alt

সারাদেশ

ঢাকার এক কেন্দ্রেই ১৫ দিনে সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকাদানের পরিকল্পনা

রাকিব উদ্দিন : রোববার, ১৭ অক্টোবর ২০২১

৩০ অক্টোবর থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর স্কুল-কলেজের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী সব শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে একটিমাত্র কেন্দ্রে সব শিক্ষার্থীর টিকাদানের সিদ্ধান্ত নেয়ায় জটিলতা দেখছেন শিক্ষকরা। ঢাকা মহানগরীতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ঢাকার সব শিক্ষার্থীকে শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। একমাত্র কেন্দ্রে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে শঙ্কা দেখছেন শিক্ষকরা। এতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করাকে একটি বড় সীমাবন্ধতা হিসেবে দেখছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।

টিকা গ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করবে কীভাবে- জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের পক্ষ্য থেকেই যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। মাউশিতে এ খাতে কোন অর্থ বরাদ্দ নেই।’

টিকাকেন্দ্র ও বুথ বাড়িয়ে এই সমস্যা নিরসন করা যায় কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরীতে এখনই টিকাকেন্দ্র বাড়ানো সম্ভব নয়। কারণ শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেয়া হবে। এই টিকার কোল্ড চেইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ফাইজার অ্যান্ড বায়োএনটেকের করোনার টিকা সংরক্ষণে ‘কোল্ড চেইন’ ব্যবস্থাপনায় একটি বড় সীমাবদ্ধতা। কোল্ড চেইন এদিক-সেদিক হলেই টিকার কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এই টিকা স্থানান্তরের সময় ৮০ থেকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। ফ্রিজারে (রেফ্রিজারেটর) ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সংরক্ষণ করা যায়। আর ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে রাখা যায় সর্বোচ্চ পাঁচদিন।

এসব কারণেই অন্যান্য টিকার মতো ফাইজারের টিকা প্রয়োগ করা যায় না। এই টিকা প্রয়োগে কঠোর কোল্ড চেইন পদ্ধতির বিকল্প নেই। কোল্ড চেইন সীমাবদ্ধতার কারণেই আপাতত ঢাকা মহানগীর একটি কেন্দ্র থেকে সব শিক্ষার্থীকে টিকাদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুরান ঢাকার পোগোজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মনির হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘টিকা নিয়েতো খামখেয়ালি করলে হবে না। সদরঘাট এলাকায় কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে। অথচ বলা হচ্ছে, বাচ্চাদের টিকা নেয়ার জন্য ৮-১০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যেতে হবে। আমার স্কুলে প্রায় ২৩শ শিক্ষার্থীর মধ্যে টিকা পাবে প্রায় ১২শ জন। এখন প্রচন্ড গরম। এই গরমে ২৫-৩০টি বাসের ব্যবস্থা কে করবে? কে টাকা দেবে? এই আসা-যাওয়ায় কোন বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে কে দায় নেবে, কে ঝুঁকি নেবে?’

নিজে কোন ঝুঁকি নেবেন না জানিয়ে প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘এখন এমনিতেই সব শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে টিকা দেয়ার দায়িত্ব কে নেবে? শনিবার (১৬ অক্টোবর) মাউশির সঙ্গে জুম মিটিং ছিল; শিক্ষকরা এসব সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন। এরপরও আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলব, ম্যানেজিং কমিটির সভা আহ্বান করব, কী করা যায়।’

শিক্ষার্থীদের আনানেয়ার ব্যবস্থা কীভাবে- জানতে চাইলে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাফিজুল ইসলাম রবিবার (১৭ অক্টোবর) সংবাদকে বলেন, ‘আমরা ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করছি। শিক্ষার্থী আনানেয়ার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কোনভাবে হয়তো ব্যবস্থা হবে; এ বিষয়ে মাউশিতেও কথা বলব।’

জানতে চাইলে মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রনি সংবাদকে বলেন, ‘শিশু শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে; এটা নিঃসন্দেহে সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এর জন্য বাস ভাড়া করে দলবেধে শিশুদের টিকা কেন্দ্রে যেতে হবে কেন? এই বাস ভাড়া কে দেবে? এই দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। স্কুলের পক্ষে বাস ভাড়া করে শিক্ষার্থীদের আনানেয়া সম্ভব নয়। শিক্ষকরাতো বেতনই পাচ্ছে না। আর অভিভাবকরা এই খরচ দেবে কীনা সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।’

শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি আরও বলেন, ঢাকার ন্যূনতম পাঁচটি হাসপাতালে ফাইজারের টিকা দেয়া হচ্ছে। সেগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া যায়। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ হবে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরীর স্কুল এবং কলেজ মিলিয়ে ৭৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা সাত-আট লাখের মতো হবে। কিন্তু স্কুল-কলেজগুলোতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখের মতো।

মাউশি পরিচালক শাহেদুল খবির চৌধুরী জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরীর শিক্ষার্থীদের টিকাদানের জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০০টি বুথ স্থাপন করা হচ্ছে। এসব বুথে প্রতিদিন ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকাদানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ৩০ অক্টোবর থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকার শিক্ষার্থীদের টিকার প্রথম ডোজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের টিকাদানের লক্ষ্যে গত বৃস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকায় টিকা দেয়ার পর দেশের ২১টি জেলায় টিকা দেয়ার পরিকল্পনা আছে। ফাইজারের টিকার কোল্ড চেইন সীমাবদ্ধতার কারণে একসঙ্গে সব জেলায় তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ১০ অক্টোবর মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জনসে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ও সমসাময়িক বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সংক্রমণ রোধে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের (১২ থেকে ১৭ বছর) ফাইজার ও মডার্নার টিকা দেয়ার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে।’

ওই দিন তিনি বলেন, ‘এখন ফাইজারের ৬০ লাখ টিকা মজুত রয়েছে। ৬০ লাখ টিকা ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে। এর মধ্যে চলতি মাসে আরও ৭০ লাখ টিকা আসবে। তখন শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমে কোন ঘাটতি পড়বে না।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আবার যখন আমাদের হাতে ফাইজারের টিকা আসবে, তখন আমরা (শিশুদের) এ সংখ্যা বৃদ্ধি করবো।’

এরপর গত ১৪ অক্টোবর পরীক্ষামূলকভাবে মানিকগঞ্জের ১২০ স্কুল শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দেয়া হয়। তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ১৪ দিন পর রাজধানী ও ২১ জেলায় মূল কর্মসূচি শুরু করার কথা জানিয়ে ওইদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশের এক কোটি স্কুল শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার মাউশির আওতাধীন ঢাকা মহানগরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যায়নরত ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সের শিক্ষার্থীদের তথ্য ছক আকারে আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে student.vaccination2021@gmail.com ই-মেইল ঠিকানায় পাঠাতে নির্দেশনা জারি করা হয়। একই সঙ্গে তথ্যছকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রতিষ্ঠানের কোড, জন্ম তারিখ, ১৭ ডিজিটের জন্ম-নিবন্ধন নম্বর ও অভিভাবকের মোবাইল নম্বর দিতে বলা হয়েছে।

ছবি

ইউএসএআইডি এবং সিমিট প্রতিনিধি দলের বারি পরিদর্শন

ছবি

পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনে নারীর ঝুলন্ত মরদেহ

ছবি

‘আনন্দে’ শুরুর পর সড়কের ঈদযাত্রা কেন ‘বিষাদে’

ছবি

ঘটনা চাপা দিতে ১৫০ বস্তা সিমেন্ট সরিয়ে ফেলার অভিযোগ

মীরসরাইয়ে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, ঘরের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে

ছবি

মাধবপুরে বিরল প্রজাতির লজ্জাবতী বানর উদ্ধার

ছবি

টঙ্গীতে আগুনে পুড়ল ১২টি খাদ্য গুদাম

ছবি

জলকেলি উৎসবে মুখরিত কক্সবাজরের রাখাইন পল্লী

শেরপুরে বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণ উদ্বোধন

কেশবপুরে সকাল-সন্ধ্যা বাজারের দখল নিয়ে দু’পক্ষ মুখোমুখি উচ্ছেদ আতঙ্কে অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী

ছবি

ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

ছবি

ভালুকায় বোরো ধানে চিটা কৃষকের মাথায় হাত

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে সরকারি রাস্তার ১২০টি গাছ কর্তনের অভিযোগ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে

পুঠিয়ায় শাশুড়িকে হত্যা করেন পুত্রবধূ

ছবি

মির্জাগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু

ছবি

নড়াইলের শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছবি

প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা

ছবি

প্রেমিকার ওপর অভিমান প্রেমিকের আত্মহত্যা

ছবি

শ্যামনগর পদ্মপুকুরের প্রধান সড়কের একাংশ যেন বালুর স্তুপে পরিণত

আমার চেয়ে খারাপ লোক এ জেলায় নাই : তাহেরপুত্র বিপ্লব

ছবি

কক্সবাজারে রিসোর্টে পযটক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

ছবি

ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা

ছবি

সুনামগঞ্জে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

ছবি

টোলপ্লাজায় ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ১৪

ছবি

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন, বেশিরভাগ অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ

কোম্পানীগঞ্জে পর্যটকের সঙ্গে এএসপির মারামারি

ছবি

গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ গোপালগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

শার্শায় সাংবাদিকের উপর হামলা

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় রেললাইনের পাশ থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

সালথায় স্বামীর উপর অভিমান করে গৃহবধূর আত্মহত্যা

ছবি

শিবগঞ্জে পরিবারের উপর অভিমান করে কিশোরের আত্মহত্যা

ছবি

ভালুকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ছাত্রলীগ নেতা নিহত

ছবি

নরসিংদীতে বজ্রপাতে নিহত ১, আহত ২

ছবি

হাওরে বৃষ্টি জলাবদ্ধতায় দেড় হাজার একর বোরো জমি বিনষ্টের পথে, কৃষকের আহাজারি

ছবি

রংপুরে বাসের টিকেট বিক্রিতে নৈরাজ্য, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ছবি

দর্শনার্থীতে মুখরিত ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

tab

সারাদেশ

ঢাকার এক কেন্দ্রেই ১৫ দিনে সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকাদানের পরিকল্পনা

রাকিব উদ্দিন

রোববার, ১৭ অক্টোবর ২০২১

৩০ অক্টোবর থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর স্কুল-কলেজের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী সব শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে একটিমাত্র কেন্দ্রে সব শিক্ষার্থীর টিকাদানের সিদ্ধান্ত নেয়ায় জটিলতা দেখছেন শিক্ষকরা। ঢাকা মহানগরীতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ঢাকার সব শিক্ষার্থীকে শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। একমাত্র কেন্দ্রে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে শঙ্কা দেখছেন শিক্ষকরা। এতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করাকে একটি বড় সীমাবন্ধতা হিসেবে দেখছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।

টিকা গ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করবে কীভাবে- জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের পক্ষ্য থেকেই যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। মাউশিতে এ খাতে কোন অর্থ বরাদ্দ নেই।’

টিকাকেন্দ্র ও বুথ বাড়িয়ে এই সমস্যা নিরসন করা যায় কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরীতে এখনই টিকাকেন্দ্র বাড়ানো সম্ভব নয়। কারণ শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেয়া হবে। এই টিকার কোল্ড চেইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ফাইজার অ্যান্ড বায়োএনটেকের করোনার টিকা সংরক্ষণে ‘কোল্ড চেইন’ ব্যবস্থাপনায় একটি বড় সীমাবদ্ধতা। কোল্ড চেইন এদিক-সেদিক হলেই টিকার কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এই টিকা স্থানান্তরের সময় ৮০ থেকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। ফ্রিজারে (রেফ্রিজারেটর) ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সংরক্ষণ করা যায়। আর ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে রাখা যায় সর্বোচ্চ পাঁচদিন।

এসব কারণেই অন্যান্য টিকার মতো ফাইজারের টিকা প্রয়োগ করা যায় না। এই টিকা প্রয়োগে কঠোর কোল্ড চেইন পদ্ধতির বিকল্প নেই। কোল্ড চেইন সীমাবদ্ধতার কারণেই আপাতত ঢাকা মহানগীর একটি কেন্দ্র থেকে সব শিক্ষার্থীকে টিকাদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুরান ঢাকার পোগোজ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মনির হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘টিকা নিয়েতো খামখেয়ালি করলে হবে না। সদরঘাট এলাকায় কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে। অথচ বলা হচ্ছে, বাচ্চাদের টিকা নেয়ার জন্য ৮-১০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যেতে হবে। আমার স্কুলে প্রায় ২৩শ শিক্ষার্থীর মধ্যে টিকা পাবে প্রায় ১২শ জন। এখন প্রচন্ড গরম। এই গরমে ২৫-৩০টি বাসের ব্যবস্থা কে করবে? কে টাকা দেবে? এই আসা-যাওয়ায় কোন বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে কে দায় নেবে, কে ঝুঁকি নেবে?’

