধকার গলি থেকে ভেসে আসে প্রজন্ম চত্বর
সমস্ত রাস্তার পিঠে স্নেহময়ী চন্দ্রালোক আঁকা।

এখন সময় নেই। সময়ের মাটির উপরে
কাদের পায়ের ছাপ বুঝিনি এমন সহবাসে
আমারও নজর আছে তোমাদের মতন নজরে
পতঙ্গ মরিয়া গেছে প্রকৃতির প্রথম সন্ত্রাসে।
এখন সময় নেই। এ বিশ্বের যৌবন ক্ষণিক।
আমার পৃথিবী জানে তার নেই অন্য কোনও দিক।


কে রক্তের দাগ ধরে এসেছিল এ নদীর ধারে?
জল খেতে নেমেছিল ঘাট থেকে জলের ভিতর
তার পরেই ডুবস্নান, শরীরে শরীর অন্ধকারে
খেলা করেছিল, তার যন্ত্রমন রেখে গেছে ঘর।
জলের স্বভাব এই, সকলকেই আমন্ত্রণ করে।

সাহস রয়েছে তার, বলে, এসো, তোমার সাঁতার
চেয়েছি শরীরে, মাখো, জল, স্থল, মাটি, বা অক্ষরে
যে সুর পেয়েছ, তার ডুবু ডুবু জলেই আষাঢ়।

প্রথম দিবস জানি অনেক গল্পই বলেছিল।
সে সব স্মৃতির কাছে রয়ে গেছে প্রথম দিনেই।
আমি তার কথা ভাবি, মা আমার, রেখেছে কি চিনে
সেই সব কথা বলে যে তোমায় কাছে টেনে নিল?
আমি সে-ই, ছোট্ট শিশু, আমাকেই চিনেছ আবার
আমার শরীরে জল, আমারই সে প্রিয় অন্ধকার


সেও কি কখনও তার প্রেম ছিঁড়ে ফেলেছিল রোজ?
আমার মতোই তার হাতে শুধু চিরকুটের পাশে
রয়েছে অন্ধের গান, আমাকে করোনি তুমি খোঁজ।
ধ্রুবতারা রয়ে গেছে আকাশেই, আকাশে আকাশে
মন তার দুঃখে ভরা, এ জীবন করেছি শ্রাবণ
আমার প্রেমিক তার ঝোলা নিয়ে চলে গেছে দূরে
কোথাও সে আছে, আমি, তার পাশে চলেছি যে সুরে
তাও সে জানে না, শুধু কেঁদে যায়, পরাজিত মন
যেভাবে কেঁদেছে একা, যুদ্ধক্ষেত্রে, মাথায় আকাশ
আমি তার থেকে এক মুঠো শুধু অনন্তকে লিখি।
সে বলে, আমি তো জানি, তুমি ওই শূন্য অবকাশ
কৃষকের কাছে বসে মাটির অনেক জন্ম শিখি।

জানি না কোথায় প্রেম, কেন তার মুখে ফাঁকা দাগ
মন থেকে মনে শুধু লাফ দেয় সার্কাসের বাঘ।

বৃষ্টিরা চলে যাচ্ছে
সৌহার্দ সিরাজ
মূলত ঘুমের ভেতরে লুকিয়ে থাকাটা আমার প্রিয় কাজের একটি
পাতার শব্দের ভেতরে আমার ছায়া এবং আমি
লুকিয়ে লুকিয়ে মধ্যবিত্ত পরাগায়ন দেখি
তোমার কালো চুলের সুগন্ধ আমার সাথে থাকে

হাতের তালুতে যতগুলো রেখা ততগুলো জিজ্ঞাসা
বহিরাগত জীবনে তার শিরোনাম হয় না
বরং বোশেখের রৌদ্রের মতো শক্ত হয়ে ওঠে
আমি তখন খুলে নিই ভাঁজ করে রাখা পুরনো দিনের চরিত্র
আর লিখে দিই তাদের চলে যাবার বিমর্ষপথে
শরতের দিব্যি আকাশ

বৃষ্টিরা চলে যাচ্ছে
আমার ছোট পৃথিবীটা ওদের বাঁধন খুলে রেখেছিল আগে
ঠাণ্ডা স্নান সেরে ওরা গরমের পাহাড়ে যাবে

তুমুল হাসি নিয়ে নস্টালজিক কাশফুল ফুলেফেঁপে
চোখের আরাধনায় নিজকে সাজিয়ে নিচ্ছে

পদচ্ছাপ মুছে যায়
মিলু শামস
পরিচিত শহরে লাগে নতুনের ছোঁয়া
ঘ্যাঁসঘেঁসে আওয়াজ তুলে
ফ্লাইওভারে ছুটে যায় ছোট বড় যান
যেন দূর কোনো সন্ধ্যার ব্যথাতুর বেহাগ
ভেসে আসে বাতাসে মৃদু
ধূসর শূন্যতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নাগরিক পথ-
কারা হেঁটেছিল এ পথে?
তুমুল ফসলের কালে, রোদতপ্ত
বয়সী কাল, কারা এঁকেছিল সময়ের বুকে
স্বতন্ত্র ম্যুরাল?
আজ ফুরলো কি গ্রহণের কাল?
খুঁজে নিল সবাই যে যার কক্ষপথ-

সভ্যতা এগোয় আকাশ রেলে চড়ে
চেনা সংকেত ক্ষয়ে যায়, নড়ে ওঠে মূল্যবোধ
সময়-ছুরি ফণা তোলে কৃতঘ্ন পকেটে

ভালবাসা বেঁচে থাকে আড়ালে আবডালে
যেভাবে বাঁচে ক্ষুধার্ত শ্রমিক
শ্রমের ন্যায্য মূল্য চেয়ে,

