alt

সারাদেশ

দুর্ভোগের যাত্রা যেতেই হবে বাড়ি

ঘাটে, পথে ভোগান্তি, লকডাউন আরও বাড়তে পারে

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ : মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১

দুর্ভোগের অপর নাম ঈদযাত্রা। আনন্দের ঈদযাত্রা এখন দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। তবু যেতেই হবে বাড়ি। ঈদের আর মাত্র এক-দুইদিন বাকি। তাই শেষ সময়ে দুর্ভোগ, ভোগান্তি ও আতঙ্কের মধ্যেও ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সরকারি বিধিনিষেধের কারণে বন্ধ রয়েছে আন্তঃজেলা বাস, লঞ্চ ও ট্রেন সার্ভিস। ঈদের পরে যা আরও এক সপ্তাহ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু বন্ধ নেই মানুষের ঈদযাত্রা। মঙ্গলবারও (১১ মে) ঢাকা থেকে বের হওয়ার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ও ফেরিঘাট ছিল ঘরমুখো মানুষের জটলা। যে যেভাবে পেরেছেন শুধু ছুটছেন। উদ্দেশ্যেÑ গ্রামের বাড়িতে যাওয়া। বাস না থাকার কারণে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা, পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ও মাইক্রোবাসে তিন-চারগুণ ভাড়া দিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। তবে ভাড়া বেশি হওয়ায় মঙ্গলবারও ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে হাজারো মানুষের।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও ফেরিঘাট ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই মানুষের চাপ বাড়তে থাকে ঢাকা থেকে বের হওয়া বিভিন্ন সড়কের মুখে। দিন বাড়ার সঙ্গে তা বৃদ্ধি পায়। দূরপাল্লার বাস বন্ধ কিন্তু জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চালু থাকায় ভেঙে ভেঙে গ্রামের বাড়িতে যেতে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের। খোলা পণ্যবাহী ট্রাকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে যাত্রাপথে। যাত্রাপথে পুলিশের বাধা ও ঘাটে ঘাটে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। করোনার ভয় থাকলেও তাদের মধ্যে ছিল না কোন স্বাস্থ্যবিধি। কিছু যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকলেও গরম ও ভোগান্তির কারণে তা মুখ থেকে গলায় নামিয়ে এনেছেন বলে যাত্রীরা জানান।

রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় সায়েম নামের কুমিল্লার এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘গাড়ি সংকটের কথা চিন্তা করে আগেভাগেই স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়েছি। এখন ঢাকা-কুমিল্লায় যাব কিন্তু গাড়ি নেই। আগে বাসে ১৫০-১৮০ টাকা যেতে পারতাম। এখন মাইক্রোবাসে ভাড়া যাচ্ছে ১০০০ টাকা। তাই সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী দিকে হেঁটে যাচ্ছি। পিকআপ ও ট্রাক পেলে উঠে যাব।’

সাইদুল নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ‘মাওয়া ফেরিঘাটে যাব সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া চাই ৬০০ টাকা। সকালে ৪০০ টাকায় গেছে। এখন বলে ৬০০ টাকায়। যাত্রী বেশি দেখে ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে। লকডাউনের কারণে গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছে। অন্যান্য সময় ৮০ টাকা দিয়ে মাওয়া গেছি। এখন ৮০ টাকার ভাড়া ৬০০ টাকা দিতে হবে। এই হলো আমাদের লকডাউনের সুফল। আমরা গরিব মানুষ এটা ঠিকই মনে থাকবে। করোনার কারণে কোন মানুষের গ্রামে যাওয়া বন্ধ থাকবে না। গত বছর গেছে এবারো যাবে কিন্তু মানুষদের এভাবে দুর্ভোগে ফেলা সরকারের ঠিক হয়নি। যদি লকডাউন দেয়া দরকার তাহলে সম্পূর্ণ লকডাউন দেয়া উঠিত। একটা খুলে দেবে অন্যটা বন্ধ রাখবে এটা ঠিক নয়।’

