জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীর মনে করেন, যাদের ‘ব্যর্থতায়’ নদী ভাঙছে, ক্ষতিগ্রস্তদের ‘সেই মন্ত্রণালয়’ থেকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিৎ।
আজ শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের’ এক সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, “আমি মনে করি ট্রেন দুর্ঘটনা, লঞ্চ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যদি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় তবে যারা নদী শিকস্থি, নদী যাদের বাড়ি-ঘর, উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলছে তাদেরকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিৎ।
“সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যাদের ব্যর্থতার জন্য এরকম বছরের পর বছর এরকম হচ্ছে তাদেরই ক্ষতিপূরণটা দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে কমিশন ৬০ হাজার দখলদারের তালিকা করেছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার উচ্ছেদ হয়েছে। কাজটা কিন্তু সহজ নয়।
“কারণ আপনারা জানেন নদী দখলদারেরা অনেক শক্তিশালী। তবে আইন তারচেয়েও শক্তিশালী, সরকারের হাত আরও লম্বা। নদী দখল করে কেউ পার পাবেন না।”
নদী কমিশনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এর জনবল কাঠামো বাড়ানো দরকার, এর আইনগত কাঠামো বাড়ানো দরকার। কমিশনকে একটা সাংবিধানিক সংস্থায় পরিণত করা উচিৎ।
“যেমন নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন। আমি মনে করি সেরকম সাংবিধানিক বডি হওয়া উচিৎ। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় আছে, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় আছে, নদী ও জলাশয় মন্ত্রণালয় থাকবে না কেন?”
নদী দূষণ ঠেকাতে না পারলে ‘ভয়াবহ’ পরিণতি হবে উল্লেখ করে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “ঢাকার চারপাশের নদীর দূষণটা মারাত্মক। এটা মনে হয় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, রেকর্ড সৃষ্টিকারী।
“ঢাকা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরী। ঢাকায় সুস্থ শরীরে বেঁচেবর্তে থাকা মনে হয় আল্লা তায়ালার একটা কুদরত। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকার প্রতি ঘরে ঘরে একটা ভয়ঙ্কর রোগ এসে ঢুকবে, এর কোনো চিকিৎসা থাকবে না।”
বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে ‘নদী বাঁচাও আন্দোলন’। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার আন্তর্জাতিকভাবে নদী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
দখল-দূষণ প্রতিরোধের তাগিদ দিয়ে নদী বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান আনোয়ার সাদাত বলেন, “কঠিন সত্য হচ্ছে, আমাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে দূষণের ওপর। পৃথিবীর সব থেকে দূষিত নদীগুলো আমাদের ঢাকার চারপাশে।”
নদী দখল রোধে নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “জাতীয়ভাবে নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। সংজ্ঞা নির্ধারিত না হলে নদীর সীমানা নির্ধারণ করা যাবে না। সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে সিএস পর্চা অনুযায়ী।”
সিএস বা ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে হচ্ছে ১৮৮৭ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে পরিচালিত ভূমি জরিপ।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি কাটানোরও তাগিদ দেন ‘নদী বাঁচাও আন্দোলনের’ সভাপতি আনোয়ার সাদাত।
তিনি বলেন, “সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে দেশে নদী আছে ২৩০টি, উইকিপিডিয়ায় বলা হয় ৪০৫ টি, শিশু একাডেমির বিশ্বকোষে নদীর সংখ্যা বলা আছে ৭০০টি, আমরা বলছি দেড় হাজারের ওপর, আবার কেউ বলেন দুই হাজারের ওপর। নদীর আসলে সংখ্যা কতো? সেটা জাতির সামনে আনতে হবে।”
অভিন্ন নদী কতোগুলো তা নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে জানিয়ে আনোয়ার সাদাত বলেন, “সরকারিভাবে বলা হয় অভিন্ন নদী ৫৭টি। এর মধ্যে তিনটি মিয়ানমারের সঙ্গে, বাকি ৫৪টি ভারতের সঙ্গে। কিন্তু আমরা হিসেব করে ১০৭টি অভিন্ন নদী পাচ্ছি। এই সংখ্যাগুলো প্রকৃতভাবে নির্ধারণ করতে হবে।”
সভায় আনোয়ার সাদাতের সভাপতিত্বে নদী কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার আহমেদসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, গবেষক ও সরকারি কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।
এসময় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ‘নদী বাঁচাও আন্দোলনের’ নেতারা নদী-জলাশয় দখল, দূষণের চিত্র তুলে ধরে নদী রক্ষা কমিশনের কাছে প্রতিকার চান।
কমিশনকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া, পৃথক নদী ট্রাইবুনালে নদীর দখল ও দূষণকারীদের বিচার দাবি করেন তারা।
শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীর মনে করেন, যাদের ‘ব্যর্থতায়’ নদী ভাঙছে, ক্ষতিগ্রস্তদের ‘সেই মন্ত্রণালয়’ থেকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিৎ।
আজ শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের’ এক সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, “আমি মনে করি ট্রেন দুর্ঘটনা, লঞ্চ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যদি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় তবে যারা নদী শিকস্থি, নদী যাদের বাড়ি-ঘর, উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলছে তাদেরকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিৎ।
“সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যাদের ব্যর্থতার জন্য এরকম বছরের পর বছর এরকম হচ্ছে তাদেরই ক্ষতিপূরণটা দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে কমিশন ৬০ হাজার দখলদারের তালিকা করেছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার উচ্ছেদ হয়েছে। কাজটা কিন্তু সহজ নয়।
“কারণ আপনারা জানেন নদী দখলদারেরা অনেক শক্তিশালী। তবে আইন তারচেয়েও শক্তিশালী, সরকারের হাত আরও লম্বা। নদী দখল করে কেউ পার পাবেন না।”
নদী কমিশনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এর জনবল কাঠামো বাড়ানো দরকার, এর আইনগত কাঠামো বাড়ানো দরকার। কমিশনকে একটা সাংবিধানিক সংস্থায় পরিণত করা উচিৎ।
“যেমন নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন। আমি মনে করি সেরকম সাংবিধানিক বডি হওয়া উচিৎ। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় আছে, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় আছে, নদী ও জলাশয় মন্ত্রণালয় থাকবে না কেন?”
নদী দূষণ ঠেকাতে না পারলে ‘ভয়াবহ’ পরিণতি হবে উল্লেখ করে নদী কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “ঢাকার চারপাশের নদীর দূষণটা মারাত্মক। এটা মনে হয় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, রেকর্ড সৃষ্টিকারী।
“ঢাকা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরী। ঢাকায় সুস্থ শরীরে বেঁচেবর্তে থাকা মনে হয় আল্লা তায়ালার একটা কুদরত। এভাবে চলতে থাকলে ঢাকার প্রতি ঘরে ঘরে একটা ভয়ঙ্কর রোগ এসে ঢুকবে, এর কোনো চিকিৎসা থাকবে না।”
বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে ‘নদী বাঁচাও আন্দোলন’। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার আন্তর্জাতিকভাবে নদী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
দখল-দূষণ প্রতিরোধের তাগিদ দিয়ে নদী বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান আনোয়ার সাদাত বলেন, “কঠিন সত্য হচ্ছে, আমাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে দূষণের ওপর। পৃথিবীর সব থেকে দূষিত নদীগুলো আমাদের ঢাকার চারপাশে।”
নদী দখল রোধে নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “জাতীয়ভাবে নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। সংজ্ঞা নির্ধারিত না হলে নদীর সীমানা নির্ধারণ করা যাবে না। সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে সিএস পর্চা অনুযায়ী।”
সিএস বা ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে হচ্ছে ১৮৮৭ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে পরিচালিত ভূমি জরিপ।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি কাটানোরও তাগিদ দেন ‘নদী বাঁচাও আন্দোলনের’ সভাপতি আনোয়ার সাদাত।
তিনি বলেন, “সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে দেশে নদী আছে ২৩০টি, উইকিপিডিয়ায় বলা হয় ৪০৫ টি, শিশু একাডেমির বিশ্বকোষে নদীর সংখ্যা বলা আছে ৭০০টি, আমরা বলছি দেড় হাজারের ওপর, আবার কেউ বলেন দুই হাজারের ওপর। নদীর আসলে সংখ্যা কতো? সেটা জাতির সামনে আনতে হবে।”
অভিন্ন নদী কতোগুলো তা নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে জানিয়ে আনোয়ার সাদাত বলেন, “সরকারিভাবে বলা হয় অভিন্ন নদী ৫৭টি। এর মধ্যে তিনটি মিয়ানমারের সঙ্গে, বাকি ৫৪টি ভারতের সঙ্গে। কিন্তু আমরা হিসেব করে ১০৭টি অভিন্ন নদী পাচ্ছি। এই সংখ্যাগুলো প্রকৃতভাবে নির্ধারণ করতে হবে।”
সভায় আনোয়ার সাদাতের সভাপতিত্বে নদী কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার আহমেদসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, গবেষক ও সরকারি কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।
এসময় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ‘নদী বাঁচাও আন্দোলনের’ নেতারা নদী-জলাশয় দখল, দূষণের চিত্র তুলে ধরে নদী রক্ষা কমিশনের কাছে প্রতিকার চান।
কমিশনকে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া, পৃথক নদী ট্রাইবুনালে নদীর দখল ও দূষণকারীদের বিচার দাবি করেন তারা।