কারও বুক ভার হয়, ভালবাসা ক্ষত বাড়ায়
হৃদয় গভীরে
ঋণগুলো চড়া সুদে বেড়ে ওঠে
অচেনা আকাশে।

সন্ধ্যাযুগ
আদ্যনাথ ঘোষ
ইন্দ্রপ্রস্থের জমিনজুড়ে কাঁচাঘুম বিলাপ করে
দ্রৌপদীর দেহান্তরী দৃশ্যে। কালোবিষ ছোবল মারে-
আড়ালে আঁতাত করে সন্ধ্যাযুগ, গোপন কেউটের ফণায়।
জীবনের ব্যালকানিজুড়ে ধুতুড়ার গান নেমে আসে।
হিসেবের গরমিলে আমার ভেজা চোখ দুটো
ভাঁজে ভাঁজে রোদহীন ভাঙনের সুর ভুলে গিয়ে
অনন্ত দহন জ্বালায় কষ্টের অন্তরে জ্বলে; আর রাধারা
জ্বলে জ্বলন্ত প্রদীপে। ভেসে ওঠে তানপুরার বেদনার ধার।
তবু কী ভেজাচোখ আমাকে ডাকে উলঙ্গ সংলাপে!
না কি পোড়াচোখের খামটিজুড়ে চোখ কেঁদে ওঠে-
হেমন্তের ফেরারী জলে মৃত নদী চৈত্রের খরায়।
যদি তুমি একবার পাশ ফিরে আমারই শরীরী মুদ্রায়
গল্পের মোহে নিতি নিতি খেলা করে চলো-
তাহলে চোখের জলে তোমার দুঃখগুলো মুছে দিয়ে যাব।

ফিরে এসো
বুলু রানী ঘোষ
ফিরে এসো আরেকবার,
ফিরে এসো কবিতায়,
ভালোবাসায় এসো ফিরে,
ফেরো মুগ্ধতায়।

ফেরো প্রেয়সীর খোলা চুলে
উষ্ণ ঠোঁট, করতলে,
ফেরো যুগল নিঃশ্বাসে,
ফেরো আস্থা আর ভরসায়।

ফেরো শিশুর হাসিতে,
গানে, সুরে বাঁশিতে,
রাগে, অনুরাগে ফেরো
যানজটে, কর্মব্যস্ততায়।

ভিড় বাসে ঠেলাঠেলি,
জনারণ্য, চোরা গলি,
ফিরে এসো আবার তুমি,
ফেরো দীনতা, হীনতায়।

আনো স্বস্তি, অমৃত ধারা,
আনন্দ বাঁধনহারা,
শান্তির প্রলেপ আনো
এ আতঙ্ক বিভীষিকায়।

দু’চোখে স্বপ্ন আনো
নকশি আকাশ বুনো,
বিষহীন বাতাসে নিঃশ্বাস,
মুক্ত হোক ডানা নীলিমায়।

ফিরে এসো একটি বার,
পিপাসা দুর্নিবার,
ফিরে এসো মঙ্গলে, কল্যাণে
ফেরো সুদিনের প্রার্থনায়।

আগল ভেঙে এসো ফিরে,
মুখোশটা টেনে ছিঁড়ে,
তুচ্ছ করে সব বাঁধা,
মহামারী, প্রতিবন্ধকতায়।

শীতার্ত
স্নিগ্ধা বাউল
বিস্তারিত দুপুরে
চলে যায় গভীর ক্লান্ত ডানা মেলে
ঝাপটায় ক্ষতের হৃদয়
কবিতার মতো
পঙক্তি জুড়ে রোদের মিছিল
ডুবে ডুবে হারায় গভীর বেদনা
শ্রমজীবী সব নদীর মায়ায়,

রয়ে যায় এখানে
দূরের শহরে শীতের কুয়াশায়
ঝাপসা আয়নার প্রতিবিম্ব
চড়ুই ডানায় কার্তিকের বারান্দায়
ছোট ছোট ঘরের বিলুপ্ত সুখে-

মাঘের সিলিং-
পাটাতনে বিছানো পায়ের ছাপ
নেমে এসেছে এখানে।

ভুল বিকেলের সূর্য
লিজা ফাহমিদা
সুতির শাড়ির সঙ্গে চুড়ি
ছোট্ট টিপের মায়া,
রোদ ছোঁয়ানো পিচঢালা পথ
হিজল ডালের ছায়া।

পাতায় পাতায় চড়ুই এবং
রোদের প্রজাপতি,
ঢেউ খেলানো কাশের দুপুর
শুভ্র ফুলের নদী!

টুকরো বিকেল লুকিয়ে ফেলে
পিচঢালা রোদ্দুর,
লুকিয়ে ফেলে দ্বিধান্বিত
মেঘের সমুদ্দুর!

ভুল বিকেলের সূর্য ডোবে
মনের মধ্যে নদী,
বিস্মিত সব সত্যগুলো
মিথ্যে হতো যদি!

