সবাই উদ্বিগ্ন, সতর্ক হওয়া উচিত : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
ভারতফেরত দুই বাংলাদেশির শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) শনাক্ত হয়েছে। আরও চারজনের নমুনার সঙ্গে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের মিল পাওয়া গেছে। তবে দেশে ভারতের যে দুটি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে সেটি ‘ডাবল’ বা ‘ট্রিপল’ মিউট্যান্ট কিনা সেটি এখনও নিশ্চিত নয়। শনাক্ত হওয়া ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দুটি অধিক সংক্রামক বা প্রাণঘাতী নয় বলেও মনে করছেন অণুজীব বিজ্ঞানীরা। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। সবাইকে এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন ও সতর্ক হওয়া উচিত।
শনিবার (৮ মে) বিকেল সাড়ে তিনটায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, ‘গ্লোবাল ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে ছয়টি ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। চারটি কাছাকাছি মিল রয়েছে আর দুটি নিশ্চিত পাওয়া গেছে।’ করোনায় আক্রান্ত এই ছয়জনই যশোরের বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন।
তিনি জানান, নমুনাগুলো দুটি আলাদা জায়গায় করা হয়েছে। একটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি), অন্যটি আইইডিসিআরে। দুই প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাতেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে।
এর আগে শনিবার দুপুরে ‘যবিপ্রবি’ কর্তৃপক্ষ দেশে দু’জনের দেহে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করার কথা জানান। জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটাতে (জিআইএসআইডি) শনিবার বাংলাদেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করার তথ্য প্রকাশ করা হয়।
করোনার ভারতীয় ধরনটির বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হয়েছে ‘বি.১.৬১৭’। মিউটেশনের কারণে এর তিনটি ‘সাব টাইপ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া গেছে ‘বি.১.৬১৭.২’ ধরনটি। এটি অন্য ‘সাব টাইপ’ ‘ডাবল ও ট্রিপল’ মিউট্যান্টের মতো ‘অধিক সংক্রামক’ ও ‘প্রাণঘাতী’ নয় বলে অণুজীব বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন।
দেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে কাজ করছেন অণুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। তিনি শনিবার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যে ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৬১৭.২) বাংলাদেশে পাওয়া গেছে, সেখানে ই৪৮৪কিউ মিউটেশনটি নেই। এটা থাকলে খুব ক্ষতিকর হতো। এখানে আমাদের টিকা কাজ করবে বলে মনে হয়।’
যবিপ্রবি ‘জিনোম সেন্টারে’ নমুনা সিকুয়েন্সিং করে শনিবার দুপুরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে শনাক্তের তথ্য প্রকাশ করেন যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ইকবাল কবীর জাহিদ। উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন জানান, ভারতফেরত করোনা রোগীর নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। ল্যাবে কিছু সিকোয়েন্স করে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স করার প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি তারা আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং যশোর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি অবহিত করেছেন বলে জানান উপাচার্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সংক্রান্ত হওয়ার কোন তথ্য নেই। জিআইএসআইডির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ হয়েছে বলে আমরা শুনেছি।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যানুযায়ী, গত মার্চে দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। সম্প্রতি দেশটিতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনা সংক্রমণ। গত কয়েকদিন ধরে ভারতে দৈনিক চার লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। শনিবারও দেশটিতে চার হাজারের বেশি করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
ভারতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হয়েছে ‘বি.১.৬১৭’। এটি প্রথম শনাক্ত হয় গত অক্টোবরে। করোনার এই ধরনটিকে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ও বলা হয়। ওই ধরনটি উল্লেখযোগ্য দুই পরিবর্তনের পর তৈরি হওয়ায় এটিকে ‘ডাবল মিউট্যান্ট’, ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’ বলছেন ভারতের গবেষকরা। অক্টোবরে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের সময় দেশটিতে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। বিশ্বের অন্তত ১৮টি দেশে করোনার ভারতীয় ধরনটির সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে।
যবিপ্রবির অণুজীব বিজ্ঞানী ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে ভারতফেরত ১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন কোভিড-১৯ পজেটিভ হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বি-১.৬১৭.২ এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে এটি ডাবল মিউটেশন নয়।’
যেহেতু একটি ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, ফলে ‘ডাবল মিউটেশন’ বা অন্য ভ্যারিয়েন্টও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে ড. ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, কোন রোগীর নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, তা যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা এই রোগীদের আলাদাভাবে আইসোলেশনে রেখেছে।
ভারতের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে ড. ইকবাল কবীর বলেন, ‘ইউকেতে এটি ছিল ৫৯ শতাংশ। ভারতীয় এ ধরনটি ২০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের সক্ষমতা রাখে। ভ্যাকসিন পরবর্তী ‘সেরাম এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ এ ধরনকে কম শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে।’
জিআইএসআইডির তথ্য বলছে, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (বি-১.৬১৭)) যে দুইজনের শরীরে পাওয়া গেছে তাদের বয়স ৪১ এবং ২৩ বছর; তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী। তারা ভারতে ভ্রমণে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের একজন খুলনার এবং অপরজন ঢাকার বাসিন্দা। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয় গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল। তাদের একজনের ভ্যাকসিন (টিকা) নেয়ার কোন ইতিহাস নেই। অপরজনের বিষয়ে এ সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই।
