রাজধানীতে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। অনেক শিশুও ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অনেকের অবস্থার অবনতি হওয়ায় এমনকি আইসিইউতেও নিতে হচ্ছে। মারাও গেছে কয়েকজন শিশু।
শুধু ঢাকা শিশু হাসপাতালেই জুন ও চলতি জুলাই মাসের রোববার (২৫ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত ৫০ জন শিশু ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে দুই জন শিশু মারা গেছে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ২০ জন শিশু এখনও ওই হাসপাতালে ভর্তি আছে। এদের মধ্যে ৪ শিশু এখন আইসিইউতে আছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ রোববার সংবাদকে জানান, এ বছর ডেঙ্গু ‘হেমোরেজিক ফিভার’ বেশি। এবারের ধরন ২০১৯ সালের মতো। ভর্তিকৃত অনেক শিশুর অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাদের অনেকেরই আইসিইউ দরকার হয়।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শিশুদের বয়স এক থেকে এগার বছর পর্যন্ত বলে জানিয়েছে শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও সাভার থেকে এই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরা হাসপাতালে এসেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহকরী অধ্যাপক ডা. মোজাম্মেল হকও জানালেন, এখন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি জানান, জ্বরে আক্রান্ত শিশু প্রতিদিন তাদের হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসছে। সন্দেহভাজনদের প্রয়োজন হলে ডেঙ্গু ও করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। পরে ভর্তির দরকার হলে ভর্তি করা হয়। এভাবে দিনে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে।
রোগী বেড়ে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হচ্ছে বলেও জানান ডা. মোজাম্মেল। সেখানে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ টিম থাকবে।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কামরুল কিবরিয়ার দেয়া তথ্য মতে, গতকাল ২৪ জুলাই সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আরও ১০৫ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১০২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ঢাকার বাইরে ৩ জন আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। এখন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৬০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন আছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে রোববার পর্যন্ত মোট ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৬৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১২২৬ জন। আর ডেঙ্গু সন্দেহে ৩ জনের মৃত্যুর তথ্য হাসপাতাল থেকে মহাখালীর রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। তারা পর্যালোচনা করে ৩ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত কিনা তা নিশ্চিত করবেন।
নয় বছরের জিশান ২৪ জুলাই শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বাবা-মার সঙ্গে থাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায়। গত ২০ জুলাই সে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। শিশুটির বাবা সোহেল রোববার দুপুরে সংবাদকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জিশানের জন্য আইসিইউ লাগতে পারে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কারণে শিশুটির পেটের ব্যথা, ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
ওই হাসপাতালেই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে দেড় বছরের শিশু সাবিহা। বাবা-মায়ের সঙ্গে রাজধানীর মিরপুরের কল্যাণপুর এলাকায় থাকে। কোরবানির ঈদের দিন রাতে হঠাৎ করে শিশুটি প্রচ- জ্বরে আক্রান্ত হয়। এরপর শিশুটির বাবা মো. সুমন দ্রুত সাবিহাকে নিয়ে স্থানীয় ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার জ্বরের ওষুধ দিয়ে শিশুটির কিছু পরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর শিশুটি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। এরপরই তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার এখনও তেমন উন্নতি হয়নি।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু সম্পর্কে শিশুদের অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। বাসা বাড়িতে যাতে পানি জমিয়ে না রাখা হয়। ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানি, এসির পানি নিয়মিত ফেলে দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। শিশুদের মশা প্রতিরোধক ব্যবহার ও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। আর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শিশুদের বেশি করে তরল পানি খাওয়াতে হবে।
চিকিৎসকরা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে এখন লকডাউন চলছে। শিশুরা এখন বাড়িতেই থাকে। তাই বাসাবাড়ি আগে মশামুক্ত করার পরামর্শ দেন তারা।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিশ মশার প্রজনন হচ্ছে। ওই সব ভবনে এডিশ মশার লার্ভায় প্রতি সপ্তাহে একদিন কীটনাশক না দিলে মশার উপদ্রব বাড়তেই থাকবে। রোববার বিকেলে কয়েকজন চিকিৎসক সংবাদকে বলেন, এখন হাসপাতাল ছাড়াও চিকিৎসকদের চেম্বারে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের লোক চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। অবস্থার অবনতি হলে তারা হাসপাতালে যান বলে চিকিৎসকরা জানান।
রোববার, ২৫ জুলাই ২০২১