সোনালি আখ্যান
চামেলী বসু
মৃত্যুর মতো হিম নামে
ধানকন্যার সোনালি শরীরে
বৈকালিক স্নেহের রেখায়
উদম জমিন ছেড়ে উঠে যায় মন-
কে সেই চাষা?
ঝরাপাতার মৌতাতে পুড়ে
সোনার শরীর জুড়ে এঁকেছে যে
শিশিরের গোপন গাথা।

ভাবিনি
দিলীপ কির্ত্তুনিয়া
মানুষের কথাটি ভেবে ভেবে
আলোটি নিভিয়ে রেখেছি।
কিন্তু ছায়ার কথাটি-
একবারও ভাবিনি।
অন্ধকারে ছায়া আসে হেঁটে
- গাঢ় অন্ধকারে
একবারও ভাবিনি।
মানুষ ঘুমিয়ে গেলে
ছায়া জেগে ওঠে
সূর্যের মতোই হাঁটে বীরদর্পে
ইচ্ছেমতো- কভুও ভাবিনি।
উঠোনে বিশ্বাসের সবুজ পাতা ছিলো
তাই!
ছায়ার কথাটি ভাবিনি
আর তার দন্ত নখর-
ছায়ার কথাটি ভাবিনি
আর তার দস্যুবৃত্তি চরম-
সে যে সুন্দর গিলে খায়
শান্তি নষ্ট করে
সহ্য করে না মানুষের মাঝে প্রীতি
- ভাবিনি।

মহাকালের কাছে বয়ান
হানিফ রুবেল
জলছত্রের গভীর অন্তরঙ্গের একটি সবুজ দুপুর রেখেছি রক্তে
সে জলবৃন্তান্ত মহাকালের কাছে রেখে যাব বলে,
শব্দের কাঁধে রেখেছি মাথা- স্মতির সম্মুখে বিহ্বল দাঁড়িয়েছি
প্রাণের পথে ফেলে এক দীর্ঘ ছায়া,
যে ছায়ার বুকে নদী ছিল, তবুও শ্যামলতার অন্তরাল খুঁড়ে
আমি সে দিন পেয়েছিলাম এক কোমল আগুন।

তাকেই ধরেছিলাম বুকে, অগ্নির গূঢ়ার্থ জানব বলেই
উচ্ছ্বাসেই সমর্পিত হয়েছিলাম এক দাবানলের কাছে,
যার ছাইভস্ম জোয়ারে ভেসে ভেসে শেষে ছুঁয়েছিল ঘাট,
সেদিন জলের কাছে দাস হয়ে বসে ছিল এক তৃষ্ণার্ত সম্রাট।

রেণু
মামুন অপু
বুকসেলফের টগবগে স্বপ্নগুলো লাফিয়ে পড়ে
মায়ের রান্না করা ভাতের সাগরে
ভাত এবং স্বপ্নের তুমুল স্নান শেষে
উঠে আসে কৈ মাছের কানকো বেয়ে।

বাবা খেতে বসে; মা বেড়ে দেয় স্বপ্নের স্বাদে ধোঁয়া ওঠা,
বৃষ্টি ধোয়া নক্ষত্রের মতো সাদা ভাত
নেড়েচেড়ে বাবা হাসে মায়ের চোখে তাকিয়ে
মা অলৌকিক লজ্জায় নিমজ্জিত চাঁদের মতো আড়ষ্ট
এবং গূঢ় কণ্ঠে বললো, আমি এক টুকরো জীবন চাই
যে জীবন বেড়ে উঠবে তোমার রেণুতে।

নির্বাসন
শারমিন সুলতানা রীনা
এভাবে ডেকনা আর বলি বারবার
বেদনা শিখায় পোড়ে আমার ভুবন
নিবিড় তিমিরে থাকা নিয়েছি মানিয়ে
প্রদীপে জ্বলছে আলো দেখা তা বারণ
ছায়ার ভিতরে ছায়া বোঝে না মানব
মানুষ কেন যে ভোলে আত্মার খোরাক
মগজ খুবলে খায় সন্ত্রাসী আগুন
তবুও নীরব থাকা তোমাকে মানায়
কখনো বোঝনি মন মনের চাহিদা
জানতে চাওনি কেন এই নির্বাসন?

শিকড়ের ঘ্রাণ
হাশিম কিয়াম
গোলাপের পাপড়িতে জং ধরলে
চলে এসো ঘাসফুলের মাঠে
একতালু ঘোলাজলে ভিজিয়ে দিয়ো
পিপাসিত শিকড়ের জান
বিকেলের ডগার উপর উড়তে
থাকা তিলা ঘুঘুর ঝাঁক থেকে
খসে পড়লে একটি পালক
চূড়াখোঁপায় গুঁজে রেখো গেঁদা ফুল হয়ে যাবে
খালি গায় রোদ পোহানো
কবের এক যুবকের শরীরের বাসনা পেয়ে
চোখ বেয়ে জলপ্রপাত
খোলাচুল ওড়ানো উঠোনে আছড়ে পড়লে
তুমিও হয়তো ঘাসফুল হয়ে
ধুলোমাখা হাতের
আলতো ছোঁয়ায় হেসে উঠবে
তারাফোটা রাতের কোলে বসে
শুনবে তারাদের কষ্টগান
ইশারায় ডাকলে আলোর মই
বেয়ে নেমে শুঁকে যাবো শিকড়ের ঘ্রাণ

পাওয়া না পাওয়ার পৃথিবী
হাসান নাজমুল
শেষমেশ নিয়েছি বেছে না পাওয়ার পৃথিবী,
এ পৃথিবীর নিবিড় প্রেমে
নিশ্চিন্তে দেওয়া যায় পাড়ি
অসংখ্য রাতনদী;
এ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যেন বীর,
অস্থির জীবন এখানে এসেই
খুঁজে পায় নিবিড় ভুবন;
না চাওয়ায় না পাওয়ায়
আমৃত্যু শান্তির স্বাদ,

পাওয়ার পৃথিবীতে অতৃপ্তির ভিড়,
ভূমিষ্ঠ হয়েই যেত হয় ভেসে
কান্নার সাগরে;
শৈশবের শেষে বৈভব খুঁজতে গিয়ে
চোখে পড়ে কান্নার অদৃশ্য বাঁশি;
ক্রমেই বাড়তে থাকে চাওয়া ও পাওয়ার অংক,

অথচ পাওয়াহীন পৃথিবীতে
কী সুন্দর কেটে যায় দিন!

