বন্যাত্তোর কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলে নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজ এ গিয়ে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বন্যায় স্কুল এন্ড কলেজটির একটি ভবনের ৪ ভাগের তিন ভাগ অংশ ভেঙে নিয়েছে। অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র দুটি ছোট ছোট শ্রেণি কক্ষ। শ্রেণি কক্ষের উপড়ের অর্ধেক চালরে টিন নেই। ধাপারের নীচের ছাঁয়াতে বসে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাশ করছে।
অপর কক্ষটিও আলমারিসহ স্কুল ভবনের নানা জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে কোন রকমে একটু জায়গা বের করে সেখানে টেবিল চেয়ার বসিয়ে শিক্ষকদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে স্কুলটির শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মাস্ক পড়াতে ব্যর্থ হওয়ায় অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী মাস্কবিহীন ক্লাশ করছে। হাত ধোয়ারও কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি সেখানে।
এ ব্যাপারে স্কুল এন্ড কলেজটির দশম শ্রেণির ছাত্রী রেখা আক্তার, স্বপন, নবম শ্রেণির ছাত্রী রুমানা, শিরিনা আক্তার, দশম শ্রেণির ছাত্রী শানা আক্তার শানু, নবম শ্রেণির ছাত্র শুভ, সুমন মন্ডলসহ অনেকেই জানায়, ১৮ মাস পূর্বে যখন করোনা শুরুর মুহূর্তে স্কুলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন স্কুল মাঠ থেকে নদী অনেকটা দূরে ছিল। স্কুল খোলার পর এসে দেখে স্কুল ভবনের অনেকটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অধ্যক্ষ মো. জহুরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, তার স্কুল এন্ড কলেজে মোট ৭৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। স্কুলটিকে নিয়ে কোন দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। স্কুলটি পরিস্কার করারও কোন উপায় নেই। সর্বত্র ভাঙা ঘরের আসবাবপত্র, ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে ঠাসাঠাসি করে রেখে সব কিছু কোন রকম আগলে রেখেছেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস চালিয়ে নেয়া মোটেই সম্ভব না। অন্যত্র জায়গা কেনা হয়েছে। সেখানে সম্পূর্ণ অবকাঠামো সরিয়ে নিতে সময় এবং টাকা দুটোই লাগবে। কিন্ত কোনটাই বর্তমানে তার হাতে নেই। এ কারণে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে ক্লাস চালিয়ে নেয়ার চাপ আছে। অন্যদিকে ভবনগুলি স্থানান্তরিত করে নিতে সময় ও টাকা লাগবে। সাথে লাগাবে স্কুল বন্ধ রাখার অনুমতি।
এ ব্যাপারে স্কুলটি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, খেরুয়ার চরের পূর্ব দক্ষিণ পাশে দেড় একর জমি ক্রয় করা হয়েছে, কিন্তু অর্থাভাবে সেখান ভবন বা স্কুল এন্ড কলেজের অবকাঠামো তৈরি করতে পারছেন না।
চরাঞ্চলের অষ্টমীর চর ইউনিয়নেও রয়েছে মাত্র একটি মাধ্যমিক স্কুল। স্কুলটির নাম নটারকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিও নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে বর্তমানে নদী থেকে সামান্য দূরে পূর্ব পাশে স্কুলটির পাকা মূল ভবনটি ভাঙনের হুমকির মুখোমুখি রয়েছে। চলমান বন্যায় স্কুলটির পশ্চিম পার্শ্বের টিনের শ্রেণি কক্ষটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কক্ষের টিন খুলে পানিতে ভেসে যায়। বর্তমানে ভাঙ্গা স্কুল কক্ষেই ক্লাস চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। স্কুলটির নবম শ্রেণির ছাত্রী আখি, ইয়াসমিন, বিউটি আক্তার, ছালমা, আর্জিনা, লাভলী, ২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী আলামিন, ইব্রাহিম, স্বপন এরা সকলে জানায় স্কুলে এসে যখন তারা দেখে স্কুল ঘর ভেঙ্গে নিচ্ছে নদীতে তখন তাদের মন ভিষণ খারাপ হয়ে গিয়েছে। তবে দীর্ঘদিন পর স্কুলে আসতে পেরে ভাল লাগছে। যখন এই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা হয়, তখন দুপুর গড়িয়ে আড়াইটা বাজে প্রায়। ওরা খেয়া ঘাটে নৌকায় চড়েছে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য। সেই খেয়া নৌকাতেই ওদের সাথে এ প্রতিনিধির কথা হয়।
