পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নুরুল আমিন মোল্লার ছোট ছেলে শহীদ জিহাদের বাবা-মা তার রক্তমাখা পোশাকের স্মৃতি নিয়েই তারা বেঁচে আছে। ছেলে পাশ করে চাকরি করবে এই আশা এখন স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েই রয়ে গেল। বিগত ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৪টার সময় স্বেরাচার বিরোধী ও কোটা আন্দোলন শেষ করে বাসায় ফেরার পথে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হলে তার সহপাঠীরা গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসলে সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরদিন শনিবার রাত ১০টায় জিহাদের মৃত্যুদেহ গাড়িযোগে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর পুলিশের তৎপরতায় পরদিন ২১ জুলাই সকালে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শনিবার ১৯ জুলাই শহীদ জিহাদের মৃত্যুর ১ বছর পূর্ন হলেও বাবা-মা এখনও চোখের জ্বলে ভেসে যাচ্ছে। পুত্র শোকে তারা আজও নির্বাক হয়ে আছে।
উপজেলা সদরের সূর্য সন্তান কোটাবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জিহাদ হোসেনকে (২৫) হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাঁধ ভাঙা অশ্রুর জোয়ারে আজও ভাসছে তাদের চোখ। ছেলের ছবি বুকে চেপে মা অনবরত কেঁদেই চলছেন। পাগল প্রায় বাবা। ছোট ভাইকে হারিয়ে আর্তনাদ করছেন বড় এক ভাই ও দুই বোন। জিহাদ উপজেলা সদরের মোল্লাপট্টি এলাকার নুরুল আমিন মোল্লা (৫৭) ও শাহিনুর বেগম (৫২) দম্পতির ছেলে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট ছিলেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে সরকারি কবি নজরুল কলেজে ইতিহাস বিভাগে মার্স্টাসে অধ্যয়নরত ছিল। জিহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা শাহিনুর বেগম তার আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। প্রিয় সন্তানের ছবি বুকে জড়িয়ে অসহায়ের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে চিৎকার করে বার বার বলছেন, বাবা জিহাদ, মৃত্যুর সময় তুমি কেমন করছিলা! আমাকে মা মা করে ডাকছিলা! বাবাগো আমিতো বাড়িতে ছিলাম। তোমার ডাকে সাড়া দিতে পারি নাই। জিহাদকে হারিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তার বাবা নুরুল আমিন মোল্লা। শোকে বাকরুদ্ধ বড় ভাই জিন্নাত হোসেন (৩০) এবং দুই বোন জান্নাতুল (২৫) ও জয়নব (২০)। তাকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল পরিবারের সকলের। তার এমন অকাল মৃত্যুতে পরিবারটির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। শোকের ছায়া স্বজন ও প্রতিবেশীদের চোখে মুখে। বিগত ২০২৪ ইং সালের ১৯ জুলাই কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার দনিয়া কলেজ ও কাজলা ফুটওভার ব্রিজের মাঝামাঝি রাস্তায় জিহাদ বুকের ডান পাঁজরে গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় সহপাঠী ও বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে ওই এলাকার সালমান হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশংকাজনক অবস্থায় দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে ভর্তির কিছুক্ষণ পর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে ২০ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আবৃত কফিনে জিহাদের মরদেহ উপজেলা সদরের মোল্লাপট্টি এলাকায় নিজ বাসভবনের সামনে এসে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আতœীয় স্বজন, প্রতিবেশি, বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতজনদের কান্না ও বুকফাটা আর্তনাদে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। পরে ২১ জুলাই ভোরে দশমিনা সদর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় চত্বরে জিহাদের জানাজার নামাজ শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত জিহাদ দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও ঢাকার ওয়ারী এলাকায় স্যার সলিমুল্লাহ কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এইচএসসি শেষ করে সরকারি কবি নজরুল কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন এবং একই কলেজে ওই বিষয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জিহাদের বাবা নুরুল আমিন মোল্লা বলেন, আমার ছেলে জিহাদ মেধাবী ছাত্র ছিল। কেমনে কি হয়ে গেল জানি না। আমার ছেলেকে যারা খুন করেছে আমি তাদের বিচারের দাবি জানাই। মা শাহিনুর বেগম বলেন, আমার মতো আর কোনো মায়ের বুক যেনো এভাবে খালি না হয়। বড় বোন জান্নাতুল বলেন, দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের তথা দেশবাসীর অধিকার আদায় করতে গিয়ে আমার ছোট ভাই জীবন উৎসর্গ করেছে। বড় ভাই জিন্নাত হোসেন সংবাদ প্রতিনিধিকে বলেন, ১৯ জুলাই বিকেলে ফোন করে জিহাদ বলে আমার বুকে গুলি লেগেছে। বাবা-মাকে বলিস না, বাঁচলে দেখা হবে। ওই দিনই ছিল ছোট ভাই জিহাদের সাথে শেষ কথা। ভাই জিহাদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রাণ দিয়েছে। দেশে বিদ্যমান স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আন্দোলন করেছে। আগামীর বাংলাদেশ যেনো সুন্দর হয়, দুর্নীতিমুক্ত হয়। যুগ যুগ ধরে আগামী প্রজন্ম যেনো আমার ভাইয়ের এই অবদান মনে রাখে। আমার ভাইয়ের আত্মাও শান্তি পাবে।
