দিবস হয়তো নিছকই প্রতীক। তবে সেই প্রতীকই নানা তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে আমাদের বারবার স্মরণ করায় সে বিশেষ দিনটি। আজ বসন্ত, আজ ভালোবাসার দিন। রঙে রঙিন হয়ে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেয়ার দিনে বাঙালি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও উদযাপন করছে। কোকিলের কুহুতানে জাগা মুখরিত বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে আজ পহেলা ফাগুনের দিনে ছিল ভালোবাসার জয়গান। হৃদয় থেকে হৃদয়ের কথাগুলো পেয়েছে ভাষা। রোববার সূর্যোদয়ের পর থেকে নাচে-গানে, কথনে-পংক্তিতে বসন্ত বন্দনার পাশাপাশি রাজধানীবাসী মেতে উঠে ভালোবাসার উদযাপনে।
বসন্ত ও ভালোবাসা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায়। টিএসসি থেকে সোহরাওয়ার্দী, হলুদ-লাল পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরিহিত তারুণ্যের উন্মাদনার ঢল নামে। তরুণ-তরুণী, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার উচ্ছ্বাসের কাছে হার মেনেছে মহামারি করোনা। পহেলা ফাগুনের দিনে ভালোবাসা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে একই রকম কাপড় পরে টকটকে লাল গোলাপ হাতে নিয়ে ক্যাম্পাসের সবত্র হেঁটে বেড়ায় প্রেমিক যুগলেরা।
প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলা হাজারো বাঙালির নাচে-গানে মুখরিত থাকতো। কিন্তু করোনার কারণে অনুষ্ঠান করার অনুমতি পায়নি বসন্ত উদযাপন কমিটি। ফলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বসন্তবরণ উৎসব। ক্যাম্পাসও প্রায় শিক্ষার্থীশূন্য। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণ, মল চত্বর, বটতলা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ভিসি চত্বর, ফুলার রোড, কার্জন হল ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল তারুণ্যের উপচেপড়া ভিড়।
করোনার কারণে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের তুলনায় দূর থেকে আসা লোকের উপস্থিত ছিল বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকার মানুষ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও দেখা গেছে দলবেধে আড্ডা দিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো।
যে বসন্তে ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে রমনা পার্ক; সেখানে এবার উন্নয়ন কর্মকা-ের কারণে ধুলোর রাজত্ব। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। সেই ধুলো পার্কে আসা কপোত-কপোতিদের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। তবে কোনো কিছুই ভালোবাসার উদযাপনে বাধা হতে পারেনি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠান শেষে কথা হয় নরসিংদী থেকে আসা এক দম্পতীর সঙ্গে। তারা বলেন, প্রতিবছর হয়তো হয়ে উঠেনা নানান সীমাবদ্ধতায়। তবে চেষ্টা করি প্রিয় মানুষটার সঙ্গে বিশেষ দিনটি যাপন করতে। এর অনুভূতি খুবই প্রীতিকর। প্রতিদিন যাপন করলে একসময় জীবন আটপৌরে হয়ে যায়। আমরা সবসময় এই আটপৌরে অবস্থা পছন্দ করিনা। তাই এই বিশেষ দিনগুলো খুব প্রয়োজন। বিশেষ কিছু করা, সারপ্রাইজ দেয়া। এতে মানসিক শান্তি আছে।
বিয়ের পর কি আসলেই ভালোবাসা কমে যায় এমন প্রশ্নে তাদের উত্তর- উভয়ের প্রতি সহনশীল আর ভালোবাসা-মায়া থাকলে ভালোবাসা সবসময়ই থাকে। তবে হ্যা, ভালোবাসা রূপান্তরশীল। শক্তির যেমন কোনো ক্ষয় নেই, কেবল এক শক্তি অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয়; ভালোবাসাও এরকম। তাই রূপান্তরশীলতাকে শ্রদ্ধা করতে হবে এবং জীবনটাকে ওই জায়গায় থেকেই রাঙাতে হবে।
