alt

সারাদেশ

কক্সবাজার : নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতদের পরিবার দিশেহারা

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার : বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

নির্বাচনী সহিংসতায় মহেশখালীতে গুলিতে নিহত জেলে আবুল কালামের স্ত্রী ও দুই মেয়ে বাড়ির সামনে অসহায় অবস্থায় -সংবাদ

কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হালিম (নৌকার এজেন্ট) ও নৌকার সমর্থক জেলে আবুল কালামের পরিবারে থামছে না কান্নার রোল। নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী এ ঘটনার জন্য শাস্তি দাবি করেছেন।

মঙ্গলবার পৃথক সময়ে তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। দরিদ্র আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলে পরিবারে তাদের মৃত্যু নিয়ে দিশেহারা স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে কুতুবদিয়ায় বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে প্রিজাইডিং অফিসার সাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে কুতুবদিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুতুবদিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ওমর হায়দার। ওসি ওমর হায়দার জানান, ইউনিয়নের পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুরে হামলা চালিয়ে ব্যালট ছিনতাইসহ সহিংসতার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি।

জানাগেছে, কুতুবদিয়ায় ২০ সেপ্টেম্বর ইউপি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হালিমের জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ বিদ্যুৎ বিতরণ অফিসের মাঠে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা আ’লীগের সভাপতি, কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কুতুবদিয়া-মহেশখালীর সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, মহেশখালীর পৌর মেয়র মকছুদ মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর, বড়ঘোপ

ে পৃষ্ঠা ১১ : ক : ৬

কক্সবাজার : নির্বাচনী সহিংসতায়

(১ম পৃষ্ঠার পর)

ইউনিয়ন সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান টিটু প্রমুখ।

কুতুবদিয়ার ৫নং বড়ঘোপ ইউপির নৌকার প্রার্থী আবুল কালামের এজেন্ট নিহত আবদুল হালিমের জানাজায় বক্তারা বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রের ভিতর গুলি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি না, কেনো গুলি করা হলো, ওই পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। পাশাপাশি ওই পুলিশ কার নির্দেশে গুলি করছে বা কারা গুলি করতে উৎসাহিত করেছে এবং এমনকি আরও যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে বক্তারা আরও বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান হয়েছে। তিনি দেশে ফিরলে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি টিম দেখা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ সময় ৭ দিনের শোক কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ। জানাজা শেষে নিহতের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ জেলার নেতারা। এতে উপস্থিত ছিলেন, কুতুবদিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারও নেতাকর্মী।

নিহত আবদুল হালিম (৩৭) বড়ঘোপ ইউনিয়নের গোলদারপাড়া এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে এবং ৭নং ওয়ার্ড় আওয়ামী লীগের সভাপতি। নিহতের পরিবারে রাইয়েম (৭), রামিম (৪) ও রাকিন (২) নামে তিন শিশু রয়েছে। নিহতের স্ত্রী ফরিদা বেগম ও নিহতের মা শোকে হতবিহ্বল বলে জানা গেছে।

ওই মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বড়ঘোপ ইউনিয়নে পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১০০/১৫০ জন লোক প্রবেশ করে ব্যালট ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইর চেষ্টা করে এবং ব্যালটে শিল মারতে থাকে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিংসহ দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা বাধা দিলে তাদের ওপর হামলা করে এবং প্রিজাইডিং অফিসারকে উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।

এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রিজাইডিং অফিসার ডা. সাহাব উদ্দীন দায়িত্বরত পুলিশকে রাইফেল, এসএমসির কয়েক রাউন্ড গুলি করার নির্দেশ দেন। পরে, তারা দেখতে পান ২য় তলায় পুরুষ বুথের সামনে একজন লোক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। তাকে উদ্ধার করে কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হয় এবং দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আবদুল হালিম ঐ কেন্দ্রের নৌকার এজেন্ট ছিলেন।

এদিকে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় ভোটকেন্দ্রে গুলিতে নিহত হয়েছেন আবুল কালাম (৫০) নামের এক জেলে। ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলি ও হট্টগোল সৃষ্টি হলে নিরাপদে পালিয়ে আসতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। দরিদ্র জেলে পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম এ ব্যক্তির মৃত্যুতে দিশেহারা তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা। সোমবার মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন এ জেলে। পরে মঙ্গলবার সকালে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

