alt

অর্থ-বাণিজ্য

শিল্প খাতে জ্বালানির উৎস শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা

প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানই জ্বালানি নিরাপত্তার অন্যতম উপায়

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ১৯ জুন ২০২১

ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তার উপায় হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন বক্তারা। শনিবার (১৯ জুন) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শিল্প খাতের জ্বালানি উৎসের ভবিষ্যৎ : এলপিজি এবং এলএনজি’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী। ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ওয়েবিনারের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘গত ৫ দশকে শিল্প খাতের গতিধারাকে চলমান রাখতে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানির অন্যতম যোগদান হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। তবে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সম্প্রসারণের ফলে জ্বালানির চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির কারণে প্রায়ই শিল্প খাতে জ্বালানি সংকট দেখা যাচ্ছে। সরকার ঘোষিত ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শিল্প খাতের চাহিদামত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে এ খাতে পরিকল্পিত উপায়ে পরিবেশবান্ধব ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শিল্প খাতে চাহিদামাফিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণে প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান বৃদ্ধির পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ও এলএনজি আমদানি এবং উৎপাদন করতে হবে। বর্তমানে আমাদের আভ্যন্তরীণ চাহিদার ২ শতাংশ মেটানো হয় এলপিজির মাধ্যমে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে গৃহস্থালি ও শিল্প খাতে এলপিজি এবং এলএনজির চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টানরশিপের মাধ্যমে স্টোরেজ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুততার সঙ্গে এলপিজি ও এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘সরকার গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং জকিগঞ্জে সর্বশেষ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, সেখান থেকে দীর্ঘসময় ধরে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে, এজন্য প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। করোনা মহামারীকালেও ১০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা হয়েছে। অনশোরে সক্ষমতা থাকায় বাপেক্সের মাধ্যমে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো অব্যাহত রয়েছে। এলএনজি ব্যবসায় ঝুঁকি কম থাকায় বর্তমানে সবাই এর দিকে ঝুঁকছে, এলপিজির বাজার প্রায় ১২ লাখ টন এবং ২৯টি কোম্পানি স্থানীয় বাজারে এলপিজি অপারেটর হিসেবে কাজ করছে, তবে ৫৬টি কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ছোট ছোট জাহাজে এলপিজি আমদানি করায় খরচ বাড়ছে, তবে মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হলে এ খরচ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশীয় শিল্প খাতে এলপিজির ব্যবহার এখনও অনেক কম। তবে এলপিজি ও এলএনজির টার্মিনাল স্থাপন এবং স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দাম কমানো সম্ভব। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন এলপিজি আমদানি হয়েছিল, যার মধ্যে ১ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে শিল্প খাতে এবং সিরামিক,ম মোটরসাইকেল, বাইকসাইকেল, স্টিল ও চা শিল্পেই বেশি ব্যবহার করা হয়। ইতোমধ্যে এলপিজি খাতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ হয়েছে। আনিছুর রহমান আরও বলেন, ব্যবসাবান্ধব হওয়ার জন্য প্রয়োজন হলে নীতিমালা ও আইন সংস্কার করা হবে। এলপিজি অপারেটরদের অনুমোদনের জন্য ১৮ ধরনের লাইসেন্স দরকার এবং বাৎসরিক নবায়ন ফি দিতে হয় ১ কোটির বেশি, যা কমানো প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, গ্যাস সংযোগ নিতে তিতাসে সংস্কার কাজ চালানো হচ্ছে। বর্তমানে শিল্প খাতে গ্যাস সংযোগ নিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের গ্যাসের রিজার্ভ ৬টি সিএফ এবং সারাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যে ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি।