গুলিস্তান এলাকায় বাবুল মিয়া নামের টাঙ্গাইলের এক যাত্রী বলেন, ‘ভেঙে ভেঙে গ্রামে যাচ্ছি। গুলিস্তান থেকে গাজীপুর যাব। গাজীপুর থেকে অন্য বাসের টাঙ্গাইলে যাব। ভাড়া তো বেশি লাগবেই। গাজীপুরে গাড়ি পেতে সমস্যা হচ্ছে। আমার এক আত্মীয় গেছে। সকাল থেকে অপেক্ষা করছে গাড়ি নেই। ট্রাকে ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাড়িতে গেছে।’

রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় কামাল নামের নীলফামারীর এক যাত্রী বলেন, ‘ঢাকায় একটি হোটেলে কাজ করি। ঈদের ছুটি বাড়িতে যাচ্ছি। লকডাউনের কারণে বেচা-বিক্রি কম। তাই আগেই যেতে বলেছিল ম্যানেজার কিন্তু গাড়ি বন্ধ থাকায় যেতে পারিনি। এখন বাস চলে। তাই যাচ্ছি। তবে বড় বাস বন্ধ। সমস্যা নেই। ভেঙে ভেঙে যাব। ঢাকা থেকে গাজীপুর যাব। সেখান থেকে অন্য বাসে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। ভাড়া একটু বেশি লাগবে। তবে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা অন্য রকম আনন্দ।’

যাত্রাবাড়ী এলাকায় স্বপন নামের এক মাইক্রোবাস চালক বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন জেলার যাত্রী পরিবহন করছি। গতকালও (সোমবার) ১৭ যাত্রী কিশোরগঞ্জ নিয়ে গেছি। যাত্রাপথে পুলিশের কারণে আটজনকে মাঝপথে নামিয়ে দিতে হয়েছে। কারণ স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে। একসিটে একজন যাত্রী তুলতে হবে। জনপ্রতি যাত্রী ২ হাজার টাকা থেকে ২৬০০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়। তবে ঢাকা ফেরাপথে যাত্রী না থাকায় বেশি ভাড়া নেয়া হয় বলে জানান তিনি।

লঞ্চ বন্ধ থাকায় ফেরিঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ঢল

করোনাভাইরাসের কারণে লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকায় বরিশালসহ ২১ জেলার দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা শিমুলিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট পার হয়ে ভেঙে ভেঙে বাড়িতে যেতে দেখা গেছে। তবে সব ফেরি চালু করে দেয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি অনেকটা কমেছে। সহজেই ফেরিতে উঠতে পারছে বলে যাত্রীরা জানান। গত সোমবার বিকেল থেকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সব ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে নৌরুটে। এতে যানবাহন ও যাত্রীরা নির্বিঘ্নে পদ্মা পার হতে পারছেন। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে রোরো, ডাম্প, মিডিয়াম, কে-টাইপ ও ভিআইপিসহ মোট ১৬টি ফেরি চলাচল করছে বলে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি)’র সূত্র জানায়।

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) থেকে প্রতিনিধি জানান, যাত্রীর ঢল ঠেকাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের একাধিক স্থানে বসানো হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির চেকপোস্ট। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিজিবির চেকপোস্ট থেকে পাটুরিয়া ঘাটগামী গাড়ি ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাস থামিয়ে ভোটার আইডি কার্ড চেক করে যাত্রী নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এরপরও পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে তিনটি ফেরি পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। প্রতিটি ফেরিতেই অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি ছোট গাড়ি, মোটরসাইকেল ও যাত্রী ছিল। বিকল্প পথে কিছুসংখ্যক রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও সিএনজিতে করে যাত্রীদের ঘাটে আসতে দেখা গেছে।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, নিয়মানুযায়ী সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই-তিনটি ফেরি দিয়ে রোগী ও লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স পার করা করা হয়। এর সঙ্গে যাত্রী ও কিছুসংখ্যক ছোট গাড়িও পার হয়। তবে যানবাহনের চাপ থাকলে রাতের বেলায় ফেরি বাড়ানো হয়। চলমান লকডাউনে দিনের বেলায় স্বাভাবিক ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে।

সরকারি বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বৃদ্ধির পরিকল্পনা

দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে চলমান ‘লকডাউন’ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের পরিকল্পনা আছে আর এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর। কারণ দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এটা ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। সংক্রমণ এড়াতে এই সিদ্ধান্ত আগামী ১৬ মে জানানো হবে।

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, মেয়াদ আরও বাড়লো

হিটস্ট্রোকে ৪ জনের মৃত্যু

ছবি

ঈদযাত্রা : মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ৫১ শতাংশ, সাড়ে ৪২ শতাংশ নিহত

ছবি

১৫ শ্রমিক নিয়ে সাজেকের খাদে ট্রাক, নিহত ৯

ছবি

রাজধানীতে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় ভ্যানচালক নিহত

ছবি

থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

ছবি

বাসের ধাক্কায় চুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু নরসিংদীর বাড়িতে কান্নার রোল

ছবি

অপহরণ ও মারধরের শিকার দেলোয়ার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিংড়া উপজেলার চেয়ারম্যান

ছবি

রাজশাহীতে বৃষ্টি নামাতে বিয়ের পিঁড়িতে দুই ব্যঙ

ছবি

রংপুরে সাজাপ্রাপ্ত দুই যুবদল নেতাকে কারাগাওে পাঠানোর নির্দেশে বিক্ষোভ

ছবি

আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’র কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ

ছবি

পরিবার পাবে ১০ লাখ টাকা চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, আল্টিমেটাম

তিস্তাসহ ৫৪ অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যা দাবিতে বাসদের লং মার্চ

ছবি

লালমনিরহাটে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন হাজার হাজার মুসল্লি

ছবি

অসহায় পরিবারের নিরুপায় নির্মমতা! চুরি ঠেকাতে ৩ বছর শেকল বন্দি কিশোর

ছবি

ছাত্র হত্যায় যুবকের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

হোটেলে আটকে রেখে কিশোর ধর্ষণ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ছবি

ক্যাসিনোকাণ্ডের সেই সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল

ভৌতিক বিলের খপ্পর চট্টগ্রামে মিটার-সংযোগবিহীন গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল প্রায় ৭ লাখ টাকা

ছবি

এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরেছে ৩৬৭ জনের প্রাণ

ছবি

চুয়েটের ২ শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসের চালক গ্রেপ্তার

ছবি

মাদারীপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে নিহত ১, আহত ১০

ছবি

মায়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজে দেশে ফিরছেন ১৫৩ বাংলাদেশি

ছবি

কক্সবাজারে স্পেশাল ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত

ছবি

ট্রেন লাইনচ্যুত, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

ছবি

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

নড়াইলে মাদক মামলায় ২ জনের যাবতজ্জীবন

আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’র কারণ খুঁজছে পুলিশ

ছবি

বাগেরহাটে যাত্রীবাহি বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে, নিহত ১

ছবি

৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট

ছবি

ফরিদপুরে দুই ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ

ছবি

নন্দীগ্রামে মসজিদের মিটিংয়ে হুমকি, নামাজ শেষে হামলা

ছবি

কক্সবাজারের তিন উপজেলায় কে কোন প্রতীক পেলেন

ছবি

গাজীপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে হাতী মরদেহ উদ্ধার

ছবি

মোরেলগঞ্জে বৃষ্টির জন্য ইসতেস্কার নামাজ আদায়

ছবি

তীব্র গরম ও তাপদাহে অতিষ্ঠ মধুপুরবাসী বাড়ছে নানা রোগ

tab

সারাদেশ

দুর্ভোগের যাত্রা যেতেই হবে বাড়ি

ঘাটে, পথে ভোগান্তি, লকডাউন আরও বাড়তে পারে

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১

দুর্ভোগের অপর নাম ঈদযাত্রা। আনন্দের ঈদযাত্রা এখন দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। তবু যেতেই হবে বাড়ি। ঈদের আর মাত্র এক-দুইদিন বাকি। তাই শেষ সময়ে দুর্ভোগ, ভোগান্তি ও আতঙ্কের মধ্যেও ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সরকারি বিধিনিষেধের কারণে বন্ধ রয়েছে আন্তঃজেলা বাস, লঞ্চ ও ট্রেন সার্ভিস। ঈদের পরে যা আরও এক সপ্তাহ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু বন্ধ নেই মানুষের ঈদযাত্রা। মঙ্গলবারও (১১ মে) ঢাকা থেকে বের হওয়ার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ও ফেরিঘাট ছিল ঘরমুখো মানুষের জটলা। যে যেভাবে পেরেছেন শুধু ছুটছেন। উদ্দেশ্যেÑ গ্রামের বাড়িতে যাওয়া। বাস না থাকার কারণে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা, পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ও মাইক্রোবাসে তিন-চারগুণ ভাড়া দিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। তবে ভাড়া বেশি হওয়ায় মঙ্গলবারও ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে হাজারো মানুষের।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও ফেরিঘাট ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই মানুষের চাপ বাড়তে থাকে ঢাকা থেকে বের হওয়া বিভিন্ন সড়কের মুখে। দিন বাড়ার সঙ্গে তা বৃদ্ধি পায়। দূরপাল্লার বাস বন্ধ কিন্তু জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চালু থাকায় ভেঙে ভেঙে গ্রামের বাড়িতে যেতে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের। খোলা পণ্যবাহী ট্রাকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে যাত্রাপথে। যাত্রাপথে পুলিশের বাধা ও ঘাটে ঘাটে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। করোনার ভয় থাকলেও তাদের মধ্যে ছিল না কোন স্বাস্থ্যবিধি। কিছু যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকলেও গরম ও ভোগান্তির কারণে তা মুখ থেকে গলায় নামিয়ে এনেছেন বলে যাত্রীরা জানান।

রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় সায়েম নামের কুমিল্লার এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘গাড়ি সংকটের কথা চিন্তা করে আগেভাগেই স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামের বাড়ি পাঠিয়েছি। এখন ঢাকা-কুমিল্লায় যাব কিন্তু গাড়ি নেই। আগে বাসে ১৫০-১৮০ টাকা যেতে পারতাম। এখন মাইক্রোবাসে ভাড়া যাচ্ছে ১০০০ টাকা। তাই সায়েদাবাদ থেকে যাত্রাবাড়ী দিকে হেঁটে যাচ্ছি। পিকআপ ও ট্রাক পেলে উঠে যাব।’

সাইদুল নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ‘মাওয়া ফেরিঘাটে যাব সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া চাই ৬০০ টাকা। সকালে ৪০০ টাকায় গেছে। এখন বলে ৬০০ টাকায়। যাত্রী বেশি দেখে ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে। লকডাউনের কারণে গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছে। অন্যান্য সময় ৮০ টাকা দিয়ে মাওয়া গেছি। এখন ৮০ টাকার ভাড়া ৬০০ টাকা দিতে হবে। এই হলো আমাদের লকডাউনের সুফল। আমরা গরিব মানুষ এটা ঠিকই মনে থাকবে। করোনার কারণে কোন মানুষের গ্রামে যাওয়া বন্ধ থাকবে না। গত বছর গেছে এবারো যাবে কিন্তু মানুষদের এভাবে দুর্ভোগে ফেলা সরকারের ঠিক হয়নি। যদি লকডাউন দেয়া দরকার তাহলে সম্পূর্ণ লকডাউন দেয়া উঠিত। একটা খুলে দেবে অন্যটা বন্ধ রাখবে এটা ঠিক নয়।’

গুলিস্তান এলাকায় বাবুল মিয়া নামের টাঙ্গাইলের এক যাত্রী বলেন, ‘ভেঙে ভেঙে গ্রামে যাচ্ছি। গুলিস্তান থেকে গাজীপুর যাব। গাজীপুর থেকে অন্য বাসের টাঙ্গাইলে যাব। ভাড়া তো বেশি লাগবেই। গাজীপুরে গাড়ি পেতে সমস্যা হচ্ছে। আমার এক আত্মীয় গেছে। সকাল থেকে অপেক্ষা করছে গাড়ি নেই। ট্রাকে ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাড়িতে গেছে।’

রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় কামাল নামের নীলফামারীর এক যাত্রী বলেন, ‘ঢাকায় একটি হোটেলে কাজ করি। ঈদের ছুটি বাড়িতে যাচ্ছি। লকডাউনের কারণে বেচা-বিক্রি কম। তাই আগেই যেতে বলেছিল ম্যানেজার কিন্তু গাড়ি বন্ধ থাকায় যেতে পারিনি। এখন বাস চলে। তাই যাচ্ছি। তবে বড় বাস বন্ধ। সমস্যা নেই। ভেঙে ভেঙে যাব। ঢাকা থেকে গাজীপুর যাব। সেখান থেকে অন্য বাসে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। ভাড়া একটু বেশি লাগবে। তবে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা অন্য রকম আনন্দ।’

যাত্রাবাড়ী এলাকায় স্বপন নামের এক মাইক্রোবাস চালক বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন জেলার যাত্রী পরিবহন করছি। গতকালও (সোমবার) ১৭ যাত্রী কিশোরগঞ্জ নিয়ে গেছি। যাত্রাপথে পুলিশের কারণে আটজনকে মাঝপথে নামিয়ে দিতে হয়েছে। কারণ স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে। একসিটে একজন যাত্রী তুলতে হবে। জনপ্রতি যাত্রী ২ হাজার টাকা থেকে ২৬০০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়। তবে ঢাকা ফেরাপথে যাত্রী না থাকায় বেশি ভাড়া নেয়া হয় বলে জানান তিনি।

লঞ্চ বন্ধ থাকায় ফেরিঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ঢল

করোনাভাইরাসের কারণে লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকায় বরিশালসহ ২১ জেলার দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা শিমুলিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট পার হয়ে ভেঙে ভেঙে বাড়িতে যেতে দেখা গেছে। তবে সব ফেরি চালু করে দেয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি অনেকটা কমেছে। সহজেই ফেরিতে উঠতে পারছে বলে যাত্রীরা জানান। গত সোমবার বিকেল থেকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সব ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে নৌরুটে। এতে যানবাহন ও যাত্রীরা নির্বিঘ্নে পদ্মা পার হতে পারছেন। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে রোরো, ডাম্প, মিডিয়াম, কে-টাইপ ও ভিআইপিসহ মোট ১৬টি ফেরি চলাচল করছে বলে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি)’র সূত্র জানায়।

শিবালয় (মানিকগঞ্জ) থেকে প্রতিনিধি জানান, যাত্রীর ঢল ঠেকাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের একাধিক স্থানে বসানো হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির চেকপোস্ট। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিজিবির চেকপোস্ট থেকে পাটুরিয়া ঘাটগামী গাড়ি ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাস থামিয়ে ভোটার আইডি কার্ড চেক করে যাত্রী নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এরপরও পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাটে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে তিনটি ফেরি পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। প্রতিটি ফেরিতেই অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি ছোট গাড়ি, মোটরসাইকেল ও যাত্রী ছিল। বিকল্প পথে কিছুসংখ্যক রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও সিএনজিতে করে যাত্রীদের ঘাটে আসতে দেখা গেছে।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, নিয়মানুযায়ী সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই-তিনটি ফেরি দিয়ে রোগী ও লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স পার করা করা হয়। এর সঙ্গে যাত্রী ও কিছুসংখ্যক ছোট গাড়িও পার হয়। তবে যানবাহনের চাপ থাকলে রাতের বেলায় ফেরি বাড়ানো হয়। চলমান লকডাউনে দিনের বেলায় স্বাভাবিক ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে।

সরকারি বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বৃদ্ধির পরিকল্পনা

দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে চলমান ‘লকডাউন’ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের পরিকল্পনা আছে আর এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর। কারণ দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এটা ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। সংক্রমণ এড়াতে এই সিদ্ধান্ত আগামী ১৬ মে জানানো হবে।

back to top