সৈয়দপুরে রেলওয়ের ২ হাজার ৬৫০টি স্টাফ কোয়ার্টার থাকলেও রেলওয়ের দখলে আছে মাত্র ৯৭১টি কোয়ার্টার। জরাজীর্ণ এসব কোয়ার্টারে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবার। আর অবশিষ্ট কোয়ার্টার থেকে বহিরাগত লোকজন অবৈধভাবে দখলে নিয়ে দিব্যি বসবাস করছে। ফলে বেদখল হওয়া কোয়ার্টার প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের সৈয়দপুর পূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৮৭০ সালে সৈয়দপুরে গড়ে ওঠে রেলওয়ে কারখানা। ফলে কারখানার শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং তাদের পবিারের সদস্যদের বসবাসের জন্য ২ হাজার ৬৭০টি স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। এগুলোর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের জন্য ১৫০টি বাংলো, কর্মচারীদের জন্য দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট ৯০০টি এবং এক কক্ষবিশিষ্ট ১৬০০টি ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে ২০০টি বাসা বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে রেলের ৯৭১ বাসা বরাদ্দ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিবারসহ বাস করছেন। প্রতিবছর এসব বাসাবাড়ি সংস্কারের জন্য ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে কাজ হয় সামান্য। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছর সংস্কার বাবদ যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু নামমাত্র সংস্কার কাজ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা লোপাট করছেন কিছু কর্মকর্তা। কোয়ার্টার ছেড়ে অনেকে ভাড়া বাসায় থাকছেন। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে রেল। পাশাপাশি কোয়ার্টার বেদখল হয়ে যাওয়ায় বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টারগুলোর বেহাল অবস্থা। কোনো কোনটির ছাদে বড় বড় আগাছ জন্মেছে। ছাদ ও দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। শহরের ইসলামবাগ এলাকার এক ইউনিট কোয়ার্টার নিয়ে বাস করছেন আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বগি শপে খালাস পদে চাকরি করি। প্রায় সাতবছর ধরে এ কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে বাস করছি। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি ছাদ চুঁয়ে টপ টপ করে ঘরের ভেতরে পড়ে। বাড়ির আসবাবপত্র ভিজে একাকাকার হয়ে যায়। বর্ষাকালে ঘুমানোর মতো জায়গাটুকুও থাকে না। দুর্ভোগ লাঘব করতে তিনবার লিখিত আবেদন করার পর গত বছর বাসা সংস্কার করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক বছর না যেতেই আগের মত দূরাবস্থা চলছে।
শহরের আতিয়ার কলোনিতে বসবাসকারী কর্মচারী আজমল হোসেন জানান, যে বাসায় থাকি তিন বছর আগে সেই কোয়ার্টারের ছাদে ফাটল সৃষ্টি হয়। সংস্কারে আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত তা সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ রকম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারসহ বাসায় বাস করতে বাধ্য হচ্ছি।
গোলাহাট রেলওয়ে কলোনির দেলওয়ার হোসেন বলেন, জরাজীর্ণ বাসার অনেক কর্মচারী রেলওয়ের বাসা ছেড়ে ভাড়া বাসায় থাকছেন। ফলে খালি বাসাগুলো দখল করে বহিরাগতরা বসবাস করছেন। কোয়ার্টারে ভাড়া বাবদ বেতনের যে পরিমাণ টাকা কাটা হয়, তা দিয়ে ভাল পাবলিক বাসায় ভাড়া থাকা সম্ভব। তাই চিন্তা করেছি, কোয়ার্টার ছেড়ে ভাড়া বাসাতেই উঠব। জানতে চাইলে, সৈয়দপুর রেলওয়ের পূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন বেদখল হওয়া রেলওয়ে কোয়ার্টারে বহিরাগত লোকজনের বসবাসের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া রয়েছে। উচ্ছেদের বিষয়টি রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত। আমরা রেলওয়ে কোয়ার্টার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করি। প্রতি তিন বছর পর পর অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে বরাদ্দ কোয়ার্টার সংস্কার করা হয়। তবে অতি পুরাতন অধিকাংশ কোয়ার্টারগুলোর অবস্থা এতটা খারাপ যে, সংস্কার করেও সুফল পান না রেলের বসবাসকারীরা। তার মতে, বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া কোয়ার্টারগুলোর মান উন্নত করা সম্ভব নয়।
শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