তিনি জানান, বর্তমানে ৩৩০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাসের মধ্যে নিজস্ব উৎপাদিত গ্যাসের ৭৪ শতাংশ আসে নিজস্ব খাত থেকে বাকি ২৬ শতাংশ আসে এলএনজি থেকে এবং এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালে দেশীয় উৎপাদন হবে ১৬.৫ শতাংশ এবং আমদানি খাত থেকে আসবে ৮৩ শতাংশ, সেক্ষেত্রে শিল্প খাতসহ সব খাতে ব্যয় বাড়বে। এমন বাস্তবতায় অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া অনুসন্ধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত আবশ্যক এবং এ কাজে একটা মানসম্মত ডাটা সেন্টার উন্মুক্ত করা খুবই জরুরি।’

মকবুল এলাহী আরও বলেন, ‘গ্যাস ব্যবহারে মিটার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে, সিস্টেম লস ও চুরি কামানো যেত, যার মাধ্যমে আরও ১০-১২ লাখ মিটার গ্যাস কাজে লাগানো যাবে। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে। এলপিজি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবান্ধব এবং আমাদের দেশে বর্তমানে ১.২ মিলিয়ন টন এলপিজি ব্যবহৃত হচেছ। গত এপ্রিল মাসে এলপিজি দাম নির্ধারণে প্রথমবার একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং জুলাই মাসের ৭/৮ তারিখে এলপিজির দাম পুনঃবিবেচনার বৈঠক শুরু হবে। এলপিজির দাম নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালে নিয়ে আসা সম্ভব হলে ২০২৫ সালে ৩ মিলিয়ন টন এলপিজি বাংলাদেশে বিক্রি হবে।’

পেট্রোবাংলার গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক পরিচালক (অপারেশন) ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার সালেক সুফী ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের শিল্প খাতের ভবিষ্যৎ জ্বালানি হলো এলপিজি ও এলএনজি। শিল্প খাতে প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবাহরের যৌক্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। গ্যাস অনুসন্ধানে বর্তমানে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যুগোপযোগী নয় এবং অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ ৩০তম স্থানে রয়েছে। সহনশীল দামে এলপিজি এবং এলএনজি সরবরাহের লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান, বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফেকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান আমের আলী হোসেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির সহকারী অধ্যাপক মো. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী অংশগ্রহণ করেন।

অধ্যাপক মো. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘২০৫০ সাল নাগাদ সারাবিশ্বে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৮৫ শতাংশ নাবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস হতে আসবে, যেখানে বাংলাদেশে ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎতের ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য খাত হতে আসার পরিকল্পানা রয়েছে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফেকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান আমের আলী হোসেন বলেন, ‘জ্বালানির জন্য শুধুমাত্র একটি উৎসের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন খাত হতে জ্বালানি উৎপাদন ও জ্বালানির বহুমুখীকরণের ওপর আরও বেশি হারে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।’

এছাড়া তিনি বাপেক্সকে আরও আধুনিকায়ন করা দরকার বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের পশ্চিমাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় সে অঞ্চলে আশানুরূপ শিল্পায়ন হচ্ছে না।’

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘জ্বালানির দাম নির্ধারণের বিষয়ে সবাইকে আরও প্রতিযোগী সক্ষম হতে হবে এবং ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি মূল্যের যৌক্তিকীকরণ ও ক্ষেত্রবিশেষে মূল্য হ্রাসের আহ্বান জানান। তবে ভবিষ্যৎ শিল্পায়নের স্বার্থে আমদের প্রাকৃতিক গ্যাসকে আরও বেশি প্রধান্য দেয়া প্রয়োজন।’

বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘তৈরি পোশাক ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প খাতে গ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং টেক্সটাইল, ডাইং, স্পিনিং প্রভৃতি খাতে দেশের ৭-৮ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হয়। গত ১০ বছরে আমাদের গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে ৭৫৪ বিলিয়ন কিউটিক ফিট থেকে ৯৭৫ বিলিয়ন কিউবিক ফিটে।’ বিজিএমইএ সভাপতি আরও উল্লেখ করেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে এলপিজি ও এলএনজি স্বল্পমেয়াদি সমাধান হতে পারে। আমাদের ১৪৪টি লিড গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে এবং আরও ৫০০টির বেশি ফ্যাক্টরি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, গ্রিন ফ্যাক্টরিগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।’

