alt

সারাদেশ

বদলগাছীর কোলা হাট-বাজার ইজারায় অনিয়ম

প্রতিনিধি, বদলগাছী (নওগাঁ) : মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

উপজেলা হাট-বাজার ব্যবস্থপনা কমিটির বিরুদ্ধে দরপত্রে দাখিল করা টাকার চেয়ে অনেক কম টাকায় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা হাট-বাজারটি ইজারা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনিয়ম হওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান দরপত্র মূল্যয়ন কমিটির রেজুলেশনে স্বাক্ষর দেননি।

উপজেলা চেয়ারম্যান বলছেন, কোলা হাট-বাজার ইজারায় গুরুত্বর অনিয়ম করা হয়েছে। দরপত্রে দেওয়া দরের চেয়ে অনেক কম টাকা নিয়ে হাট-বাজার ইজারা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে হাট-বাজার ইজারার মূল্যয়ন কমিটির রেজুলেশনে স্বাক্ষর করিনি। উপজেলা হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমীনের দাবী নীতিমালার আলোকে কোলা হাট-বাজার ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইজারায় কোনো অনিয়ম করা হয়নি।

নিয়মানুযায়ী প্রতি বছর বৈশাখ মাসে হাট-বাজার ইজারা দেওয়া হয়। কোলা-হাট বাজারের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে হাট-বাজারের প্রশস্তকরণের জন্য বাংলা ১৪২৬ সালের কোলা হাট-বাজার ইজারাদার ফেরদৌস হোসেন বাদী হয়ে হাইকোর্ট একটি রীটপিটিশন মামলা (১২৯৭/২০২০) দায়ের করেছিলেন। আইনী জটিলতা থাকায় বাংলা ১৪২৭ সালে কোলা হাট-বাজার ইজারা দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। প্রায় ১৪ মাস ধরে এই হাট-বাজারে খাস হাসিল আদায় করা হয়েছে। সেই হাট থেকে লাখ লাখ টাকা খাস আদায় করে নাম মাত্র সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন ইউএনও। নিয়মানুযায়ী ভূমি অফিসে লোকজনের সরকারি খাস হাসিল আদায় করা কথা ছিল।

কিন্তু সাবেক ইজারাদারের লোকজনদের সরকারি খাস হাসিল আদায়ে নিযুক্ত রেখে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। এতে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এরপর হাইকোর্টের রীটের বাদী ফেরদৌস হোসেনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ইউএনও রীট নিষ্পত্তি আবেদনে জোর করে স্বাক্ষর নেন বলে জানিয়েছেন রীটপিটিশন মামলার বাদী ফেরদৌস হোসেন।

পরবর্তীতে গত (২৯ জুলাই) দৈনিক আজকালের খবর ও বগুড়ার দৈনিক উত্তরকোণ পত্রিকায় কোলা হাট-বাজার ইজারাদার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেন ইউএনও আলপনা ইয়াসমীন।

পত্রিকায় প্রকাশিত কোলা হাট-বাজার ইজারাদার বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বর্ণিত হাট-বাজারসমূহ বাংলা ১৪২৮ সনের ‘অবশিষ্ট’ সময়ের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে দরপত্র সিডিউলে বর্ণিত শর্তসাপেক্ষে প্রতিটি হাট-বাজার জন্য পৃথকভাবে সীলমোহরযুক্ত খামে হাট-বাজারের নাম উল্লেখ পূর্বক ক্যালেন্ডারে সময়সূচি মোতাবেক দরপত্র আহ্বান করা যাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে হাট-বাজার ইজারা সংক্রান্ত তফসিলের কলামে ১৪২৮ সালের সরকারি ইজারা মুল্য ৫৪ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৬ টাকা ও মন্তব্যের কলামে বর্ণিত হাট-বাজার ইজারার বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ১২৯৭/২০২০ নং রীটপিটিশন মামলার বাদী কর্তৃক অভিযোগটির নিষ্পত্তির আবেদন পাওয়ায় রীটের আদেশ অনুসারে ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারী করা হলো।