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

পৃষ্ঠাজুড়ে কবিতা

বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১

হেমন্তের জ্যোৎস্নায়
অসীম সাহা
আকাশের কোথাও একটুকরো মেঘও নেই।
মাথার উপরে আগুনের মতো জ্বলছে মর্মস্নিগ্ধ চাঁদ
আর নিচে এই ধু-ধু দিগন্তের নিচে আমি একা বসে আছি-
যেন কোন সুদূর নক্ষত্র-আলোকের বিন্দু নিয়ে
মায়াবী চাঁদের সাথে অন্তরঙ্গ হবো বলে এ-আমার মগ্ন অভিসার।

এই তো সেই উজানচকের মাঠ, নিরিবিলি, যতদূর চোখ যায়
শিশিরের পারদ পেরিয়ে দেখা যায় ঘন সবুজের মত প্রেইরির সারি-
অবিচ্ছিন্ন-যেন যৌথ দেহের মতো মিশে আছে দিগন্তের প্রান্ত-সীমানায়।
গায়ে এসে ঝাঁপ দিচ্ছে যমুনার জল থেকে উঠে আসা হিমেল বাতাস।
চারিদিকে পড়ে আছে হেমন্তের খড়, ধান কাটা হয়ে গেছে বলে
কৃষকেরা ফেলে গেছে নি®প্রাণ দেহের খোলস। শিশিরের মতো মৃদুমন্দ ঘাম
শরীরের রোমকূপে রোমকূপে জাগিয়ে দিচ্ছে খুব ঘন শিহরন-
শিরশিরে অনুভূতির ভেতর থেকে জেগে উঠে একা একা নিষ্পলক
তাকিয়ে রয়েছি আমি হেমন্তের ঘোর-লাগা আকাশের মায়াবিনী চাঁদের শরীরে।

কতোদিন, কতোরাত এইভাবে কেটে গেছে যমুনার তীর-ঘেঁষে
জেগে থাকা উজানচকের মাঠে, হয়তো বা আরও কতো দিন-রাত,
শতাব্দী কিংবা সহস্র বছর পার হয়ে যেতে যেতে আমার শরীরজুড়ে
বল্মীকের মতো শুধু গজাবে শেকড়, এই দেহ হয়ে যাবে মিশরের
পিরামিড, গোধূলির কাম-রাঙা আগুন ছড়িয়ে ধূসর আকাশে ক্ষীণপ্রায়
ভেসে থাকবে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা ডিঙি নৌকোর মতো আরও এক চাঁদ-
আমি থাকবো না-নতুন কালের কোনো কবি এসে শুঁকবে এ-মাটি,
এই ঘাসে খুঁজে নেবে আমার কঙ্কাল, আমার অস্তিত্বহীন
এই আমি রয়ে যাবো হেমন্তের মাঠে একা নিরবধিকাল?

আকাশে অগ্নি-চাঁদ, হাওয়া এসে দোল খাচ্ছে হৃদয়ের গহন অতলে।
আর আমি নিশ্চুপ বসে বসে পান করছি হেমন্তের জ্যোৎস্নায়
প্রকৃতির মাতাল মদিরা-এইভাবে আমি আছি, আমি থাকি,
হয়তো বা আমি থাকবো অন্ধকার ভেদ করে অনন্তের পথ ধরে
চলে আসা পৃথিবীর একমাত্র কবি-যার সাথে আর কারো তুলনা হবে না।

সুন্দরের চাওয়া-পাওয়া
হাসান হাফিজ
চোখ চলে যায়
সুন্দরের দিকে
অমৃত-গরল দুঃখ পান করে
শূন্য হতে চায়।
নিঃস্ব হতে চায়।
চাইবেই। এটাই নিয়ম। স্বাভাবিকও।
চোখ যদি সুন্দর-আগুনে
পুড়ে ঝামা টেরাকোটা হয়
লোকসান কতোটুকু
দীর্ঘশ্বাস কতোটা গভীর হবে
কতো আর দীর্ঘস্থায়ী হবে
জানি না, জানার উপায় কিছু দুনিয়াতে নাই।
সুন্দরের মাঝে এতো সর্বনাশ
লুকিয়ে চুরিয়ে থাকে
গোপন সে বিষলতা
দুর্নিরীক্ষ্য কষ্টের আকর
সুন্দরের জন্যে হই অভিশপ্ত
সর্বস্বান্ত হতে থাকি
মন তবু থেকে যায়

আউলা ঝাউলা
এলানো অস্থির
হলে হোক, অশান্তি ও ঝড় যদি
নিয়তি নির্দিষ্ট হয়
না মেনে কী আছে গত্যন্তর?

উন্মাদ চোখে দেখি সব
হাফিজ রশিদ খান
বিষাক্ত হে দশফণাবিশিষ্ট ভুজঙ্গ
নিত্য তোমার নির্মোক রেখে যাচ্ছ খালপাড়ে

আবছা জঙ্গলে
আলোছায়ার খেলায়
হাজার রাখাল আর গ্রাম-মাতব্বর অল্পদূর থেকে দেখে
প্রতিদিনই হত্যা করে ওটা
খুশি মনে চলে যায় ওপারের হরিৎভূমিতে
তবু তারা পুরন্দর নয়

তার লেজ তবু ভুবন নাড়ায়
উগ্রবাদ মৌলতন্ত্র
প্রদোষের পুরাণের ছদ্ম পরিধান
জলবায়ুজ¦র রুদ্র দাবানল
আমার পাড়ায় হিন্দুবাড়ির কৃষ্ণের লাশ
কান্দাহারের ধূসর পথে অস্তিত্বের ঊর্ধ্বমুখী বিনিপাত
ড্রোনের পিছ পা উড্ডয়ন

আমি লক্ষ করি উন্মাদের চোখে
আর ছাই হচ্ছে দেখি দশফণাওলা ভুজঙ্গের কাটামু-
আমারই লেলিহ অগ্নিকাণ্ডে
এশিয়ায় দামেস্কে প্যালেস্টাইনে ও মিয়ানমারে ...

