রাজধানীর দনিয়ার রসুলপুর এলাকার গলিপথ। বুধবার (২৮ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে বিধান হেয়ার কাটিং নামের এক সেলুন দোকান খোলা ছিল। ভিতরে গিয়ে দেখা গেল মাস্ক ছাড়া মাথায় টুপি দিয়ে মধ্য বয়সের এক ব্যক্তি বসে আছে। সেলুনটি কার? জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এটা শিশিরের সেলুন। সে দোকানে নেই, বাইরে গেছে। আমি এমনেই বসে আছি। মাস্ক পরলে গরম লাগে তাই খুলে রেখেছি।’
কিছুক্ষণ পর শিশির চলে আসে। তার মুখেও মাস্ক ছিল না। ‘লকডাউনে সেলুন খোলা রাখার নিয়ম আছে কিনা’- জানতে চাইলে শিশির বলেন, ‘দোকান তো খোলা না। শাটার নামানো ছিল। ভিতরে গরম হয়ে গেছে। বাতাস প্রবেশের শাটার উপরে উঠানো হয়েছে। শাটার নামিয়ে দুই-একটি কাজ করি। এই এলাকার পুলিশ পরিচিত তাই কিছু বলে না। পান আনতে বাইরে গিয়েছি। তাই মাস্ক পরিনি।’
একই অবস্থা এই এলাকার অন্যান্য দোকান-পাটের। কাপড়ের দোকানসহ সব কিছুই খোলা ছিল। পথের পাশে ফল বিক্রয় করছিলেন মিলন মিয়া নামের এক ব্যক্তি। কেন দোকান খুলছেন- জানতে চাইলে বলেন, ‘দোকান তো প্রতিদিনই খুলি। কোন সমস্যা হয় না। পুলিশের গাড়ি এলে উপরে কাপড় দিয়ে ঢাইক্যা দেই। মাস্ক পরি। কিন্তু মাঝে মধ্যে খুলে রাখি গরমের কারণে।’ রিকশার যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। কিন্তু প্রধান সড়ক থেকে গলিপথে চলাচল করছে অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন। প্রতিটি অটোরিকশায় গাদাগাদি করে ৬ জন করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। দোলাইপাড় থেকে দনিয়া, রসুলপুর ও শনিরআখড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করছে এ সব যাত্রী।
সানী নামের এক অটোরিকশা চালক বলেন, ‘লকডাউনে তো অটোরিকশা বন্ধ নেই। পুলিশের সামনেই আমরা চলাচল করি। রিকশা-ভ্যান সবই চলছে আমাদের সমস্যা কি। বিভিন্ন স্থানে ১০-১৫ টাকা ভাড়া নেই। স্বাস্থ্যবিধি তো কেউ মানে না। যাত্রীরাই তো গাদাগাদি করে বসে। পুলিশ দেখলে মাস্ক পরি। তাহলে খোলাই গাড়ি চালাই।’
সড়কের মোড়ে মোড়ে ভ্যানে সবজি বিক্রয় করতে দেখা গেছে অনেককেই। বিধিনিষেধ চলাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের জিনিসপত্র বিক্রয়ের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তা মানছে না কেউ।
দনিয়া এলাকায় রহমান মিয়া নামের এক সবজি বিক্রিতা বলেন, ‘নিময় তো বিকেল ৩টা পর্যন্ত। কিন্তু খোলা রাখি সন্ধ্যা পর্যন্ত। কারণ বিকেলের দিকে বেচাবিক্রয় ভালো হয়। সকালে পুলিশ বেশি আসে। বিকেলে তেমন আসে না। যেদিন কম বেচাবিক্রয় হয় সেদিন রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখি। লকডাউনে আগের মতো তেমন বিক্রয় হয় না। তাই জিনিসপত্র কম আনি। মাস্ক পরি। কিন্তু সব সময় পরা হয় না। মনে থাকে না।’
‘কঠোর লকডাউনে’ রাজধানীর বেশির ভাগ গলিপথের অবস্থা একই। প্রধান প্রধান সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট ও টহল থাকলেও গলিপথ অকেটা ঢিলেঢালা ভাব। কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে বুধবার রাজধানীর সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল ছিল আগের দিনগুলোর চেয়ে বেশি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগের দিনের চেয়ে বেশি তৎপর দেখা গেলেও দোকানি, ক্রেতা, পথচারী অনেকেরই মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখা গেছে। বন্ধ হয়নি ঢাকামুখী মানুষের যাত্রা। বুধবারও ফেরিঘাট ও সড়ক পথে ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
বিভিন্ন সড়কের মোড়ে চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে অনেককেই চা খেতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার দিকে সড়কের মোড়ে টং দোকানের সামনে বসে আড্ডা। গত কয়েক দিনের তুলনায় বুধবার কাঁচাবাজার, মাছ ও মুদি দোকানে বেড়েছে মানুষের চলাচল।