ডিসিসিআই পরিচালক আরমান হক, সাবেক পরিচালক নূহের লতিফ খান, আহ্বায়ক মালিক তালহা ইসমাইল বারী মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেনসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ওই ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন।

ছবি

বিআইসিএমের উদ্যোগে হবে পুঁজিবাজার সম্মেলন

ছবি

যমুনা ব্যাংক ও ডেল্টা লাইফের মধ্যে চুক্তি

ছবি

সোনার দাম আরও কমলো

ছবি

ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি পেলেন মোঃ নুরুল ইসলাম মজুমদার

ছবি

রিজার্ভ কমায় উদ্বেগ ও আতঙ্ক বাড়ছে

ছবি

তড়িঘড়ি ব্যাংক একীভূতকরণ খেলাপিদের দায়মুক্তির নতুন মুখোশ: টিআইবি

ছবি

হঠাৎ ঝলকের পর আবার পতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

ছবি

শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

ছবি

পদত্যাগ করেছেন পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ

ঈদের পর শেয়ারবাজার কিছুটা ভালো হতে শুরু করেছে

ছবি

দিনাজপুরে বাঁশ ফুলের চাল তৈরি

ছবি

অভিনেতা ওয়ালিউল হক রুমি মারা গেছেন

ছবি

বিআইপিডি’র অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করছে : এফএফআইএল

ছবি

চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সরকার বদ্ধপরিকর

ছবি

রাজধানীতে ঈদের পরও চড়া সবজির বাজার

ছবি

সয়াবিন তেলের লিটার প্রতি দাম বাড়ল ৪ টাকা

ছবি

সূচকের পতনে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

ছবি

ব্যাংক এশিয়া কিনবে পাকিস্তানি ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশ অংশ

ছবি

এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%: আইএমএফ

ছবি

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংক চাইলে সরে যেতে পারবে, তবে শর্তসাপেক্ষে : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

পণ্যের দাম ঠিক রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী

ছবি

একীভূত ব্যাংক : পাঁচটির বাইরে আপাতত আর না

ছবি

ঈদে মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখেছি : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ে বেশি দেখছে এডিবি

ছবি

মার্চে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৮১ শতাংশ

ছবি

ঈদের আগে পাঁচ দিনে দেশে এলো ৪৬ কোটি ডলার

ছবি

শিল্পাঞ্চলের বাইরের কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ আর নয়, পাবেনা ঋণও

এবার ঈদে পর্যটন খাত চাঙ্গা হওয়ার আশা

ছবি

জাতীয় লজিস্টিক নীতির খসড়ার অনুমোদন

সোনালীতে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল

ছবি

সোনার দাম আবার বাড়লো, ভরি ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা

ছবি

সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বেসিক ব্যাংক

ছবি

বিজিএমইএর দায়িত্ব নিলেন এস এম মান্নান কচি

ছবি

বাজার মূলধন কিছুটা বাড়লো, তবু লাখ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি

ছবি

নতুন বিদেশী ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ শোধ করছে সরকার : সিপিডি

ছবি

ব্যাংক একীভুতকরনে নীতিমালা জারি

tab

অর্থ-বাণিজ্য

শিল্প খাতে জ্বালানির উৎস শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা

প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানই জ্বালানি নিরাপত্তার অন্যতম উপায়