সকালের রসদ কার্টুন
জলিল আহমেদ
রসদভর্তি এক কার্টুন সকাল এনে দেয়া হলো আমার নিবেদে
আমি সেই কার্টুন খুলে চেয়ে দেখি জানালাতে
নিত্যেরই কাক, বাতাসে রোদের স্বাদ
স্কুলের বাজানো বেল থেকে বেরিয়ে আসে শিশুদের
আলোকিত গ্রেফতার।
তাজা রক্তের হাইজাম্প হয়ে যায় ভাঁজ খোলা কাগজের খবরখানায়।

ওয়ানটাইম কার্টুন আর বদলানো যাবে না বলে
দিবসের থরে থরে জমে যাওয়া দুঃসহ জঞ্জালে
ভরে যায় সময়ের ভার, চাপা পড়া অসন্তোষ
চোখের ভুরুতে আঁকে প্রতিচিত্র তার।
তারপরও নেচে ওঠে আলোকের সেনা

পাতার কচিতে জমে সৃজনের স্তূপ
স্বপ্নদের হাওয়া এসে কার্টুনের ধুলোগুলো সরায় আমোদে, আমি তাই
সাজানো সকালগুলো জমা করি জীবনের খোলা ডিপিএস-এ।

সাজেক মেঘে ভেজা সেই চোখ
হাসান কল্লোল
সেই চোখ সাজেকের মেঘে ভেজা ছিল।
পাহাড়ের চূড়ায় ছলছল ভোরের আলোয়
সেই চোখে পলাতক মায়ার কাজল!
আহা আর একবার মৃত্যুর আগে
দেখতে পেতাম যদি তার
গভীর হ্রদের মতো টলটলে দৃষ্টির মেঘ-
হৃদয় ভাসিয়ে নেয়া পাহাড়ের ঢল!
এই মেঘে সুউচ্চ আবেগের কম্পমান জল
গেঁথে আছে তাই-
পিরামিডে প্রাচীন রোদের মতো
মহাকালের নীরব কলতান মাঝরাতে বাজে।

কোনদিন তাকে আর দেখবো না জেনে
জীবনের বাকি সব অবসর ভোরে
হেমন্তে সয়ম্ভরা তার গোপন দৃষ্টিগুলো
সাজেক ভ্যালির সিঁড়ি বেয়ে ওঠা স্মৃতির
লাল ইটে জড়িয়ে, পাহাড়ী জোৎস্নায় নির্মিত
কোমল আলমারিতে দিয়েছি রেখে!

কোনোদিন আর কোনোকালে দেখা
হবে না ভেবে
উপত্যকার ভাজে নানা রং ছড়িয়ে
সূর্য ওঠার বেলায় তবু কানে দোলে
সেই বাক্সময়ী চোখের আর্দ্র সংগীত আর
হৃদয়ের একূল ওকূল দুকূল ভেসে যায়।

শিকার
আসমা চৌধুরী
কখনো কখনো ঘুম আসে না
আমি তখন রাতকে বলি, চাঁদ করে দাও
শিকারে যাবো।
পাখির বাসার কাছে ঝুলে থাকা শাখা
তার ফাঁকে, দাঁড়িয়ে থেকে, মসৃণ থাবায়,
আঁচড়ে নেব স্বপ্নের ভিটা।

মাঝে মাঝে ঘুম না এলে শিকারে যাই
দূর থেকে দেখি মানব শরীর
কত তুচ্ছ প্রয়োজনে একলা হারায়
আমি চাঁদ ঢেকে যাই, মেঘের কামরায়...

হারিয়ে যাওয়া দেশ
প্রবালকুমার বসু
খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজার মতন করে
মৃতদেহের স্তূপের ভিতর একজন অন্ধ
কাকে যেন খুঁজছিল
দেহগুলো র‌্যাপারে জড়ানো
চিহ্নিত করার জন্য র‌্যাপারের ওপর একটা করে সংখ্যা
অন্ধ প্রতিটি দেহ ছুঁয়ে বুঝে নিতে চাইছিল
যাকে খুঁজছে সে-ই কিনা

একটি দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেন চেনা চেনা
পাশে অপেক্ষমাণ একজনের কাছে অন্ধ জানতে চাইল
র‌্যাপারে লাগানো সংখ্যাটি কত
লোকটি জানাল এই দেহের কোনো সংখ্যা নেই
বোধহয় বেওয়ারিশ

অন্ধ বলল আমি এই দেহটাই খুঁজছিলাম
তোমার কেউ হয়? জানতে চাইল লোকটি

দেহটির গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে অন্ধ বলল
এটাই তো আমার হারিয়ে যাওয়া দেশ

পাড় ভাঙা সনেটগুচ্ছ
বেবী সাউ

এখন সময় নেই। দূরে দূরে বর্ণমালা ডাকে।
কে কার নিজস্ব তার বেঁধে রাখে সুরে ছদ্মবেশে
আমি তা জানি না, দেখি, গোঁ গোঁ করে হয়তো এক ফাঁকে
আসে চার চাকার লরি, পিঠে বাঁধা তার অবশেষে
আমার আঙুল, ঘাম, যত্ন করে ভালবাসা রাখা।
কাকে ভালবেসেছিলে, এ প্রশ্নের নেই যে উত্তর-
অন্ধকার গলি থেকে ভেসে আসে প্রজন্ম চত্বর
সমস্ত রাস্তার পিঠে স্নেহময়ী চন্দ্রালোক আঁকা।

