সড়ক-মহাসড়কে বেড়েছে যান চলাচল
গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানার খোলার পর অনেকটা শিথিল হয়ে গেছে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’। ঢাকাসহ সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চলাচল। সোমবার (২ আগস্ট) রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কে ছিল যানবাহনের চাপ। বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ থাকলেও বন্ধ ছিল না মানুষের চলাচল। রিকশা, ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, লেগুনা, ব্যাটারি চালিত অটো, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারসহ বেশির ভাগ যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। গাড়ির চাপে বেশি কিছু সড়কে যানজনের সৃষ্টি হয়েছে।
রাজধানীর অলি-গলিপথের সব দোকানপাট ছিল খোলা। প্রধান প্রধান সড়কে ছিল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট। তাই বাঁধাহীন চলাচল করেছে এসব যানবাহন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান ‘কঠোর লকডাউনের’ একাদশ দিনে সোমবার সোমবারও ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে ছিল রাজধানীমুখী মানুষের ভিড়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে তাদের। রাজধানীর প্রবেশের আগেই যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয় এ সব যানবাহন থেকে। এরপর পায়ে হেঁটে রাজধানীতে প্রবেশ করেন তারা। স্বাস্থ্যবিধি তো ছিল না, পথে পথে নানা ভোগান্তি ও কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের চাপ ছিল বেশি। প্রধান প্রধান সড়ক যানবাহনের পাশাপাশি মানুষ চলাচল ছিল বেশি। বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে যানবাহনের অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই। দু-একটি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল দেখলেই থামানো ইশারা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। বাস-মিনিবাস বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আজিজুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে ১ আগস্ট থেকে বেসরকারি অফিস খোলা হয়েছে। বাস না থাকায় খুব বিপদে পড়তে হচ্ছে। গতকাল রোববার কিছু বাস চলাচল করেছে। সোমবার তো খারাপ অবস্থা। গণপরিবহন না থাকায় কর্মস্থলে এবং জরুরি কাজে যাওয়ার পথে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। যানবাহনের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়।’ বাস বন্ধ রেখে অফিস খুলে দেয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে বলে জানান তিনি।
ইমরান নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ‘অফিসের জরুরি কাজে মিরপুর যাব। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের ভাড়া আকাশচুম্বী। জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। অথচ, এই দূরত্বে বাস ভাড়া ৩০ টাকা। লকডাউনের মধ্যে অফিস খুলে দেয়ায় আমাদের বিপদে পড়তে হয়েছে।’
দয়াগঞ্জ এলাকায় কামরুল নামের এক মোবাইল সার্ভিসিং দোকানদার বলেন, ‘লকাডাউন কোন কাজ হয় না। এটা কেউ মানে না। দেখেন না, পোশাকশ্রমিকরা কীভাবে ঢাকায় আসলো? তাদের জন্য সরকার গাড়িও চালু করে দিয়েছে। তাই আমরাও দোকানপাট খুলে রেখেছি। পুলিশ আসলে বলে, আমাদের তো ঠিক বন্ধ করে দেন। কিন্তু পোশাকশ্রমিকদের ঠেকাতে পারলেন না।’
মালিবাগ, শান্তিনগর, বিজয়নগর ও ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ির ও রিকশার পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, লেগুনা চলাচল করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় রহিম মিয়া নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘লকডাউন আগের মতো নেই। গাড়ির কাকরাইল ও শান্তিনগর মোড়ে যানজটে পড়তে হয়েছে। এখন খ্যাপ মারতে রাস্তায় অনেক সময় লাগতেছে। আগে এত সময় লাগেনি। লকডাউন তো শেষ হইতাছে, হেইল লাইগা গাড়ি-ঘোড়া বাইর হইতে শুরু করছে। এতদিন ভালোই ছিলাম, যাত্রী কম হইলেও যানজট ছিল না। আবার শুরু হইব যানজট।’