রাজধানীর আজিমপুর এলাকায় সড়কে বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় তিন যুবককে ৩০০ টাকা জরিমানা করতে দেখা গেছে সেনা সদস্যদের। একই এলাকায় মাস্ক না পরায় বাবা-মেয়েকে কিছুক্ষণ আটক রাখা হয়। ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান তারা।
এ বিষয়ে আজিমপুর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট লায়লা আনজুমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অধিকাংশই জরুরি দরকার ছাড়া বের হয়েছেন এবং জানতে চাইলে নানা অজুহাত দিচ্ছেন। তাই, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। অনেকেরই মাস্ক থুতনিতে, তাদেরকেও জরিমানা করা হয়েছে।’
ফেরিতে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়নি
কঠোর লকডাউনের মধ্যে ফেরিতে যাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়নি। বুধবারও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে ফেরিতে গাদাগাদি করে নদী পাড় হতে দেখা গেছে যাত্রীদের। সরকারের কঠোর বিধিনিষেধকে তোয়াক্কা না করেই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট দিয়ে ঢাকায় ফিরছেন অনেকেই।
বুধবার সকাল থেকে ছিল শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকামুখী মামুষের স্রোত। অনেকে পরিবারের বৃদ্ধ সদস্যদের নিয়েও ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা পার হতে দেখা গেছে। যাত্রীদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অনেকে মুখে মাস্কও ছিল না।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির মহাব্যবস্থাপক আহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের বহরের ১৮ ফেরি থাকলেও পদ্মায় প্রবল স্রোতের কারণে এখন সাতটি ফেরি দিয়ে পারাপার করানো হচ্ছে। ফেরিগুলো যাত্রী পারাপারে বাধ্য হচ্ছে। কোনভাবেই যাত্রীদের আটকানো যাচ্ছে না। বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসচ্ছেন তারা। ঘাটে ফেরি ভিড়লে হুড়োহুড়ি করে তাতে ওঠানামা করছে লোকজন।
বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১
রাজধানীর দনিয়ার রসুলপুর এলাকার গলিপথ। বুধবার (২৮ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে বিধান হেয়ার কাটিং নামের এক সেলুন দোকান খোলা ছিল। ভিতরে গিয়ে দেখা গেল মাস্ক ছাড়া মাথায় টুপি দিয়ে মধ্য বয়সের এক ব্যক্তি বসে আছে। সেলুনটি কার? জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এটা শিশিরের সেলুন। সে দোকানে নেই, বাইরে গেছে। আমি এমনেই বসে আছি। মাস্ক পরলে গরম লাগে তাই খুলে রেখেছি।’
কিছুক্ষণ পর শিশির চলে আসে। তার মুখেও মাস্ক ছিল না। ‘লকডাউনে সেলুন খোলা রাখার নিয়ম আছে কিনা’- জানতে চাইলে শিশির বলেন, ‘দোকান তো খোলা না। শাটার নামানো ছিল। ভিতরে গরম হয়ে গেছে। বাতাস প্রবেশের শাটার উপরে উঠানো হয়েছে। শাটার নামিয়ে দুই-একটি কাজ করি। এই এলাকার পুলিশ পরিচিত তাই কিছু বলে না। পান আনতে বাইরে গিয়েছি। তাই মাস্ক পরিনি।’
একই অবস্থা এই এলাকার অন্যান্য দোকান-পাটের। কাপড়ের দোকানসহ সব কিছুই খোলা ছিল। পথের পাশে ফল বিক্রয় করছিলেন মিলন মিয়া নামের এক ব্যক্তি। কেন দোকান খুলছেন- জানতে চাইলে বলেন, ‘দোকান তো প্রতিদিনই খুলি। কোন সমস্যা হয় না। পুলিশের গাড়ি এলে উপরে কাপড় দিয়ে ঢাইক্যা দেই। মাস্ক পরি। কিন্তু মাঝে মধ্যে খুলে রাখি গরমের কারণে।’ রিকশার যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। কিন্তু প্রধান সড়ক থেকে গলিপথে চলাচল করছে অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন। প্রতিটি অটোরিকশায় গাদাগাদি করে ৬ জন করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। দোলাইপাড় থেকে দনিয়া, রসুলপুর ও শনিরআখড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করছে এ সব যাত্রী।
সানী নামের এক অটোরিকশা চালক বলেন, ‘লকডাউনে তো অটোরিকশা বন্ধ নেই। পুলিশের সামনেই আমরা চলাচল করি। রিকশা-ভ্যান সবই চলছে আমাদের সমস্যা কি। বিভিন্ন স্থানে ১০-১৫ টাকা ভাড়া নেই। স্বাস্থ্যবিধি তো কেউ মানে না। যাত্রীরাই তো গাদাগাদি করে বসে। পুলিশ দেখলে মাস্ক পরি। তাহলে খোলাই গাড়ি চালাই।’
