alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

নির্বাচনী সহিংসতা

চরফ্যাশনে মনিরের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধুম্রজাল

প্রতিনিধি, চরফ্যাশন (ভোলা) : বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১

চরফ্যাশনে ২১ জুন ভোগগ্রহনের দিন হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মহিলাভোটারদের জন্য নির্ধারিত দক্ষিণ চর ফকিরা কো-ইড সপ্রাবি কেন্দ্রে নিহত মনির হোসেনের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মনির মারা গেছেন এমনটা পুলিশসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবী করলেও ‘ কার গুলিতে মনির মরেছে’ এই প্রশ্নের কোন উত্তর মিলছে না। পুলিশের সাফ কথা ‘পুলিশের গুলিতে মনির মরেনি। মনিরের প্রাণহরণকারী গুলির উৎস নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. আকতারুজ্জামান, জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারসহ পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সরেজমিনে খোজ খবর নিয়ে জানাগেছে, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩শত ৬১ জন। তার মধ্যে ১ হাজার ৫৭ জন মহিলা ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল দক্ষিণ চর ফকিরা কো-ইড সপ্রাবি এবং ১ হাজার ৩শ ৪জন পুরুষ ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল চর ফকিরা হাজি খলিলুর রহমান সপ্রাবি। এই দু’টি কেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব দেড় থেকে ২ কিমি। একই ওয়ার্ডের ভোটারদের জন্য বিশাল দূরত্বের পৃথক দু’টি কেন্দ্রই ভোটগ্রহনের দিন সহিংতার অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। পাশাপাশি দু’টি কেন্দ্র প্রতিদ্বন্ধী দুই প্রার্থীর বাড়ি সংলগ্ন হওয়ায় ভোটের দিন সহিংসতা আশংকা আগে থেকেই ছিল। স্থানীয়রা জানান, আগে একই কেন্দ্রে ভোটগ্রহন করা হতো। তখন সহিংসতা ছিল না। পুরুষ ও মহিলা কেন্দ্র ভিন্ন ভ্যানুতে নেয়ার পর থেকে সহিংসতা শুরু হয়। বিশাল দূরত্বের দু’টি কেন্দ্রে এ যাবৎ ৩টি নির্বাচনে ভোটগ্রহন করা হয়। সব ক’টি নির্বাচনেই এখানে সহিংসতা হয়েছে। এবারও সহিংসতার শংকা ছিল। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এই ওয়ার্ডে সাধারন সদস্য পদে ৩জন প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।তাদের মধ্যে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াছিন মাঝি এবং টিউব ওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদারের মধ্যে উত্তেজনা ছিল আগে থেকেই। ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াছিন মাঝির বাড়ি মহিলাকেন্দ্র সংলগ্ন এবং টিউব ওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদারের বাড়ি পুরুষকেন্দ্র সংলগ্ন। বাড়িসংলগ্ন কেন্দ্র হওয়ায় দুই প্রার্থী কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া ছিল। আধিপত্য বিস্তারের এই অপচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় রুপ নেয় এবং ওই সহিংতার বলি হয় পেশায় জেলে যুবক মনির।