রাজধানীর মতিঝিল, রামপুরা, কাকরাইল, আজিমপুর, নিউমার্কেট, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি এলাকায় দেখা গেছে মানুষের ব্যস্ততা আগের চেয়ে বেশি। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়ার বিধিনিষেধ থাকলেও তা মানা হয়নি অনেকে এলাকায়।
দৈনিক বাংলা এলাকায় মাসুদ নামের এক যাত্রী বলেন, ‘বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। ঈতের পর এতদিন অফিস বন্ধ ছিল। রোববার থেকে খুলছে। রাস্তায় গাড়ি না থাকায় অফিসে আসতে সমস্যা হচ্ছে। অফিসে বলার পরও কাজ হয় না। গত কয়েক দিনের তুলনায় সোমবার রাস্তায় প্রাইভেট কার বেড়েছে। মতিঝিলের অনেক অফিসে কাজ-কর্ম শুরু করেছে। সেজন্য এতো প্রাইভেট কার।’
রোববার কারখানা খোলার পর রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচলে যে শিথিলতা ছিল, সোমবারও বিভিন্ন সড়কে-মহাসড়কে একই চিত্র দেখা গেছে। পুলিশের তল্লাশি না থাকায় সাভারের আমিনবাজার এলাকায় অনেক বাস-মিনিবাস চলাচল করতে দেখা বলে স্থানীয়রা জানান।
রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় প্রজাপতি নামের একটি যাত্রীবাহী বাস আটক করে ট্রাফিক পুলিশ। এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের মিরপুর অঞ্চলের একজন উপকমিশনার বলেন, ‘পোশাকশ্রমিকদের জন্য রোববার লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল, তার প্রভাব সোমবারও কিছুটা রয়ে গেছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল ঢাকায় এসেছে। তাই রাস্তার উপর থেকে জিকজ্যাক ব্যারিকেডগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে লকডাউন শিথিল হওয়ার কোনো নির্দেশনা তো আসেনি। আগে যেভাবে তল্লাশি করা হত, এখনো সেভাবেই করা হচ্ছে।’
বিধিনিষেধ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা মঙ্গলবার
চলমান বিধিনিষেধ ও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে আজ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বেলা ১১টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত সভায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বিধিনিষিধে বাড়ানো ও শিথিলতা নিয়ে আলোচনা করা হতে পারে বলে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়।
যাত্রীচাপ কমেছে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ঘাটে
শিবচর (মাদারীপুর) : গত দুই দিনের তুলনায় রোববার তেমন যাত্রীর চাপ দেখা যায়নি বাংলাবাজার-শিমুলীয়া নৌরুটে। লঞ্চ ও ফেরিতে যাত্রী পারাপার করায় ঢাকামুখী যাত্রীদের দুর্ভোগও কিছুটা কমেছে। তবে এদিনও গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা ঢাকায় ফিরছেন। ফেরিতে পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ রয়েছে। উভয় ঘাটে ৩ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে। গার্মেন্টসসহ রপ্তানিমুখী কল-কারখানা খোলার ঘোষণায় গেলো দুইদিনে ফেরি ও লঞ্চে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীদের স্রোত নামে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটে। পরে উভয় ঘাটে প্রশাসনের তৎপরতায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিকে নৌযানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন কোন লক্ষণ নেই। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় স্রোতের গতিও বৃদ্ধি পেয়ে ফেরি পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে গণপরিবহন ঘাটে আসছে। সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। উভয় ঘাটে যানবাহনের চাপ রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের সহকারী কর্মকর্তা ব্যবস্থাপক ভজন কুমার সাহা বলেন, বর্তমানে এ রুটে ১০টি ফেরি চলছে। রো রো ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে পরবর্তীতে সেগুলো চালানো হবে। এখন অগ্রাধিকারভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী পরিবহন, পচনশীল দ্রব্যের ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে।