এ ব্যাপারে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, অনেক সমস্যা তো রয়েছেই, স্কুল গৃহ বন্যায় ভেঙেছে। স্কুল স্থানান্তরের সমস্যা। অর্থের প্রয়োজন। তারপরও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ভাঙা ঘরেই আপাতত ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছি। চরাঞ্চলের সর্বশেষ স্কুল হলো চিলমারী ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত কড়াই বরিশাল নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলটি নদী ভাঙন মুক্ত হলেও স্কুলটির অনেক সমস্যা বিদ্যমান। শিক্ষার্থীরা জানায় স্কুলটিতে যে পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী সে পরিমাণে বেঞ্চ নাই, শ্রেণি কক্ষগুলি ছোট, মাঠে ক্লাস করতে হয় ইত্যাদি। এই স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. সাদাকাত হোসেন এ প্রতিনিধিকে তার স্কুলের নানা সমস্যা তুলে ধরে বলেন, এটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা এই বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়া করে। ২০০৩ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ১৮২ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও শ্রেণি কক্ষের বড়ই অভাব। মাত্র তিনটি শ্রেণি কক্ষে দুই শিপ্টে ক্লাস করাতে হয়। স্কুলটিতে বিদ্যুৎ নেই। দীর্ঘ ১৮ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় বেঞ্চ গুলি উঁই পোকা নষ্ট করে ফেলেছে। যার কারণে বেঞ্চ সংকট। অর্থাভাবে ঘর তুলতে পারছে না। স্কুলটি এতো দিনেও এমপিওভূক্ত হয়নি। শিক্ষকরা তাদের নিজেদের টাকা দিয়ে স্কুল চালাচ্ছে। পাশাপাশি এলাকাবাসীর সাহায্যে চলছে স্কুলটি। স্কুলটিতে মোট ৭ জন শিক্ষক। তিনি দ্রুত স্কুলটি এমপিও ভুক্তির জন্য দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
বন্যাত্তোর কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলে নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল এন্ড কলেজ এ গিয়ে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বন্যায় স্কুল এন্ড কলেজটির একটি ভবনের ৪ ভাগের তিন ভাগ অংশ ভেঙে নিয়েছে। অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র দুটি ছোট ছোট শ্রেণি কক্ষ। শ্রেণি কক্ষের উপড়ের অর্ধেক চালরে টিন নেই। ধাপারের নীচের ছাঁয়াতে বসে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাশ করছে।
অপর কক্ষটিও আলমারিসহ স্কুল ভবনের নানা জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে কোন রকমে একটু জায়গা বের করে সেখানে টেবিল চেয়ার বসিয়ে শিক্ষকদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে স্কুলটির শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মাস্ক পড়াতে ব্যর্থ হওয়ায় অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী মাস্কবিহীন ক্লাশ করছে। হাত ধোয়ারও কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি সেখানে।
এ ব্যাপারে স্কুল এন্ড কলেজটির দশম শ্রেণির ছাত্রী রেখা আক্তার, স্বপন, নবম শ্রেণির ছাত্রী রুমানা, শিরিনা আক্তার, দশম শ্রেণির ছাত্রী শানা আক্তার শানু, নবম শ্রেণির ছাত্র শুভ, সুমন মন্ডলসহ অনেকেই জানায়, ১৮ মাস পূর্বে যখন করোনা শুরুর মুহূর্তে স্কুলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন স্কুল মাঠ থেকে নদী অনেকটা দূরে ছিল। স্কুল খোলার পর এসে দেখে স্কুল ভবনের অনেকটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অধ্যক্ষ মো. জহুরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, তার স্কুল এন্ড কলেজে মোট ৭৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। স্কুলটিকে নিয়ে কোন দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। স্কুলটি পরিস্কার করারও কোন উপায় নেই। সর্বত্র