গত (১৬ আগষ্ট) দরপত্র বিক্রির শেষ দিন ছিল। পরদিন (১৭ আগষ্ট) দুপুর ১টা পর্যন্ত দরপত্র দাখিলের সময় নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন দুপুর দেড়টায় দরপত্র খোলা হয়। বাংলা ১৪২৮ সালের অবশিষ্ট সময়ের জন্য কোলা হাট-বাজার ইজারায় নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার পাতনা গ্রামের মোঃ এনামুল হক, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন ও নওগাঁ সদর উপজেলার আতিকুজ্জামান আলী এই দরপত্র দাখিলে অংশ গ্রহন করেন।

তাদের মধ্যে মোঃ এনামুল হক সর্বোচ্চ দরদাতা। তিনি দরপেত্রে ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ টাকা দর দিয়েছেন। দ্বিতীয় দরদাতা সাজ্জাদ হোসেন ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭০০ টাকা দর দিয়েছেন। অতিকুজ্জামান আলী সর্বনি¤œ দরদাতা হিসাবে ৩৬ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা দরপত্রে মূল্য দিয়েছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মোঃ এনামুলক হকের কাছ থেকে ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ টাকার পরিবর্ততে ৪৬ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৬ টাকা নিয়ে তাঁকে কোলা হাট-বাজার ইজারাদার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইজারাদার হাট-বাজারের হাসিল আদায় করছেন।

দ্বিতীয় দরদাতা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অবশিষ্ট সময়ে জন্য অথাৎ আট মাসের জন্য ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭০০ টাকা দর দিয়েছিলাম। আমার চেয়ে মোঃ এনামুল হকের দর অনেক বেশি থাকায় নিয়মানুযায়ী তাকেই হাট-বাজার ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরে মোঃ এনামুল হকের কাছ থেকে ৪৬ লাখ টাকা ৬৩ হাজার ৬৯৬ টাকায় হাট-বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। যোগসাজশ করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ইউএনও রাজস্ব ফাঁকির দায় কোনোভাবে এড়াতে পারেন না।

হাইকোর্টে রীটপিটিশন মামলা বাদী ফেরদৌস হোসেন বলেন, আমি বাংলা ১৪২৬ সালে কোলা হাট-বাজারের ইজারাদার ছিলাম। তখন কোলা হাট-বাজারের জায়গা দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। হাট-বাজারের জায়গা কমে যাওয়ায় কোলা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠের জায়গায় হাট-বাজার লাগাতে হতো। এতে ইজারাদারকে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হতো। হাট-বাজারের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ইউএনওসহ প্রশাসনের কাছে আমি বহুবার অভিযোগ করেও কোন সুফল পাইনি। পরে হাইকোর্টে রীটপিটিশন মামলা দায়ের করেছিলাম।

তিনি বলেন, রীটপিটিশন মামলাটি চলমান থাকা অবস্থায় ঈদুল আজহার পর ইউএনও আলপনা ইয়াসমীন আমাকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে রীটপিটিশন মামলার নিষ্পত্তির জন্য একটি লিখিত কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নেন। আমি ইউএনওর চাপে মুখে স্বাক্ষর দিয়েছি।

বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আলম খাঁন বলেন, কোলা হাট-বাজার ইজারাদার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল ‘অবশিষ্ট’ সময়ে জন্য ইজারা দেওয়া হবে। আর সেই ইজারায় ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ টাকা সর্বোচ্চ দর ছিল। সিডিউলে দেওয়া দরের চেয়ে একটি টাকাও কম নেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই। কিন্তু সিডিউলে দেওয়া দরের চেয়ে অনেক কম টাকায় হাট-বাজার ইজারা দেওয়া হয়েছে। এটা গুরুত্বর অনিয়ম বলে মনে করছি । একারণে হাট-বাজার ইজারার দরপত্রে মূল্যয়ন কমিটির রেজুলেশনে আমি স্বাক্ষর করিনি আর কখনো করবও না। এই জন্য আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও চাপ দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা হাট-বাজার ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমীন বলেন, গত (১৭ আগষ্ট) দরপত্র মূল্যয়ন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক খাস হাসিল আদায়ের সময় বাদ দিয়ে আনুপাতিক হারে ইজারার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালার আলোকে হাট-বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি।

