alt

সারাদেশ

করোনা সংক্রমণচক্র ভেঙে গেছে

রাকিব উদ্দিন : বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

টানা তিন দিন দেশে করোনা সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে। দেশের কোন অঞ্চল ও এলাকায় এখন আর সামাজিক ও ক্লাস্টার সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে না। সংক্রমণের চক্র ভেঙে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করলে সংক্রমণ পরিস্থিতির আর অবনতির শঙ্কা করছেন না জনস্বাস্থ্যবিদরা। ঢাকা মহানগর ও দুই একটি জেলা ছাড়া এখন কোন এলাকায় দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা অর্ধশত পার হচ্ছে না।

ঢাকায়ও নিয়মিত কমছে শনাক্ত। ঢাকায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬২০ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। আগের দিন ঢাকায় শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৭৯৮ জন এবং ২১ সেপ্টেম্বর ছিল ৮৮০ জন। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) অন্তত আটটি জেলায় ন্যূনতম একজনের দেহেও করোনা সংক্রমণ পায়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিন অন্তত ৪০টি জেলায় দশ জনের কম করে রোগী শনাক্ত হয়েছে।

দেশের বেশিরভাগ জেলায় সংক্রমণের প্রকোপ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনা সংক্রমণের চেইন ভেঙে গেছে, দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন ব্যাপকভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি খুব একটা নেই। ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে, সবাই মাস্ক পরে চলাফেরা করলে এবং মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা বজায় থাকলে অচিরেই সংক্রমণ আরও বেশি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন।

খ্যাতিমান জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. বেনজির আহমেদ বৃহস্পতিবার সংবাদকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে বলতে গেলে, এই মুহূর্তে দেশের কোন এলাকায় সামাজিক সংক্রমণ নেই। এখন সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলেও কোথাও কোথাও রোগীই নেই। হয়তো বা দু’এক জায়গায় একটু বেশি আছে।’

সংক্রমণ নিচে নামার এই প্রবণতা অব্যাহত রাখার উপায় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, বাইরে থেকে যাতে কোন রোগী দেশে ঢুকতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এতে করোনার নতুন কোন ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। বাইরের রোগী ঠেকানো গেলে হয়তো দেশে সংক্রমণ আর বাড়বে না। দ্বিতীয় সরকারের কিছু করণীয় আছে, বিশেষ করে, সবার টিকা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যতবেশি টিকা দিতে পারব, আমাদের সুরক্ষাও ততবেশি হবে।’

সংক্রমণ শূন্যে নামাতে জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে প্রফেসর বেনজির আহমেদ বলেন, ‘বিশ^ থেকে করোনা বিদায় নেয়ার আগ পর্যন্ত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। রাজনৈতিক সভাসমাবেশ, ধর্মীয় সভা, গান-বাজনার অনুষ্ঠানসহ মানুষে মানুষে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা হয়- এমন সব ধরনের অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে হবে।’

জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বৃহস্পতিবার সংবাদকে বলেছেন, ‘এখন সামাজিক সংক্রমণ খুব একটা নেই, তবে ছয়-সাতটি জেলায় সংক্রমণ হার এখনও ১০ শতাংশের বেশি, ওইসব জেলায় সেই অনুযায়ী বিশেষ পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে।’

বিশেষ পদক্ষেপগুলো কী- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘সেখানে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো, কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা দেয়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে সিভিল সার্জনদের বলা হচ্ছে।’

টানা তিনদিন ধরে সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে- উল্লেখ করে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমান অবস্থা কমপক্ষে আরও দুই সপ্তাহ বহাল থাকলে আমরা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় যেতে পারব। যারা মাস্ক পরছেন না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করছেন না, তারা যদি এখন থেকেও মাস্ক পরেন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসা থেকে বেড় হন তাহলে সংক্রমণ স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে এক হাজার ১৪৪ জনের দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৬২০ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায়। এ দিন ঢাকায় মোট ১২ হাজার ৬৭৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এ হিসেবে ঢাকায় করোনা সংক্রমণ হার চার দশমিক ৮৯ শতাংশ।

এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জে ৪৫১টি নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনের করোনা শনাক্ত এবং সংক্রমণ হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, চট্টগ্রামে এক হাজার ৬৫০টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৪ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত এবং সংক্রমণ হার তিন দশমিক ২৭ শতাংশ; কক্সবাজারে ৫৩৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৩১ জনের দেহে জীবাণু শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ফরিদপুরে ১৭৪টি নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জে ৫৫৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত এবং সংক্রমণ হার ছিল চার দশমিক ৫২ শতাংশ।

চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম মৃত্যু ও শনাক্ত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মৃত্যু, সংক্রমণ শনাক্ত ও শনাক্তের হার কমেছে। এই একদিনে শনাক্ত ও মৃত্যু গত প্রায় চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এদিন করোনায় ২৪ জন মারা গেছেন। এর আগে ২৭ মে একদিনে ২২ জনের মৃত্যু কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ১৪৪ জনের শরীরে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। এর আগে গত ২২ মে এক হাজার ২৮ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে হিসাবে দৈনিক শনাক্তও গত চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

টানা তৃতীয় দিন শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে

টানা তৃতীয় দিনের মতো একদিনে করোনায় দৈনিক রোগী শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের কম ছিল। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ছিল চার দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের দিন সংক্রমণ হার ছিল চার দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং ২১ সেপ্টেম্বর তা ছিল চার দশমিক ৬৯ শতাংশ।

সর্বশেষ একদিনে মারা যাওয়া ২৪ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মারা গেলেন ২৭ হাজার ৩৩৭ জন। এই সময়ে শনাক্ত এক হাজার ১৪৪ জনকে নিয়ে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩২০ জনে।

একদিনে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৬৫৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হলেন ১৫ লাখ সাত হাজার ৭৮৯ জন।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ হাজার ৮২০টি। দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৫ লাখ ৫১ হাজার ৯৭০টি।

নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং মোট শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুহার এক দশমিক ৭৭ শতাংশ।

একদিনে মৃত্যু হওয়া ২৪ জনের মধ্যে পুরুষ ১০ জন ও নারী ছিলেন ১৪ জন। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৫৬৬ জন এবং নারী ছিলেন ৯ হাজার ৭৭১ জন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে চার জনের বয়স ছিল ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। এছাড়া ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে সাত জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে সাত জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দুই জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে দুই জন এবং দুই জনের বয়স ছিল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১১ জন, চট্টগ্রামের ছয় জন, খুলনা ও সিলেট বিভাগের তিন জন করে এবং রংপুর বিভাগে একজন মারা গেছেন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৯ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে পাঁচ জন মারা গেছেন।

অনলাইন ক্যাসিনোর ‘হোতা’ সেলিমের অভিযোগ সাবেক সেনা প্রধানের ভাইদের বিরুদ্ধে

ছবি

তীব্র গরমে চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু

ছবি

স্বামীর পুরুষ অঙ্গ কেটে আত্মহত্যা করলেন স্ত্রী

ছবি

বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক ও দুই দেশের শিশুদের খেলাধুলা অনুষ্ঠিত

ছবি

সাবমেরিন কেবল বিচ্ছিন্ন, ধীরগতি হতে পারে ইন্টারনেট

ছবি

বনের আগুন নেভালেন জেলা প্রশাসক, জানে না বনের কর্তারা

ছবি

বিশেষজ্ঞ প্যানেল ও বারি’র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিনিময় কর্মশালা

ছবি

৪২ ডিগ্রি ছাড়াল চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা, গলে যাচ্ছে রাস্তার পিচ

ছবি

টাঙ্গাইলে সংঘ‌র্ষ থামাতে গিয়ে হামলার শিকার এসআই, ১৬ জন আটক

ছবি

কক্সবাজারে জলকেলি উৎসবের সমাপনীতে আলোকিত জীবনের প্রত্যাশা

ছবি

মায়ানমারের বিজিপির আরও ২৪ সদস্য বাংলাদেশে

ছবি

রাজশাহীতে মোটরসাইকেলে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ৩

ছবি

ইউএসএআইডি এবং সিমিট প্রতিনিধি দলের বারি পরিদর্শন

ছবি

পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনে নারীর ঝুলন্ত মরদেহ

ছবি

‘আনন্দে’ শুরুর পর সড়কের ঈদযাত্রা কেন ‘বিষাদে’