সড়কের মোড়ে মোড়ে ভ্যানে সবজি বিক্রয় করতে দেখা গেছে অনেককেই। বিধিনিষেধ চলাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের জিনিসপত্র বিক্রয়ের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তা মানছে না কেউ।
দনিয়া এলাকায় রহমান মিয়া নামের এক সবজি বিক্রিতা বলেন, ‘নিময় তো বিকেল ৩টা পর্যন্ত। কিন্তু খোলা রাখি সন্ধ্যা পর্যন্ত। কারণ বিকেলের দিকে বেচাবিক্রয় ভালো হয়। সকালে পুলিশ বেশি আসে। বিকেলে তেমন আসে না। যেদিন কম বেচাবিক্রয় হয় সেদিন রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখি। লকডাউনে আগের মতো তেমন বিক্রয় হয় না। তাই জিনিসপত্র কম আনি। মাস্ক পরি। কিন্তু সব সময় পরা হয় না। মনে থাকে না।’
‘কঠোর লকডাউনে’ রাজধানীর বেশির ভাগ গলিপথের অবস্থা একই। প্রধান প্রধান সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট ও টহল থাকলেও গলিপথ অকেটা ঢিলেঢালা ভাব। কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে বুধবার রাজধানীর সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল ছিল আগের দিনগুলোর চেয়ে বেশি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগের দিনের চেয়ে বেশি তৎপর দেখা গেলেও দোকানি, ক্রেতা, পথচারী অনেকেরই মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখা গেছে। বন্ধ হয়নি ঢাকামুখী মানুষের যাত্রা। বুধবারও ফেরিঘাট ও সড়ক পথে ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
বিভিন্ন সড়কের মোড়ে চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে অনেককেই চা খেতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার দিকে সড়কের মোড়ে টং দোকানের সামনে বসে আড্ডা। গত কয়েক দিনের তুলনায় বুধবার কাঁচাবাজার, মাছ ও মুদি দোকানে বেড়েছে মানুষের চলাচল।
রাজধানীর আজিমপুর এলাকায় সড়কে বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় তিন যুবককে ৩০০ টাকা জরিমানা করতে দেখা গেছে সেনা সদস্যদের। একই এলাকায় মাস্ক না পরায় বাবা-মেয়েকে কিছুক্ষণ আটক রাখা হয়। ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান তারা।
এ বিষয়ে আজিমপুর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট লায়লা আনজুমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘অধিকাংশই জরুরি দরকার ছাড়া বের হয়েছেন এবং জানতে চাইলে নানা অজুহাত দিচ্ছেন। তাই, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। অনেকেরই মাস্ক থুতনিতে, তাদেরকেও জরিমানা করা হয়েছে।’
ফেরিতে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়নি
কঠোর লকডাউনের মধ্যে ফেরিতে যাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়নি। বুধবারও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে ফেরিতে গাদাগাদি করে নদী পাড় হতে দেখা গেছে যাত্রীদের। সরকারের কঠোর বিধিনিষেধকে তোয়াক্কা না করেই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট দিয়ে ঢাকায় ফিরছেন অনেকেই।
বুধবার সকাল থেকে ছিল শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকামুখী মামুষের স্রোত। অনেকে পরিবারের বৃদ্ধ সদস্যদের নিয়েও ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা পার হতে দেখা গেছে। যাত্রীদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অনেকে মুখে মাস্কও ছিল না।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির মহাব্যবস্থাপক আহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের বহরের ১৮ ফেরি থাকলেও পদ্মায় প্রবল স্রোতের কারণে এখন সাতটি ফেরি দিয়ে পারাপার করানো হচ্ছে। ফেরিগুলো যাত্রী পারাপারে বাধ্য হচ্ছে। কোনভাবেই যাত্রীদের আটকানো যাচ্ছে না। বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসচ্ছেন তারা। ঘাটে ফেরি ভিড়লে হুড়োহুড়ি করে তাতে ওঠানামা করছে লোকজন।