অপরদিকে জানা যায়, গত (৪ ফেব্রুয়ারি) সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাঃ আবু তাহির বদলগাছী উপজেলার ১৫ টি হাট ইজারা দেওয়ার জন্য ইজারার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। আর ঐ ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে ৯ নম্বর ক্রমিকে কোলা হাটের মন্তব্যর কলামে লিখাছিলো।

বর্ণিত হাট-বাজার ইজারার বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ১২৯৭/২০২০ নং রীট পিটিশন মামলাটি যে পর্যায়ে প্রত্যাহার /নিস্পত্তি হবে সে পর্যায়ে সিডিউল বিক্রি করা হবে।

এলাকাবাসী ও সচেতন মহল বলছেন, এই ইউএনও এখানে যোগদানের পর থেকেই শুরু করেছে বিভিন্ন অনিয়োম ও দূনির্তী । যেখানে পূর্বের ইউএনও হাট-বাজার ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করেছিলেন।

কোলা হাটের হাট-বাজার ইজারার বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ১২৯৭/২০২০ নং রীট পিটিশন মামলাটি যে পর্যায়ে প্রত্যাহার/নিস্পত্তি হবে সে পর্যায়ে সিডিউল বিক্রি করা হবে। সে খানে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় কি ভাবে আবরো ঐ হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেন ইউএনও। আর যদি মামলা নিস্পত্তি হয়েও থাকে তাহলেও নতুন করে ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কোন প্রশ্নই ছিলোনা। তিনি নতুন করে ঐ হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করে সরকারি অর্থ অপচয় করেছেন বলে আমরা মনে করি।

তারা আরো বলেন, হাটটি ইজারায় ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ টাকা সর্বোচ্চ দর দিয়েছিলো। পরে পরিবর্ততে মাত্র ৪৬ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৬ টাকায় কি ভাবে হাটটি ঐ ব্যক্তিকেই ইজরা দেওয়া হলো। এটা কিছের বিনিময়ে। তারা এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

ছবি

টোলপ্লাজায় ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ১৪

ছবি

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, বেশিরভাগ অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ

কোম্পানীগঞ্জে পর্যটকের সঙ্গে এএসপির মারামারি

ছবি

গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ গোপালগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

শার্শায় সাংবাদিকের উপর হামলা

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় রেললাইনের পাশ থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

সালথায় স্বামীর উপর অভিমান করে গৃহবধূর আত্মহত্যা

ছবি

শিবগঞ্জে পরিবারের উপর অভিমান করে কিশোরের আত্মহত্যা

ছবি

ভালুকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ছাত্রলীগ নেতা নিহত

ছবি

নরসিংদীতে বজ্রপাতে নিহত ১, আহত ২

ছবি

হাওরে বৃষ্টি জলাবদ্ধতায় দেড় হাজার একর বোরো জমি বিনষ্টের পথে, কৃষকের আহাজারি

ছবি

রংপুরে বাসের টিকেট বিক্রিতে নৈরাজ্য, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ছবি

দর্শনার্থীতে মুখরিত ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

ছবি

গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও পূবালী ব্যাংকের ম্যানেজার

ছবি

রায়পুরায় দুইপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ১০

ছবি

সিরাজগঞ্জ যমুনার চরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী

ছবি

মোরেলগঞ্জে ব্রিজের রেলিং ভেঙে যাত্রী পরিবহন বন্ধ, ভোগান্তি

ছবি

দুই দিনে বাংলাদেশে প্রবেশ করলো মিয়ানমারের ৮১ সীমান্তনক্ষী

ছবি

ধর্ষণে সহযোগিতা করায় কারাভোগ ২৩ বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে দেখেন পরিবারের কেউ বেঁচে নেই

ছবি

ধনবাড়ীতে গ্রামীণ মেলায় ‘অশ্লীল নৃত্য’