ছবি

ঘটনা চাপা দিতে ১৫০ বস্তা সিমেন্ট সরিয়ে ফেলার অভিযোগ

মীরসরাইয়ে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, ঘরের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে

ছবি

মাধবপুরে বিরল প্রজাতির লজ্জাবতী বানর উদ্ধার

ছবি

টঙ্গীতে আগুনে পুড়ল ১২টি খাদ্য গুদাম

ছবি

জলকেলি উৎসবে মুখরিত কক্সবাজরের রাখাইন পল্লী

শেরপুরে বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণ উদ্বোধন

কেশবপুরে সকাল-সন্ধ্যা বাজারের দখল নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি উচ্ছেদ আতঙ্কে অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী

ছবি

ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

ছবি

ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে সরকারি রাস্তার ১২০টি গাছ কর্তনের অভিযোগ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে

পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করেন পুত্রবধূ

ছবি

মির্জাগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু

ছবি

নড়াইলের শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছবি

প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা

ছবি

প্রেমিকার ওপর অভিমান প্রেমিকের আত্মহত্যা

ছবি

শ্যামনগর পদ্মপুকুরের প্রধান সড়কের একাংশ যেন বালুর স্তুপে পরিণত

আমার চেয়ে খারাপ লোক এ জেলায় নাই : তাহেরপুত্র বিপ্লব

ছবি

কক্সবাজারে রিসোর্টে পযটক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

ছবি

ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা

ছবি

সুনামগঞ্জে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

ছবি

টোলপ্লাজায় ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ১৪

tab

সারাদেশ

করোনা সংক্রমণচক্র ভেঙে গেছে

রাকিব উদ্দিন

বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

টানা তিন দিন দেশে করোনা সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে। দেশের কোন অঞ্চল ও এলাকায় এখন আর সামাজিক ও ক্লাস্টার সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে না। সংক্রমণের চক্র ভেঙে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করলে সংক্রমণ পরিস্থিতির আর অবনতির শঙ্কা করছেন না জনস্বাস্থ্যবিদরা। ঢাকা মহানগর ও দুই একটি জেলা ছাড়া এখন কোন এলাকায় দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা অর্ধশত পার হচ্ছে না।

ঢাকায়ও নিয়মিত কমছে শনাক্ত। ঢাকায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬২০ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। আগের দিন ঢাকায় শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৭৯৮ জন এবং ২১ সেপ্টেম্বর ছিল ৮৮০ জন। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) অন্তত আটটি জেলায় ন্যূনতম একজনের দেহেও করোনা সংক্রমণ পায়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিন অন্তত ৪০টি জেলায় দশ জনের কম করে রোগী শনাক্ত হয়েছে।

দেশের বেশিরভাগ জেলায় সংক্রমণের প্রকোপ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনা সংক্রমণের চেইন ভেঙে গেছে, দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন ব্যাপকভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি খুব একটা নেই। ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে, সবাই মাস্ক পরে চলাফেরা করলে এবং মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা বজায় থাকলে অচিরেই সংক্রমণ আরও বেশি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন।

খ্যাতিমান জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক প্রফেসর ড. বেনজির আহমেদ বৃহস্পতিবার সংবাদকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে বলতে গেলে, এই মুহূর্তে দেশের কোন এলাকায় সামাজিক সংক্রমণ নেই। এখন সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলেও কোথাও কোথাও রোগীই নেই। হয়তো বা দু’এক জায়গায় একটু বেশি আছে।’

সংক্রমণ নিচে নামার এই প্রবণতা অব্যাহত রাখার উপায় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, বাইরে থেকে যাতে কোন রোগী দেশে ঢুকতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এতে করোনার নতুন কোন ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। বাইরের রোগী ঠেকানো গেলে হয়তো দেশে সংক্রমণ আর বাড়বে না। দ্বিতীয় সরকারের কিছু করণীয় আছে, বিশেষ করে, সবার টিকা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যতবেশি টিকা দিতে পারব, আমাদের সুরক্ষাও ততবেশি হবে।’