রাজধানীতে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। অনেক শিশুও ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অনেকের অবস্থার অবনতি হওয়ায় এমনকি আইসিইউতেও নিতে হচ্ছে। মারাও গেছে কয়েকজন শিশু।
শুধু ঢাকা শিশু হাসপাতালেই জুন ও চলতি জুলাই মাসের রোববার (২৫ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত ৫০ জন শিশু ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে দুই জন শিশু মারা গেছে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ২০ জন শিশু এখনও ওই হাসপাতালে ভর্তি আছে। এদের মধ্যে ৪ শিশু এখন আইসিইউতে আছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ রোববার সংবাদকে জানান, এ বছর ডেঙ্গু ‘হেমোরেজিক ফিভার’ বেশি। এবারের ধরন ২০১৯ সালের মতো। ভর্তিকৃত অনেক শিশুর অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাদের অনেকেরই আইসিইউ দরকার হয়।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শিশুদের বয়স এক থেকে এগার বছর পর্যন্ত বলে জানিয়েছে শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও সাভার থেকে এই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরা হাসপাতালে এসেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহকরী অধ্যাপক ডা. মোজাম্মেল হকও জানালেন, এখন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি জানান, জ্বরে আক্রান্ত শিশু প্রতিদিন তাদের হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসছে। সন্দেহভাজনদের প্রয়োজন হলে ডেঙ্গু ও করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। পরে ভর্তির দরকার হলে ভর্তি করা হয়। এভাবে দিনে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে।
রোগী বেড়ে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হচ্ছে বলেও জানান ডা. মোজাম্মেল। সেখানে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ টিম থাকবে।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ্ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কামরুল কিবরিয়ার দেয়া তথ্য মতে, গতকাল ২৪ জুলাই সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে আরও ১০৫ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১০২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ঢাকার বাইরে ৩ জন আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। এখন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৬০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন আছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে রোববার পর্যন্ত মোট ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৬৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১২২৬ জন। আর ডেঙ্গু সন্দেহে ৩ জনের মৃত্যুর তথ্য হাসপাতাল থেকে মহাখালীর রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। তারা পর্যালোচনা করে ৩ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত কিনা তা নিশ্চিত করবেন।
নয় বছরের জিশান ২৪ জুলাই শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বাবা-মার সঙ্গে থাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায়। গত ২০ জুলাই সে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। শিশুটির বাবা সোহেল রোববার দুপুরে সংবাদকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জিশানের জন্য আইসিইউ লাগতে পারে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কারণে শিশুটির পেটের ব্যথা, ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
ওই হাসপাতালেই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে দেড় বছরের শিশু সাবিহা। বাবা-মায়ের সঙ্গে রাজধানীর মিরপুরের কল্যাণপুর এলাকায় থাকে। কোরবানির ঈদের দিন রাতে হঠাৎ করে শিশুটি প্রচ- জ্বরে আক্রান্ত হয়। এরপর শিশুটির বাবা মো. সুমন দ্রুত সাবিহাকে নিয়ে স্থানীয় ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার জ্বরের ওষুধ দিয়ে শিশুটির কিছু পরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর শিশুটি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান। এরপরই তাকে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার এখনও তেমন উন্নতি হয়নি।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু সম্পর্কে শিশুদের অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। বাসা বাড়িতে যাতে পানি জমিয়ে না রাখা হয়। ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানি, এসির পানি নিয়মিত ফেলে দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। শিশুদের মশা প্রতিরোধক ব্যবহার ও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। আর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শিশুদের বেশি করে তরল পানি খাওয়াতে হবে।
চিকিৎসকরা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে এখন লকডাউন চলছে। শিশুরা এখন বাড়িতেই থাকে। তাই বাসাবাড়ি আগে মশামুক্ত করার পরামর্শ দেন তারা।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিশ মশার প্রজনন হচ্ছে। ওই সব ভবনে এডিশ মশার লার্ভায় প্রতি সপ্তাহে একদিন কীটনাশক না দিলে মশার উপদ্রব বাড়তেই থাকবে। রোববার বিকেলে কয়েকজন চিকিৎসক সংবাদকে বলেন, এখন হাসপাতাল ছাড়াও চিকিৎসকদের চেম্বারে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের লোক চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। অবস্থার অবনতি হলে তারা হাসপাতালে যান বলে চিকিৎসকরা জানান।