ছবি

রায়গঞ্জে বিএডিসির খাল পুনঃখননে ব্যাপক অনিয়ম

ছবি

ইউপি নির্বাচনী বিরোধ চকরিয়ায় বাড়ি থেকে ঢেকে নিয়ে মেম্বার প্রার্থীকে গুলি করে হত্যা

ছবি

গাজীপুরে বয়লার বিস্ফোরণে চীনা নাগরিক নিহত

ছবি

সুনামগঞ্জ কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

ছবি

কাপাসিয়ায় বাস-সিএনজি সংঘর্ষ, নিহত ১

ছবি

সুইমিংপুলে পর্যটক শিশুর মৃত্যু

ছবি

উজিরপুরে ব্র্যাক ম্যানেজারের বাসায় ডাকাতি

ছবি

চৈত্রের খরতাপে পুড়ছে রাজশাহী ফসল বাঁচাতে আবাসিকে লোডশেডিং

ছবি

বোদায় শ্বশুর বাড়িতে জামাইয়ের আত্মহত্যা

ছবি

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

ছবি

মহাদেবপুরে কর্মসৃজন কর্মসূচিতে বরাদ্দ আড়াই কোটি টাকা

ছবি

কেশবপুরে বোরোর ভালো ফলন হলেও জলাবদ্ধতায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

ছবি

দূষণ আর অবৈধ দখলে ঐতিহ্য হারাচ্ছে মাথাভাঙ্গা নদী

ছবি

সাতক্ষীরায় নদী রক্ষা বাঁধে ফের ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ছবি

লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগের ৪ জনের ওপর হামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

আরব আমিরাতে ভয়াবহ বন্যায় ঢাকা থেকে ৯ ফ্লাইট বাতিল

tab

সারাদেশ

বদলগাছীর কোলা হাট-বাজার ইজারায় অনিয়ম

প্রতিনিধি, বদলগাছী (নওগাঁ)

মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

উপজেলা হাট-বাজার ব্যবস্থপনা কমিটির বিরুদ্ধে দরপত্রে দাখিল করা টাকার চেয়ে অনেক কম টাকায় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা হাট-বাজারটি ইজারা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনিয়ম হওয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান দরপত্র মূল্যয়ন কমিটির রেজুলেশনে স্বাক্ষর দেননি।

উপজেলা চেয়ারম্যান বলছেন, কোলা হাট-বাজার ইজারায় গুরুত্বর অনিয়ম করা হয়েছে। দরপত্রে দেওয়া দরের চেয়ে অনেক কম টাকা নিয়ে হাট-বাজার ইজারা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে হাট-বাজার ইজারার মূল্যয়ন কমিটির রেজুলেশনে স্বাক্ষর করিনি। উপজেলা হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমীনের দাবী নীতিমালার আলোকে কোলা হাট-বাজার ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইজারায় কোনো অনিয়ম করা হয়নি।

নিয়মানুযায়ী প্রতি বছর বৈশাখ মাসে হাট-বাজার ইজারা দেওয়া হয়। কোলা-হাট বাজারের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে হাট-বাজারের প্রশস্তকরণের জন্য বাংলা ১৪২৬ সালের কোলা হাট-বাজার ইজারাদার ফেরদৌস হোসেন বাদী হয়ে হাইকোর্ট একটি রীটপিটিশন মামলা (১২৯৭/২০২০) দায়ের করেছিলেন। আইনী জটিলতা থাকায় বাংলা ১৪২৭ সালে কোলা হাট-বাজার ইজারা দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। প্রায় ১৪ মাস ধরে এই হাট-বাজারে খাস হাসিল আদায় করা হয়েছে। সেই হাট থেকে লাখ লাখ টাকা খাস আদায় করে নাম মাত্র সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন ইউএনও। নিয়মানুযায়ী ভূমি অফিসে লোকজনের সরকারি খাস হাসিল আদায় করা কথা ছিল।