বরিশাল : বরিশাল ঘাটে ৮টি লঞ্চ থাকলেও শেষ পর্যন্ত রোববার রাতে ৩টি লঞ্চ বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিকযাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। যদিও লঞ্চ মালিকরা বিকেল পর্যন্ত কোন লঞ্চ ঢাকা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত দেওয়ায় দুপুরের দিকে লঞ্চঘাটে জড়ো হওয়া বেশকিছু শ্রমিকদেরকে বরগুনা থেকে ছেড়ে আসা ৩টি লঞ্চে উঠিয়ে দেওয়া হবে বলে স্থানীয় বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ আশ^াস দেওয়ায় লঞ্চঘাটেই তারা অবস্থান করতে থাকেন। কিন্তু, বরগুনা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো যাত্রীতে টইটম্বুর থাকায় একটিও বরিশাল ঘাটে থামেনি। সরাসরি ঢাকা চলে যায়। এদিকে লঞ্চ ছাড়বে খবর পেয়ে বিকেলের পর ঢাকামুখি শ্রমিকরা ক্রমশ লঞ্চঘাটে জড়ো হতে থাকে। কিন্তু লঞ্চ মালিকরা লঞ্চ না ছাড়ায় জড়ো হওয়া শ্রমিকরা ক্রমশ বিক্ষুব্ধ হতে থাকেন। অবশেষে স্থানীয় বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে রাত ৯টার পর তিনটি লঞ্চ উপস্থিত যাত্রীদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে এসব লঞ্চ মালিকরা যেমনি স্বাস্থ্যবিধি মানেনি তেমনি যাত্রীরাও স্বাস্থ্যবিধি মানেননি। এমনকি তাদের অনেকেই মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করেননি। শেষ মুহ’র্তে লঞ্চ ছাড়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় সব যাত্রীই ছিলেন ডেকের যাত্রী। একটি কেবিন বা সোফাতেও কোন যাত্রী ছিলেন না বা কেন্টিন বা টি-স্টল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এদিকে বাসদ নেতৃবৃন্দ ঢাকামুখী যাত্রীদের মধ্যে রান্না করা খাবার প্যাকেটে করে যাত্রীদেরকে সরবরাহ করেছে।
সড়ক-মহাসড়কে বেড়েছে যান চলাচল
সোমবার, ০২ আগস্ট ২০২১
গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানার খোলার পর অনেকটা শিথিল হয়ে গেছে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’। ঢাকাসহ সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চলাচল। সোমবার (২ আগস্ট) রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কে ছিল যানবাহনের চাপ। বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ থাকলেও বন্ধ ছিল না মানুষের চলাচল। রিকশা, ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, লেগুনা, ব্যাটারি চালিত অটো, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারসহ বেশির ভাগ যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। গাড়ির চাপে বেশি কিছু সড়কে যানজনের সৃষ্টি হয়েছে।
রাজধানীর অলি-গলিপথের সব দোকানপাট ছিল খোলা। প্রধান প্রধান সড়কে ছিল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট। তাই বাঁধাহীন চলাচল করেছে এসব যানবাহন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান ‘কঠোর লকডাউনের’ একাদশ দিনে সোমবার সোমবারও ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে ছিল রাজধানীমুখী মানুষের ভিড়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে তাদের। রাজধানীর প্রবেশের আগেই যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয় এ সব যানবাহন থেকে। এরপর পায়ে হেঁটে রাজধানীতে প্রবেশ করেন তারা। স্বাস্থ্যবিধি তো ছিল না, পথে পথে নানা ভোগান্তি ও কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের চাপ ছিল বেশি। প্রধান প্রধান সড়ক যানবাহনের পাশাপাশি মানুষ চলাচল ছিল বেশি। বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে যানবাহনের অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই। দু-একটি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল দেখলেই থামানো ইশারা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। বাস-মিনিবাস বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান।