সংক্রমণ শূন্যে নামাতে জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে প্রফেসর বেনজির আহমেদ বলেন, ‘বিশ^ থেকে করোনা বিদায় নেয়ার আগ পর্যন্ত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। রাজনৈতিক সভাসমাবেশ, ধর্মীয় সভা, গান-বাজনার অনুষ্ঠানসহ মানুষে মানুষে ঘনিষ্ঠ মেলামেশা হয়- এমন সব ধরনের অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে হবে।’

জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বৃহস্পতিবার সংবাদকে বলেছেন, ‘এখন সামাজিক সংক্রমণ খুব একটা নেই, তবে ছয়-সাতটি জেলায় সংক্রমণ হার এখনও ১০ শতাংশের বেশি, ওইসব জেলায় সেই অনুযায়ী বিশেষ পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে।’

বিশেষ পদক্ষেপগুলো কী- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘সেখানে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো, কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা দেয়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে সিভিল সার্জনদের বলা হচ্ছে।’

টানা তিনদিন ধরে সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে- উল্লেখ করে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমান অবস্থা কমপক্ষে আরও দুই সপ্তাহ বহাল থাকলে আমরা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় যেতে পারব। যারা মাস্ক পরছেন না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করছেন না, তারা যদি এখন থেকেও মাস্ক পরেন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসা থেকে বেড় হন তাহলে সংক্রমণ স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে এক হাজার ১৪৪ জনের দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৬২০ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায়। এ দিন ঢাকায় মোট ১২ হাজার ৬৭৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এ হিসেবে ঢাকায় করোনা সংক্রমণ হার চার দশমিক ৮৯ শতাংশ।

এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জে ৪৫১টি নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনের করোনা শনাক্ত এবং সংক্রমণ হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, চট্টগ্রামে এক হাজার ৬৫০টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৪ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত এবং সংক্রমণ হার তিন দশমিক ২৭ শতাংশ; কক্সবাজারে ৫৩৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৩১ জনের দেহে জীবাণু শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ফরিদপুরে ১৭৪টি নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জে ৫৫৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত এবং সংক্রমণ হার ছিল চার দশমিক ৫২ শতাংশ।

চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম মৃত্যু ও শনাক্ত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মৃত্যু, সংক্রমণ শনাক্ত ও শনাক্তের হার কমেছে। এই একদিনে শনাক্ত ও মৃত্যু গত প্রায় চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এদিন করোনায় ২৪ জন মারা গেছেন। এর আগে ২৭ মে একদিনে ২২ জনের মৃত্যু কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ১৪৪ জনের শরীরে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। এর আগে গত ২২ মে এক হাজার ২৮ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে হিসাবে দৈনিক শনাক্তও গত চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

টানা তৃতীয় দিন শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে

টানা তৃতীয় দিনের মতো একদিনে করোনায় দৈনিক রোগী শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের কম ছিল। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ছিল চার দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের দিন সংক্রমণ হার ছিল চার দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং ২১ সেপ্টেম্বর তা ছিল চার দশমিক ৬৯ শতাংশ।

সর্বশেষ একদিনে মারা যাওয়া ২৪ জনকে নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মারা গেলেন ২৭ হাজার ৩৩৭ জন। এই সময়ে শনাক্ত এক হাজার ১৪৪ জনকে নিয়ে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩২০ জনে।

একদিনে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৬৫৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হলেন ১৫ লাখ সাত হাজার ৭৮৯ জন।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ হাজার ৮২০টি। দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৫ লাখ ৫১ হাজার ৯৭০টি।

নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং মোট শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুহার এক দশমিক ৭৭ শতাংশ।

একদিনে মৃত্যু হওয়া ২৪ জনের মধ্যে পুরুষ ১০ জন ও নারী ছিলেন ১৪ জন। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১৭ হাজার ৫৬৬ জন এবং নারী ছিলেন ৯ হাজার ৭৭১ জন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে চার জনের বয়স ছিল ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। এছাড়া ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে সাত জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে সাত জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দুই জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে দুই জন এবং দুই জনের বয়স ছিল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১১ জন, চট্টগ্রামের ছয় জন, খুলনা ও সিলেট বিভাগের তিন জন করে এবং রংপুর বিভাগে একজন মারা গেছেন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৯ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে পাঁচ জন মারা গেছেন।

back to top