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নুরুল আমিন মোল্লার ছোট ছেলে শহীদ জিহাদের বাবা-মা তার রক্তমাখা পোশাকের স্মৃতি নিয়েই তারা বেঁচে আছে। ছেলে পাশ করে চাকরি করবে এই আশা এখন স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েই রয়ে গেল। বিগত ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৪টার সময় স্বেরাচার বিরোধী ও কোটা আন্দোলন শেষ করে বাসায় ফেরার পথে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হলে তার সহপাঠীরা গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসলে সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরদিন শনিবার রাত ১০টায় জিহাদের মৃত্যুদেহ গাড়িযোগে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর পুলিশের তৎপরতায় পরদিন ২১ জুলাই সকালে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শনিবার ১৯ জুলাই শহীদ জিহাদের মৃত্যুর ১ বছর পূর্ন হলেও বাবা-মা এখনও চোখের জ্বলে ভেসে যাচ্ছে। পুত্র শোকে তারা আজও নির্বাক হয়ে আছে।
উপজেলা সদরের সূর্য সন্তান কোটাবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জিহাদ হোসেনকে (২৫) হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাঁধ ভাঙা অশ্রুর জোয়ারে আজও ভাসছে তাদের চোখ। ছেলের ছবি বুকে চেপে মা অনবরত কেঁদেই চলছেন। পাগল প্রায় বাবা। ছোট ভাইকে হারিয়ে আর্তনাদ করছেন বড় এক ভাই ও দুই বোন। জিহাদ উপজেলা সদরের মোল্লাপট্টি এলাকার নুরুল আমিন মোল্লা (৫৭) ও শাহিনুর বেগম (৫২) দম্পতির ছেলে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট ছিলেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কোনাপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে সরকারি কবি নজরুল কলেজে ইতিহাস বিভাগে মার্স্টাসে অধ্যয়নরত ছিল। জিহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা শাহিনুর বেগম তার আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। প্রিয় সন্তানের ছবি বুকে জড়িয়ে অসহায়ের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে চিৎকার করে বার বার বলছেন, বাবা জিহাদ, মৃত্যুর সময় তুমি কেমন করছিলা! আমাকে মা মা করে ডাকছিলা! বাবাগো আমিতো বাড়িতে ছিলাম। তোমার ডাকে সাড়া দিতে পারি নাই। জিহাদকে হারিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তার বাবা নুরুল আমিন মোল্লা। শোকে বাকরুদ্ধ বড় ভাই জিন্নাত হোসেন (৩০) এবং দুই বোন জান্নাতুল (২৫) ও জয়নব (২০)। তাকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল পরিবারের সকলের। তার এমন অকাল মৃত্যুতে পরিবারটির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। শোকের ছায়া স্বজন ও প্রতিবেশীদের চোখে মুখে। বিগত ২০২৪ ইং সালের ১৯ জুলাই কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার দনিয়া কলেজ ও কাজলা ফুটওভার ব্রিজের মাঝামাঝি রাস্তায় জিহাদ বুকের ডান পাঁজরে গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত অবস্থায় সহপাঠী ও বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে ওই এলাকার সালমান হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশংকাজনক অবস্থায় দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে ভর্তির কিছুক্ষণ পর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে ২০ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় আবৃত কফিনে জিহাদের মরদেহ উপজেলা সদরের মোল্লাপট্টি এলাকায় নিজ বাসভবনের সামনে এসে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আতœীয় স্বজন, প্রতিবেশি, বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতজনদের কান্না ও বুকফাটা আর্তনাদে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। পরে ২১ জুলাই ভোরে দশমিনা সদর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় চত্বরে জিহাদের জানাজার নামাজ শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত জিহাদ দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি ও ঢাকার ওয়ারী এলাকায় স্যার সলিমুল্লাহ কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এইচএসসি শেষ করে সরকারি কবি নজরুল কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন এবং একই কলেজে ওই বিষয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জিহাদের বাবা নুরুল আমিন মোল্লা বলেন, আমার ছেলে জিহাদ মেধাবী ছাত্র ছিল। কেমনে কি হয়ে গেল জানি না। আমার ছেলেকে যারা খুন করেছে আমি তাদের বিচারের দাবি জানাই। মা শাহিনুর বেগম বলেন, আমার মতো আর কোনো মায়ের বুক যেনো এভাবে খালি না হয়। বড় বোন জান্নাতুল বলেন, দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের তথা দেশবাসীর অধিকার আদায় করতে গিয়ে আমার ছোট ভাই জীবন উৎসর্গ করেছে। বড় ভাই জিন্নাত হোসেন সংবাদ প্রতিনিধিকে বলেন, ১৯ জুলাই বিকেলে ফোন করে জিহাদ বলে আমার বুকে গুলি লেগেছে। বাবা-মাকে বলিস না, বাঁচলে দেখা হবে। ওই দিনই ছিল ছোট ভাই জিহাদের সাথে শেষ কথা। ভাই জিহাদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রাণ দিয়েছে। দেশে বিদ্যমান স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আন্দোলন করেছে। আগামীর বাংলাদেশ যেনো সুন্দর হয়, দুর্নীতিমুক্ত হয়। যুগ যুগ ধরে আগামী প্রজন্ম যেনো আমার ভাইয়ের এই অবদান মনে রাখে। আমার ভাইয়ের আত্মাও শান্তি পাবে।