alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

কারাগারে বসেই পরিকল্পনা হয় জামিন জালিয়াতির

চক্রের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি পাঁচ আইনজীবীসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট

আদালত বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবার মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান শফিউল্লাহ খান। সেখানে গিয়ে পরিচয় হয় আরেক মাদক ব্যবসায়ী মোকলেস মোল্লার সঙ্গে। এক সময়ে দুইজনের মধ্যে গড়ে ওঠে সখ্য। সেই সখ্যে কারাগারে বসেই পরিকল্পনা করেন হাইকোর্ট থেকে কীভাবে জামিন জালিয়াতি করা যায়। তাতে সুফলও মেলে। কিন্তু পরবর্তীকালে গোপালগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামলার মূল নথির সঙ্গে হাইকোর্টের জামিনাদেশ মিলিয়ে ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা দেখতে পান। চিঠিও দেওয়া হয় হাইকোর্টকে। এরপরই জামিন বাতিল করে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। সেই মামলার তদন্ত শেষে সিআইডি ভয়াবহ এই জামিন জালিয়াত চক্রের সন্ধান পায়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে পাঁচ আইনজীবীসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার আদালতে চলতি মাসে চার্জশিট দাখিল করা হয়। তবে তদন্তে জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় গোপালগঞ্জ আদালতের চার কর্মচারীকে অব্যাহতি দিতে চার্জশিটে আবেদন জানানো হয়েছে।

সিআইডির তদন্তে জামিন জালিয়াতির ঘটনায় পাঁচ আইনজীবীসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হলো-আইনজীবী মোস্তফা কামাল (সুপ্রিম কোর্ট), এম এ আলম সেলিম ওরফে মো. এন্তেখাফ আলম সেলিম, মো. হাবিবুর রহমান শেখ, মো. সাইফুল ইসলাম পিন্টু (গোপালগঞ্জ জজ কোর্ট) ও ঢাকা জজ কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী মো. কামরুল ইসলাম ছাড়াও শফিউল্লাহ খান, মো. আলী ফকির, দাউদ মোল্লা, ওবায়দুর রহমান মোল্লা, মোকলেস মোল্লা, সিফাত মোল্লা, হীরা বেগম, হাছিনা বেগম, মনির হোসেন। মামলাটির তদন্ত করেন সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. সুলতান হোসেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ভয়াবহ জালিয়াত চক্র চতুরতার কৌশল অবলম্বন করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে সরবরাহকৃত মামলার সত্যায়িত অনুলিপি পুনরায় কম্পিউটারে টাইপ করে ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবার স্থলে ২০ পিস দেখিয়ে হাইকোর্টে জামিন আবেদন দাখিল করে দন্ডবিধির ৪৬৫/৪৬৭/৪২০/১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন। ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির ৩০ হাজার টাকাসহ গোপালগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ২০১৯ সালের ১৪ আগস্ট গ্রেফতার হন শফিউল্লাহ খান (৪২)। ঐ দিনই সদর থানায় মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পাঠানো হয় কারাগারে। সেপ্টেম্বরে জামিন চাইলে গোপালগঞ্জের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নামঞ্জুর হয়। এরপর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হন। আবেদন করেন হাইকোর্টে। সেই জামিন আবেদনে দাখিল করা নথিতে জালিয়াত চক্র ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবার স্থলে ২০ পিস উল্লেখ করেন। ইয়াবার পরিমাণ কম দেখানোয় ঐ বছরের ৬ নভেম্বর বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের দ্বৈত বেঞ্চ জামিন মঞ্জুর করে। এরপর জালিয়াত চক্র দ্রুত জামিনের ওকালতনামা দাখিল করলে মুক্তি পান শফিউল্লাহ খান। বিষয়টি নজরে আনা হলে জালিয়াতির মামলা করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ঐ নির্দেশনা মোতাবেক হাইকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. জাকির হোসেন পাটোয়ারী শাহবাগ থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