কিন্তু সাবেক ইজারাদারের লোকজনদের সরকারি খাস হাসিল আদায়ে নিযুক্ত রেখে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। এতে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এরপর হাইকোর্টের রীটের বাদী ফেরদৌস হোসেনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ইউএনও রীট নিষ্পত্তি আবেদনে জোর করে স্বাক্ষর নেন বলে জানিয়েছেন রীটপিটিশন মামলার বাদী ফেরদৌস হোসেন।

পরবর্তীতে গত (২৯ জুলাই) দৈনিক আজকালের খবর ও বগুড়ার দৈনিক উত্তরকোণ পত্রিকায় কোলা হাট-বাজার ইজারাদার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেন ইউএনও আলপনা ইয়াসমীন।

পত্রিকায় প্রকাশিত কোলা হাট-বাজার ইজারাদার বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বর্ণিত হাট-বাজারসমূহ বাংলা ১৪২৮ সনের ‘অবশিষ্ট’ সময়ের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে দরপত্র সিডিউলে বর্ণিত শর্তসাপেক্ষে প্রতিটি হাট-বাজার জন্য পৃথকভাবে সীলমোহরযুক্ত খামে হাট-বাজারের নাম উল্লেখ পূর্বক ক্যালেন্ডারে সময়সূচি মোতাবেক দরপত্র আহ্বান করা যাচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে হাট-বাজার ইজারা সংক্রান্ত তফসিলের কলামে ১৪২৮ সালের সরকারি ইজারা মুল্য ৫৪ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৬ টাকা ও মন্তব্যের কলামে বর্ণিত হাট-বাজার ইজারার বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ১২৯৭/২০২০ নং রীটপিটিশন মামলার বাদী কর্তৃক অভিযোগটির নিষ্পত্তির আবেদন পাওয়ায় রীটের আদেশ অনুসারে ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারী করা হলো।

গত (১৬ আগষ্ট) দরপত্র বিক্রির শেষ দিন ছিল। পরদিন (১৭ আগষ্ট) দুপুর ১টা পর্যন্ত দরপত্র দাখিলের সময় নির্ধারণ করা হয়। ওই দিন দুপুর দেড়টায় দরপত্র খোলা হয়। বাংলা ১৪২৮ সালের অবশিষ্ট সময়ের জন্য কোলা হাট-বাজার ইজারায় নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার পাতনা গ্রামের মোঃ এনামুল হক, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন ও নওগাঁ সদর উপজেলার আতিকুজ্জামান আলী এই দরপত্র দাখিলে অংশ গ্রহন করেন।

তাদের মধ্যে মোঃ এনামুল হক সর্বোচ্চ দরদাতা। তিনি দরপেত্রে ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ টাকা দর দিয়েছেন। দ্বিতীয় দরদাতা সাজ্জাদ হোসেন ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭০০ টাকা দর দিয়েছেন। অতিকুজ্জামান আলী সর্বনি¤œ দরদাতা হিসাবে ৩৬ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা দরপত্রে মূল্য দিয়েছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মোঃ এনামুলক হকের কাছ থেকে ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ টাকার পরিবর্ততে ৪৬ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৬ টাকা নিয়ে তাঁকে কোলা হাট-বাজার ইজারাদার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইজারাদার হাট-বাজারের হাসিল আদায় করছেন।

দ্বিতীয় দরদাতা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অবশিষ্ট সময়ে জন্য অথাৎ আট মাসের জন্য ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭০০ টাকা দর দিয়েছিলাম। আমার চেয়ে মোঃ এনামুল হকের দর অনেক বেশি থাকায় নিয়মানুযায়ী তাকেই হাট-বাজার ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরে মোঃ এনামুল হকের কাছ থেকে ৪৬ লাখ টাকা ৬৩ হাজার ৬৯৬ টাকায় হাট-বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। যোগসাজশ করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ইউএনও রাজস্ব ফাঁকির দায় কোনোভাবে এড়াতে পারেন না।