শাহবাগের ফুলের দোকানগুলোতে এখন দারুণ ব্যস্ততা। গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা থেকে শুরু করে দেশি বিদেশি নানা জাতের ফুলের ভীষণ চাহিদা। গত কয়েক বছর ধরেই এসব দিনে নারীদের পছন্দের আভরণ হয়ে উঠেছে ফুলের মুকুট, সঙ্গে চিরায়ত ঢঙে খোঁপায় রঙিন ফুলের সাজ তো আছেই। শাহবাগে ফুলের দোকানে ফুল কিনতে এসেছে প্রেমিক যুগল নেহা ও রাকিব। তাদের মতে, স্পেশাল কোনো দিনে ভালোবাসার মানুষকে ফুল দিলে ভালোবাসার গভীরতা আরও বেড়ে যায়। তাই ফুল কিনতে আসছি। আর ভালোবাসার কোনো দিনক্ষণ নেই। প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ যেন ভালোবাসার। তবে ভালোবাসা দিবস মানে একটু বাড়তি কিছু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাসরিন আক্তারের কাছে ভালোবাসা দিবসের মাহাত্ম্য বিশাল। তিনি বলেন, ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে ম্যাচিং পাঞ্জাবি কিংবা শাড়ি পরে ঘুরতে বের হওয়ার অনুভূতি হয়তো হাতে-কলমে লিখে প্রকাশ করতে পারবে না কেউ। আমাদের দৈনন্দিন একঘেয়ে জীবন থেকে একটু বেরিয়ে এসে ভালোবাসাকে নতুনত্ব দিতে সাহায্য করতে পারে এই ভালোবাসা দিবস। তবে আমার মতে ভালোবাসার মানুষ যেদিন কাছে থাকবে সেদিনই ভালোবাসা দিবস। তাই সব যুগলের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যতটুকু সময় বেঁচে আছেন সময় নষ্ট না করে আপনার ভালোবাসাকে ভালোবাসুন।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মাসুদা পারভীন। বিয়ে করেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েসকে। ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসে ঘুরতে এসেছেন টিএসসিতে। তার কাছে প্রশ্ন ছিল, ভালোবাসা দিবসে প্রেমিকের সঙ্গে ঘোরাঘুরির অনুভূতি কেমন? মাসুদা বলেন, ভালোবাসা দিবসে প্রেমিকের সঙ্গে ঘোরাঘুরির অনুভূতি অবশ্যই স্বর্গীয়। ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে শুধু ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, যেকোনো দিনই ঘুরতে ভালো লাগে। তবে, এই দিনটায় ভালোবাসার মানুষটাকে স্পেশাল ফিল করানোর জন্য শাড়ি পরে বের হই তাকে নিয়ে, দিনটাকে বিশেষ করে তুলি।
ভালোবাসা দিবসে একটুখানি সময় প্রেমিকের সঙ্গে থাকতে সুদূর পটুয়াখালী থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছেন ফাতেমা বেগম। তার কাছে ভালোবাসা এমন অনুভূতি, যেই অনুভূতির জন্য সবসময় একটা মানুষের জন্য চিন্তা কাজ করে, তাকে খুশি ও সফল দেখতে ইচ্ছে হয়। তিনি বলেন, ভালোবাসার অনুভূতি আসলে সবসময় একই রকম। ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়া সবসময়ই আনন্দের, প্রশান্তির। সেটা ভালোবাসা দিবস হোক কিংবা অন্য কোনো দিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তাজমিরা খাতুন। বিয়ের পর ঢাকা ছেড়েছেন। তবে, যেখানেই থাকেন, বসন্ত এলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে ভুলেন না। বসন্তের প্রেমে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী রোববারও টিএসসি আসেন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। তিনি বলেন, আগে ফাল্গুন মানেই ছিল অনেক উৎসব আর আনন্দের ব্যাপার। আগে ফাল্গুনের জন্য অপেক্ষা করতাম। কি পরব, কিভাবে সাজব, কিভাবে দিনটা কাটাব, সেটার প্রস্তুতি নিতাম। বন্ধুরা সেজেগুজে ক্যাম্পাসে যেতাম। ক্লাস থাকতো সে সেময়, তাই শাড়ি পরে ক্লাস করতাম। ক্লাস শেষ করেই ঘুরতে বের হতাম। স্যার-ম্যামরাও শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে আসতেন। তাদের সঙ্গে ছবি তুলতাম। বটতলা আর চারুকলায় যাওয়াটা একরকম বাধ্যতামূলক করে ফেলেছিলাম। তবে করোনার কারণে এবার সে আনন্দে অনেকখানি ভাটা পড়েছে। খুব দ্রুত যেন পৃথিবীটা সুস্থ হয়ে যায়. আজকের দিনে সেই কামনাই থাকলো।
বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার তাপসী। তার আক্ষেপ, করোনার কারণে এবার সবকিছুতে একটু ভিন্নতা। তিনি বলেন, ফাল্গুন কিংবা বসন্ত, এটা বাঙালির জন্য ঐতিহ্য তো বটেই। বটতলা কি চারুকলায় বসন্তের আমেজ, হলুদ কিংবা টিয়া কালারের সাজে বন্ধুদের সঙ্গে পহেলা ফাল্গুন বরাবরই আনন্দের। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এবার ক্যাম্পাসে কোনো প্রোগ্রামই হচ্ছে না। তাই একটু খারাপ লাগছে। আশা করছি শিগগিরই আনন্দের দিনগুলো ফিরে আসবে। শীতের ঝরা শেষ গাছের নতুন কুঁড়ির মতো আমাদের জীবন আরো রঙিন হবে ফাল্গুনে, সেই প্রত্যাশা রাখি।
ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাবরিনা আলম। তার মন ভালো করার কারণ এই ফাল্গুন। তিনিও ক্যাম্পাসে এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। সাবরিনা বলেন, আমার কাছে ফাল্গুন বিষয়টা সুন্দর। ফাল্গুন মাসটা ভালোর মাস, ভাষার মাস, ভালোবাসার মাস। তাই ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গেই উদযাপনের চেষ্টা করি দিনটা। এবার যদিও দিনটা কিছুটা অন্যরকম কিন্তু উৎসব তো উদযাপনের জন্যই, তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধু প্রিয়জনের সাথে হাসি গল্পে গানে খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে বসন্তকে বরণ করে নিচ্ছি।
করোনাকালে সম্পর্ক শব্দটাই যেন মুদ্রার দুই পাশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারস্পরিক বোঝাপড়া জরুরি। গাছ বড় করতে হলে প্রতিদিন পানি দিতে হয়, সার দিতে হয়, পরিচর্যা করতে হয়; সম্পর্কটাও তেমনি। কি করলে ভালোবাসার মানুষটাকে আরেকটু ভালো রাখা যায়, সেটা ভাবতে হবে। ভালোবাসার মানুষটাকে ভালো রাখলে সেও আপনাকে ভালো রাখবে। ভালোবাসাকে ভালোবাসলেই জয় করা যায় টানাপোড়েনের শঙ্কাটাকে। সুখী মানুষেরা তাই করে এসেছেন চিরকাল।
রোববার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
দিবস হয়তো নিছকই প্রতীক। তবে সেই প্রতীকই নানা তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে আমাদের বারবার স্মরণ করায় সে বিশেষ দিনটি। আজ বসন্ত, আজ ভালোবাসার দিন। রঙে রঙিন হয়ে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেয়ার দিনে বাঙালি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও উদযাপন করছে। কোকিলের কুহুতানে জাগা মুখরিত বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে আজ পহেলা ফাগুনের দিনে ছিল ভালোবাসার জয়গান। হৃদয় থেকে হৃদয়ের কথাগুলো পেয়েছে ভাষা। রোববার সূর্যোদয়ের পর থেকে নাচে-গানে, কথনে-পংক্তিতে বসন্ত বন্দনার পাশাপাশি রাজধানীবাসী মেতে উঠে ভালোবাসার উদযাপনে।
বসন্ত ও ভালোবাসা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায়। টিএসসি থেকে সোহরাওয়ার্দী, হলুদ-লাল পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরিহিত তারুণ্যের উন্মাদনার ঢল নামে। তরুণ-তরুণী, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার উচ্ছ্বাসের কাছে হার মেনেছে মহামারি করোনা। পহেলা ফাগুনের দিনে ভালোবাসা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে একই রকম কাপড় পরে টকটকে লাল গোলাপ হাতে নিয়ে ক্যাম্পাসের সবত্র হেঁটে বেড়ায় প্রেমিক যুগলেরা।
প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলা হাজারো বাঙালির নাচে-গানে মুখরিত থাকতো। কিন্তু করোনার কারণে অনুষ্ঠান করার অনুমতি পায়নি বসন্ত উদযাপন কমিটি। ফলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বসন্তবরণ উৎসব। ক্যাম্পাসও প্রায় শিক্ষার্থীশূন্য। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণ, মল চত্বর, বটতলা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ভিসি চত্বর, ফুলার রোড, কার্জন হল ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল তারুণ্যের উপচেপড়া ভিড়।