নিহতের পরিবার বলছে, আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী শেখ কামালের লোকজনের হাতে তিনি খুন হয়েছেন, শেখ কামালের দাবি- এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, নিরীহ লোকজনকে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষ প্রার্থী খোকনের লোকজনই তাকে খুন করেছে। পুলিশ জানিয়েছেন, তারা খুনের বিষয়টি তদন্ত করছেন, তবে কেউ মামলার এজাহার নিয়ে থানায় আসেনি।

সরেজমিন পরিদর্শনে মঙ্গলবার বিকেলে কুতুবজোমের পশ্চিমপাড়া এলাকায় নিহত আবুল কালামের বাড়িতে গেলে এক শোকবিধুর পরিবেশ দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দুই কন্যা সন্তানের জনক আবুল কালামের জীবনযাপন ছিল বেশ সাদামাটা। কখনও দৈনিক মজুরির শ্রমিক, কখনও জেলে হিসেবে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া এ মানুষটির সংসার চলতো প্রায় অভাব-অনটনে।

তবে অভাবের সংসার হলেও কখনও কারও কাছে হাত পাতেননি। যখন যে কাজ পায় তা করেই সংসার চালান কালাম। রিফা আকতার ও জাহান আরা বেগম নামের দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রামে। স্ত্রী নুর আয়েশাকে নিয়ে বর্তমানে দুই সদস্যের পরিবার আবুল কালামের। কুতুবজোম পশ্চিমপাড়া এলাকায় বেড়া ও পলিথিন দিয়ে তৈরি জির্ণশীর্ণ ছোট ঘরটি আবুল কালামের।

নিহত আবুল কালামের কাছের আত্মীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী রমজান আলী ও মোহাম্মদ সেলিম জানান, ২০ সেপ্টেম্বর ভোটের দিন খুব সকালে গিয়ে বাড়ির কাছে কুতুবজোম জামিউস সুন্নাহ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে অন্যদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়ান আবুল কালাম। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কিছু সময় পর কেন্দ্রটিতে হঠাৎ করে গোলাগুলি শুরু হয়।

এ সময় নিহত কালামের সঙ্গে ভোটারের লাইনে তার পাশে দাঁড়ানো রমজান আলী ও মোহাম্মদ সেলিমসহ আবুল কালাম দৌড়ে পালিয়ে এসে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারা কেন্দ্রটির সীমানা পার হয়ে সড়কে এসে পৌঁছলে আবুল কালামকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয় এবং কোমরের পেছনে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো সুযোগ ও গাড়ি ছিল না। গোলাগুলি ধারাবাহিকভাবে চলছিল।

নিহতের পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আবুল কালাম মূলত একজন আওয়ামী লীগ সমর্থক ছিলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন। এবার ইউনিয়ন পরিষদটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকন নৌকার মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি প্রার্থী খোকনের সমর্থক হিসেবে নির্বাচনে কাজ করে। এ কারণে তাকে নৌকার প্রার্থী শেখ কামালের লোকজন গুলি করে বলে তাদের দাবি।

প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কোন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকনের গাড়িতে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান তিনি। এ সময় আবুল কালাম একটি পা গাড়িতে উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীরা ফের এসে উদ্ধার করতে আসা এ সেলিমকে এলোপাথাড়ি মারধর করতে করতে ওই স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে আটকে রাখে। পরে দায়িত্বরত বিজিবি এসে আবুল কালামকে হাসপাতালে নেয়ার উদ্যোগ নিলে স্থানীয় এক নারী আবুল কালামকে নিয়ে মহেশখালী হাসপাতালে যায়।

মহেশখালী হাসপাতাল দ্রুত তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে নিহতের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওখানে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মোহাম্মদ সেলিম আরও জানান, আবুল কালাম রাস্তার উপর লুটিয়ে পড়া অবস্থায় আমি মরে যাচ্ছি, আমাকে একটু পানি দাও বলে পানি পানের আকুতি জানিয়েছিল এবং এটিই তার শেষ কথা বলে জানান।

