এবার পরমাণু শক্তি কমিশন উৎপাদন শুরু করেছে রেডিও আইসোটোপের। মানবদেহে সঠিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয়ে এই পরমাণু শক্তির বিশেষ ব্যবহার করা হয়। এ বছরের শুরু থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত পরমাণু শক্তি কমিশনের সাইক্লোট্রন ল্যাবে এই আইসোটোপ উৎপাদন শুরু হয়।
আজ (২৪ অক্টোবর) রোববার ‘সাইক্লোট্রন সুবিধাদিসহ পেট-সিটি স্থাপন’ প্রকল্পের মাধ্যমে সৃষ্ট চিকিৎসা ও গবেষণা সুবিধাদির উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
পরে বিজ্ঞানমন্ত্রী বলেন, এই সুবিধাদির ফলে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে উপকৃত হবে। কম খরচে ক্যান্সার নির্ণয় করা যাবে। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার আরও শক্তিশালী হবে। তিনি আরও জানান, পর্যায়ক্রমে এইসব সুবিধাদি দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রে স্থাপন করা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক, পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সানোয়ার হোসেন প্রমুখ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ণ করেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যালায়েড সাইয়েন্সেস (নিনমাস)।
পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, নিজস্ব সাইক্লোট্রন স্থাপনের ফলে ক্যান্সারে নির্ণয়ের খরচ কয়েকগুণ কমে যাবে। আগে রেডিও আইসোটোপ আমদানি বা বেসরকারি ল্যাব থেকে কিনতে হতো। ফলে খরচ বেশি হতো। আমরা এই ল্যাব থেকে এখন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ল্যাবে রেডিও আইসোটোপ সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক ডা. নুরুল ইসলাম জানান, এখন থেকে সরকারিভাবে পরমাণু কমিশনের ল্যাবে মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় পেট-সিটির মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয় করা যাবে। এর আগে সরকারিভাবে ৩৫ হাজার এবং বেসরকারিভাবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হতো।
সাইক্লোট্রন ল্যাব:
এটি এমন একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার যেখানে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে মানব চিকিৎসা এবং গবেষণার জন্য তেজস্ক্রিয় পদার্থ উৎপাদন করা যায়। নিনমাসে অবস্থিত ওইঅ ঈুপষড়হব ১৮/৯ গবঠ সাইক্লোট্রনটির মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ১৮ঋ-ঋউএ ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগীদের ক্যান্সার নির্ণয় করা হচ্ছে।
সাইক্লোট্রনের মাধ্যমে আর কিছু পদার্থ উৎপাদন করা যায় যার মাধ্যমে ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
পিইটি-সিটি স্ক্যান:
পিইটি এর পূর্ণরূপ হচ্ছে পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফ এবং সিটি এর পূর্ণরূপ কমপিউটেড টমোগ্রাফি। যেসব স্থানে কোষগুলো বেশি সক্রিয় থাকে পেট স্ক্যান কেবল সেইসব স্থাপনের চিত্র/ তথ্য প্রদাণ করে। অপরদিকে সিটিস্ক্যান কোন স্থানের গঠনগত এবং অবস্থানগত তথ্য/ চিত্র পাওয়া যায়। এই দুটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত স্ক্যানারে একটি ফিউশন ইমেজ একই সময়ে পাওয়া যায়। এই দুটি ইমেজের সমন্বিত ইমেজটি দিয়ে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক শরীরের যেসব স্থানে কোষগুলো অধিক সক্রিয় বা ক্যান্সারে আক্রান্ত তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেন। এবং তাঁরা কোন বেদনাদায়ক পদ্ধতি ছাড়াই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করেন। ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে ৯০ ভাগ এর অধিক পেট-সিটি ব্যবহৃত হয়। আর সাইক্লোট্রন মেশিনে উৎপাদিত আইসোটোপ পেট-সিটিতে ব্যবহার করেই পরীক্ষাটি সম্পন্ন করা হয়।
কমবে বিদেশ নির্ভরতা:
কিছুদিন আগেও এই পরীক্ষা করতে বিদেশে যেতে হতো। ২০১০ সালের পর থেকে সীমিত পরিসরে এই রোগ নির্ণয় শুরু হয় বাংলাদেশে। শুরু থেকেই নিউক্লিয়ার প্রযুক্তির এই পদ্ধতির ব্যবহারে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ণের ফলে এখাতে এখন স্বয়ংসম্পন্ন হওয়ার পথে বাংলাদেশ। এছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণাতেও এই ল্যাব ভালো অবদান রাখবে।
বিজ্ঞানমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, এই যন্ত্র ও ল্যাব স্থাপনের ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত আরও এগিয়ে যাবে।
‘সাইক্লোট্রন ও পেট সিটি’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বেশ জোরেশোরে শুরু হয়। বর্তমানে এর ব্যপ্তি অনেক বেড়ে গেছে। সারাদেশে অবস্থিত পরমাণু শক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রে নামমাত্র ফি’র বিনিময়ে জনগণ সঠিকভাবে বিভিন্ন রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা গ্রহণ করে আসছে। জাতিসংঘ সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সি (আইএইএ) একাজে বাংলাদেশকে সবসময় কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
বর্তমানে দেশে ১৫টি পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র চালু রয়েছে। নির্মাণ করা হচ্ছে আরও ৮টি।