সৈয়দপুরে রেলওয়ের ২ হাজার ৬৫০টি স্টাফ কোয়ার্টার থাকলেও রেলওয়ের দখলে আছে মাত্র ৯৭১টি কোয়ার্টার। জরাজীর্ণ এসব কোয়ার্টারে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবার। আর অবশিষ্ট কোয়ার্টার থেকে বহিরাগত লোকজন অবৈধভাবে দখলে নিয়ে দিব্যি বসবাস করছে। ফলে বেদখল হওয়া কোয়ার্টার প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের সৈয়দপুর পূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৮৭০ সালে সৈয়দপুরে গড়ে ওঠে রেলওয়ে কারখানা। ফলে কারখানার শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং তাদের পবিারের সদস্যদের বসবাসের জন্য ২ হাজার ৬৭০টি স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। এগুলোর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের জন্য ১৫০টি বাংলো, কর্মচারীদের জন্য দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট ৯০০টি এবং এক কক্ষবিশিষ্ট ১৬০০টি ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে ২০০টি বাসা বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে রেলের ৯৭১ বাসা বরাদ্দ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিবারসহ বাস করছেন। প্রতিবছর এসব বাসাবাড়ি সংস্কারের জন্য ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে কাজ হয় সামান্য। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছর সংস্কার বাবদ যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু নামমাত্র সংস্কার কাজ দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা লোপাট করছেন কিছু কর্মকর্তা। কোয়ার্টার ছেড়ে অনেকে ভাড়া বাসায় থাকছেন। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে রেল। পাশাপাশি কোয়ার্টার বেদখল হয়ে যাওয়ায় বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টারগুলোর বেহাল অবস্থা। কোনো কোনটির ছাদে বড় বড় আগাছ জন্মেছে। ছাদ ও দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। শহরের ইসলামবাগ এলাকার এক ইউনিট কোয়ার্টার নিয়ে বাস করছেন আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বগি শপে খালাস পদে চাকরি করি। প্রায় সাতবছর ধরে এ কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে বাস করছি। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি ছাদ চুঁয়ে টপ টপ করে ঘরের ভেতরে পড়ে। বাড়ির আসবাবপত্র ভিজে একাকাকার হয়ে যায়। বর্ষাকালে ঘুমানোর মতো জায়গাটুকুও থাকে না। দুর্ভোগ লাঘব করতে তিনবার লিখিত আবেদন করার পর গত বছর বাসা সংস্কার করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক বছর না যেতেই আগের মত দূরাবস্থা চলছে।
শহরের আতিয়ার কলোনিতে বসবাসকারী কর্মচারী আজমল হোসেন জানান, যে বাসায় থাকি তিন বছর আগে সেই কোয়ার্টারের ছাদে ফাটল সৃষ্টি হয়। সংস্কারে আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত তা সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ রকম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারসহ বাসায় বাস করতে বাধ্য হচ্ছি।
গোলাহাট রেলওয়ে কলোনির দেলওয়ার হোসেন বলেন, জরাজীর্ণ বাসার অনেক কর্মচারী রেলওয়ের বাসা ছেড়ে ভাড়া বাসায় থাকছেন। ফলে খালি বাসাগুলো দখল করে বহিরাগতরা বসবাস করছেন। কোয়ার্টারে ভাড়া বাবদ বেতনের যে পরিমাণ টাকা কাটা হয়, তা দিয়ে ভাল পাবলিক বাসায় ভাড়া থাকা সম্ভব। তাই চিন্তা করেছি, কোয়ার্টার ছেড়ে ভাড়া বাসাতেই উঠব। জানতে চাইলে, সৈয়দপুর রেলওয়ের পূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন বেদখল হওয়া রেলওয়ে কোয়ার্টারে বহিরাগত লোকজনের বসবাসের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া রয়েছে। উচ্ছেদের বিষয়টি রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত। আমরা রেলওয়ে কোয়ার্টার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করি। প্রতি তিন বছর পর পর অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে বরাদ্দ কোয়ার্টার সংস্কার করা হয়। তবে অতি পুরাতন অধিকাংশ কোয়ার্টারগুলোর অবস্থা এতটা খারাপ যে, সংস্কার করেও সুফল পান না রেলের বসবাসকারীরা। তার মতে, বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া কোয়ার্টারগুলোর মান উন্নত করা সম্ভব নয়।