গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি পূরণে ভর্তুকির আবদার করেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছে পরিবহন মালিকরা।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র কার্যালয়ে এক বৈঠকে এই প্রস্তাব দেয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
এর আগেও শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন ও সড়কে শৃঙ্খলা আনতে একাধিক কমিটি ও টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ২০১৯ সালে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো ও সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে রোড সেফটি অথরিটি গঠন, রাজধানী থেকে রিকশা তুলে দেয়া, চালক ও ট্রাফিক পুলিশের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ, রাস্তায় প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে বাস রুট ফ্রাঞ্চ্যাইজি প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন ও সড়কে ডিজিটাল মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করাসহ ১১১টি সুপারিশমালা চূড়ান্ত করেছে সড়ক নিরাপত্তা কমিটি।
এই কমিটির প্রধান ছিলেন সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে শক্তিশালী টাস্কফোর্স। তিনটি সভা ছাড়া দৃশ্যমান আর কিছুই করতে পারেনি এ টাস্কফোর্স।
শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কম ভাড়ায় তাদের যোগাযোগ নিশ্চিত করা উচিত। আমরাও ছোটবেলা এই হাফ ভাড়া বা স্বল্প ভাড়ায় চলাফেরা করেছি এবং আমাদের শিক্ষার্থীরাও করতেন। হঠাৎ করে কেন বন্ধ হয়েছে আমার জানা নেই।’
বিআরটিএ’র কার্যালয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। মালিকদের ভর্তুকি ও শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া বিষয়ে ফয়সালা করতে সময় লাগবে। এ জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠক শেষে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘২৫ নভেম্বরের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় এ বৈঠক করা হয়েছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছেন। ঢাকা শহরে কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কত শিক্ষার্থী, ইত্যাদি তথ্য তারা চেয়েছেন। হাফ ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আলাদা কোন পরিচয়পত্র দেয়া হবে কিনা, সে বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। পুরো বিষয়টি সুরাহা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।’
ঢাকার বাস মালিকদের বেশিরভাগই ‘গরিব’ উল্লেখ করে বৈঠকে উল্টো ভর্তুকির দাবি জানান সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
তিনি বলেন, ‘টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের জন্য ভর্তুকি নির্ধারণ করা হোক। ঢাকায় নগর পরিবহনের যে বাসগুলো চলে, তার মালিকদের ৮০ শতাংশই গরিব। একটা বা দুটো বাস চালিয়ে তাদের সংসার চলে। তাদের বাচ্চারাও স্কুল কলেজে যায়। এ কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাব হচ্ছে, বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকির বিষয়টি নির্ধারণ করেই হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন তহবিল থেকে এই ভর্তুকি আসবে সেটিও নির্ধারণ করতে হবে।’
বেসরকারি স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘হাজার হাজার টাকা’ টিউশন ফি, সেই বেতনের টাকা থেকে তহবিল গঠন করা যায় কিনা- সে প্রস্তাবও দিয়েছেন মালিকরা। তারা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সরকার বিআরটিসি বাস বাড়াতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে বাস সরবরাহেরও আহ্বান জানান তারা।
খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘যে ছাত্ররা আন্দোলন করছেন তারা আমাদেরই সন্তান। কিন্তু সব দায় কেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। তাই আমরা বলেছি সকলে মিলে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘হাফ ভাড়া নেয়ার বিষয়ে কখনই সরকারি সিদ্ধান্ত ছিল না। পরিবহন শ্রমিকরা কখনও নিত, আবার কখনও এটা নিয়ে ঝগড়াও হতো। যখন সরকারিভাবে ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়া ঘোষণা করা হবে, তখন অনেকগুলো বিষয় সামনে আসবে। যে দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র নকল হয়, ফেইক ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়, সেই দেশে ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়ার ঘোষণা এলে দেখা যাবে যারা ছাত্র নন, তারাও হাফ ভাড়ার জন্য কার্ড বানিয়ে বসেছেন। এখানে অনেকগুলো বিষয় দেখার রয়েছে।’
বৈঠকে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সরকারকে দেখতে হবে। শ্রমিকরা যেখানে সেখানে মারধরের শিকার হচ্ছেন। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তুকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। আর আমাদের শ্রমিকরা কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়া, সরকারি সহায়তা ছাড়াই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্ররা তাদের মারধর করবেন এটা কেমন কথা?’
সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান ও পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মোশাররফ হোসেনও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১
গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি পূরণে ভর্তুকির আবদার করেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছে পরিবহন মালিকরা।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র কার্যালয়ে এক বৈঠকে এই প্রস্তাব দেয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
এর আগেও শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন ও সড়কে শৃঙ্খলা আনতে একাধিক কমিটি ও টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ২০১৯ সালে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো ও সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে রোড সেফটি অথরিটি গঠন, রাজধানী থেকে রিকশা তুলে দেয়া, চালক ও ট্রাফিক পুলিশের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ, রাস্তায় প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে বাস রুট ফ্রাঞ্চ্যাইজি প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন ও সড়কে ডিজিটাল মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করাসহ ১১১টি সুপারিশমালা চূড়ান্ত করেছে সড়ক নিরাপত্তা কমিটি।
এই কমিটির প্রধান ছিলেন সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে শক্তিশালী টাস্কফোর্স। তিনটি সভা ছাড়া দৃশ্যমান আর কিছুই করতে পারেনি এ টাস্কফোর্স।
শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কম ভাড়ায় তাদের যোগাযোগ নিশ্চিত করা উচিত। আমরাও ছোটবেলা এই হাফ ভাড়া বা স্বল্প ভাড়ায় চলাফেরা করেছি এবং আমাদের শিক্ষার্থীরাও করতেন। হঠাৎ করে কেন বন্ধ হয়েছে আমার জানা নেই।’
বিআরটিএ’র কার্যালয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। মালিকদের ভর্তুকি ও শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া বিষয়ে ফয়সালা করতে সময় লাগবে। এ জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠক শেষে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘২৫ নভেম্বরের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় এ বৈঠক করা হয়েছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছেন। ঢাকা শহরে কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কত শিক্ষার্থী, ইত্যাদি তথ্য তারা চেয়েছেন। হাফ ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আলাদা কোন পরিচয়পত্র দেয়া হবে কিনা, সে বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। পুরো বিষয়টি সুরাহা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।’
ঢাকার বাস মালিকদের বেশিরভাগই ‘গরিব’ উল্লেখ করে বৈঠকে উল্টো ভর্তুকির দাবি জানান সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
তিনি বলেন, ‘টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের জন্য ভর্তুকি নির্ধারণ করা হোক। ঢাকায় নগর পরিবহনের যে বাসগুলো চলে, তার মালিকদের ৮০ শতাংশই গরিব। একটা বা দুটো বাস চালিয়ে তাদের সংসার চলে। তাদের বাচ্চারাও স্কুল কলেজে যায়। এ কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাব হচ্ছে, বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকির বিষয়টি নির্ধারণ করেই হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন তহবিল থেকে এই ভর্তুকি আসবে সেটিও নির্ধারণ করতে হবে।’
বেসরকারি স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘হাজার হাজার টাকা’ টিউশন ফি, সেই বেতনের টাকা থেকে তহবিল গঠন করা যায় কিনা- সে প্রস্তাবও দিয়েছেন মালিকরা। তারা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সরকার বিআরটিসি বাস বাড়াতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে বাস সরবরাহেরও আহ্বান জানান তারা।
খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘যে ছাত্ররা আন্দোলন করছেন তারা আমাদেরই সন্তান। কিন্তু সব দায় কেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। তাই আমরা বলেছি সকলে মিলে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘হাফ ভাড়া নেয়ার বিষয়ে কখনই সরকারি সিদ্ধান্ত ছিল না। পরিবহন শ্রমিকরা কখনও নিত, আবার কখনও এটা নিয়ে ঝগড়াও হতো। যখন সরকারিভাবে ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়া ঘোষণা করা হবে, তখন অনেকগুলো বিষয় সামনে আসবে। যে দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র নকল হয়, ফেইক ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়, সেই দেশে ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়ার ঘোষণা এলে দেখা যাবে যারা ছাত্র নন, তারাও হাফ ভাড়ার জন্য কার্ড বানিয়ে বসেছেন। এখানে অনেকগুলো বিষয় দেখার রয়েছে।’
বৈঠকে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সরকারকে দেখতে হবে। শ্রমিকরা যেখানে সেখানে মারধরের শিকার হচ্ছেন। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তুকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। আর আমাদের শ্রমিকরা কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়া, সরকারি সহায়তা ছাড়াই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্ররা তাদের মারধর করবেন এটা কেমন কথা?’
সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান ও পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মোশাররফ হোসেনও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।