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আজিজুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে ১ আগস্ট থেকে বেসরকারি অফিস খোলা হয়েছে। বাস না থাকায় খুব বিপদে পড়তে হচ্ছে। গতকাল রোববার কিছু বাস চলাচল করেছে। সোমবার তো খারাপ অবস্থা। গণপরিবহন না থাকায় কর্মস্থলে এবং জরুরি কাজে যাওয়ার পথে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। যানবাহনের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়।’ বাস বন্ধ রেখে অফিস খুলে দেয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে বলে জানান তিনি।
ইমরান নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ‘অফিসের জরুরি কাজে মিরপুর যাব। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের ভাড়া আকাশচুম্বী। জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। অথচ, এই দূরত্বে বাস ভাড়া ৩০ টাকা। লকডাউনের মধ্যে অফিস খুলে দেয়ায় আমাদের বিপদে পড়তে হয়েছে।’
দয়াগঞ্জ এলাকায় কামরুল নামের এক মোবাইল সার্ভিসিং দোকানদার বলেন, ‘লকাডাউন কোন কাজ হয় না। এটা কেউ মানে না। দেখেন না, পোশাকশ্রমিকরা কীভাবে ঢাকায় আসলো? তাদের জন্য সরকার গাড়িও চালু করে দিয়েছে। তাই আমরাও দোকানপাট খুলে রেখেছি। পুলিশ আসলে বলে, আমাদের তো ঠিক বন্ধ করে দেন। কিন্তু পোশাকশ্রমিকদের ঠেকাতে পারলেন না।’
মালিবাগ, শান্তিনগর, বিজয়নগর ও ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ির ও রিকশার পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, লেগুনা চলাচল করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় রহিম মিয়া নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘লকডাউন আগের মতো নেই। গাড়ির কাকরাইল ও শান্তিনগর মোড়ে যানজটে পড়তে হয়েছে। এখন খ্যাপ মারতে রাস্তায় অনেক সময় লাগতেছে। আগে এত সময় লাগেনি। লকডাউন তো শেষ হইতাছে, হেইল লাইগা গাড়ি-ঘোড়া বাইর হইতে শুরু করছে। এতদিন ভালোই ছিলাম, যাত্রী কম হইলেও যানজট ছিল না। আবার শুরু হইব যানজট।’
রাজধানীর মতিঝিল, রামপুরা, কাকরাইল, আজিমপুর, নিউমার্কেট, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি এলাকায় দেখা গেছে মানুষের ব্যস্ততা আগের চেয়ে বেশি। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়ার বিধিনিষেধ থাকলেও তা মানা হয়নি অনেকে এলাকায়।
দৈনিক বাংলা এলাকায় মাসুদ নামের এক যাত্রী বলেন, ‘বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। ঈতের পর এতদিন অফিস বন্ধ ছিল। রোববার থেকে খুলছে। রাস্তায় গাড়ি না থাকায় অফিসে আসতে সমস্যা হচ্ছে। অফিসে বলার পরও কাজ হয় না। গত কয়েক দিনের তুলনায় সোমবার রাস্তায় প্রাইভেট কার বেড়েছে। মতিঝিলের অনেক অফিসে কাজ-কর্ম শুরু করেছে। সেজন্য এতো প্রাইভেট কার।’
রোববার কারখানা খোলার পর রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচলে যে শিথিলতা ছিল, সোমবারও বিভিন্ন সড়কে-মহাসড়কে একই চিত্র দেখা গেছে। পুলিশের তল্লাশি না থাকায় সাভারের আমিনবাজার এলাকায় অনেক বাস-মিনিবাস চলাচল করতে দেখা বলে স্থানীয়রা জানান।
রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় প্রজাপতি নামের একটি যাত্রীবাহী বাস আটক করে ট্রাফিক পুলিশ। এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের মিরপুর অঞ্চলের একজন উপকমিশনার বলেন, ‘পোশাকশ্রমিকদের জন্য রোববার লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল, তার প্রভাব সোমবারও কিছুটা রয়ে গেছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল ঢাকায় এসেছে। তাই রাস্তার উপর থেকে জিকজ্যাক ব্যারিকেডগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে লকডাউন শিথিল হওয়ার কোনো নির্দেশনা তো আসেনি। আগে যেভাবে তল্লাশি করা হত, এখনো সেভাবেই করা হচ্ছে।’
বিধিনিষেধ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা মঙ্গলবার