রোববার, ২৪ অক্টোবর ২০২১
এবার পরমাণু শক্তি কমিশন উৎপাদন শুরু করেছে রেডিও আইসোটোপের। মানবদেহে সঠিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয়ে এই পরমাণু শক্তির বিশেষ ব্যবহার করা হয়। এ বছরের শুরু থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত পরমাণু শক্তি কমিশনের সাইক্লোট্রন ল্যাবে এই আইসোটোপ উৎপাদন শুরু হয়।
আজ (২৪ অক্টোবর) রোববার ‘সাইক্লোট্রন সুবিধাদিসহ পেট-সিটি স্থাপন’ প্রকল্পের মাধ্যমে সৃষ্ট চিকিৎসা ও গবেষণা সুবিধাদির উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
পরে বিজ্ঞানমন্ত্রী বলেন, এই সুবিধাদির ফলে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে উপকৃত হবে। কম খরচে ক্যান্সার নির্ণয় করা যাবে। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার আরও শক্তিশালী হবে। তিনি আরও জানান, পর্যায়ক্রমে এইসব সুবিধাদি দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রে স্থাপন করা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক, পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সানোয়ার হোসেন প্রমুখ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ণ করেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যালায়েড সাইয়েন্সেস (নিনমাস)।
পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, নিজস্ব সাইক্লোট্রন স্থাপনের ফলে ক্যান্সারে নির্ণয়ের খরচ কয়েকগুণ কমে যাবে। আগে রেডিও আইসোটোপ আমদানি বা বেসরকারি ল্যাব থেকে কিনতে হতো। ফলে খরচ বেশি হতো। আমরা এই ল্যাব থেকে এখন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ল্যাবে রেডিও আইসোটোপ সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক ডা. নুরুল ইসলাম জানান, এখন থেকে সরকারিভাবে পরমাণু কমিশনের ল্যাবে মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় পেট-সিটির মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয় করা যাবে। এর আগে সরকারিভাবে ৩৫ হাজার এবং বেসরকারিভাবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হতো।
সাইক্লোট্রন ল্যাব:
এটি এমন একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার যেখানে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে মানব চিকিৎসা এবং গবেষণার জন্য তেজস্ক্রিয় পদার্থ উৎপাদন করা যায়। নিনমাসে অবস্থিত ওইঅ ঈুপষড়হব ১৮/৯ গবঠ সাইক্লোট্রনটির মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ১৮ঋ-ঋউএ ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগীদের ক্যান্সার নির্ণয় করা হচ্ছে।
সাইক্লোট্রনের মাধ্যমে আর কিছু পদার্থ উৎপাদন করা যায় যার মাধ্যমে ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
পিইটি-সিটি স্ক্যান:
পিইটি এর পূর্ণরূপ হচ্ছে পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফ এবং সিটি এর পূর্ণরূপ কমপিউটেড টমোগ্রাফি। যেসব স্থানে কোষগুলো বেশি সক্রিয় থাকে পেট স্ক্যান কেবল সেইসব স্থাপনের চিত্র/ তথ্য প্রদাণ করে। অপরদিকে সিটিস্ক্যান কোন স্থানের গঠনগত এবং অবস্থানগত তথ্য/ চিত্র পাওয়া যায়। এই দুটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত স্ক্যানারে একটি ফিউশন ইমেজ একই সময়ে পাওয়া যায়। এই দুটি ইমেজের সমন্বিত ইমেজটি দিয়ে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক শরীরের যেসব স্থানে কোষগুলো অধিক সক্রিয় বা ক্যান্সারে আক্রান্ত তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেন। এবং তাঁরা কোন বেদনাদায়ক পদ্ধতি ছাড়াই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করেন। ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে ৯০ ভাগ এর অধিক পেট-সিটি ব্যবহৃত হয়। আর সাইক্লোট্রন মেশিনে উৎপাদিত আইসোটোপ পেট-সিটিতে ব্যবহার করেই পরীক্ষাটি সম্পন্ন করা হয়।
কমবে বিদেশ নির্ভরতা:
কিছুদিন আগেও এই পরীক্ষা করতে বিদেশে যেতে হতো। ২০১০ সালের পর থেকে সীমিত পরিসরে এই রোগ নির্ণয় শুরু হয় বাংলাদেশে। শুরু থেকেই নিউক্লিয়ার প্রযুক্তির এই পদ্ধতির ব্যবহারে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ণের ফলে এখাতে এখন স্বয়ংসম্পন্ন হওয়ার পথে বাংলাদেশ। এছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণাতেও এই ল্যাব ভালো অবদান রাখবে।
বিজ্ঞানমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, এই যন্ত্র ও ল্যাব স্থাপনের ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত আরও এগিয়ে যাবে।
‘সাইক্লোট্রন ও পেট সিটি’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বেশ জোরেশোরে শুরু হয়। বর্তমানে এর ব্যপ্তি অনেক বেড়ে গেছে। সারাদেশে অবস্থিত পরমাণু শক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রে নামমাত্র ফি’র বিনিময়ে জনগণ সঠিকভাবে বিভিন্ন রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা গ্রহণ করে আসছে। জাতিসংঘ সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সি (আইএইএ) একাজে বাংলাদেশকে সবসময় কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
বর্তমানে দেশে ১৫টি পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র চালু রয়েছে। নির্মাণ করা হচ্ছে আরও ৮টি।