করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের প্রবণতা থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স হ্রাস, করোনার নতুন ঢেউ এবং ধীরগতির ভ্যাকসিন প্রয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশকে সামনে আরো নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা (এমসিসিআই) প্রস্তুতকৃত চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই- সেপ্টেম্বর ২০২১) এর জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনায় এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি অর্থবছর ২০২১-২২ এর প্রথম প্রান্তিকে পুনরুদ্ধারের কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কারণ সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো ব্যবসায়িক গ্রুপগুলোকে ভরসা দিয়েছে। বৃহৎ খামার থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র-উদ্যোগ, যা শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিকে ফের চাঙা করতে সহায়তা করেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অর্থনীতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো আমদানি-রপ্তানি। করোনার মধ্যে উভয় ক্ষেত্রেই ভালো কাজ করেছে বাংলাদেশ। শক্তিশালী রপ্তানি আয় সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে সহজতর করেছে। পর্যালোচনাধীন ত্রৈমাসিকে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়েছে। যদিও অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স হ্রাস পেয়েছে, যা অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর বহুগুণ প্রভাব ফেলেছে। করোনা মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে ৫ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই মাসে ছিল ৬ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী তাদের চাকরি হারিয়েছেন। কিছু অভিবাসীকে তাদের কোম্পানি ছাঁটাই করেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ত্রৈমাসিকের শেষ মাস সেপ্টেম্বরের তুলনায় রেমিট্যান্স আরো ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমে ২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন থেকে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেল এবং কার্ব মার্কেটের মধ্যে স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হারের উচ্চ ব্যবধান সাম্প্রতিক মাসগুলো অবৈধ ‘হুন্ডি’ কার্যকলাপকে উৎসাহিত করেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে এবং বিনিময় হার দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, কিছু অর্থনৈতিক সূচক আগের অনুমানের চেয়ে কম আশাব্যঞ্জক। বিশেষকরে রাজস্ব আদায় কম এবং সরকারি ব্যয় উভয় ক্ষেত্রেই আর্থিক কাঠামো দুর্বল হয়েছে। নির্মাণসামগ্রীর ক্রমবর্ধমান মূল্য বেড়ে যাওয়া নির্মাণ খাতকে হুমকির মুখে ফেলেছে। রডের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। কারণ করোনা ভাইরাস মহামারির পর এখন অর্থনীতি আবারো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়েছে, মানুষ এখন নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১০ মাসে রডের দাম প্রায় ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ের মধ্যে ইট, বালি, পাথর, সিমেন্ট, গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম, পাইপ, ইনডোর ফিটিং এবং অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ার হার ১০-২০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। নির্মাণ এবং রিয়েল এস্টেট সেক্টরের অভূতপূর্ব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, জমির মূল্য এবং সেকেন্ডারি সম্পত্তি বাজারের অনুপস্থিতি, সম্পদের সুরক্ষা, বন্ধকী বিক্রয় এবং সিমেন্ট, সিরামিক, ইট উৎপাদন ইত্যাদির মতো ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের মতো কারণগুলো এ খাতের উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বেকারত্ব পরিস্থিতি এবং স্বল্প বিনিয়োগও বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। প্রতিযোগিতামূলক তা বজায় রাখতে এবং আরো প্রবৃদ্ধি তৈরি করতে সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর পরামর্শ রয়েছে প্রতিবেদনে।
বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে বলা হয়েছে, উচ্চ আমদানি প্রদানের চাপের জন্য ২০২২ সালে এ দেশের বাণিজ্য ঘাটতি তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা আগামী বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে ৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন হয়েছে। উচ্চ আমদানি এবং রেমিটেন্সের কম প্রবাহের কারণে আগামী বছর প্রথম প্রান্তিকে বানিজ্য ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।
মুদ্রাস্ফীতিও এই সময়ে বেড়েছে। বিবিএসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। সাধারণ পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতির হার সেপ্টেম্বর ০৫ শতাংশ বেড়ে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশে পৌঁছেছে গত মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এক বছর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশের বেশি ছিল।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার আগের মাসের (আগস্ট) তুলনায় বেড়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ০৫ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে সেপ্টেম্বর ৫ দশমিক ২১ শতাংশে পৌঁছেছে।
শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর ২০২১
করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের প্রবণতা থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স হ্রাস, করোনার নতুন ঢেউ এবং ধীরগতির ভ্যাকসিন প্রয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশকে সামনে আরো নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা (এমসিসিআই) প্রস্তুতকৃত চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই- সেপ্টেম্বর ২০২১) এর জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনায় এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি অর্থবছর ২০২১-২২ এর প্রথম প্রান্তিকে পুনরুদ্ধারের কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কারণ সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো ব্যবসায়িক গ্রুপগুলোকে ভরসা দিয়েছে। বৃহৎ খামার থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র-উদ্যোগ, যা শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিকে ফের চাঙা করতে সহায়তা করেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অর্থনীতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো আমদানি-রপ্তানি। করোনার মধ্যে উভয় ক্ষেত্রেই ভালো কাজ করেছে বাংলাদেশ। শক্তিশালী রপ্তানি আয় সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে সহজতর করেছে। পর্যালোচনাধীন ত্রৈমাসিকে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়েছে। যদিও অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স হ্রাস পেয়েছে, যা অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর বহুগুণ প্রভাব ফেলেছে। করোনা মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে ৫ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই মাসে ছিল ৬ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী তাদের চাকরি হারিয়েছেন। কিছু অভিবাসীকে তাদের কোম্পানি ছাঁটাই করেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ত্রৈমাসিকের শেষ মাস সেপ্টেম্বরের তুলনায় রেমিট্যান্স আরো ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমে ২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন থেকে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেল এবং কার্ব মার্কেটের মধ্যে স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হারের উচ্চ ব্যবধান সাম্প্রতিক মাসগুলো অবৈধ ‘হুন্ডি’ কার্যকলাপকে উৎসাহিত করেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে এবং বিনিময় হার দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, কিছু অর্থনৈতিক সূচক আগের অনুমানের চেয়ে কম আশাব্যঞ্জক। বিশেষকরে রাজস্ব আদায় কম এবং সরকারি ব্যয় উভয় ক্ষেত্রেই আর্থিক কাঠামো দুর্বল হয়েছে। নির্মাণসামগ্রীর ক্রমবর্ধমান মূল্য বেড়ে যাওয়া নির্মাণ খাতকে হুমকির মুখে ফেলেছে। রডের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। কারণ করোনা ভাইরাস মহামারির পর এখন অর্থনীতি আবারো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়েছে, মানুষ এখন নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১০ মাসে রডের দাম প্রায় ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ের মধ্যে ইট, বালি, পাথর, সিমেন্ট, গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম, পাইপ, ইনডোর ফিটিং এবং অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ার হার ১০-২০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। নির্মাণ এবং রিয়েল এস্টেট সেক্টরের অভূতপূর্ব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, জমির মূল্য এবং সেকেন্ডারি সম্পত্তি বাজারের অনুপস্থিতি, সম্পদের সুরক্ষা, বন্ধকী বিক্রয় এবং সিমেন্ট, সিরামিক, ইট উৎপাদন ইত্যাদির মতো ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের মতো কারণগুলো এ খাতের উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বেকারত্ব পরিস্থিতি এবং স্বল্প বিনিয়োগও বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। প্রতিযোগিতামূলক তা বজায় রাখতে এবং আরো প্রবৃদ্ধি তৈরি করতে সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর পরামর্শ রয়েছে প্রতিবেদনে।
বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে বলা হয়েছে, উচ্চ আমদানি প্রদানের চাপের জন্য ২০২২ সালে এ দেশের বাণিজ্য ঘাটতি তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা আগামী বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে ৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন হয়েছে। উচ্চ আমদানি এবং রেমিটেন্সের কম প্রবাহের কারণে আগামী বছর প্রথম প্রান্তিকে বানিজ্য ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।
মুদ্রাস্ফীতিও এই সময়ে বেড়েছে। বিবিএসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। সাধারণ পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতির হার সেপ্টেম্বর ০৫ শতাংশ বেড়ে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশে পৌঁছেছে গত মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এক বছর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশের বেশি ছিল।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার আগের মাসের (আগস্ট) তুলনায় বেড়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ০৫ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে সেপ্টেম্বর ৫ দশমিক ২১ শতাংশে পৌঁছেছে।