নিহতের পরিবার ও স্বজনদের দাবি হঠাৎ করে ওই কেন্দ্র থেকে খোকনের নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দেয়া হয় এবং মুহুর্মুহু গুলি করে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালানো হয়। এ সময় ভোটারের লাইনে দাঁড়নো লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে এর ভেতরই আবুল কালামকে গুলি করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় জানাজা শেষে কুতুবজোম পশ্চিমপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সরজমিন আবুল কালামের বাড়ি পরিদর্শনে গেলে ওখানে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কান্নার রোল দেখা যায়। আবুল কালামের দুই মেয়ে ও স্ত্রী এ নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন। ঘটনার পর পুলিশ ও প্রশাসনের কেউই তার বাড়িতে আসেনি এবং তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা জমা দেয়নি বলেও জানান।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকন এক সংবাদ সম্মেলনে এ হত্যাকান্ডের সুস্থ বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, নজিরবিহীন কারচুপির মাধ্যমে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের নেতৃত্বেই এ কারচুপি হয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ কামাল জানান, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, চশমা মার্কার মোশাররফ হোসেন খোকনের লোক জনৈক বাদশা মেম্বারের ছেলে তারেকের গুলিতেই তার মৃত্যু হয়েছে। নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ফাঁসাতেই এই অপ-পরিকল্পনা।

মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হালিম (নৌকার এজেন্ট) ও নৌকার সমর্থক জেলে আবুল কালামকে নিয়ে কমরেড গিয়াস উদ্দিন বলেন, কুতুবদিয়ায় ভোটকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে নিহত স্থানীয় আওয়ামী লীগ আবদুল হালিমের তিন শিশুপুত্র রয়েছে। তারা জানে না, তাদের বাবা কোথায়! নিষ্পাপ শিশুদের দিকে তাকানো উচিত। পাশাপাশি তিনি সংঘটিত ঘটনাগুলো সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান।

স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন জানান, এ হত্যার দায় কে নেবে? পুলিশ প্রশাসন নাকি প্রার্থীরা। এই হতভাগাদের দায়িত্ব কে নেবে? মেয়র মুজিবুর রহমানের মহানুভবতায় হয়তো সাময়িক শান্তি পেতে পারে, তবে স্থানীয় শান্তি কে দেবে! এই দায় আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার মার্কা নৌকা এড়াতে পারে না। কারণ তার মৃত্যুর একমাত্র কারণ হচ্ছে সে নৌকার এজেন্ট ছিল। তিনিও সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক এই পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের বিচার চান।

হিটস্ট্রোকে ৪ জনের মৃত্যু

ছবি

ঈদযাত্রা : মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ৫১ শতাংশ, সাড়ে ৪২ শতাংশ নিহত

ছবি

১৫ শ্রমিক নিয়ে সাজেকের খাদে ট্রাক, নিহত ৯

ছবি

রাজধানীতে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় ভ্যানচালক নিহত

ছবি

থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

ছবি

বাসের ধাক্কায় চুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু নরসিংদীর বাড়িতে কান্নার রোল

ছবি

অপহরণ ও মারধরের শিকার দেলোয়ার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিংড়া উপজেলার চেয়ারম্যান

ছবি

রাজশাহীতে বৃষ্টি নামাতে বিয়ের পিঁড়িতে দুই ব্যঙ

ছবি

রংপুরে সাজাপ্রাপ্ত দুই যুবদল নেতাকে কারাগাওে পাঠানোর নির্দেশে বিক্ষোভ

ছবি

আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’র কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ

ছবি

পরিবার পাবে ১০ লাখ টাকা চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, আল্টিমেটাম

তিস্তাসহ ৫৪ অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যা দাবিতে বাসদের লং মার্চ

ছবি

লালমনিরহাটে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন হাজার হাজার মুসল্লি

ছবি

অসহায় পরিবারের নিরুপায় নির্মমতা! চুরি ঠেকাতে ৩ বছর শেকল বন্দি কিশোর

ছবি

ছাত্র হত্যায় যুবকের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

হোটেলে আটকে রেখে কিশোর ধর্ষণ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ছবি