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শনিবার, ১৯ জুন ২০২১

ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তার উপায় হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন বক্তারা। শনিবার (১৯ জুন) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শিল্প খাতের জ্বালানি উৎসের ভবিষ্যৎ : এলপিজি এবং এলএনজি’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী। ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ওয়েবিনারের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘গত ৫ দশকে শিল্প খাতের গতিধারাকে চলমান রাখতে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানির অন্যতম যোগদান হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। তবে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সম্প্রসারণের ফলে জ্বালানির চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির কারণে প্রায়ই শিল্প খাতে জ্বালানি সংকট দেখা যাচ্ছে। সরকার ঘোষিত ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শিল্প খাতের চাহিদামত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে এ খাতে পরিকল্পিত উপায়ে পরিবেশবান্ধব ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। শিল্প খাতে চাহিদামাফিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণে প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান বৃদ্ধির পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ও এলএনজি আমদানি এবং উৎপাদন করতে হবে। বর্তমানে আমাদের আভ্যন্তরীণ চাহিদার ২ শতাংশ মেটানো হয় এলপিজির মাধ্যমে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে গৃহস্থালি ও শিল্প খাতে এলপিজি এবং এলএনজির চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টানরশিপের মাধ্যমে স্টোরেজ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুততার সঙ্গে এলপিজি ও এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘সরকার গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং জকিগঞ্জে সর্বশেষ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, সেখান থেকে দীর্ঘসময় ধরে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে, এজন্য প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। করোনা মহামারীকালেও ১০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা হয়েছে। অনশোরে সক্ষমতা থাকায় বাপেক্সের মাধ্যমে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো অব্যাহত রয়েছে। এলএনজি ব্যবসায় ঝুঁকি কম থাকায় বর্তমানে সবাই এর দিকে ঝুঁকছে, এলপিজির বাজার প্রায় ১২ লাখ টন এবং ২৯টি কোম্পানি স্থানীয় বাজারে এলপিজি অপারেটর হিসেবে কাজ করছে, তবে ৫৬টি কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ছোট ছোট জাহাজে এলপিজি আমদানি করায় খরচ বাড়ছে, তবে মাতারবাড়ীতে এলপিজি টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হলে এ খরচ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশীয় শিল্প খাতে এলপিজির ব্যবহার এখনও অনেক কম। তবে এলপিজি ও এলএনজির টার্মিনাল স্থাপন এবং স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দাম কমানো সম্ভব। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন এলপিজি আমদানি হয়েছিল, যার মধ্যে ১ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে শিল্প খাতে এবং সিরামিক,ম মোটরসাইকেল, বাইকসাইকেল, স্টিল ও চা শিল্পেই বেশি ব্যবহার করা হয়। ইতোমধ্যে এলপিজি খাতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ হয়েছে। আনিছুর রহমান আরও বলেন, ব্যবসাবান্ধব হওয়ার জন্য প্রয়োজন হলে নীতিমালা ও আইন সংস্কার করা হবে। এলপিজি অপারেটরদের অনুমোদনের জন্য ১৮ ধরনের লাইসেন্স দরকার এবং বাৎসরিক নবায়ন ফি দিতে হয় ১ কোটির বেশি, যা কমানো প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, গ্যাস সংযোগ নিতে তিতাসে সংস্কার কাজ চালানো হচ্ছে। বর্তমানে শিল্প খাতে গ্যাস সংযোগ নিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের গ্যাসের রিজার্ভ ৬টি সিএফ এবং সারাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যে ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি।

তিনি জানান, বর্তমানে ৩৩০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাসের মধ্যে নিজস্ব উৎপাদিত গ্যাসের ৭৪ শতাংশ আসে নিজস্ব খাত থেকে বাকি ২৬ শতাংশ আসে এলএনজি থেকে এবং এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালে দেশীয় উৎপাদন হবে ১৬.৫ শতাংশ এবং আমদানি খাত থেকে আসবে ৮৩ শতাংশ, সেক্ষেত্রে শিল্প খাতসহ সব খাতে ব্যয় বাড়বে। এমন বাস্তবতায় অনুসন্ধান কার্যক্রম বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া অনুসন্ধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত আবশ্যক এবং এ কাজে একটা মানসম্মত ডাটা সেন্টার উন্মুক্ত করা খুবই জরুরি।’