করোনার কারণে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের তুলনায় দূর থেকে আসা লোকের উপস্থিত ছিল বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকার মানুষ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও দেখা গেছে দলবেধে আড্ডা দিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো।
যে বসন্তে ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে রমনা পার্ক; সেখানে এবার উন্নয়ন কর্মকা-ের কারণে ধুলোর রাজত্ব। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। সেই ধুলো পার্কে আসা কপোত-কপোতিদের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। তবে কোনো কিছুই ভালোবাসার উদযাপনে বাধা হতে পারেনি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠান শেষে কথা হয় নরসিংদী থেকে আসা এক দম্পতীর সঙ্গে। তারা বলেন, প্রতিবছর হয়তো হয়ে উঠেনা নানান সীমাবদ্ধতায়। তবে চেষ্টা করি প্রিয় মানুষটার সঙ্গে বিশেষ দিনটি যাপন করতে। এর অনুভূতি খুবই প্রীতিকর। প্রতিদিন যাপন করলে একসময় জীবন আটপৌরে হয়ে যায়। আমরা সবসময় এই আটপৌরে অবস্থা পছন্দ করিনা। তাই এই বিশেষ দিনগুলো খুব প্রয়োজন। বিশেষ কিছু করা, সারপ্রাইজ দেয়া। এতে মানসিক শান্তি আছে।
বিয়ের পর কি আসলেই ভালোবাসা কমে যায় এমন প্রশ্নে তাদের উত্তর- উভয়ের প্রতি সহনশীল আর ভালোবাসা-মায়া থাকলে ভালোবাসা সবসময়ই থাকে। তবে হ্যা, ভালোবাসা রূপান্তরশীল। শক্তির যেমন কোনো ক্ষয় নেই, কেবল এক শক্তি অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয়; ভালোবাসাও এরকম। তাই রূপান্তরশীলতাকে শ্রদ্ধা করতে হবে এবং জীবনটাকে ওই জায়গায় থেকেই রাঙাতে হবে।
শাহবাগের ফুলের দোকানগুলোতে এখন দারুণ ব্যস্ততা। গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা থেকে শুরু করে দেশি বিদেশি নানা জাতের ফুলের ভীষণ চাহিদা। গত কয়েক বছর ধরেই এসব দিনে নারীদের পছন্দের আভরণ হয়ে উঠেছে ফুলের মুকুট, সঙ্গে চিরায়ত ঢঙে খোঁপায় রঙিন ফুলের সাজ তো আছেই। শাহবাগে ফুলের দোকানে ফুল কিনতে এসেছে প্রেমিক যুগল নেহা ও রাকিব। তাদের মতে, স্পেশাল কোনো দিনে ভালোবাসার মানুষকে ফুল দিলে ভালোবাসার গভীরতা আরও বেড়ে যায়। তাই ফুল কিনতে আসছি। আর ভালোবাসার কোনো দিনক্ষণ নেই। প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ যেন ভালোবাসার। তবে ভালোবাসা দিবস মানে একটু বাড়তি কিছু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাসরিন আক্তারের কাছে ভালোবাসা দিবসের মাহাত্ম্য বিশাল। তিনি বলেন, ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে ম্যাচিং পাঞ্জাবি কিংবা শাড়ি পরে ঘুরতে বের হওয়ার অনুভূতি হয়তো হাতে-কলমে লিখে প্রকাশ করতে পারবে না কেউ। আমাদের দৈনন্দিন একঘেয়ে জীবন থেকে একটু বেরিয়ে এসে ভালোবাসাকে নতুনত্ব দিতে সাহায্য করতে পারে এই ভালোবাসা দিবস। তবে আমার মতে ভালোবাসার মানুষ যেদিন কাছে থাকবে সেদিনই ভালোবাসা দিবস। তাই সব যুগলের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যতটুকু সময় বেঁচে আছেন সময় নষ্ট না করে আপনার ভালোবাসাকে ভালোবাসুন।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মাসুদা পারভীন। বিয়ে করেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েসকে। ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসে ঘুরতে এসেছেন টিএসসিতে। তার কাছে প্রশ্ন ছিল, ভালোবাসা দিবসে প্রেমিকের সঙ্গে ঘোরাঘুরির অনুভূতি কেমন? মাসুদা বলেন, ভালোবাসা দিবসে প্রেমিকের সঙ্গে ঘোরাঘুরির অনুভূতি অবশ্যই স্বর্গীয়। ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে শুধু ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, যেকোনো দিনই ঘুরতে ভালো লাগে। তবে, এই দিনটায় ভালোবাসার মানুষটাকে স্পেশাল ফিল করানোর জন্য শাড়ি পরে বের হই তাকে নিয়ে, দিনটাকে বিশেষ করে তুলি।