চলমান বিধিনিষেধ ও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে আজ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বেলা ১১টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত সভায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বিধিনিষিধে বাড়ানো ও শিথিলতা নিয়ে আলোচনা করা হতে পারে বলে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়।
যাত্রীচাপ কমেছে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ঘাটে
শিবচর (মাদারীপুর) : গত দুই দিনের তুলনায় রোববার তেমন যাত্রীর চাপ দেখা যায়নি বাংলাবাজার-শিমুলীয়া নৌরুটে। লঞ্চ ও ফেরিতে যাত্রী পারাপার করায় ঢাকামুখী যাত্রীদের দুর্ভোগও কিছুটা কমেছে। তবে এদিনও গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা ঢাকায় ফিরছেন। ফেরিতে পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ রয়েছে। উভয় ঘাটে ৩ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় আটকে রয়েছে। গার্মেন্টসসহ রপ্তানিমুখী কল-কারখানা খোলার ঘোষণায় গেলো দুইদিনে ফেরি ও লঞ্চে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীদের স্রোত নামে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটে। পরে উভয় ঘাটে প্রশাসনের তৎপরতায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিকে নৌযানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন কোন লক্ষণ নেই। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় স্রোতের গতিও বৃদ্ধি পেয়ে ফেরি পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে গণপরিবহন ঘাটে আসছে। সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। উভয় ঘাটে যানবাহনের চাপ রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের সহকারী কর্মকর্তা ব্যবস্থাপক ভজন কুমার সাহা বলেন, বর্তমানে এ রুটে ১০টি ফেরি চলছে। রো রো ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে পরবর্তীতে সেগুলো চালানো হবে। এখন অগ্রাধিকারভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী পরিবহন, পচনশীল দ্রব্যের ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে।
বরিশাল : বরিশাল ঘাটে ৮টি লঞ্চ থাকলেও শেষ পর্যন্ত রোববার রাতে ৩টি লঞ্চ বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিকযাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। যদিও লঞ্চ মালিকরা বিকেল পর্যন্ত কোন লঞ্চ ঢাকা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত দেওয়ায় দুপুরের দিকে লঞ্চঘাটে জড়ো হওয়া বেশকিছু শ্রমিকদেরকে বরগুনা থেকে ছেড়ে আসা ৩টি লঞ্চে উঠিয়ে দেওয়া হবে বলে স্থানীয় বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ আশ^াস দেওয়ায় লঞ্চঘাটেই তারা অবস্থান করতে থাকেন। কিন্তু, বরগুনা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো যাত্রীতে টইটম্বুর থাকায় একটিও বরিশাল ঘাটে থামেনি। সরাসরি ঢাকা চলে যায়। এদিকে লঞ্চ ছাড়বে খবর পেয়ে বিকেলের পর ঢাকামুখি শ্রমিকরা ক্রমশ লঞ্চঘাটে জড়ো হতে থাকে। কিন্তু লঞ্চ মালিকরা লঞ্চ না ছাড়ায় জড়ো হওয়া শ্রমিকরা ক্রমশ বিক্ষুব্ধ হতে থাকেন। অবশেষে স্থানীয় বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে রাত ৯টার পর তিনটি লঞ্চ উপস্থিত যাত্রীদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে এসব লঞ্চ মালিকরা যেমনি স্বাস্থ্যবিধি মানেনি তেমনি যাত্রীরাও স্বাস্থ্যবিধি মানেননি। এমনকি তাদের অনেকেই মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করেননি। শেষ মুহ’র্তে লঞ্চ ছাড়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় সব যাত্রীই ছিলেন ডেকের যাত্রী। একটি কেবিন বা সোফাতেও কোন যাত্রী ছিলেন না বা কেন্টিন বা টি-স্টল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এদিকে বাসদ নেতৃবৃন্দ ঢাকামুখী যাত্রীদের মধ্যে রান্না করা খাবার প্যাকেটে করে যাত্রীদেরকে সরবরাহ করেছে।