মকবুল এলাহী আরও বলেন, ‘গ্যাস ব্যবহারে মিটার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে, সিস্টেম লস ও চুরি কামানো যেত, যার মাধ্যমে আরও ১০-১২ লাখ মিটার গ্যাস কাজে লাগানো যাবে। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে। এলপিজি পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবান্ধব এবং আমাদের দেশে বর্তমানে ১.২ মিলিয়ন টন এলপিজি ব্যবহৃত হচেছ। গত এপ্রিল মাসে এলপিজি দাম নির্ধারণে প্রথমবার একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং জুলাই মাসের ৭/৮ তারিখে এলপিজির দাম পুনঃবিবেচনার বৈঠক শুরু হবে। এলপিজির দাম নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালে নিয়ে আসা সম্ভব হলে ২০২৫ সালে ৩ মিলিয়ন টন এলপিজি বাংলাদেশে বিক্রি হবে।’

পেট্রোবাংলার গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক পরিচালক (অপারেশন) ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার সালেক সুফী ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের শিল্প খাতের ভবিষ্যৎ জ্বালানি হলো এলপিজি ও এলএনজি। শিল্প খাতে প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবাহরের যৌক্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। গ্যাস অনুসন্ধানে বর্তমানে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ যুগোপযোগী নয় এবং অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ ৩০তম স্থানে রয়েছে। সহনশীল দামে এলপিজি এবং এলএনজি সরবরাহের লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান, বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফেকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান আমের আলী হোসেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির সহকারী অধ্যাপক মো. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী অংশগ্রহণ করেন।

অধ্যাপক মো. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘২০৫০ সাল নাগাদ সারাবিশ্বে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৮৫ শতাংশ নাবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস হতে আসবে, যেখানে বাংলাদেশে ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎতের ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য খাত হতে আসার পরিকল্পানা রয়েছে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফেকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান আমের আলী হোসেন বলেন, ‘জ্বালানির জন্য শুধুমাত্র একটি উৎসের ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন খাত হতে জ্বালানি উৎপাদন ও জ্বালানির বহুমুখীকরণের ওপর আরও বেশি হারে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।’

এছাড়া তিনি বাপেক্সকে আরও আধুনিকায়ন করা দরকার বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের পশ্চিমাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় সে অঞ্চলে আশানুরূপ শিল্পায়ন হচ্ছে না।’

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘জ্বালানির দাম নির্ধারণের বিষয়ে সবাইকে আরও প্রতিযোগী সক্ষম হতে হবে এবং ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি মূল্যের যৌক্তিকীকরণ ও ক্ষেত্রবিশেষে মূল্য হ্রাসের আহ্বান জানান। তবে ভবিষ্যৎ শিল্পায়নের স্বার্থে আমদের প্রাকৃতিক গ্যাসকে আরও বেশি প্রধান্য দেয়া প্রয়োজন।’

বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘তৈরি পোশাক ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প খাতে গ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং টেক্সটাইল, ডাইং, স্পিনিং প্রভৃতি খাতে দেশের ৭-৮ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হয়। গত ১০ বছরে আমাদের গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে ৭৫৪ বিলিয়ন কিউটিক ফিট থেকে ৯৭৫ বিলিয়ন কিউবিক ফিটে।’ বিজিএমইএ সভাপতি আরও উল্লেখ করেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে এলপিজি ও এলএনজি স্বল্পমেয়াদি সমাধান হতে পারে। আমাদের ১৪৪টি লিড গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে এবং আরও ৫০০টির বেশি ফ্যাক্টরি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, গ্রিন ফ্যাক্টরিগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।’

ডিসিসিআই পরিচালক আরমান হক, সাবেক পরিচালক নূহের লতিফ খান, আহ্বায়ক মালিক তালহা ইসমাইল বারী মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেনসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ওই ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন।

back to top