ক্যাসিনোকাণ্ডের সেই সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল

ভৌতিক বিলের খপ্পর চট্টগ্রামে মিটার-সংযোগবিহীন গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল প্রায় ৭ লাখ টাকা

ছবি

এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরেছে ৩৬৭ জনের প্রাণ

ছবি

চুয়েটের ২ শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসের চালক গ্রেপ্তার

ছবি

মাদারীপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে নিহত ১, আহত ১০

ছবি

মায়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজে দেশে ফিরছেন ১৫৩ বাংলাদেশি

ছবি

কক্সবাজারে স্পেশাল ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত

ছবি

ট্রেন লাইনচ্যুত, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

ছবি

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

নড়াইলে মাদক মামলায় ২ জনের যাবতজ্জীবন

আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’র কারণ খুঁজছে পুলিশ

ছবি

বাগেরহাটে যাত্রীবাহি বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে, নিহত ১

ছবি

৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট

ছবি

ফরিদপুরে দুই ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ

ছবি

নন্দীগ্রামে মসজিদের মিটিংয়ে হুমকি, নামাজ শেষে হামলা

ছবি

কক্সবাজারের তিন উপজেলায় কে কোন প্রতীক পেলেন

ছবি

গাজীপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে হাতী মরদেহ উদ্ধার

ছবি

মোরেলগঞ্জে বৃষ্টির জন্য ইসতেস্কার নামাজ আদায়

ছবি

তীব্র গরম ও তাপদাহে অতিষ্ঠ মধুপুরবাসী বাড়ছে নানা রোগ

ছবি

মধুপুরে জৈব কৃষি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

tab

সারাদেশ

কক্সবাজার : নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতদের পরিবার দিশেহারা

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

নির্বাচনী সহিংসতায় মহেশখালীতে গুলিতে নিহত জেলে আবুল কালামের স্ত্রী ও দুই মেয়ে বাড়ির সামনে অসহায় অবস্থায় -সংবাদ

বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হালিম (নৌকার এজেন্ট) ও নৌকার সমর্থক জেলে আবুল কালামের পরিবারে থামছে না কান্নার রোল। নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী এ ঘটনার জন্য শাস্তি দাবি করেছেন।

মঙ্গলবার পৃথক সময়ে তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। দরিদ্র আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলে পরিবারে তাদের মৃত্যু নিয়ে দিশেহারা স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে কুতুবদিয়ায় বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে প্রিজাইডিং অফিসার সাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে কুতুবদিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুতুবদিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ওমর হায়দার। ওসি ওমর হায়দার জানান, ইউনিয়নের পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুরে হামলা চালিয়ে ব্যালট ছিনতাইসহ সহিংসতার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ওসি।

জানাগেছে, কুতুবদিয়ায় ২০ সেপ্টেম্বর ইউপি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হালিমের জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ বিদ্যুৎ বিতরণ অফিসের মাঠে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা আ’লীগের সভাপতি, কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, কুতুবদিয়া-মহেশখালীর সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, মহেশখালীর পৌর মেয়র মকছুদ মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর, বড়ঘোপ

ে পৃষ্ঠা ১১ : ক : ৬

কক্সবাজার : নির্বাচনী সহিংসতায়

(১ম পৃষ্ঠার পর)

ইউনিয়ন সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান টিটু প্রমুখ।

কুতুবদিয়ার ৫নং বড়ঘোপ ইউপির নৌকার প্রার্থী আবুল কালামের এজেন্ট নিহত আবদুল হালিমের জানাজায় বক্তারা বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রের ভিতর গুলি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি না, কেনো গুলি করা হলো, ওই পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। পাশাপাশি ওই পুলিশ কার নির্দেশে গুলি করছে বা কারা গুলি করতে উৎসাহিত করেছে এবং এমনকি আরও যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে বক্তারা আরও বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান হয়েছে। তিনি দেশে ফিরলে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি টিম দেখা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ সময় ৭ দিনের শোক কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ। জানাজা শেষে নিহতের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ জেলার নেতারা। এতে উপস্থিত ছিলেন, কুতুবদিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারও নেতাকর্মী।