মহিলা ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী একজন পুলিং এজেন্ট জানান, মহিলা ভোটকেন্দ্রে হামলার সময় সাধারন সদস্যপদে প্রতিদ্বন্ধী ৩ জন প্রার্থীর সবাই কেন্দ্রের মধ্যে ছিলেন। ঘটনার সূত্রপাত হয় দেড় থেকে ২ কিমি দূরের পুরুষ ভোটকেন্দ্র থেকে। সকালে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর বাড়িসংলগ্ন পুরুষ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান ফুটবল মার্কার প্রার্থী ইয়াছিন মাঝি। সেখানে টিউবওয়েল মার্কার কর্মীরা তাকে লাঞ্চিত করে। এই ঘটনার পরপর ইয়াছিন মাঝি তার বাড়ি সংলগ্ন মহিলা ভোটকেন্দ্রে ফিরে আসেন। তিনি আসার পর লাঞ্চনার খবর কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং কর্মী সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। ইয়াছিন মাঝির উত্তেজিত কর্মীরা খুবদ্রুত সময়ের মধ্যে ধারালো অস্ত্র,লোহার রড এবং লাঠি নিয়ে কেন্দ্রের পাশে উপস্থিত টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদার ও তার কর্মীদের উপর হামলা করে। হামলার মুখে প্রার্থী ইউসুফ সিকদার কেন্দ্রের মধ্যে ৩য় তলায় ভোটগ্রহনকারী কর্মকর্তাদের কক্ষে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা ৩তলা বিশিষ্ট ভোটকেন্দ্রের নিচতলার লোহার গেইট ভেঙ্গে ২য় তলায় উঠে আসে। পরিস্থিতি বেগতি দেখে প্রশাসনের লোকজন ৩য় তলায় উঠার লোহার গেইটটি বন্ধ করে দেয়। ফলে গেইটের ভেতর-বাহিরে থাকা মহিলা ভোটাররা অবরুদ্ধ হয়ে পরে। বিশেষ করে ৩য় তলার গেইটের বাহিরে থাকা মহিলা ভোটাররা তোপের মধ্যে অসহায় হয়ে পরে। এসময় হামলাকারীরা ২য় গেইট ভেঙ্গে ৩য় তলায় উঠার চেষ্টা করে। এই ৩য় তলায় ছিল কেন্দ্রের ৩টি ভোটগ্রহন কক্ষ। যেখানে প্রতিদ্বন্ধী ৩ প্রার্থী, ভোটগ্রহন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ছিলেন। হঠাৎ আক্রমনে আতংকিত হয়ে পরেন কর্মকর্তারাও। প্রিজাডিং অফিসার মো. ইমাম হোসেন জানান, হামলাকারীরা গেইট ভেঙ্গে ৩য় তলায় উঠার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে। ঘটনাস্থল থেকে আহত মনিরকে চরফ্যাশন হাসপাতালে নেয়ার পর সে মারা যায়। কিন্ত তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রিজাইডিং অফিসার কিছুই জানেন না বলে দাবী করেছেন। ওই ভোটকেন্দ্রের একজন পুলিংএজেন্ট জানান, হামলাকারীরা গেইট এবং গেইট সংলগ্ন লোহার গ্রিল ভেঙ্গে ৩য় তলায় উঠার চেষ্টা করে। নিহত মনিরও হামলাকারীদের একজন ছিল। সে গেইটের পাশের গ্রিলভেঙ্গে ৩য় তলায় প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের গুলির আঘাতে সে গ্রিল থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মারা যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ওই পুলিংএজেন্ট দাবী করেন, পুলিশ রাবারের গুলি ছুঁড়ে। এখনো অসংখ্য রাবার গুলি ভোটকেন্দ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ভোট দিতে আসা কিছু মহিলাও রাবারগুলি বিদ্ধ হয়েছেন। গ্রামের শিশুরা এসব রাবার গুলি কুড়িয়ে নিচ্ছেন। এই রাবার গুলিতে কারো মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। গ্রীল বেয়ে উপরে উঠার সময় রাবারগুলির আঘাতে মনির ছিটকে নিচের পিলারে উপর পড়ে গুরুতর আঘাত পায়। ওই আঘাতই তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মনিরের মৃত্যুর ঘটনায় মনিরের বাবা বশির সিকদার বাদি হয়ে শশীভূষণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় টিউবওয়েল মার্কার প্রার্থী ইউসুফ সিকদার ও তার কর্মী-সমর্থকদের আসামী করা হয়েছে। মামলার এজাহারে প্রতিপক্ষের গুলিতে মনিরের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। যদিও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শশীভূষণ থানার উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, মৃতদেহে ছোটখাট জখমের চিহ্ন ছিল। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানাযাবে।

নিহত মনিরের বাড়ি ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াসিন মাঝির বাড়ি ও ঘটনাস্থল মহিলা ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন। মনির পরিবার ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াছিন মাঝির সমর্থক ছিল। ফলে মনিরের মৃত্যুর ঘটনায় টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদার ও তার অনুগতরা খুনের মামলায় ফেঁসে যায়।

