আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দেশে কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ঘটছে। কিশোর গ্যাং মূলত উঠতি বয়সের কিশোরদের মধ্যে এলাকাভিত্তিক ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে গ্রুপ তৈরি করছে। পরে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের সঙ্গে মারামারি করছে। গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকাভিত্তিক নিজেদের অবস্থান দেখানোর জন্য বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রভাব বিস্তার করছে, পথচারীদের তারা উত্ত্যক্ত করছে। এমনকি ছোটখাট বিষয় নিয়ে মানুষের ওপর চড়াও হয়ে মারামারি থেকে হত্যা পর্যন্ত করে। নিজের গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার ধরে রাখতে গ্রুপগুলোর সঙ্গে কোন্দলে লিপ্ত থাকে।
র্যাব সদরদপ্তর থেকে জানা গেছে, খোদ রাজধানীর উত্তরা থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন এলাকার আশপাশের জেলাগুলোতে একাধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর আবার নতুন করে গ্যাং তৈরি করে অপরাধ করছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার আছে। তারা প্রভাব বিস্তার করতে কিশোর গ্যাং সৃষ্টি করে।
র্যাবের অনুসন্ধানে উত্তরার কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক নাম বেরিয়ে আসছে। উত্তরায় আধিপত্য বিস্তারকারী বিগ বস গ্রুপ, ডেঞ্জার সেভনে গ্রুপ, কাটার গ্রুপ, হৃদয় গ্রুপ ও নন স্টপ ড্যান্স গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাংয়ের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
কিশোর গ্যাংয়ের এ সব গ্রুপের সদস্যরা উত্তরা এলাকার বিভিন্ন সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করছে। তারা মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানা অপকর্মে তারা লিপ্ত।
রাজধানীর শ্যামপুর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সেভেন স্টার, রবিন হুড গ্যাং রয়েছে। র্যাবের অভিযানে ১০ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের কাছ থেকে সুইচ গিয়ার চাকু, ছুরিসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে।
শ্যামপুর এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় একলা চলা পথচারীদের আকষ্মিক ঘিরে ধরে আশপাশের কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোর করে মানিব্যাগ, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন সেট, ল্যাপটপসহ সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে কিশোর অপরাধীরা স্বীকার করে যে, তারা মাদক সেবন, খুচরা মাদকের ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, পাড়া-মহল্লায় মারপিট করে। এমনকি ভূমিদস্যুদের পক্ষে জমিতে গিয়ে পেশীশক্তির মহড়া প্রদর্শনসহ নানা অপকর্মের জড়িত। তারা এলাকায় দলবদ্ধভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করে।
রাজধানীর তেজগাঁও থেকে কিশোর গ্যাংয়ের ১৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, তারা সংঘবদ্ধভাবে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত। তারা টিকটক, লাইকিসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ার ও বিভিন্ন সময় নারীদের সঙ্গে ছবি তুলে পরে নানাভাবে অপকর্মে লিপ্ত হয়। লালবাগ, তেজগাঁও শিল্প এলাকা ও তেজগাঁও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে মারামারি করে থাকে বলে স্বীকার করেছে।
রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বুস্টার গ্যাংয়ের সাত সদস্যকে র্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। এই চক্র এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। হানিফ ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন থামিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি ও চাঁদাবাজি করে। কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করে দিন দিন তাদের অপরাধের পরিধি বাড়িয়েই চলছে বলে এলাকাবাসী মন্তব্য করেন। এভাবে রাজধানীসহ সারাদেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
র্যাব হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া শাখার এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত (পৌনে ৫ বছর) র্যাবের বিভিন্ন ইউনিট ও গোয়েন্দা শাখার টিম গোপন ভিত্তিতে কিশোর গ্যাংয়ের ৫৪২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে মুচলেকা দিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ৩০ জনকে অর্থদ- করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর ও ১২৯ জনকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ ঠেকাতে দেশজুড়ে র্যাবের এ অভিযান অব্যাহত আছে।
পুলিশের একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, গাছের ডাল কাটলে আবার নতুন করে যেমন ডাল গজায়। তেমনি এলাকা ভিত্তিক গডফাদার থাকলে আবার কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। এলাকায় অনেক ক্যাডাররা টাকা খরচ করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের লালন পালন করে। যেমন টেকনাফে ১৩০ টাকা বেতনের কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলাম সিন্ডিকেট ও দালাল গ্রুপ সৃষ্টি করে কয়েক বছরের মধ্যে ৪৬০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। অবশেষে র্যাবের অনুসন্ধানে তার জালিয়াতি বেরিয়ে আসছে।
কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার,মাস্তানদের গ্রেপ্তার না করলে তারা নতুন করে গ্যাং সৃষ্টি করবে। আবার অপরাধ করবে। দেশে এখন অপরাধের ধরন পাল্টে গেছে। কিশোর গ্যাং আগে চুরি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করতো। এখন তারা গডফাদারের হয়ে দলবদ্ধভাবে জায়গা দখল করছে। পুলিশের অপরাধ বিষয় বিভিন্ন প্রশিক্ষণে এ সব অপরাধের ধরন ও করনীয় তুলে ধরা হচ্ছে। টার্গেট কিশোর অপরাধ দমন করা।
বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দেশে কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ঘটছে। কিশোর গ্যাং মূলত উঠতি বয়সের কিশোরদের মধ্যে এলাকাভিত্তিক ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে গ্রুপ তৈরি করছে। পরে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের সঙ্গে মারামারি করছে। গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকাভিত্তিক নিজেদের অবস্থান দেখানোর জন্য বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রভাব বিস্তার করছে, পথচারীদের তারা উত্ত্যক্ত করছে। এমনকি ছোটখাট বিষয় নিয়ে মানুষের ওপর চড়াও হয়ে মারামারি থেকে হত্যা পর্যন্ত করে। নিজের গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার ধরে রাখতে গ্রুপগুলোর সঙ্গে কোন্দলে লিপ্ত থাকে।
র্যাব সদরদপ্তর থেকে জানা গেছে, খোদ রাজধানীর উত্তরা থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন এলাকার আশপাশের জেলাগুলোতে একাধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর আবার নতুন করে গ্যাং তৈরি করে অপরাধ করছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার আছে। তারা প্রভাব বিস্তার করতে কিশোর গ্যাং সৃষ্টি করে।
র্যাবের অনুসন্ধানে উত্তরার কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক নাম বেরিয়ে আসছে। উত্তরায় আধিপত্য বিস্তারকারী বিগ বস গ্রুপ, ডেঞ্জার সেভনে গ্রুপ, কাটার গ্রুপ, হৃদয় গ্রুপ ও নন স্টপ ড্যান্স গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাংয়ের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
কিশোর গ্যাংয়ের এ সব গ্রুপের সদস্যরা উত্তরা এলাকার বিভিন্ন সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করছে। তারা মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানা অপকর্মে তারা লিপ্ত।
রাজধানীর শ্যামপুর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সেভেন স্টার, রবিন হুড গ্যাং রয়েছে। র্যাবের অভিযানে ১০ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের কাছ থেকে সুইচ গিয়ার চাকু, ছুরিসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়েছে।
শ্যামপুর এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় একলা চলা পথচারীদের আকষ্মিক ঘিরে ধরে আশপাশের কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোর করে মানিব্যাগ, নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন সেট, ল্যাপটপসহ সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে কিশোর অপরাধীরা স্বীকার করে যে, তারা মাদক সেবন, খুচরা মাদকের ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, পাড়া-মহল্লায় মারপিট করে। এমনকি ভূমিদস্যুদের পক্ষে জমিতে গিয়ে পেশীশক্তির মহড়া প্রদর্শনসহ নানা অপকর্মের জড়িত। তারা এলাকায় দলবদ্ধভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করে।
রাজধানীর তেজগাঁও থেকে কিশোর গ্যাংয়ের ১৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, তারা সংঘবদ্ধভাবে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত। তারা টিকটক, লাইকিসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ার ও বিভিন্ন সময় নারীদের সঙ্গে ছবি তুলে পরে নানাভাবে অপকর্মে লিপ্ত হয়। লালবাগ, তেজগাঁও শিল্প এলাকা ও তেজগাঁও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে মারামারি করে থাকে বলে স্বীকার করেছে।
রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বুস্টার গ্যাংয়ের সাত সদস্যকে র্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। এই চক্র এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। হানিফ ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন থামিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি ও চাঁদাবাজি করে। কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করে দিন দিন তাদের অপরাধের পরিধি বাড়িয়েই চলছে বলে এলাকাবাসী মন্তব্য করেন। এভাবে রাজধানীসহ সারাদেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
র্যাব হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া শাখার এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত (পৌনে ৫ বছর) র্যাবের বিভিন্ন ইউনিট ও গোয়েন্দা শাখার টিম গোপন ভিত্তিতে কিশোর গ্যাংয়ের ৫৪২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে ১০ জনকে মুচলেকা দিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ৩০ জনকে অর্থদ- করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর ও ১২৯ জনকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ ঠেকাতে দেশজুড়ে র্যাবের এ অভিযান অব্যাহত আছে।
পুলিশের একজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেন, গাছের ডাল কাটলে আবার নতুন করে যেমন ডাল গজায়। তেমনি এলাকা ভিত্তিক গডফাদার থাকলে আবার কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। এলাকায় অনেক ক্যাডাররা টাকা খরচ করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের লালন পালন করে। যেমন টেকনাফে ১৩০ টাকা বেতনের কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলাম সিন্ডিকেট ও দালাল গ্রুপ সৃষ্টি করে কয়েক বছরের মধ্যে ৪৬০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। অবশেষে র্যাবের অনুসন্ধানে তার জালিয়াতি বেরিয়ে আসছে।
কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার,মাস্তানদের গ্রেপ্তার না করলে তারা নতুন করে গ্যাং সৃষ্টি করবে। আবার অপরাধ করবে। দেশে এখন অপরাধের ধরন পাল্টে গেছে। কিশোর গ্যাং আগে চুরি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করতো। এখন তারা গডফাদারের হয়ে দলবদ্ধভাবে জায়গা দখল করছে। পুলিশের অপরাধ বিষয় বিভিন্ন প্রশিক্ষণে এ সব অপরাধের ধরন ও করনীয় তুলে ধরা হচ্ছে। টার্গেট কিশোর অপরাধ দমন করা।