এখন সময় নেই। সময়ের মাটির উপরে
কাদের পায়ের ছাপ বুঝিনি এমন সহবাসে
আমারও নজর আছে তোমাদের মতন নজরে
পতঙ্গ মরিয়া গেছে প্রকৃতির প্রথম সন্ত্রাসে।
এখন সময় নেই। এ বিশ্বের যৌবন ক্ষণিক।
আমার পৃথিবী জানে তার নেই অন্য কোনও দিক।


কে রক্তের দাগ ধরে এসেছিল এ নদীর ধারে?
জল খেতে নেমেছিল ঘাট থেকে জলের ভিতর
তার পরেই ডুবস্নান, শরীরে শরীর অন্ধকারে
খেলা করেছিল, তার যন্ত্রমন রেখে গেছে ঘর।
জলের স্বভাব এই, সকলকেই আমন্ত্রণ করে।

সাহস রয়েছে তার, বলে, এসো, তোমার সাঁতার
চেয়েছি শরীরে, মাখো, জল, স্থল, মাটি, বা অক্ষরে
যে সুর পেয়েছ, তার ডুবু ডুবু জলেই আষাঢ়।

প্রথম দিবস জানি অনেক গল্পই বলেছিল।
সে সব স্মৃতির কাছে রয়ে গেছে প্রথম দিনেই।
আমি তার কথা ভাবি, মা আমার, রেখেছে কি চিনে
সেই সব কথা বলে যে তোমায় কাছে টেনে নিল?
আমি সে-ই, ছোট্ট শিশু, আমাকেই চিনেছ আবার
আমার শরীরে জল, আমারই সে প্রিয় অন্ধকার


সেও কি কখনও তার প্রেম ছিঁড়ে ফেলেছিল রোজ?
আমার মতোই তার হাতে শুধু চিরকুটের পাশে
রয়েছে অন্ধের গান, আমাকে করোনি তুমি খোঁজ।
ধ্রুবতারা রয়ে গেছে আকাশেই, আকাশে আকাশে
মন তার দুঃখে ভরা, এ জীবন করেছি শ্রাবণ
আমার প্রেমিক তার ঝোলা নিয়ে চলে গেছে দূরে
কোথাও সে আছে, আমি, তার পাশে চলেছি যে সুরে
তাও সে জানে না, শুধু কেঁদে যায়, পরাজিত মন
যেভাবে কেঁদেছে একা, যুদ্ধক্ষেত্রে, মাথায় আকাশ
আমি তার থেকে এক মুঠো শুধু অনন্তকে লিখি।
সে বলে, আমি তো জানি, তুমি ওই শূন্য অবকাশ
কৃষকের কাছে বসে মাটির অনেক জন্ম শিখি।

জানি না কোথায় প্রেম, কেন তার মুখে ফাঁকা দাগ
মন থেকে মনে শুধু লাফ দেয় সার্কাসের বাঘ।

বৃষ্টিরা চলে যাচ্ছে
সৌহার্দ সিরাজ
মূলত ঘুমের ভেতরে লুকিয়ে থাকাটা আমার প্রিয় কাজের একটি
পাতার শব্দের ভেতরে আমার ছায়া এবং আমি
লুকিয়ে লুকিয়ে মধ্যবিত্ত পরাগায়ন দেখি
তোমার কালো চুলের সুগন্ধ আমার সাথে থাকে

হাতের তালুতে যতগুলো রেখা ততগুলো জিজ্ঞাসা
বহিরাগত জীবনে তার শিরোনাম হয় না
বরং বোশেখের রৌদ্রের মতো শক্ত হয়ে ওঠে
আমি তখন খুলে নিই ভাঁজ করে রাখা পুরনো দিনের চরিত্র
আর লিখে দিই তাদের চলে যাবার বিমর্ষপথে
শরতের দিব্যি আকাশ

বৃষ্টিরা চলে যাচ্ছে
আমার ছোট পৃথিবীটা ওদের বাঁধন খুলে রেখেছিল আগে
ঠাণ্ডা স্নান সেরে ওরা গরমের পাহাড়ে যাবে

তুমুল হাসি নিয়ে নস্টালজিক কাশফুল ফুলেফেঁপে
চোখের আরাধনায় নিজকে সাজিয়ে নিচ্ছে

পদচ্ছাপ মুছে যায়
মিলু শামস
পরিচিত শহরে লাগে নতুনের ছোঁয়া
ঘ্যাঁসঘেঁসে আওয়াজ তুলে
ফ্লাইওভারে ছুটে যায় ছোট বড় যান
যেন দূর কোনো সন্ধ্যার ব্যথাতুর বেহাগ
ভেসে আসে বাতাসে মৃদু
ধূসর শূন্যতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নাগরিক পথ-
কারা হেঁটেছিল এ পথে?
তুমুল ফসলের কালে, রোদতপ্ত
বয়সী কাল, কারা এঁকেছিল সময়ের বুকে
স্বতন্ত্র ম্যুরাল?
আজ ফুরলো কি গ্রহণের কাল?
খুঁজে নিল সবাই যে যার কক্ষপথ-

সভ্যতা এগোয় আকাশ রেলে চড়ে
চেনা সংকেত ক্ষয়ে যায়, নড়ে ওঠে মূল্যবোধ
সময়-ছুরি ফণা তোলে কৃতঘ্ন পকেটে

ভালবাসা বেঁচে থাকে আড়ালে আবডালে
যেভাবে বাঁচে ক্ষুধার্ত শ্রমিক
শ্রমের ন্যায্য মূল্য চেয়ে,