শশীভূষণ থানার অফিসার ইন চার্জ মো.রফিকুল ইসলাম জানান, এজারভূক্ত প্রধান আসামী রিয়াদ সিকদারকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।রিয়াদ টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদারের ছেলে। অপরাপর আসামীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

অর্থপাচার: সকল আসামিকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডিবিতে ডাকা হয়েছে কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে

সখীপুরে র‍্যাবের অভিযানে ইয়াবা গাঁজাসহ গ্রেফতার দুই

রাবিতে শহীদ কামারুজ্জামান হল নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান

ছবি

ড. ইউনূসকে ২৩ মে পর্যন্ত জামিন

ছবি

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিনতাই ও চুরি হওয়া ফোন সেট উদ্ধার

মতলবে ব্যাংকের নৈশপ্রহরী খুনের রহস্য উন্মোচন,মূল আসামী সহ ৩ জন গ্রেফতার

ছবি

লঞ্চে বোরকা পরে ছিনতাই করতেন তারা

বন্ধুর সহায়তায় প্রবাসীর স্ত্রীকে খুন করে ঘরের মালামাল লুট করে আপন ভাই

গাজীপুরে ৩জন ভুয়া ডিবি পুলিশ আটক

ছবি

আইন অমান্য করে ইটভাটা পরিচালনা, সংবাদ প্রকাশের পর অভিযান, ৩ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

দুদকের মামলায় সাবেক এমপি কাদের খানের চার বছরের দন্ড

গাজীপুরে পুত্রকে কুপিয়ে হত্যা, পিতা আটক

ছবি

এবার ভরদুপুরে থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি

সিলেটে ‘ধর্ষক’ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গ্রপ্তার করেছে র‌্যাব

ছবি

ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ

ছবি

শেকলে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ, রিমান্ডে ৪ আসামি

মুন্সীগঞ্জে ডালিম হ.ত্যা মামলার ৬ আসামি জেলহাজতে

ছবি

শিকলে বেঁধে ২৫ দিন ধরে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

ছবি

গেন্ডারিয়ায় ৯৮৩ পিস ভয়াবহ মাদক বুপ্রেনরফিনসহ গ্রেপ্তার কারবারি

ছবি

সিলেটে তরুণীকে আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ অধরা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ অভিযুক্তরা

নারায়ণগঞ্জে প্রেমিকাকে ধর্ষণ ও হত্যা, ৩ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

স্ত্রী-শাশুড়িসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের প্রতারণার মামলা

ছবি

মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিচ্ছেন দুই ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৫ জন

ছবি

দুই বছরের দণ্ড ২৭ বছর পর বাতিল, রায়ের কপি যাচ্ছে সব আদালতে

ছবি

মানিকদির জমি দখল নাজিমের দৌরাত্ম্য থামছেই না, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ছবি

পুলিশের সোর্স হত্যা মামলার পলাতক ২ আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

বড় মনিরের বিরুদ্ধে এবার ঢাকায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

ছবি

রামুর কচ্ছপিয়ায় ছুরিকাঘাতে ছায়া হত্যার ঘটনায় আটক দুই

ছবি

মহেশখালীর সিরিয়াল কিলার আজরাইল গ্রেফতার

ছবি

মুন্সীগঞ্জে পাইপগান-ফেন্সিডিলসহ দু’জন আটক

ছবি

দুদকের মামলায় ২০ কোটি ২২ লাখ টাকার আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক এমপি মান্নান কারাগারে

ছবি

আইএমইআই নম্বর পাল্টে মোবাইল বিক্রি, চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

চুনারুঘাটে স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা, স্বামী আটক

ছবি

সিরাজগঞ্জে ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৫ কোটি টাকা গায়েব, ৩ কর্মকর্তা কারাগারে

শতাধিক শিক্ষা ভবন নির্মাণের নামে বিল ভাগ-বাটোয়ারা

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

নির্বাচনী সহিংসতা

চরফ্যাশনে মনিরের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধুম্রজাল

প্রতিনিধি, চরফ্যাশন (ভোলা)

বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১

চরফ্যাশনে ২১ জুন ভোগগ্রহনের দিন হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মহিলাভোটারদের জন্য নির্ধারিত দক্ষিণ চর ফকিরা কো-ইড সপ্রাবি কেন্দ্রে নিহত মনির হোসেনের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মনির মারা গেছেন এমনটা পুলিশসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবী করলেও ‘ কার গুলিতে মনির মরেছে’ এই প্রশ্নের কোন উত্তর মিলছে না। পুলিশের সাফ কথা ‘পুলিশের গুলিতে মনির মরেনি। মনিরের প্রাণহরণকারী গুলির উৎস নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. আকতারুজ্জামান, জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারসহ পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সরেজমিনে খোজ খবর নিয়ে জানাগেছে, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩শত ৬১ জন। তার মধ্যে ১ হাজার ৫৭ জন মহিলা ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল দক্ষিণ চর ফকিরা কো-ইড সপ্রাবি এবং ১ হাজার ৩শ ৪জন পুরুষ ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল চর ফকিরা হাজি খলিলুর রহমান সপ্রাবি। এই দু’টি কেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব দেড় থেকে ২ কিমি। একই ওয়ার্ডের ভোটারদের জন্য বিশাল দূরত্বের পৃথক দু’টি কেন্দ্রই ভোটগ্রহনের দিন সহিংতার অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। পাশাপাশি দু’টি কেন্দ্র প্রতিদ্বন্ধী দুই প্রার্থীর বাড়ি সংলগ্ন হওয়ায় ভোটের দিন সহিংসতা আশংকা আগে থেকেই ছিল। স্থানীয়রা জানান, আগে একই কেন্দ্রে ভোটগ্রহন করা হতো। তখন সহিংসতা ছিল না। পুরুষ ও মহিলা কেন্দ্র ভিন্ন ভ্যানুতে নেয়ার পর থেকে সহিংসতা শুরু হয়। বিশাল দূরত্বের দু’টি কেন্দ্রে এ যাবৎ ৩টি নির্বাচনে ভোটগ্রহন করা হয়। সব ক’টি নির্বাচনেই এখানে সহিংসতা হয়েছে। এবারও সহিংসতার শংকা ছিল। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এই ওয়ার্ডে সাধারন সদস্য পদে ৩জন প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।তাদের মধ্যে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াছিন মাঝি এবং টিউব ওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদারের মধ্যে উত্তেজনা ছিল আগে থেকেই। ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াছিন মাঝির বাড়ি মহিলাকেন্দ্র সংলগ্ন এবং টিউব ওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদারের বাড়ি পুরুষকেন্দ্র সংলগ্ন। বাড়িসংলগ্ন কেন্দ্র হওয়ায় দুই প্রার্থী কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া ছিল। আধিপত্য বিস্তারের এই অপচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় রুপ নেয় এবং ওই সহিংতার বলি হয় পেশায় জেলে যুবক মনির।