দু’জনের দেহে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় সাংবাদিকদের জানান, করোনা আক্রান্ত দু’জনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কোন তথ্য আইইডিসিআর থেকে তারা পাননি। আইইডিসিআর থেকে তথ্য পাওয়ার পর তারা এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন।
ভারতে করোনা সংক্রমণ বিপর্যয়ে রূপ নেয়ায় এবং ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশটির সঙ্গে সব সীমান্ত ১৪ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। গত ২৬ এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। শনিবার সরকার সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আরও ১৪ দিন বাড়িয়েছে। তবে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহনের যাতায়াত অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও ভারতে অবস্থানরত যেসব বাংলাদেশির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে তারা ভারতে বাংলাদেশি দূতাবাসের বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন।
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ বাড়লো
ভারতের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দেশটির সঙ্গে স্থলসীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আরও ১৪ দিন বেড়েছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত বন্ধ রয়েছে। যা ৯ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকার কথা ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ১০ মে থেকে আরও ১৪ দিন সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এ অবস্থায় ভারত থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকবে। শনিবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল সভায় স্থলসীমান্ত বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের যেসব নাগরিক চিকিৎসার জন্য ভারতে আছেন এবং যাদের ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের কম, শুধু তারা বেনাপোল, আখাউড়া ও বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। এ নিয়ম প্রথম দফায় সিদ্ধান্তের পর চালু ছিল। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় দেশে ফিরতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের দিল্লি, কলকাতা ও আগরতলার বাংলাদেশ মিশনের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। অনাপত্তিপত্র ও ৭২ ঘণ্টা আগের নেগেটিভ টেস্ট সাপেক্ষে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন। আর অনাপত্তিপত্র পেতে প্রয়োজনীয়তা, পাসপোর্ট কপি, ভিসার কপি, টেলিফোন ও ঠিকানা দিয়ে আবেদন করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ২৬ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ১৪ দিন ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার।
সবাই উদ্বিগ্ন, সতর্ক হওয়া উচিত : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
শনিবার, ০৮ মে ২০২১
ভারতফেরত দুই বাংলাদেশির শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) শনাক্ত হয়েছে। আরও চারজনের নমুনার সঙ্গে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের মিল পাওয়া গেছে। তবে দেশে ভারতের যে দুটি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে সেটি ‘ডাবল’ বা ‘ট্রিপল’ মিউট্যান্ট কিনা সেটি এখনও নিশ্চিত নয়। শনাক্ত হওয়া ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দুটি অধিক সংক্রামক বা প্রাণঘাতী নয় বলেও মনে করছেন অণুজীব বিজ্ঞানীরা। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। সবাইকে এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন ও সতর্ক হওয়া উচিত।
শনিবার (৮ মে) বিকেল সাড়ে তিনটায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, ‘গ্লোবাল ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে ছয়টি ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। চারটি কাছাকাছি মিল রয়েছে আর দুটি নিশ্চিত পাওয়া গেছে।’ করোনায় আক্রান্ত এই ছয়জনই যশোরের বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন।
তিনি জানান, নমুনাগুলো দুটি আলাদা জায়গায় করা হয়েছে। একটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি), অন্যটি আইইডিসিআরে। দুই প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাতেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে।
এর আগে শনিবার দুপুরে ‘যবিপ্রবি’ কর্তৃপক্ষ দেশে দু’জনের দেহে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করার কথা জানান। জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটাতে (জিআইএসআইডি) শনিবার বাংলাদেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করার তথ্য প্রকাশ করা হয়।
করোনার ভারতীয় ধরনটির বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হয়েছে ‘বি.১.৬১৭’। মিউটেশনের কারণে এর তিনটি ‘সাব টাইপ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া গেছে ‘বি.১.৬১৭.২’ ধরনটি। এটি অন্য ‘সাব টাইপ’ ‘ডাবল ও ট্রিপল’ মিউট্যান্টের মতো ‘অধিক সংক্রামক’ ও ‘প্রাণঘাতী’ নয় বলে অণুজীব বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন।
দেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে কাজ করছেন অণুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। তিনি শনিবার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যে ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৬১৭.২) বাংলাদেশে পাওয়া গেছে, সেখানে ই৪৮৪কিউ মিউটেশনটি নেই। এটা থাকলে খুব ক্ষতিকর হতো। এখানে আমাদের টিকা কাজ করবে বলে মনে হয়।’