যেভাবে জামিন জালিয়াতি হয়

মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির দাখিলকৃত চার্জশিটে বলা হয়েছে,কাশিয়ানি থানার ইয়াবা মামলায় ২০১৮ সাল থেকে কারাগারে আছেন মোকলেস মোল্লা। যিনি জেলে থেকে মামলার আসামিদের জামিন করানোর জন্য চুক্তি করেন। এদিকে পরের বছর ইয়াবা মামলায় কারাগারে যান শফিউল্লাহ খান। দুজনে জেলা কারাগারের একই সেলে ছিলেন। মোকলেস জেলখানায় বসে শফিউল্লাহকে জামিনের ব্যবস্থা করে দেবে বলে জানায়। সেই প্রস্তাবে রাজি হয় শফিউল্লাহ। মোকলেস তার স্ত্রী হীরা বেগমকে জেল গেটে দেখা করে জামিন করানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেন। হীরা বেগম আসামি শফিউল্লাহর স্ত্রী হাছিনা বেগম ও গোপালগঞ্জ জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট এম এ আলম সেলিমের মুহুরি ওবায়দুর রহমান মোল্লার সঙ্গে দেখা করেন। ওবায়দুর খুলনার তেরখাদার কাটেঙ্গা গ্রামের মো. আলী ফকিরের ওপর দায়িত্ব দেন। আলী ফকির তার পূর্ব পরিচিত বিভিন্ন মামলার তদবিরকারক দাউদ মোল্লার সঙ্গে দেখা করেন।

আলী ফকির জানান,২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবার মামলার আসামিকে হাইকোর্ট থেকে জামিন করাতে হবে। সেখানে উপস্থিত কাটেঙ্গা গ্রামের মো. ইউসুফ শেখ বলেন, ওনার ভাগ্নে মো. কামরুল ইসলাম হাইকোর্টের উকিল। তখন দাউদ মোল্লা আইনজীবী কামরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে দাউদ ও আলী ফকির মুহুরি ওবায়দুরের সঙ্গে দেখা করেন। পরে ওবায়দুর গোপালগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নকলখানা হতে মামলার এজাহার, জব্দ তালিকা, ফরওয়ার্ডিং ও জামিন নামঞ্জুরের আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি নেন। ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবার পরিমাণ দেখে দাউদ মোল্লা বলেন, হাইকোর্ট থেকে জামিন করানো যাবে না। পরে কীভাবে জামিন করানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন দাউদ মোল্লা, আলী ফকির, মুহুরি ওবায়দুর, হাছিনা বেগম, হীরা বেগম এবং আইনজীবী এম এ আলম সেলিম। ঐ আলোচনার পরই ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবার স্থলে ‘২০ পিস’ ইয়াবা দেখিয়ে জাল নথি তৈরি করেন মুহুরি। পরে খুলনায় গিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঐ জাল নথি অ্যাডভোকেট কামরুলের কাছে পাঠানো হয়। কামরুল বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোস্তফা কামালের সঙ্গে কথা বলেন। মোস্তফা কামালের গাড়ির চালক মনির হোসেনকে দিয়ে আসামি শফিউল্লাহর পক্ষে এফিডেভিট করে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন দাখিল করা হয়।

গত বছরের ৬ নভেম্বর আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। হাইকোর্টের জামিনাদেশে ২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়। ঐ আদেশনামা গোপালগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৌঁছে। আসামি শফিউল্লাহর পক্ষে মুহুরি ওবায়দুরের তত্ত্বাবধানে আইনজীবী হাবিবুর রহমান হাবিব ও সাইফুল ইসলাম পিন্টু এবং স্থানীয় জামিনদার হিসেবে আসামির স্ত্রী হাছিনা বেগম ও সিফাত মোল্লা একে অপরের যোগসাজশে দ্রুত জামিনের ওকালতনামা দাখিল করেন। এরপর আসামি শফিউল্লাহ কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক। তার বিরুদ্ধে আটটি মাদকের মামলা বিচারাধীন।