নিজে কোন ঝুঁকি নেবেন না জানিয়ে প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘এখন এমনিতেই সব শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে টিকা দেয়ার দায়িত্ব কে নেবে? শনিবার (১৬ অক্টোবর) মাউশির সঙ্গে জুম মিটিং ছিল; শিক্ষকরা এসব সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন। এরপরও আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলব, ম্যানেজিং কমিটির সভা আহ্বান করব, কী করা যায়।’

শিক্ষার্থীদের আনানেয়ার ব্যবস্থা কীভাবে- জানতে চাইলে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাফিজুল ইসলাম রবিবার (১৭ অক্টোবর) সংবাদকে বলেন, ‘আমরা ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করছি। শিক্ষার্থী আনানেয়ার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। কোনভাবে হয়তো ব্যবস্থা হবে; এ বিষয়ে মাউশিতেও কথা বলব।’

জানতে চাইলে মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রনি সংবাদকে বলেন, ‘শিশু শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে; এটা নিঃসন্দেহে সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এর জন্য বাস ভাড়া করে দলবেধে শিশুদের টিকা কেন্দ্রে যেতে হবে কেন? এই বাস ভাড়া কে দেবে? এই দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। স্কুলের পক্ষে বাস ভাড়া করে শিক্ষার্থীদের আনানেয়া সম্ভব নয়। শিক্ষকরাতো বেতনই পাচ্ছে না। আর অভিভাবকরা এই খরচ দেবে কীনা সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।’

শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি আরও বলেন, ঢাকার ন্যূনতম পাঁচটি হাসপাতালে ফাইজারের টিকা দেয়া হচ্ছে। সেগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া যায়। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ হবে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরীর স্কুল এবং কলেজ মিলিয়ে ৭৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা সাত-আট লাখের মতো হবে। কিন্তু স্কুল-কলেজগুলোতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখের মতো।

মাউশি পরিচালক শাহেদুল খবির চৌধুরী জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরীর শিক্ষার্থীদের টিকাদানের জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০০টি বুথ স্থাপন করা হচ্ছে। এসব বুথে প্রতিদিন ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকাদানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ৩০ অক্টোবর থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকার শিক্ষার্থীদের টিকার প্রথম ডোজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের টিকাদানের লক্ষ্যে গত বৃস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকায় টিকা দেয়ার পর দেশের ২১টি জেলায় টিকা দেয়ার পরিকল্পনা আছে। ফাইজারের টিকার কোল্ড চেইন সীমাবদ্ধতার কারণে একসঙ্গে সব জেলায় তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ১০ অক্টোবর মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জনসে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ও সমসাময়িক বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সংক্রমণ রোধে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের (১২ থেকে ১৭ বছর) ফাইজার ও মডার্নার টিকা দেয়ার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে।’

ওই দিন তিনি বলেন, ‘এখন ফাইজারের ৬০ লাখ টিকা মজুত রয়েছে। ৬০ লাখ টিকা ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে। এর মধ্যে চলতি মাসে আরও ৭০ লাখ টিকা আসবে। তখন শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমে কোন ঘাটতি পড়বে না।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আবার যখন আমাদের হাতে ফাইজারের টিকা আসবে, তখন আমরা (শিশুদের) এ সংখ্যা বৃদ্ধি করবো।’

এরপর গত ১৪ অক্টোবর পরীক্ষামূলকভাবে মানিকগঞ্জের ১২০ স্কুল শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দেয়া হয়। তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ১৪ দিন পর রাজধানী ও ২১ জেলায় মূল কর্মসূচি শুরু করার কথা জানিয়ে ওইদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশের এক কোটি স্কুল শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার মাউশির আওতাধীন ঢাকা মহানগরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যায়নরত ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সের শিক্ষার্থীদের তথ্য ছক আকারে আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে student.vaccination2021@gmail.com ই-মেইল ঠিকানায় পাঠাতে নির্দেশনা জারি করা হয়। একই সঙ্গে তথ্যছকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রতিষ্ঠানের কোড, জন্ম তারিখ, ১৭ ডিজিটের জন্ম-নিবন্ধন নম্বর ও অভিভাবকের মোবাইল নম্বর দিতে বলা হয়েছে।

back to top