মহিলা ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী একজন পুলিং এজেন্ট জানান, মহিলা ভোটকেন্দ্রে হামলার সময় সাধারন সদস্যপদে প্রতিদ্বন্ধী ৩ জন প্রার্থীর সবাই কেন্দ্রের মধ্যে ছিলেন। ঘটনার সূত্রপাত হয় দেড় থেকে ২ কিমি দূরের পুরুষ ভোটকেন্দ্র থেকে। সকালে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর বাড়িসংলগ্ন পুরুষ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান ফুটবল মার্কার প্রার্থী ইয়াছিন মাঝি। সেখানে টিউবওয়েল মার্কার কর্মীরা তাকে লাঞ্চিত করে। এই ঘটনার পরপর ইয়াছিন মাঝি তার বাড়ি সংলগ্ন মহিলা ভোটকেন্দ্রে ফিরে আসেন। তিনি আসার পর লাঞ্চনার খবর কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং কর্মী সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। ইয়াছিন মাঝির উত্তেজিত কর্মীরা খুবদ্রুত সময়ের মধ্যে ধারালো অস্ত্র,লোহার রড এবং লাঠি নিয়ে কেন্দ্রের পাশে উপস্থিত টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদার ও তার কর্মীদের উপর হামলা করে। হামলার মুখে প্রার্থী ইউসুফ সিকদার কেন্দ্রের মধ্যে ৩য় তলায় ভোটগ্রহনকারী কর্মকর্তাদের কক্ষে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা ৩তলা বিশিষ্ট ভোটকেন্দ্রের নিচতলার লোহার গেইট ভেঙ্গে ২য় তলায় উঠে আসে। পরিস্থিতি বেগতি দেখে প্রশাসনের লোকজন ৩য় তলায় উঠার লোহার গেইটটি বন্ধ করে দেয়। ফলে গেইটের ভেতর-বাহিরে থাকা মহিলা ভোটাররা অবরুদ্ধ হয়ে পরে। বিশেষ করে ৩য় তলার গেইটের বাহিরে থাকা মহিলা ভোটাররা তোপের মধ্যে অসহায় হয়ে পরে। এসময় হামলাকারীরা ২য় গেইট ভেঙ্গে ৩য় তলায় উঠার চেষ্টা করে। এই ৩য় তলায় ছিল কেন্দ্রের ৩টি ভোটগ্রহন কক্ষ। যেখানে প্রতিদ্বন্ধী ৩ প্রার্থী, ভোটগ্রহন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ছিলেন। হঠাৎ আক্রমনে আতংকিত হয়ে পরেন কর্মকর্তারাও। প্রিজাডিং অফিসার মো. ইমাম হোসেন জানান, হামলাকারীরা গেইট ভেঙ্গে ৩য় তলায় উঠার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে। ঘটনাস্থল থেকে আহত মনিরকে চরফ্যাশন হাসপাতালে নেয়ার পর সে মারা যায়। কিন্ত তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রিজাইডিং অফিসার কিছুই জানেন না বলে দাবী করেছেন। ওই ভোটকেন্দ্রের একজন পুলিংএজেন্ট জানান, হামলাকারীরা গেইট এবং গেইট সংলগ্ন লোহার গ্রিল ভেঙ্গে ৩য় তলায় উঠার চেষ্টা করে। নিহত মনিরও হামলাকারীদের একজন ছিল। সে গেইটের পাশের গ্রিলভেঙ্গে ৩য় তলায় প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের গুলির আঘাতে সে গ্রিল থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মারা যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ওই পুলিংএজেন্ট দাবী করেন, পুলিশ রাবারের গুলি ছুঁড়ে। এখনো অসংখ্য রাবার গুলি ভোটকেন্দ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ভোট দিতে আসা কিছু মহিলাও রাবারগুলি বিদ্ধ হয়েছেন। গ্রামের শিশুরা এসব রাবার গুলি কুড়িয়ে নিচ্ছেন। এই রাবার গুলিতে কারো মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। গ্রীল বেয়ে উপরে উঠার সময় রাবারগুলির আঘাতে মনির ছিটকে নিচের পিলারে উপর পড়ে গুরুতর আঘাত পায়। ওই আঘাতই তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মনিরের মৃত্যুর ঘটনায় মনিরের বাবা বশির সিকদার বাদি হয়ে শশীভূষণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় টিউবওয়েল মার্কার প্রার্থী ইউসুফ সিকদার ও তার কর্মী-সমর্থকদের আসামী করা হয়েছে। মামলার এজাহারে প্রতিপক্ষের গুলিতে মনিরের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। যদিও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শশীভূষণ থানার উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, মৃতদেহে ছোটখাট জখমের চিহ্ন ছিল। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানাযাবে।

নিহত মনিরের বাড়ি ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াসিন মাঝির বাড়ি ও ঘটনাস্থল মহিলা ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন। মনির পরিবার ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ইয়াছিন মাঝির সমর্থক ছিল। ফলে মনিরের মৃত্যুর ঘটনায় টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদার ও তার অনুগতরা খুনের মামলায় ফেঁসে যায়।

শশীভূষণ থানার অফিসার ইন চার্জ মো.রফিকুল ইসলাম জানান, এজারভূক্ত প্রধান আসামী রিয়াদ সিকদারকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।রিয়াদ টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ সিকদারের ছেলে। অপরাপর আসামীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

back to top