নিহত আবদুল হালিম (৩৭) বড়ঘোপ ইউনিয়নের গোলদারপাড়া এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে এবং ৭নং ওয়ার্ড় আওয়ামী লীগের সভাপতি। নিহতের পরিবারে রাইয়েম (৭), রামিম (৪) ও রাকিন (২) নামে তিন শিশু রয়েছে। নিহতের স্ত্রী ফরিদা বেগম ও নিহতের মা শোকে হতবিহ্বল বলে জানা গেছে।

ওই মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বড়ঘোপ ইউনিয়নে পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১০০/১৫০ জন লোক প্রবেশ করে ব্যালট ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইর চেষ্টা করে এবং ব্যালটে শিল মারতে থাকে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিংসহ দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা বাধা দিলে তাদের ওপর হামলা করে এবং প্রিজাইডিং অফিসারকে উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।

এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রিজাইডিং অফিসার ডা. সাহাব উদ্দীন দায়িত্বরত পুলিশকে রাইফেল, এসএমসির কয়েক রাউন্ড গুলি করার নির্দেশ দেন। পরে, তারা দেখতে পান ২য় তলায় পুরুষ বুথের সামনে একজন লোক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। তাকে উদ্ধার করে কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হয় এবং দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আবদুল হালিম ঐ কেন্দ্রের নৌকার এজেন্ট ছিলেন।

এদিকে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় ভোটকেন্দ্রে গুলিতে নিহত হয়েছেন আবুল কালাম (৫০) নামের এক জেলে। ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলি ও হট্টগোল সৃষ্টি হলে নিরাপদে পালিয়ে আসতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। দরিদ্র জেলে পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম এ ব্যক্তির মৃত্যুতে দিশেহারা তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা। সোমবার মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন এ জেলে। পরে মঙ্গলবার সকালে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

নিহতের পরিবার বলছে, আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী শেখ কামালের লোকজনের হাতে তিনি খুন হয়েছেন, শেখ কামালের দাবি- এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, নিরীহ লোকজনকে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষ প্রার্থী খোকনের লোকজনই তাকে খুন করেছে। পুলিশ জানিয়েছেন, তারা খুনের বিষয়টি তদন্ত করছেন, তবে কেউ মামলার এজাহার নিয়ে থানায় আসেনি।

সরেজমিন পরিদর্শনে মঙ্গলবার বিকেলে কুতুবজোমের পশ্চিমপাড়া এলাকায় নিহত আবুল কালামের বাড়িতে গেলে এক শোকবিধুর পরিবেশ দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দুই কন্যা সন্তানের জনক আবুল কালামের জীবনযাপন ছিল বেশ সাদামাটা। কখনও দৈনিক মজুরির শ্রমিক, কখনও জেলে হিসেবে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া এ মানুষটির সংসার চলতো প্রায় অভাব-অনটনে।

তবে অভাবের সংসার হলেও কখনও কারও কাছে হাত পাতেননি। যখন যে কাজ পায় তা করেই সংসার চালান কালাম। রিফা আকতার ও জাহান আরা বেগম নামের দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রামে। স্ত্রী নুর আয়েশাকে নিয়ে বর্তমানে দুই সদস্যের পরিবার আবুল কালামের। কুতুবজোম পশ্চিমপাড়া এলাকায় বেড়া ও পলিথিন দিয়ে তৈরি জির্ণশীর্ণ ছোট ঘরটি আবুল কালামের।

নিহত আবুল কালামের কাছের আত্মীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী রমজান আলী ও মোহাম্মদ সেলিম জানান, ২০ সেপ্টেম্বর ভোটের দিন খুব সকালে গিয়ে বাড়ির কাছে কুতুবজোম জামিউস সুন্নাহ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে অন্যদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়ান আবুল কালাম। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কিছু সময় পর কেন্দ্রটিতে হঠাৎ করে গোলাগুলি শুরু হয়।

এ সময় নিহত কালামের সঙ্গে ভোটারের লাইনে তার পাশে দাঁড়ানো রমজান আলী ও মোহাম্মদ সেলিমসহ আবুল কালাম দৌড়ে পালিয়ে এসে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারা কেন্দ্রটির সীমানা পার হয়ে সড়কে এসে পৌঁছলে আবুল কালামকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয় এবং কোমরের পেছনে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো সুযোগ ও গাড়ি ছিল না। গোলাগুলি ধারাবাহিকভাবে চলছিল।