ভালোবাসা দিবসে একটুখানি সময় প্রেমিকের সঙ্গে থাকতে সুদূর পটুয়াখালী থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছেন ফাতেমা বেগম। তার কাছে ভালোবাসা এমন অনুভূতি, যেই অনুভূতির জন্য সবসময় একটা মানুষের জন্য চিন্তা কাজ করে, তাকে খুশি ও সফল দেখতে ইচ্ছে হয়। তিনি বলেন, ভালোবাসার অনুভূতি আসলে সবসময় একই রকম। ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়া সবসময়ই আনন্দের, প্রশান্তির। সেটা ভালোবাসা দিবস হোক কিংবা অন্য কোনো দিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তাজমিরা খাতুন। বিয়ের পর ঢাকা ছেড়েছেন। তবে, যেখানেই থাকেন, বসন্ত এলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে ভুলেন না। বসন্তের প্রেমে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী রোববারও টিএসসি আসেন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। তিনি বলেন, আগে ফাল্গুন মানেই ছিল অনেক উৎসব আর আনন্দের ব্যাপার। আগে ফাল্গুনের জন্য অপেক্ষা করতাম। কি পরব, কিভাবে সাজব, কিভাবে দিনটা কাটাব, সেটার প্রস্তুতি নিতাম। বন্ধুরা সেজেগুজে ক্যাম্পাসে যেতাম। ক্লাস থাকতো সে সেময়, তাই শাড়ি পরে ক্লাস করতাম। ক্লাস শেষ করেই ঘুরতে বের হতাম। স্যার-ম্যামরাও শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে আসতেন। তাদের সঙ্গে ছবি তুলতাম। বটতলা আর চারুকলায় যাওয়াটা একরকম বাধ্যতামূলক করে ফেলেছিলাম। তবে করোনার কারণে এবার সে আনন্দে অনেকখানি ভাটা পড়েছে। খুব দ্রুত যেন পৃথিবীটা সুস্থ হয়ে যায়. আজকের দিনে সেই কামনাই থাকলো।
বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার তাপসী। তার আক্ষেপ, করোনার কারণে এবার সবকিছুতে একটু ভিন্নতা। তিনি বলেন, ফাল্গুন কিংবা বসন্ত, এটা বাঙালির জন্য ঐতিহ্য তো বটেই। বটতলা কি চারুকলায় বসন্তের আমেজ, হলুদ কিংবা টিয়া কালারের সাজে বন্ধুদের সঙ্গে পহেলা ফাল্গুন বরাবরই আনন্দের। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এবার ক্যাম্পাসে কোনো প্রোগ্রামই হচ্ছে না। তাই একটু খারাপ লাগছে। আশা করছি শিগগিরই আনন্দের দিনগুলো ফিরে আসবে। শীতের ঝরা শেষ গাছের নতুন কুঁড়ির মতো আমাদের জীবন আরো রঙিন হবে ফাল্গুনে, সেই প্রত্যাশা রাখি।
ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাবরিনা আলম। তার মন ভালো করার কারণ এই ফাল্গুন। তিনিও ক্যাম্পাসে এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। সাবরিনা বলেন, আমার কাছে ফাল্গুন বিষয়টা সুন্দর। ফাল্গুন মাসটা ভালোর মাস, ভাষার মাস, ভালোবাসার মাস। তাই ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গেই উদযাপনের চেষ্টা করি দিনটা। এবার যদিও দিনটা কিছুটা অন্যরকম কিন্তু উৎসব তো উদযাপনের জন্যই, তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধু প্রিয়জনের সাথে হাসি গল্পে গানে খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে বসন্তকে বরণ করে নিচ্ছি।
করোনাকালে সম্পর্ক শব্দটাই যেন মুদ্রার দুই পাশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারস্পরিক বোঝাপড়া জরুরি। গাছ বড় করতে হলে প্রতিদিন পানি দিতে হয়, সার দিতে হয়, পরিচর্যা করতে হয়; সম্পর্কটাও তেমনি। কি করলে ভালোবাসার মানুষটাকে আরেকটু ভালো রাখা যায়, সেটা ভাবতে হবে। ভালোবাসার মানুষটাকে ভালো রাখলে সেও আপনাকে ভালো রাখবে। ভালোবাসাকে ভালোবাসলেই জয় করা যায় টানাপোড়েনের শঙ্কাটাকে। সুখী মানুষেরা তাই করে এসেছেন চিরকাল।