কারও বুক ভার হয়, ভালবাসা ক্ষত বাড়ায়
হৃদয় গভীরে
ঋণগুলো চড়া সুদে বেড়ে ওঠে
অচেনা আকাশে।

সন্ধ্যাযুগ
আদ্যনাথ ঘোষ
ইন্দ্রপ্রস্থের জমিনজুড়ে কাঁচাঘুম বিলাপ করে
দ্রৌপদীর দেহান্তরী দৃশ্যে। কালোবিষ ছোবল মারে-
আড়ালে আঁতাত করে সন্ধ্যাযুগ, গোপন কেউটের ফণায়।
জীবনের ব্যালকানিজুড়ে ধুতুড়ার গান নেমে আসে।
হিসেবের গরমিলে আমার ভেজা চোখ দুটো
ভাঁজে ভাঁজে রোদহীন ভাঙনের সুর ভুলে গিয়ে
অনন্ত দহন জ্বালায় কষ্টের অন্তরে জ্বলে; আর রাধারা
জ্বলে জ্বলন্ত প্রদীপে। ভেসে ওঠে তানপুরার বেদনার ধার।
তবু কী ভেজাচোখ আমাকে ডাকে উলঙ্গ সংলাপে!
না কি পোড়াচোখের খামটিজুড়ে চোখ কেঁদে ওঠে-
হেমন্তের ফেরারী জলে মৃত নদী চৈত্রের খরায়।
যদি তুমি একবার পাশ ফিরে আমারই শরীরী মুদ্রায়
গল্পের মোহে নিতি নিতি খেলা করে চলো-
তাহলে চোখের জলে তোমার দুঃখগুলো মুছে দিয়ে যাব।

ফিরে এসো
বুলু রানী ঘোষ
ফিরে এসো আরেকবার,
ফিরে এসো কবিতায়,
ভালোবাসায় এসো ফিরে,
ফেরো মুগ্ধতায়।

ফেরো প্রেয়সীর খোলা চুলে
উষ্ণ ঠোঁট, করতলে,
ফেরো যুগল নিঃশ্বাসে,
ফেরো আস্থা আর ভরসায়।

ফেরো শিশুর হাসিতে,
গানে, সুরে বাঁশিতে,
রাগে, অনুরাগে ফেরো
যানজটে, কর্মব্যস্ততায়।

ভিড় বাসে ঠেলাঠেলি,
জনারণ্য, চোরা গলি,
ফিরে এসো আবার তুমি,
ফেরো দীনতা, হীনতায়।

আনো স্বস্তি, অমৃত ধারা,
আনন্দ বাঁধনহারা,
শান্তির প্রলেপ আনো
এ আতঙ্ক বিভীষিকায়।

দু’চোখে স্বপ্ন আনো
নকশি আকাশ বুনো,
বিষহীন বাতাসে নিঃশ্বাস,
মুক্ত হোক ডানা নীলিমায়।

ফিরে এসো একটি বার,
পিপাসা দুর্নিবার,
ফিরে এসো মঙ্গলে, কল্যাণে
ফেরো সুদিনের প্রার্থনায়।

আগল ভেঙে এসো ফিরে,
মুখোশটা টেনে ছিঁড়ে,
তুচ্ছ করে সব বাঁধা,
মহামারী, প্রতিবন্ধকতায়।

শীতার্ত
স্নিগ্ধা বাউল
বিস্তারিত দুপুরে
চলে যায় গভীর ক্লান্ত ডানা মেলে
ঝাপটায় ক্ষতের হৃদয়
কবিতার মতো
পঙক্তি জুড়ে রোদের মিছিল
ডুবে ডুবে হারায় গভীর বেদনা
শ্রমজীবী সব নদীর মায়ায়,

রয়ে যায় এখানে
দূরের শহরে শীতের কুয়াশায়
ঝাপসা আয়নার প্রতিবিম্ব
চড়ুই ডানায় কার্তিকের বারান্দায়
ছোট ছোট ঘরের বিলুপ্ত সুখে-

মাঘের সিলিং-
পাটাতনে বিছানো পায়ের ছাপ
নেমে এসেছে এখানে।

ভুল বিকেলের সূর্য
লিজা ফাহমিদা
সুতির শাড়ির সঙ্গে চুড়ি
ছোট্ট টিপের মায়া,
রোদ ছোঁয়ানো পিচঢালা পথ
হিজল ডালের ছায়া।

পাতায় পাতায় চড়ুই এবং
রোদের প্রজাপতি,
ঢেউ খেলানো কাশের দুপুর
শুভ্র ফুলের নদী!

টুকরো বিকেল লুকিয়ে ফেলে
পিচঢালা রোদ্দুর,
লুকিয়ে ফেলে দ্বিধান্বিত
মেঘের সমুদ্দুর!

ভুল বিকেলের সূর্য ডোবে
মনের মধ্যে নদী,
বিস্মিত সব সত্যগুলো
মিথ্যে হতো যদি!

