কিছু স্থানে শনাক্তের তথ্য পাওয়া গেছে
ছয় জেলার কয়েকটি স্কুলে ২৯ জন শিক্ষার্থীর ‘করোনা শনাক্তের’ খবর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে মানিকগঞ্জে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর তথ্য প্রচার হয়েছে। আর ঠাকুরগাঁওয়ে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্তের তথ্য প্রচার হচ্ছে, তবে এই ১৩ শিক্ষার্থী স্কুলে আসা-যাওয়ার কারণে সংক্রমিত হয়েছে তা নিশ্চিত হয়নি। তবে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওইসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
প্রায় দেড় বছরের টানা ছুটি শেষে গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরাসরি শ্রেণীকক্ষে লেখাপড়া শুরু হলেও কতুটুক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যাবে সেটি নিয়ে শঙ্কা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। দু’একটি ক্ষেত্রে অভিভাবকরা প্রতিষ্ঠানের সামনে জটলা পাকাচ্ছেন। স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় কয়েকটি স্কুলের কিছু শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। যদিও সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে এ নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ হচ্ছে।
এ পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, সিলেট ও ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২৯ জন শিক্ষার্থীর দেহে করোনা শনাক্তের খবর প্রচার হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শনিবারের (২৫ সেপ্টেম্বর) তথ্য অনুযায়ী, সকাল আটটা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মানিকগঞ্জে কারোর দেহে করোনা সংক্রমণই পাওয়া যায়নি। এই সময়ে ৩২টি নমুনা পরীক্ষা করে ঠাকুরগাঁওয়ে মাত্র একজনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোভিড-১৯ বিষয়ক ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য ‘ভাইরোলজিস্ট’ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও ও মানিকগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় কিছু শিক্ষার্থীর করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। সারাদেশে এখন সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।’
সার্বিকভাবে দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে খ্যাতিমান এই ভাইরোলজিস্ট আরও বলেন, ‘এখন শুধু স্কুল নয়, সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই খুলে দেয়া যায়। দু’একটি জায়গায় যদি কারোর করোনা পাওয়া যায়, সেখানে পদক্ষেপ নিলেই হবে। আর কারোর শরীরে উপসর্গ দেখা দিলেই যে সে করোনায় আক্রান্ত তা ঠিক নয়। নানা ফ্লুতে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। সেটা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শনিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও সে রকম পরিস্থিতি হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্কুলে শিক্ষার্থীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার যেসব খবর আসছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোথাও সত্যতা পাওয়া যায়নি দাবি করে দীপু মনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি জায়গায় সঙ্গে সঙ্গেই অনুসন্ধান করছি। তবে আশার বিষয় হচ্ছে যে, শিক্ষার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছে এখানে আক্রান্ত, ওখানে আক্রান্ত, আমরা এখন পর্যন্ত কোথাও সত্যতা কিন্তু পাইনি। তারপরেও অতিমারী চলমান। কাজেই তীক্ষ্ম নজর রাখতে হবে।’
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলা যায়। বাংলাদেশে গত এক সপ্তাহ ধরেই করোনা সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে।
এ বিষয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘যদিও সংক্রমণ হার শতকরা ৫-এর নিচে নেমে এসেছে, তারপরও কিন্তু অতিমারী চলমান সারাবিশ্বেই। কাজেই আমাদের তীক্ষ্ম নজর রাখতে হবে। কেউ না কেউ অসুস্থ হতেই পারে, বাড়িতেও অসুস্থ হতে পারে, যাতায়াতের পথে অসুস্থ হতে পারে। এমনকি তাদের দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সংক্রমণ ঘটতে পারে, সেটি যেন না ঘটে।’
মানিকগঞ্জ এসকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুবর্ণা ইসলাম রোদেলা ‘করোনার উপসর্গ’ নিয়ে মারা গেছে। তবে জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, ওই শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষাই হয়নি। এ কারণে তার করোনা ছিল কী না সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যু হয় রোদেলার। এর আগে একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হওয়ায় ওই শ্রেণীর পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। পরে ৫৮ সহপাঠীর করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলে সবারই ‘করোনা নেগেটিভ’ আসে, এতে আবার পাঠদান শুরু হয়।
মানিকগঞ্জে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী শনিবার জানান, তারা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলেছেন, ওই শিক্ষার্থী শুধু ১৫ সেপ্টেম্বর একবার স্কুলে এসেছিল, এর ৬-৭ দিন পরে তার করোনা শনাক্তের খবর পাওয়া যায় এবং সে মৃত্যুবরণ করে। সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, ওই ছাত্রী এক দিনই স্কুলে এসেছিল। ওইদিন তার শরীরে কোন ধরনের উপসর্গ ছিল না।
এ জন্য সেখানে সবার নমুনা পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারপরও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে দশম শ্রেণীর একজন শনাক্ত হয়েছে। তখন যতজন ক্লাসে ছিল সবার পরীক্ষা করা হয়, কিন্তু কারও করোনা শনাক্ত হয়নি।
প্রাথমিকের শিশুদের করোনা শনাক্ত
ঠাকুরগাঁওয়ে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষার্থীর করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউপির বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন পঞ্চম শ্রেণীর ও দু’জন চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। প্রথমে এই স্কুলের তিন শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হয়।
পরে তাদের সংস্পর্শে আসা কয়েক শিক্ষার্থীর নমুনা পরীক্ষা করালে একই স্কুলের দু’জন এবং হাজীপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচজন ও সোনালি শৈশব বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে দুই সপ্তাহের জন্য ওইসব স্কুলে পাঠদান বন্ধ করা হয়।
ওই ১৩ শিক্ষার্থী পৃথক প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও জেলার সরকারি শিশু সদনে তারা একসঙ্গেই থাকে।