হাইকোর্টে রীটপিটিশন মামলা বাদী ফেরদৌস হোসেন বলেন, আমি বাংলা ১৪২৬ সালে কোলা হাট-বাজারের ইজারাদার ছিলাম। তখন কোলা হাট-বাজারের জায়গা দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করা হয়েছে। হাট-বাজারের জায়গা কমে যাওয়ায় কোলা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠের জায়গায় হাট-বাজার লাগাতে হতো। এতে ইজারাদারকে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হতো। হাট-বাজারের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ইউএনওসহ প্রশাসনের কাছে আমি বহুবার অভিযোগ করেও কোন সুফল পাইনি। পরে হাইকোর্টে রীটপিটিশন মামলা দায়ের করেছিলাম।

তিনি বলেন, রীটপিটিশন মামলাটি চলমান থাকা অবস্থায় ঈদুল আজহার পর ইউএনও আলপনা ইয়াসমীন আমাকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে রীটপিটিশন মামলার নিষ্পত্তির জন্য একটি লিখিত কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নেন। আমি ইউএনওর চাপে মুখে স্বাক্ষর দিয়েছি।

বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আলম খাঁন বলেন, কোলা হাট-বাজার ইজারাদার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল ‘অবশিষ্ট’ সময়ে জন্য ইজারা দেওয়া হবে। আর সেই ইজারায় ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ টাকা সর্বোচ্চ দর ছিল। সিডিউলে দেওয়া দরের চেয়ে একটি টাকাও কম নেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই। কিন্তু সিডিউলে দেওয়া দরের চেয়ে অনেক কম টাকায় হাট-বাজার ইজারা দেওয়া হয়েছে। এটা গুরুত্বর অনিয়ম বলে মনে করছি । একারণে হাট-বাজার ইজারার দরপত্রে মূল্যয়ন কমিটির রেজুলেশনে আমি স্বাক্ষর করিনি আর কখনো করবও না। এই জন্য আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও চাপ দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা হাট-বাজার ব্যবস্থপনা কমিটির সভাপতি নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমীন বলেন, গত (১৭ আগষ্ট) দরপত্র মূল্যয়ন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক খাস হাসিল আদায়ের সময় বাদ দিয়ে আনুপাতিক হারে ইজারার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালার আলোকে হাট-বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি।

অপরদিকে জানা যায়, গত (৪ ফেব্রুয়ারি) সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাঃ আবু তাহির বদলগাছী উপজেলার ১৫ টি হাট ইজারা দেওয়ার জন্য ইজারার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। আর ঐ ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে ৯ নম্বর ক্রমিকে কোলা হাটের মন্তব্যর কলামে লিখাছিলো।

বর্ণিত হাট-বাজার ইজারার বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ১২৯৭/২০২০ নং রীট পিটিশন মামলাটি যে পর্যায়ে প্রত্যাহার /নিস্পত্তি হবে সে পর্যায়ে সিডিউল বিক্রি করা হবে।

এলাকাবাসী ও সচেতন মহল বলছেন, এই ইউএনও এখানে যোগদানের পর থেকেই শুরু করেছে বিভিন্ন অনিয়োম ও দূনির্তী । যেখানে পূর্বের ইউএনও হাট-বাজার ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করেছিলেন।

কোলা হাটের হাট-বাজার ইজারার বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ১২৯৭/২০২০ নং রীট পিটিশন মামলাটি যে পর্যায়ে প্রত্যাহার/নিস্পত্তি হবে সে পর্যায়ে সিডিউল বিক্রি করা হবে। সে খানে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় কি ভাবে আবরো ঐ হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেন ইউএনও। আর যদি মামলা নিস্পত্তি হয়েও থাকে তাহলেও নতুন করে ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কোন প্রশ্নই ছিলোনা। তিনি নতুন করে ঐ হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করে সরকারি অর্থ অপচয় করেছেন বলে আমরা মনে করি।

তারা আরো বলেন, হাটটি ইজারায় ৭১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ টাকা সর্বোচ্চ দর দিয়েছিলো। পরে পরিবর্ততে মাত্র ৪৬ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৬ টাকায় কি ভাবে হাটটি ঐ ব্যক্তিকেই ইজরা দেওয়া হলো। এটা কিছের বিনিময়ে। তারা এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

back to top