ছবি

ড. ইউনূসকে ২৩ মে পর্যন্ত জামিন

ছবি

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিনতাই ও চুরি হওয়া ফোন সেট উদ্ধার

মতলবে ব্যাংকের নৈশপ্রহরী খুনের রহস্য উন্মোচন,মূল আসামী সহ ৩ জন গ্রেফতার

ছবি

লঞ্চে বোরকা পরে ছিনতাই করতেন তারা

বন্ধুর সহায়তায় প্রবাসীর স্ত্রীকে খুন করে ঘরের মালামাল লুট করে আপন ভাই

গাজীপুরে ৩জন ভুয়া ডিবি পুলিশ আটক

ছবি

আইন অমান্য করে ইটভাটা পরিচালনা, সংবাদ প্রকাশের পর অভিযান, ৩ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

দুদকের মামলায় সাবেক এমপি কাদের খানের চার বছরের দন্ড

গাজীপুরে পুত্রকে কুপিয়ে হত্যা, পিতা আটক

ছবি

এবার ভরদুপুরে থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি

সিলেটে ‘ধর্ষক’ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গ্রপ্তার করেছে র‌্যাব

ছবি

ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ

ছবি

শেকলে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ, রিমান্ডে ৪ আসামি

মুন্সীগঞ্জে ডালিম হ.ত্যা মামলার ৬ আসামি জেলহাজতে

ছবি

শিকলে বেঁধে ২৫ দিন ধরে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

ছবি

গেন্ডারিয়ায় ৯৮৩ পিস ভয়াবহ মাদক বুপ্রেনরফিনসহ গ্রেপ্তার কারবারি

ছবি

সিলেটে তরুণীকে আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ অধরা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ অভিযুক্তরা

নারায়ণগঞ্জে প্রেমিকাকে ধর্ষণ ও হত্যা, ৩ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

স্ত্রী-শাশুড়িসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের প্রতারণার মামলা

ছবি

মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিচ্ছেন দুই ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৫ জন

ছবি

দুই বছরের দণ্ড ২৭ বছর পর বাতিল, রায়ের কপি যাচ্ছে সব আদালতে

ছবি

মানিকদির জমি দখল নাজিমের দৌরাত্ম্য থামছেই না, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ছবি

পুলিশের সোর্স হত্যা মামলার পলাতক ২ আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

বড় মনিরের বিরুদ্ধে এবার ঢাকায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

ছবি

রামুর কচ্ছপিয়ায় ছুরিকাঘাতে ছায়া হত্যার ঘটনায় আটক দুই

ছবি

মহেশখালীর সিরিয়াল কিলার আজরাইল গ্রেফতার

ছবি

মুন্সীগঞ্জে পাইপগান-ফেন্সিডিলসহ দু’জন আটক

ছবি

দুদকের মামলায় ২০ কোটি ২২ লাখ টাকার আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক এমপি মান্নান কারাগারে

ছবি

আইএমইআই নম্বর পাল্টে মোবাইল বিক্রি, চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

চুনারুঘাটে স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা, স্বামী আটক

ছবি

সিরাজগঞ্জে ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৫ কোটি টাকা গায়েব, ৩ কর্মকর্তা কারাগারে

শতাধিক শিক্ষা ভবন নির্মাণের নামে বিল ভাগ-বাটোয়ারা

নরসিংদীতে গাড়ী চালককে হত্যার অভিযোগে ৩ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

চালক ‘সেজে’ শিক্ষার্থী অপহরণ ১৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়, গ্রেপ্তার ৭

ছবি

সালাম মুর্শেদীর বাড়ি ছাড়তে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি

ফয়সালকে কুপিয়ে হত্যার পর পার্টি করে গালকাটা রাব্বির গ্যাং

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

কারাগারে বসেই পরিকল্পনা হয় জামিন জালিয়াতির

চক্রের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি পাঁচ আইনজীবীসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট

আদালত বার্তা পরিবেশক

শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবার মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান শফিউল্লাহ খান। সেখানে গিয়ে পরিচয় হয় আরেক মাদক ব্যবসায়ী মোকলেস মোল্লার সঙ্গে। এক সময়ে দুইজনের মধ্যে গড়ে ওঠে সখ্য। সেই সখ্যে কারাগারে বসেই পরিকল্পনা করেন হাইকোর্ট থেকে কীভাবে জামিন জালিয়াতি করা যায়। তাতে সুফলও মেলে। কিন্তু পরবর্তীকালে গোপালগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামলার মূল নথির সঙ্গে হাইকোর্টের জামিনাদেশ মিলিয়ে ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা দেখতে পান। চিঠিও দেওয়া হয় হাইকোর্টকে। এরপরই জামিন বাতিল করে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। সেই মামলার তদন্ত শেষে সিআইডি ভয়াবহ এই জামিন জালিয়াত চক্রের সন্ধান পায়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে পাঁচ আইনজীবীসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার আদালতে চলতি মাসে চার্জশিট দাখিল করা হয়। তবে তদন্তে জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় গোপালগঞ্জ আদালতের চার কর্মচারীকে অব্যাহতি দিতে চার্জশিটে আবেদন জানানো হয়েছে।

সিআইডির তদন্তে জামিন জালিয়াতির ঘটনায় পাঁচ আইনজীবীসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরা হলো-আইনজীবী মোস্তফা কামাল (সুপ্রিম কোর্ট), এম এ আলম সেলিম ওরফে মো. এন্তেখাফ আলম সেলিম, মো. হাবিবুর রহমান শেখ, মো. সাইফুল ইসলাম পিন্টু (গোপালগঞ্জ জজ কোর্ট) ও ঢাকা জজ কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী মো. কামরুল ইসলাম ছাড়াও শফিউল্লাহ খান, মো. আলী ফকির, দাউদ মোল্লা, ওবায়দুর রহমান মোল্লা, মোকলেস মোল্লা, সিফাত মোল্লা, হীরা বেগম, হাছিনা বেগম, মনির হোসেন। মামলাটির তদন্ত করেন সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. সুলতান হোসেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ভয়াবহ জালিয়াত চক্র চতুরতার কৌশল অবলম্বন করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে সরবরাহকৃত মামলার সত্যায়িত অনুলিপি পুনরায় কম্পিউটারে টাইপ করে ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবার স্থলে ২০ পিস দেখিয়ে হাইকোর্টে জামিন আবেদন দাখিল করে দন্ডবিধির ৪৬৫/৪৬৭/৪২০/১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন। ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির ৩০ হাজার টাকাসহ গোপালগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ২০১৯ সালের ১৪ আগস্ট গ্রেফতার হন শফিউল্লাহ খান (৪২)। ঐ দিনই সদর থানায় মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পাঠানো হয় কারাগারে। সেপ্টেম্বরে জামিন চাইলে গোপালগঞ্জের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নামঞ্জুর হয়। এরপর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হন। আবেদন করেন হাইকোর্টে। সেই জামিন আবেদনে দাখিল করা নথিতে জালিয়াত চক্র ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবার স্থলে ২০ পিস উল্লেখ করেন। ইয়াবার পরিমাণ কম দেখানোয় ঐ বছরের ৬ নভেম্বর বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের দ্বৈত বেঞ্চ জামিন মঞ্জুর করে। এরপর জালিয়াত চক্র দ্রুত জামিনের ওকালতনামা দাখিল করলে মুক্তি পান শফিউল্লাহ খান। বিষয়টি নজরে আনা হলে জালিয়াতির মামলা করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ঐ নির্দেশনা মোতাবেক হাইকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. জাকির হোসেন পাটোয়ারী শাহবাগ থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

যেভাবে জামিন জালিয়াতি হয়

মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির দাখিলকৃত চার্জশিটে বলা হয়েছে,কাশিয়ানি থানার ইয়াবা মামলায় ২০১৮ সাল থেকে কারাগারে আছেন মোকলেস মোল্লা। যিনি জেলে থেকে মামলার আসামিদের জামিন করানোর জন্য চুক্তি করেন। এদিকে পরের বছর ইয়াবা মামলায় কারাগারে যান শফিউল্লাহ খান। দুজনে জেলা কারাগারের একই সেলে ছিলেন। মোকলেস জেলখানায় বসে শফিউল্লাহকে জামিনের ব্যবস্থা করে দেবে বলে জানায়। সেই প্রস্তাবে রাজি হয় শফিউল্লাহ। মোকলেস তার স্ত্রী হীরা বেগমকে জেল গেটে দেখা করে জামিন করানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেন। হীরা বেগম আসামি শফিউল্লাহর স্ত্রী হাছিনা বেগম ও গোপালগঞ্জ জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট এম এ আলম সেলিমের মুহুরি ওবায়দুর রহমান মোল্লার সঙ্গে দেখা করেন। ওবায়দুর খুলনার তেরখাদার কাটেঙ্গা গ্রামের মো. আলী ফকিরের ওপর দায়িত্ব দেন। আলী ফকির তার পূর্ব পরিচিত বিভিন্ন মামলার তদবিরকারক দাউদ মোল্লার সঙ্গে দেখা করেন।

আলী ফকির জানান,২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবার মামলার আসামিকে হাইকোর্ট থেকে জামিন করাতে হবে। সেখানে উপস্থিত কাটেঙ্গা গ্রামের মো. ইউসুফ শেখ বলেন, ওনার ভাগ্নে মো. কামরুল ইসলাম হাইকোর্টের উকিল। তখন দাউদ মোল্লা আইনজীবী কামরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে দাউদ ও আলী ফকির মুহুরি ওবায়দুরের সঙ্গে দেখা করেন। পরে ওবায়দুর গোপালগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নকলখানা হতে মামলার এজাহার, জব্দ তালিকা, ফরওয়ার্ডিং ও জামিন নামঞ্জুরের আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি নেন। ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবার পরিমাণ দেখে দাউদ মোল্লা বলেন, হাইকোর্ট থেকে জামিন করানো যাবে না। পরে কীভাবে জামিন করানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন দাউদ মোল্লা, আলী ফকির, মুহুরি ওবায়দুর, হাছিনা বেগম, হীরা বেগম এবং আইনজীবী এম এ আলম সেলিম। ঐ আলোচনার পরই ২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবার স্থলে ‘২০ পিস’ ইয়াবা দেখিয়ে জাল নথি তৈরি করেন মুহুরি। পরে খুলনায় গিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঐ জাল নথি অ্যাডভোকেট কামরুলের কাছে পাঠানো হয়। কামরুল বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোস্তফা কামালের সঙ্গে কথা বলেন। মোস্তফা কামালের গাড়ির চালক মনির হোসেনকে দিয়ে আসামি শফিউল্লাহর পক্ষে এফিডেভিট করে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন দাখিল করা হয়।

গত বছরের ৬ নভেম্বর আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। হাইকোর্টের জামিনাদেশে ২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়। ঐ আদেশনামা গোপালগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৌঁছে। আসামি শফিউল্লাহর পক্ষে মুহুরি ওবায়দুরের তত্ত্বাবধানে আইনজীবী হাবিবুর রহমান হাবিব ও সাইফুল ইসলাম পিন্টু এবং স্থানীয় জামিনদার হিসেবে আসামির স্ত্রী হাছিনা বেগম ও সিফাত মোল্লা একে অপরের যোগসাজশে দ্রুত জামিনের ওকালতনামা দাখিল করেন। এরপর আসামি শফিউল্লাহ কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক। তার বিরুদ্ধে আটটি মাদকের মামলা বিচারাধীন।

back to top