একটি বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক সাংবাদিকদের বলেছেন, কয়েকটি শিশুর মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখার পর তাদের পরীক্ষা করানো হলে পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তখন ওই শিশু সদনের অন্য শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা করে দেখা হয়। সতর্কতা হিসেবে এসব শ্রেণীর পাঠদান দুইদিন বন্ধ করে রাখা হয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার বলছেন, ‘কীভাবে এই ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো তাদের এক বা দুইজন আগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সবাই একই শিশু সদনে থাকার কারণে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।’
পরবর্তীতে এসব শিক্ষার্থীর শ্রেণীর অন্যদের পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে, তাদের কারও মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। এই শিক্ষার্থীদের আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান সিভিল সার্জন।
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হাসিমপুরের ড. মনসুর উদ্দীন মহিলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনা শনাক্ত শিক্ষার্থীদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের এখন পর্যন্ত কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমণের কথা শোনা যাচ্ছে। সেগুলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, তারা সেগুলোর ব্যাপারে দেখছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’
চাঁদপুরে ২৪ ঘণ্টায় ২০৮টি নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র নয়জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। গোপালগঞ্জ জেলার গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১০২নং বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোনালিসা ইসলামের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীর পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার ৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী তিনা খানমের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
গোপালগঞ্জে একদিনে ১৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র পাঁচজনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়াও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের সবাই মেডিকেলের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী। তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সিলেটে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৮ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে একটি স্কুলের দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর করোনা আক্রান্তের খবর বেড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও বিষয়টি ছড়িয়েছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, খবর পাওয়ার পরে আমরা ওই ক্লাসের সব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা করেছি। অন্য কারও মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।’
কিছু স্থানে শনাক্তের তথ্য পাওয়া গেছে
শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
ছয় জেলার কয়েকটি স্কুলে ২৯ জন শিক্ষার্থীর ‘করোনা শনাক্তের’ খবর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে মানিকগঞ্জে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর তথ্য প্রচার হয়েছে। আর ঠাকুরগাঁওয়ে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্তের তথ্য প্রচার হচ্ছে, তবে এই ১৩ শিক্ষার্থী স্কুলে আসা-যাওয়ার কারণে সংক্রমিত হয়েছে তা নিশ্চিত হয়নি। তবে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওইসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
প্রায় দেড় বছরের টানা ছুটি শেষে গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সরাসরি শ্রেণীকক্ষে লেখাপড়া শুরু হলেও কতুটুক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যাবে সেটি নিয়ে শঙ্কা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। দু’একটি ক্ষেত্রে অভিভাবকরা প্রতিষ্ঠানের সামনে জটলা পাকাচ্ছেন। স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় কয়েকটি স্কুলের কিছু শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। যদিও সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে এ নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ হচ্ছে।
এ পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, সিলেট ও ঢাকার কেরানীগঞ্জে ২৯ জন শিক্ষার্থীর দেহে করোনা শনাক্তের খবর প্রচার হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শনিবারের (২৫ সেপ্টেম্বর) তথ্য অনুযায়ী, সকাল আটটা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মানিকগঞ্জে কারোর দেহে করোনা সংক্রমণই পাওয়া যায়নি। এই সময়ে ৩২টি নমুনা পরীক্ষা করে ঠাকুরগাঁওয়ে মাত্র একজনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোভিড-১৯ বিষয়ক ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য ‘ভাইরোলজিস্ট’ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও ও মানিকগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় কিছু শিক্ষার্থীর করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। সারাদেশে এখন সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।’
সার্বিকভাবে দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে খ্যাতিমান এই ভাইরোলজিস্ট আরও বলেন, ‘এখন শুধু স্কুল নয়, সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই খুলে দেয়া যায়। দু’একটি জায়গায় যদি কারোর করোনা পাওয়া যায়, সেখানে পদক্ষেপ নিলেই হবে। আর কারোর শরীরে উপসর্গ দেখা দিলেই যে সে করোনায় আক্রান্ত তা ঠিক নয়। নানা ফ্লুতে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। সেটা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শনিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোথাও সে রকম পরিস্থিতি হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্কুলে শিক্ষার্থীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার যেসব খবর আসছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোথাও সত্যতা পাওয়া যায়নি দাবি করে দীপু মনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি জায়গায় সঙ্গে সঙ্গেই অনুসন্ধান করছি। তবে আশার বিষয় হচ্ছে যে, শিক্ষার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছে এখানে আক্রান্ত, ওখানে আক্রান্ত, আমরা এখন পর্যন্ত কোথাও সত্যতা কিন্তু পাইনি। তারপরেও অতিমারী চলমান। কাজেই তীক্ষ্ম নজর রাখতে হবে।’