সোনালি আখ্যান
চামেলী বসু
মৃত্যুর মতো হিম নামে
ধানকন্যার সোনালি শরীরে
বৈকালিক স্নেহের রেখায়
উদম জমিন ছেড়ে উঠে যায় মন-
কে সেই চাষা?
ঝরাপাতার মৌতাতে পুড়ে
সোনার শরীর জুড়ে এঁকেছে যে
শিশিরের গোপন গাথা।

ভাবিনি
দিলীপ কির্ত্তুনিয়া
মানুষের কথাটি ভেবে ভেবে
আলোটি নিভিয়ে রেখেছি।
কিন্তু ছায়ার কথাটি-
একবারও ভাবিনি।
অন্ধকারে ছায়া আসে হেঁটে
- গাঢ় অন্ধকারে
একবারও ভাবিনি।
মানুষ ঘুমিয়ে গেলে
ছায়া জেগে ওঠে
সূর্যের মতোই হাঁটে বীরদর্পে
ইচ্ছেমতো- কভুও ভাবিনি।
উঠোনে বিশ্বাসের সবুজ পাতা ছিলো
তাই!
ছায়ার কথাটি ভাবিনি
আর তার দন্ত নখর-
ছায়ার কথাটি ভাবিনি
আর তার দস্যুবৃত্তি চরম-
সে যে সুন্দর গিলে খায়
শান্তি নষ্ট করে
সহ্য করে না মানুষের মাঝে প্রীতি
- ভাবিনি।

মহাকালের কাছে বয়ান
হানিফ রুবেল
জলছত্রের গভীর অন্তরঙ্গের একটি সবুজ দুপুর রেখেছি রক্তে
সে জলবৃন্তান্ত মহাকালের কাছে রেখে যাব বলে,
শব্দের কাঁধে রেখেছি মাথা- স্মতির সম্মুখে বিহ্বল দাঁড়িয়েছি
প্রাণের পথে ফেলে এক দীর্ঘ ছায়া,
যে ছায়ার বুকে নদী ছিল, তবুও শ্যামলতার অন্তরাল খুঁড়ে
আমি সে দিন পেয়েছিলাম এক কোমল আগুন।

তাকেই ধরেছিলাম বুকে, অগ্নির গূঢ়ার্থ জানব বলেই
উচ্ছ্বাসেই সমর্পিত হয়েছিলাম এক দাবানলের কাছে,
যার ছাইভস্ম জোয়ারে ভেসে ভেসে শেষে ছুঁয়েছিল ঘাট,
সেদিন জলের কাছে দাস হয়ে বসে ছিল এক তৃষ্ণার্ত সম্রাট।

রেণু
মামুন অপু
বুকসেলফের টগবগে স্বপ্নগুলো লাফিয়ে পড়ে
মায়ের রান্না করা ভাতের সাগরে
ভাত এবং স্বপ্নের তুমুল স্নান শেষে
উঠে আসে কৈ মাছের কানকো বেয়ে।

বাবা খেতে বসে; মা বেড়ে দেয় স্বপ্নের স্বাদে ধোঁয়া ওঠা,
বৃষ্টি ধোয়া নক্ষত্রের মতো সাদা ভাত
নেড়েচেড়ে বাবা হাসে মায়ের চোখে তাকিয়ে
মা অলৌকিক লজ্জায় নিমজ্জিত চাঁদের মতো আড়ষ্ট
এবং গূঢ় কণ্ঠে বললো, আমি এক টুকরো জীবন চাই
যে জীবন বেড়ে উঠবে তোমার রেণুতে।

নির্বাসন
শারমিন সুলতানা রীনা
এভাবে ডেকনা আর বলি বারবার
বেদনা শিখায় পোড়ে আমার ভুবন
নিবিড় তিমিরে থাকা নিয়েছি মানিয়ে
প্রদীপে জ্বলছে আলো দেখা তা বারণ
ছায়ার ভিতরে ছায়া বোঝে না মানব
মানুষ কেন যে ভোলে আত্মার খোরাক
মগজ খুবলে খায় সন্ত্রাসী আগুন
তবুও নীরব থাকা তোমাকে মানায়
কখনো বোঝনি মন মনের চাহিদা
জানতে চাওনি কেন এই নির্বাসন?

শিকড়ের ঘ্রাণ
হাশিম কিয়াম
গোলাপের পাপড়িতে জং ধরলে
চলে এসো ঘাসফুলের মাঠে
একতালু ঘোলাজলে ভিজিয়ে দিয়ো
পিপাসিত শিকড়ের জান
বিকেলের ডগার উপর উড়তে
থাকা তিলা ঘুঘুর ঝাঁক থেকে
খসে পড়লে একটি পালক
চূড়াখোঁপায় গুঁজে রেখো গেঁদা ফুল হয়ে যাবে
খালি গায় রোদ পোহানো
কবের এক যুবকের শরীরের বাসনা পেয়ে
চোখ বেয়ে জলপ্রপাত
খোলাচুল ওড়ানো উঠোনে আছড়ে পড়লে
তুমিও হয়তো ঘাসফুল হয়ে
ধুলোমাখা হাতের
আলতো ছোঁয়ায় হেসে উঠবে
তারাফোটা রাতের কোলে বসে
শুনবে তারাদের কষ্টগান
ইশারায় ডাকলে আলোর মই
বেয়ে নেমে শুঁকে যাবো শিকড়ের ঘ্রাণ

পাওয়া না পাওয়ার পৃথিবী
হাসান নাজমুল
শেষমেশ নিয়েছি বেছে না পাওয়ার পৃথিবী,
এ পৃথিবীর নিবিড় প্রেমে
নিশ্চিন্তে দেওয়া যায় পাড়ি
অসংখ্য রাতনদী;
এ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যেন বীর,
অস্থির জীবন এখানে এসেই
খুঁজে পায় নিবিড় ভুবন;
না চাওয়ায় না পাওয়ায়
আমৃত্যু শান্তির স্বাদ,

পাওয়ার পৃথিবীতে অতৃপ্তির ভিড়,
ভূমিষ্ঠ হয়েই যেত হয় ভেসে
কান্নার সাগরে;
শৈশবের শেষে বৈভব খুঁজতে গিয়ে
চোখে পড়ে কান্নার অদৃশ্য বাঁশি;
ক্রমেই বাড়তে থাকে চাওয়া ও পাওয়ার অংক,

অথচ পাওয়াহীন পৃথিবীতে
কী সুন্দর কেটে যায় দিন!

back to top