ভাঙা ঘরের আসবাবপত্র, ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে ঠাসাঠাসি করে রেখে সব কিছু কোন রকম আগলে রেখেছেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস চালিয়ে নেয়া মোটেই সম্ভব না। অন্যত্র জায়গা কেনা হয়েছে। সেখানে সম্পূর্ণ অবকাঠামো সরিয়ে নিতে সময় এবং টাকা দুটোই লাগবে। কিন্ত কোনটাই বর্তমানে তার হাতে নেই। এ কারণে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে ক্লাস চালিয়ে নেয়ার চাপ আছে। অন্যদিকে ভবনগুলি স্থানান্তরিত করে নিতে সময় ও টাকা লাগবে। সাথে লাগাবে স্কুল বন্ধ রাখার অনুমতি।
এ ব্যাপারে স্কুলটি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, খেরুয়ার চরের পূর্ব দক্ষিণ পাশে দেড় একর জমি ক্রয় করা হয়েছে, কিন্তু অর্থাভাবে সেখান ভবন বা স্কুল এন্ড কলেজের অবকাঠামো তৈরি করতে পারছেন না।
চরাঞ্চলের অষ্টমীর চর ইউনিয়নেও রয়েছে মাত্র একটি মাধ্যমিক স্কুল। স্কুলটির নাম নটারকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিও নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে বর্তমানে নদী থেকে সামান্য দূরে পূর্ব পাশে স্কুলটির পাকা মূল ভবনটি ভাঙনের হুমকির মুখোমুখি রয়েছে। চলমান বন্যায় স্কুলটির পশ্চিম পার্শ্বের টিনের শ্রেণি কক্ষটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কক্ষের টিন খুলে পানিতে ভেসে যায়। বর্তমানে ভাঙ্গা স্কুল কক্ষেই ক্লাস চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। স্কুলটির নবম শ্রেণির ছাত্রী আখি, ইয়াসমিন, বিউটি আক্তার, ছালমা, আর্জিনা, লাভলী, ২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী আলামিন, ইব্রাহিম, স্বপন এরা সকলে জানায় স্কুলে এসে যখন তারা দেখে স্কুল ঘর ভেঙ্গে নিচ্ছে নদীতে তখন তাদের মন ভিষণ খারাপ হয়ে গিয়েছে। তবে দীর্ঘদিন পর স্কুলে আসতে পেরে ভাল লাগছে। যখন এই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা হয়, তখন দুপুর গড়িয়ে আড়াইটা বাজে প্রায়। ওরা খেয়া ঘাটে নৌকায় চড়েছে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য। সেই খেয়া নৌকাতেই ওদের সাথে এ প্রতিনিধির কথা হয়।
এ ব্যাপারে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, অনেক সমস্যা তো রয়েছেই, স্কুল গৃহ বন্যায় ভেঙেছে। স্কুল স্থানান্তরের সমস্যা। অর্থের প্রয়োজন। তারপরও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ভাঙা ঘরেই আপাতত ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছি। চরাঞ্চলের সর্বশেষ স্কুল হলো চিলমারী ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত কড়াই বরিশাল নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলটি নদী ভাঙন মুক্ত হলেও স্কুলটির অনেক সমস্যা বিদ্যমান। শিক্ষার্থীরা জানায় স্কুলটিতে যে পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী সে পরিমাণে বেঞ্চ নাই, শ্রেণি কক্ষগুলি ছোট, মাঠে ক্লাস করতে হয় ইত্যাদি। এই স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মো. সাদাকাত হোসেন এ প্রতিনিধিকে তার স্কুলের নানা সমস্যা তুলে ধরে বলেন, এটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা এই বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়া করে। ২০০৩ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ১৮২ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও শ্রেণি কক্ষের বড়ই অভাব। মাত্র তিনটি শ্রেণি কক্ষে দুই শিপ্টে ক্লাস করাতে হয়। স্কুলটিতে বিদ্যুৎ নেই। দীর্ঘ ১৮ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় বেঞ্চ গুলি উঁই পোকা নষ্ট করে ফেলেছে। যার কারণে বেঞ্চ সংকট। অর্থাভাবে ঘর তুলতে পারছে না। স্কুলটি এতো দিনেও এমপিওভূক্ত হয়নি। শিক্ষকরা তাদের নিজেদের টাকা দিয়ে স্কুল চালাচ্ছে। পাশাপাশি এলাকাবাসীর সাহায্যে চলছে স্কুলটি। স্কুলটিতে মোট ৭ জন শিক্ষক। তিনি দ্রুত স্কুলটি এমপিও ভুক্তির জন্য দাবি জানান।