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে রোগী শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলা যায়। বাংলাদেশে গত এক সপ্তাহ ধরেই করোনা সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে।
এ বিষয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘যদিও সংক্রমণ হার শতকরা ৫-এর নিচে নেমে এসেছে, তারপরও কিন্তু অতিমারী চলমান সারাবিশ্বেই। কাজেই আমাদের তীক্ষ্ম নজর রাখতে হবে। কেউ না কেউ অসুস্থ হতেই পারে, বাড়িতেও অসুস্থ হতে পারে, যাতায়াতের পথে অসুস্থ হতে পারে। এমনকি তাদের দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সংক্রমণ ঘটতে পারে, সেটি যেন না ঘটে।’
মানিকগঞ্জ এসকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুবর্ণা ইসলাম রোদেলা ‘করোনার উপসর্গ’ নিয়ে মারা গেছে। তবে জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, ওই শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষাই হয়নি। এ কারণে তার করোনা ছিল কী না সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যু হয় রোদেলার। এর আগে একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হওয়ায় ওই শ্রেণীর পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। পরে ৫৮ সহপাঠীর করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলে সবারই ‘করোনা নেগেটিভ’ আসে, এতে আবার পাঠদান শুরু হয়।
মানিকগঞ্জে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী শনিবার জানান, তারা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলেছেন, ওই শিক্ষার্থী শুধু ১৫ সেপ্টেম্বর একবার স্কুলে এসেছিল, এর ৬-৭ দিন পরে তার করোনা শনাক্তের খবর পাওয়া যায় এবং সে মৃত্যুবরণ করে। সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, ওই ছাত্রী এক দিনই স্কুলে এসেছিল। ওইদিন তার শরীরে কোন ধরনের উপসর্গ ছিল না।
এ জন্য সেখানে সবার নমুনা পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারপরও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে দশম শ্রেণীর একজন শনাক্ত হয়েছে। তখন যতজন ক্লাসে ছিল সবার পরীক্ষা করা হয়, কিন্তু কারও করোনা শনাক্ত হয়নি।
প্রাথমিকের শিশুদের করোনা শনাক্ত
ঠাকুরগাঁওয়ে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষার্থীর করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউপির বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন পঞ্চম শ্রেণীর ও দু’জন চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। প্রথমে এই স্কুলের তিন শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হয়।
পরে তাদের সংস্পর্শে আসা কয়েক শিক্ষার্থীর নমুনা পরীক্ষা করালে একই স্কুলের দু’জন এবং হাজীপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচজন ও সোনালি শৈশব বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে দুই সপ্তাহের জন্য ওইসব স্কুলে পাঠদান বন্ধ করা হয়।
ওই ১৩ শিক্ষার্থী পৃথক প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও জেলার সরকারি শিশু সদনে তারা একসঙ্গেই থাকে।
একটি বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক সাংবাদিকদের বলেছেন, কয়েকটি শিশুর মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখার পর তাদের পরীক্ষা করানো হলে পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তখন ওই শিশু সদনের অন্য শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা করে দেখা হয়। সতর্কতা হিসেবে এসব শ্রেণীর পাঠদান দুইদিন বন্ধ করে রাখা হয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার বলছেন, ‘কীভাবে এই ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো তাদের এক বা দুইজন আগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সবাই একই শিশু সদনে থাকার কারণে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।’
পরবর্তীতে এসব শিক্ষার্থীর শ্রেণীর অন্যদের পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে, তাদের কারও মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। এই শিক্ষার্থীদের আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান সিভিল সার্জন।
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হাসিমপুরের ড. মনসুর উদ্দীন মহিলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনা শনাক্ত শিক্ষার্থীদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের এখন পর্যন্ত কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমণের কথা শোনা যাচ্ছে। সেগুলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, তারা সেগুলোর ব্যাপারে দেখছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’
চাঁদপুরে ২৪ ঘণ্টায় ২০৮টি নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র নয়জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। গোপালগঞ্জ জেলার গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১০২নং বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোনালিসা ইসলামের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীর পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার ৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী তিনা খানমের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
গোপালগঞ্জে একদিনে ১৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র পাঁচজনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়াও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের সবাই মেডিকেলের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থী। তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। সিলেটে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৮ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে একটি স্কুলের দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর করোনা আক্রান্তের খবর বেড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও বিষয়টি ছড়িয়েছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, খবর পাওয়ার পরে আমরা ওই ক্লাসের সব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা করেছি। অন্য কারও মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।’