নিহতের পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আবুল কালাম মূলত একজন আওয়ামী লীগ সমর্থক ছিলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন। এবার ইউনিয়ন পরিষদটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকন নৌকার মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি প্রার্থী খোকনের সমর্থক হিসেবে নির্বাচনে কাজ করে। এ কারণে তাকে নৌকার প্রার্থী শেখ কামালের লোকজন গুলি করে বলে তাদের দাবি।

প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কোন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকনের গাড়িতে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান তিনি। এ সময় আবুল কালাম একটি পা গাড়িতে উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীরা ফের এসে উদ্ধার করতে আসা এ সেলিমকে এলোপাথাড়ি মারধর করতে করতে ওই স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে আটকে রাখে। পরে দায়িত্বরত বিজিবি এসে আবুল কালামকে হাসপাতালে নেয়ার উদ্যোগ নিলে স্থানীয় এক নারী আবুল কালামকে নিয়ে মহেশখালী হাসপাতালে যায়।

মহেশখালী হাসপাতাল দ্রুত তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললে নিহতের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওখানে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মোহাম্মদ সেলিম আরও জানান, আবুল কালাম রাস্তার উপর লুটিয়ে পড়া অবস্থায় আমি মরে যাচ্ছি, আমাকে একটু পানি দাও বলে পানি পানের আকুতি জানিয়েছিল এবং এটিই তার শেষ কথা বলে জানান।

নিহতের পরিবার ও স্বজনদের দাবি হঠাৎ করে ওই কেন্দ্র থেকে খোকনের নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দেয়া হয় এবং মুহুর্মুহু গুলি করে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালানো হয়। এ সময় ভোটারের লাইনে দাঁড়নো লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে এর ভেতরই আবুল কালামকে গুলি করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় জানাজা শেষে কুতুবজোম পশ্চিমপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সরজমিন আবুল কালামের বাড়ি পরিদর্শনে গেলে ওখানে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কান্নার রোল দেখা যায়। আবুল কালামের দুই মেয়ে ও স্ত্রী এ নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন। ঘটনার পর পুলিশ ও প্রশাসনের কেউই তার বাড়িতে আসেনি এবং তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা জমা দেয়নি বলেও জানান।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকন এক সংবাদ সম্মেলনে এ হত্যাকান্ডের সুস্থ বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, নজিরবিহীন কারচুপির মাধ্যমে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের নেতৃত্বেই এ কারচুপি হয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ কামাল জানান, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, চশমা মার্কার মোশাররফ হোসেন খোকনের লোক জনৈক বাদশা মেম্বারের ছেলে তারেকের গুলিতেই তার মৃত্যু হয়েছে। নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ফাঁসাতেই এই অপ-পরিকল্পনা।

মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হালিম (নৌকার এজেন্ট) ও নৌকার সমর্থক জেলে আবুল কালামকে নিয়ে কমরেড গিয়াস উদ্দিন বলেন, কুতুবদিয়ায় ভোটকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে নিহত স্থানীয় আওয়ামী লীগ আবদুল হালিমের তিন শিশুপুত্র রয়েছে। তারা জানে না, তাদের বাবা কোথায়! নিষ্পাপ শিশুদের দিকে তাকানো উচিত। পাশাপাশি তিনি সংঘটিত ঘটনাগুলো সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান।

স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন জানান, এ হত্যার দায় কে নেবে? পুলিশ প্রশাসন নাকি প্রার্থীরা। এই হতভাগাদের দায়িত্ব কে নেবে? মেয়র মুজিবুর রহমানের মহানুভবতায় হয়তো সাময়িক শান্তি পেতে পারে, তবে স্থানীয় শান্তি কে দেবে! এই দায় আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার মার্কা নৌকা এড়াতে পারে না। কারণ তার মৃত্যুর একমাত্র কারণ হচ্ছে সে নৌকার এজেন্ট ছিল। তিনিও সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক এই পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের বিচার চান।

back to top