যবিপ্রবি ‘জিনোম সেন্টারে’ নমুনা সিকুয়েন্সিং করে শনিবার দুপুরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে শনাক্তের তথ্য প্রকাশ করেন যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ইকবাল কবীর জাহিদ। উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন জানান, ভারতফেরত করোনা রোগীর নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। ল্যাবে কিছু সিকোয়েন্স করে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স করার প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি তারা আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং যশোর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি অবহিত করেছেন বলে জানান উপাচার্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সংক্রান্ত হওয়ার কোন তথ্য নেই। জিআইএসআইডির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ হয়েছে বলে আমরা শুনেছি।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যানুযায়ী, গত মার্চে দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। সম্প্রতি দেশটিতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনা সংক্রমণ। গত কয়েকদিন ধরে ভারতে দৈনিক চার লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। শনিবারও দেশটিতে চার হাজারের বেশি করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
ভারতে তৈরি হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটির বৈজ্ঞানিক নাম দেয়া হয়েছে ‘বি.১.৬১৭’। এটি প্রথম শনাক্ত হয় গত অক্টোবরে। করোনার এই ধরনটিকে ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ও বলা হয়। ওই ধরনটি উল্লেখযোগ্য দুই পরিবর্তনের পর তৈরি হওয়ায় এটিকে ‘ডাবল মিউট্যান্ট’, ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’ বলছেন ভারতের গবেষকরা। অক্টোবরে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের সময় দেশটিতে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। বিশ্বের অন্তত ১৮টি দেশে করোনার ভারতীয় ধরনটির সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে।
যবিপ্রবির অণুজীব বিজ্ঞানী ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে ভারতফেরত ১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন কোভিড-১৯ পজেটিভ হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বি-১.৬১৭.২ এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে এটি ডাবল মিউটেশন নয়।’
যেহেতু একটি ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, ফলে ‘ডাবল মিউটেশন’ বা অন্য ভ্যারিয়েন্টও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে ড. ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, কোন রোগীর নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, তা যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা এই রোগীদের আলাদাভাবে আইসোলেশনে রেখেছে।
ভারতের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে ড. ইকবাল কবীর বলেন, ‘ইউকেতে এটি ছিল ৫৯ শতাংশ। ভারতীয় এ ধরনটি ২০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের সক্ষমতা রাখে। ভ্যাকসিন পরবর্তী ‘সেরাম এবং মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’ এ ধরনকে কম শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে পারে।’
জিআইএসআইডির তথ্য বলছে, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (বি-১.৬১৭)) যে দুইজনের শরীরে পাওয়া গেছে তাদের বয়স ৪১ এবং ২৩ বছর; তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী। তারা ভারতে ভ্রমণে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের একজন খুলনার এবং অপরজন ঢাকার বাসিন্দা। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয় গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল। তাদের একজনের ভ্যাকসিন (টিকা) নেয়ার কোন ইতিহাস নেই। অপরজনের বিষয়ে এ সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই।
দু’জনের দেহে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় সাংবাদিকদের জানান, করোনা আক্রান্ত দু’জনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কোন তথ্য আইইডিসিআর থেকে তারা পাননি। আইইডিসিআর থেকে তথ্য পাওয়ার পর তারা এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন।
ভারতে করোনা সংক্রমণ বিপর্যয়ে রূপ নেয়ায় এবং ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশটির সঙ্গে সব সীমান্ত ১৪ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। গত ২৬ এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। শনিবার সরকার সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আরও ১৪ দিন বাড়িয়েছে। তবে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহনের যাতায়াত অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও ভারতে অবস্থানরত যেসব বাংলাদেশির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে তারা ভারতে বাংলাদেশি দূতাবাসের বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন।
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ বাড়লো
ভারতের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দেশটির সঙ্গে স্থলসীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আরও ১৪ দিন বেড়েছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত বন্ধ রয়েছে। যা ৯ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকার কথা ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ১০ মে থেকে আরও ১৪ দিন সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এ অবস্থায় ভারত থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকবে। শনিবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল সভায় স্থলসীমান্ত বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের যেসব নাগরিক চিকিৎসার জন্য ভারতে আছেন এবং যাদের ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের কম, শুধু তারা বেনাপোল, আখাউড়া ও বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। এ নিয়ম প্রথম দফায় সিদ্ধান্তের পর চালু ছিল। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় দেশে ফিরতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের দিল্লি, কলকাতা ও আগরতলার বাংলাদেশ মিশনের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। অনাপত্তিপত্র ও ৭২ ঘণ্টা আগের নেগেটিভ টেস্ট সাপেক্ষে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন। আর অনাপত্তিপত্র পেতে প্রয়োজনীয়তা, পাসপোর্ট কপি, ভিসার কপি, টেলিফোন ও ঠিকানা দিয়ে আবেদন করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ২৬ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ১৪ দিন ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার।