মানুষের গ্রামমুখী জোয়ারে ঝুঁকি বেড়েছে : বিশেষজ্ঞগণ
করোনা সংক্রমণের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাক্কায় ইতোমধ্যেই দেশে মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। এই অবস্থায় ঈদকে ঘিরে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। কারণ লোকজন সরকারের বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করেই দলবেঁধে গ্রামমুখী হচ্ছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বিকল্প উপায়ে ঢাকা ছাড়ছেন লোকজন। ব্যক্তিগত বাহন, ভাড়া করা মাইক্রোবাস-এমনকি পণ্যবাহী ট্রাকেও গাদাগাদি করে শহর ছেড়ে গ্রামের পথে ছুটছেন মানুষ। এতে করোনা সংক্রমণ আবারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
রাজধানীর কয়েকটি আন্তঃজেলা সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মোটরসাইকেল, থ্রি হুইলার, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন হালকা যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছেন মানুষ। এছাড়া দলবদ্ধভাবে মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করে, পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকা ছাড়ছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। রেল বন্ধ থাকলেও নৌ-পথগুলোতে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এতে করোনা সংক্রমণ আবারও বেড়ে যাওয়ার যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
দেশের খ্যাতিমান জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘যেভাবে মানুষজন গ্রামমুখী হয়েছেন তাতে সংক্রমণ বৃদ্ধির সাংঘাতিক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ঈদের পর সংক্রমণ বাড়বেই।’
মানুষের ঘরমুখী প্রবণতা ঠেকানো যেত কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঠেকানো যেত না, কিন্তু সুশৃঙ্খল উপায়ে মানুষকে গ্রামে ফেরার ব্যবস্থা করা যেত, সেটি করা হয়নি। এই সরকার টানা ১২ বছর ধরে ক্ষমতায়, তারা কমপক্ষে ২২টি ঈদ দেখেছে। কিন্তু অতীত দেখে শিক্ষা নেয়নি। তারা ঘরে বসে প্রজ্ঞাপন আর নির্দেশনা জারি করেই দায়িত্ব সারছেন, এগুলো কেউ মানছে কীনা তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই।’
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা আরও সুন্দর-সুশৃঙ্খল করা যেত। বাসের সংখ্যা বাড়ানো যেত, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের অনুমোদন দেয়া যেত, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনে তদারকি করা যেত কিন্তু এসবের কিছুই করা হয়নি। সবকিছু দায়সারাভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি তৈরি করা হয়েছে।
এদিকে সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদের ছুটি বৃদ্ধি করেনি সরকার। ছুটি তিনদিনই রাখা হয়েছে। এই ছুটি আগামীকাল থেকেই কার্যকর হচ্ছে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বিধিনিষেধ চলমান থাকবে।
গত ৫ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদের ছুটিতে আবশ্যিকভাবে স্ব স্ব কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষ ওই প্রজ্ঞাপন উপেক্ষা করেই শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হয়েছেন।
এই পরিস্থিতি উপলব্ধি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মঙ্গলবার (১১ মে) বিকালে এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘ঈদে যেভাবে মানুষ বাড়ি ফিরছে, তাতে দেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। আমরা নিজেদের সর্বনাশ নিজেরা ডেকে আনলে করোনার সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া মুশকিল।’
দেশে করোনার ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ মোটামুটি ‘নিয়ন্ত্রণে’ চলে এসেছে জানিয়ে ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, সারাদেশের কোভিড হাসপাতালগুলোর অধিকাংশ বেড খালি। শনাক্ত ও মৃত্যুর হারও কমেছে। তবে করোনা পৃথিবী থেকে কবে যাবে, তা কেউ বলতে পারে না।’ ফলে যতদিন করোনা থাকবে ততদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই বলে জানান মহাপরিচালক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘আমরা এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নেই। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যে ঈদ সামনে এসেছে সেটাকে যদি ঘরের মধ্যে সীমিত আকারে পালন করি তাহলে আমাদের জীবনে আরও অনেক ঈদ উপভোগ করার সুযোগ আসবে। তা না হলে যেভাবে সংক্রমণ ছড়ায়, উন্নত দেশ পর্যন্ত রোগীর চাপ নিতে পারছে না।’
দেশের প্রস্তুতিরও সব সময় একটা সীমাবদ্ধতা থাকবে, মন্তব্য করে ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘ রোগীর সংখ্যা যাতে কোনভাবে বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।’ তিনি সবাইকে এই ঈদ যাত্রা বন্ধ করে নিজেদের ঘরের মধ্যে থেকে ঈদ উদযাপন সীমাবদ্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
উন্মুক্ত স্থানে ঈদের জামাত আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘বিকল্প পদ্ধতিতে ঈদ জামাত আয়োজন করার জন্য বলছি। ঈদ জামাত কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে উন্মুক্ত জায়গায় আয়োজন করা যায় সে বিষয়টিকে লক্ষ্য রাখার জন্য জনসাধারণকে এবং মসজিদ সংশ্লিষ্ট আলেম-ওলামা যারা আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এর আগে গত ২৬ এপ্রিল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, এবার ঈদের নামাজ পড়তে হবে মসজিদে। গত বছরের মতো এবারও ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরোধ জানায় তারা।
মঙ্গলবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়, আগামীকাল বা শুক্রবার (১৩ বা ১৪ মে) মুসলিম সম্প্রসায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে। করোনা মহামাররীর কারণে এবার হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে না।
সাধারণত ২৯ রোজায় (আজ) সরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকে না। কিন্তু এবার করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ২৯ রোজায় বিশেষভাবে অফিস খোলা রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ঈদের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
করোনায় মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়েছে
করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ১৬ দিনে এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, এটি গত সাত সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম। এ নিয়ে মোট ১২ হাজার ৫ জনের মৃত্যু হলো। এর আগে গত ২৪ মার্চ করোনায় এর চেয়ে কম মৃত্যু হয়েছিল, ওইদিন ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
গত এক দিনে দেশে এক হাজার ২৩০ জনের সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্যকর্মীরা, যা গত আট সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই একদিনের শনাক্তসহ দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো সাত লাখ ৭৬ হাজার ২৫৭ জনে। এর আগে গত ১৪ মার্চ এক হাজার ১৫৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
গত একদিনে আক্রান্তদের মধ্যে তিন হাজার ৪৪ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দঁড়ালো সাত লাখ ১৫ হাজার ৩২১ জনে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের পর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়।
এরপর ৫ জুলাই দুই হাজার, ২৮ জুলাই তিন হাজার, ২৫ আগস্ট চার হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার, ৪ নভেম্বর ছয় হাজার, ১২ ডিসেম্বর সাত হাজার এবং গত ২৩ জানুয়ারি আট হাজার ছাড়িয়ে যায় মৃত্যু।
গত মার্চের প্রথম দিকে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। এরপর ৩১ মার্চ মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায়। এরপর মাত্র ১৫ দিনেই এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয় করোনা সংক্রমণে। গত ১৫ এপ্রিল করোনায় মৃত্যুর মোট সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এ সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়ায় মাত্র ১০ দিনে গত ২৫ এপ্রিল। সর্বশেষ ১৬ দিনে মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেল।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে করোনা শনাক্তে ৩৩তম স্থানে এবং মৃত্যুর সংখ্যায় ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
মানুষের গ্রামমুখী জোয়ারে ঝুঁকি বেড়েছে : বিশেষজ্ঞগণ
মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১
করোনা সংক্রমণের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাক্কায় ইতোমধ্যেই দেশে মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। এই অবস্থায় ঈদকে ঘিরে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। কারণ লোকজন সরকারের বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করেই দলবেঁধে গ্রামমুখী হচ্ছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বিকল্প উপায়ে ঢাকা ছাড়ছেন লোকজন। ব্যক্তিগত বাহন, ভাড়া করা মাইক্রোবাস-এমনকি পণ্যবাহী ট্রাকেও গাদাগাদি করে শহর ছেড়ে গ্রামের পথে ছুটছেন মানুষ। এতে করোনা সংক্রমণ আবারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
রাজধানীর কয়েকটি আন্তঃজেলা সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মোটরসাইকেল, থ্রি হুইলার, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন হালকা যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছচ্ছেন মানুষ। এছাড়া দলবদ্ধভাবে মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করে, পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকা ছাড়ছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। রেল বন্ধ থাকলেও নৌ-পথগুলোতে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এতে করোনা সংক্রমণ আবারও বেড়ে যাওয়ার যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।
দেশের খ্যাতিমান জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘যেভাবে মানুষজন গ্রামমুখী হয়েছেন তাতে সংক্রমণ বৃদ্ধির সাংঘাতিক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ঈদের পর সংক্রমণ বাড়বেই।’
মানুষের ঘরমুখী প্রবণতা ঠেকানো যেত কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঠেকানো যেত না, কিন্তু সুশৃঙ্খল উপায়ে মানুষকে গ্রামে ফেরার ব্যবস্থা করা যেত, সেটি করা হয়নি। এই সরকার টানা ১২ বছর ধরে ক্ষমতায়, তারা কমপক্ষে ২২টি ঈদ দেখেছে। কিন্তু অতীত দেখে শিক্ষা নেয়নি। তারা ঘরে বসে প্রজ্ঞাপন আর নির্দেশনা জারি করেই দায়িত্ব সারছেন, এগুলো কেউ মানছে কীনা তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই।’
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা আরও সুন্দর-সুশৃঙ্খল করা যেত। বাসের সংখ্যা বাড়ানো যেত, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের অনুমোদন দেয়া যেত, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনে তদারকি করা যেত কিন্তু এসবের কিছুই করা হয়নি। সবকিছু দায়সারাভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি তৈরি করা হয়েছে।
এদিকে সংক্রমণ ঠেকাতে ঈদের ছুটি বৃদ্ধি করেনি সরকার। ছুটি তিনদিনই রাখা হয়েছে। এই ছুটি আগামীকাল থেকেই কার্যকর হচ্ছে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বিধিনিষেধ চলমান থাকবে।
গত ৫ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদের ছুটিতে আবশ্যিকভাবে স্ব স্ব কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষ ওই প্রজ্ঞাপন উপেক্ষা করেই শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হয়েছেন।
এই পরিস্থিতি উপলব্ধি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মঙ্গলবার (১১ মে) বিকালে এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘ঈদে যেভাবে মানুষ বাড়ি ফিরছে, তাতে দেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। আমরা নিজেদের সর্বনাশ নিজেরা ডেকে আনলে করোনার সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া মুশকিল।’
দেশে করোনার ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ মোটামুটি ‘নিয়ন্ত্রণে’ চলে এসেছে জানিয়ে ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, সারাদেশের কোভিড হাসপাতালগুলোর অধিকাংশ বেড খালি। শনাক্ত ও মৃত্যুর হারও কমেছে। তবে করোনা পৃথিবী থেকে কবে যাবে, তা কেউ বলতে পারে না।’ ফলে যতদিন করোনা থাকবে ততদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই বলে জানান মহাপরিচালক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘আমরা এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নেই। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যে ঈদ সামনে এসেছে সেটাকে যদি ঘরের মধ্যে সীমিত আকারে পালন করি তাহলে আমাদের জীবনে আরও অনেক ঈদ উপভোগ করার সুযোগ আসবে। তা না হলে যেভাবে সংক্রমণ ছড়ায়, উন্নত দেশ পর্যন্ত রোগীর চাপ নিতে পারছে না।’
দেশের প্রস্তুতিরও সব সময় একটা সীমাবদ্ধতা থাকবে, মন্তব্য করে ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘ রোগীর সংখ্যা যাতে কোনভাবে বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।’ তিনি সবাইকে এই ঈদ যাত্রা বন্ধ করে নিজেদের ঘরের মধ্যে থেকে ঈদ উদযাপন সীমাবদ্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
উন্মুক্ত স্থানে ঈদের জামাত আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘বিকল্প পদ্ধতিতে ঈদ জামাত আয়োজন করার জন্য বলছি। ঈদ জামাত কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে উন্মুক্ত জায়গায় আয়োজন করা যায় সে বিষয়টিকে লক্ষ্য রাখার জন্য জনসাধারণকে এবং মসজিদ সংশ্লিষ্ট আলেম-ওলামা যারা আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এর আগে গত ২৬ এপ্রিল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, এবার ঈদের নামাজ পড়তে হবে মসজিদে। গত বছরের মতো এবারও ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরোধ জানায় তারা।
মঙ্গলবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়, আগামীকাল বা শুক্রবার (১৩ বা ১৪ মে) মুসলিম সম্প্রসায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে। করোনা মহামাররীর কারণে এবার হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে না।
সাধারণত ২৯ রোজায় (আজ) সরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকে না। কিন্তু এবার করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ২৯ রোজায় বিশেষভাবে অফিস খোলা রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ঈদের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
করোনায় মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়েছে
করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ১৬ দিনে এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, এটি গত সাত সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম। এ নিয়ে মোট ১২ হাজার ৫ জনের মৃত্যু হলো। এর আগে গত ২৪ মার্চ করোনায় এর চেয়ে কম মৃত্যু হয়েছিল, ওইদিন ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
গত এক দিনে দেশে এক হাজার ২৩০ জনের সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্যকর্মীরা, যা গত আট সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম। এই একদিনের শনাক্তসহ দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো সাত লাখ ৭৬ হাজার ২৫৭ জনে। এর আগে গত ১৪ মার্চ এক হাজার ১৫৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
গত একদিনে আক্রান্তদের মধ্যে তিন হাজার ৪৪ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দঁড়ালো সাত লাখ ১৫ হাজার ৩২১ জনে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের পর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়।
এরপর ৫ জুলাই দুই হাজার, ২৮ জুলাই তিন হাজার, ২৫ আগস্ট চার হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার, ৪ নভেম্বর ছয় হাজার, ১২ ডিসেম্বর সাত হাজার এবং গত ২৩ জানুয়ারি আট হাজার ছাড়িয়ে যায় মৃত্যু।
গত মার্চের প্রথম দিকে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। এরপর ৩১ মার্চ মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায়। এরপর মাত্র ১৫ দিনেই এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয় করোনা সংক্রমণে। গত ১৫ এপ্রিল করোনায় মৃত্যুর মোট সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এ সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়ায় মাত্র ১০ দিনে গত ২৫ এপ্রিল। সর্বশেষ ১৬ দিনে মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়ে গেল।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে করোনা শনাক্তে ৩৩তম স্থানে এবং মৃত্যুর সংখ্যায় ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।