রাকিব উদ্দিন
চাকরি জীবনের ১৯ বছরে মাত্র একবার পদোন্নতি পেয়েছেন ২৬’শ বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের পৌঁনে ৮শ’ সদস্য। এই ব্যাচের ক্যাডার সদস্যরা ২০০৬ সালের এপ্রিলে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতায় যোগ দেন। পরে তারা ২০১৩-২০১৪ সালে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর পৌঁনে ৮শ’র মতো শিক্ষা ক্যাডার সদস্য আর পদোন্নতি পাননি বলে ক্যাডার সংগঠনগুলোর দাবি
কয়েকজন শিক্ষা ক্যাডার সদস্য জানিয়েছেন, ২৬’শ বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ব্যাচের মাত্র দশজন সদস্য কয়েক বছর আগে সহকারি থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চাকরিতে দশ বছর পূর্ণ হলেও বাকি ৭৭৭ জনের পদোন্নতি ‘ঝুঁলিয়ে’ রেখেছে শিক্ষা প্রশাসন।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পদোন্নতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তারা শিক্ষকদের পদোন্নতির চেষ্টা করছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে জানা গেছে, বিসিএস ২৪তম ব্যাচ থেকে ২৯তম ব্যাচ এবং ৩০তম ব্যাচ থেকে ৩৬তম ব্যাচ পর্যন্ত প্রায় সবাই যথাক্রমে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক এবং প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির ‘যোগ্যতা অর্জন ও শর্ত’ পূরণ করেছেন। এসব ব্যাচের প্রায় সাত হাজার শিক্ষক এখন পদোন্নতির ‘যোগ্যতা অর্জন ও শর্ত’ পূরণ করেছে।
জানতে চাইলে ২৬’শ বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার ফোরামের সভাপতি রাকিবুল হাসান সংবাদকে বলেছেন, ‘চাকরির ১৯ বছরে আমরা এখনও সহকারী অধ্যাপক। পদোন্নতি হচ্ছে না। আমরা এই বৈষম্যের অবসান চাই।’
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে দেয়া এক চিঠিতে ‘বঞ্চিত’ শিক্ষকরা বলেন, ‘তারা চাকরির ১৯ বছরে পদার্পন করেও শুধু একবার পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। ক্যাডার বা নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে দেশে আর কোনো দ্বিতীয় কর্মচারী নেই যে তারা চাকরির ১৯ বছরে মাত্র একটি পদোন্নতি পেয়েছেন।’
সমসাময়িক যোগদান করা নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারাও বর্তমানে চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন উল্লেখ করে ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘ক্যাডার হিসেবে ২৪’শ বিসিএস ব্যাচের কিছু কর্মকর্তা এখনও সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত থাকলেও তারা ১০ বছর পূর্তিতে টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পাওয়ায় ৫ম গ্রেড কর্মকর্তার আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।’
আবেদনে বলা হয়, ২৫’শ বিসিএস ব্যাচের পিএসসির সার্কুলার আগে হওয়ায় তারা ২৬শ’ ব্যাচের পাঁচমাস পরে চাকরিতে যোগদান করেও জেষ্ঠ্যতার নীতিমালায় সিনিয়র হওয়ায় ইতোমধ্যে তাদের বেশির ভাগ সদস্যই ৫ম গ্রেডে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
কিন্তু ২৬’শ বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাাডার কর্মকর্তারা সবচেয়ে বেশি ‘বঞ্চিত, অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার’ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
২৪’শ ব্যাচেও ‘বঞ্চনার ক্ষোভ’:
বিসিএস ২৪’শ ক্যাডার ব্যাচের অন্তত ৭৫০ জন সদস্য আট থেকে দশ বছর ধরে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। একই ব্যাচের এক হাজার ৩৫০ জন সদস্য বিভিন্ন সময়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।
কিন্তু ‘পদ স্বল্পতার অজুহাত’ দেখিয়ে সাড়ে ছয়শ’ শিক্ষকের পদোন্নতি ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে বলে পদোন্নতিপ্রত্যাশী কয়েকজন ক্যডার সদস্য জানিয়েছেন। তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে শুধু অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হয়েছে; নিচের স্তরগুলোতে কোনো পদোন্নতি হয়নি।
জানতে চাইলে ২৪’শ বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ফোরামের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিখন সংবাদকে বলেছেন, তারা ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি চান। ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি হলে এই ‘সঙ্কটের’ অবসান ঘটবে।
দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত থাকায় ক্যাডার শিক্ষকদের মধ্যে ‘হতাশা’ বিরাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, পদোন্নতি দাবি করতে করতে তারা ‘ক্লান্ত’।
শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের আলাদা আলাদা ফোরাম রয়েছে। সবগুলো ফোরাম ও সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ওই সমিতিও কার্যত ‘নিস্কিয়’ হয়ে পড়ে। কারণ সরকার পতনের পর থেকে সমিতির সভাপতি ও মহাসচিব সাংগঠনিক দায়িত্বপালনে ‘অপারগতা’ প্রকাশ করেন। বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের ঢাকার বাইরে বদলি করে শিক্ষা প্রশাসন।
এ বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক মহাসচিব শওকত মোল্ল্যা সংবাদকে বলেছেন, ‘২৪ ব্যাচ থেকে ২৯তম ব্যাচ পর্যন্ত-সবাই ইতোমধ্যে সহকারী থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে এবং ৩০ ব্যাচ থেকে ৩৬তম ব্যাচ পর্যন্ত- সবাই (প্রভাষক থেকে) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। কিন্তু পদোন্নতি হচ্ছে না।’
তিনি পদোন্নতির ‘ব্যাকলক’ বা অচলাবস্থা কাটাতে প্রশাসন ক্যাডারের ন্যায় ‘সুপার নিউমারারি’ (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ সৃষ্টির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আপাতত সুপার নিউমারারি পদোন্নতি দিয়ে এই ব্যাকলক কাটিয়ে উঠা যায়। এরপর নিয়মিত পদোন্নতি দিলেও চলবে।’
শওকত মোল্ল্যা জানান, ইতোমধ্যে যেসব শিক্ষক পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন, তারা আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। এ কারণে বঞ্চিত শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের পদোন্নতি দেয়া হলেও সরকারের বাড়তি কোনো অর্থের প্রয়োজন হবে না।
শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রশাসন ‘ভেঙে ভেঙে’ বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতিই দিয়ে আসছেন। এতে অনেক ক্ষেত্রেই জুনিয়র কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন; এর বিপরীতে সিনিয়র সদস্যরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ‘অসন্তোষ’ বিরাজ করছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে ৯২২ জনকে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু নীচের পদগুলোতে আর পদোন্নতি হয়নি।
মাউশি থেকে জানা গেছে, সদস্য সংখ্যার নিরিখে বিসিএস স্বাস্থ্যা ক্যাডারের পরই বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের অবস্থান। এই ক্যাডারে মোট ১৫ হাজার ৯৫০টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন প্রায় ১৪ হাজারের মতো শিক্ষক।
শিক্ষা ক্যাডারের এসব সদস্য সারাদেশের তিন শতাধিক সরকারি কলেজ এবং মাউশি অধিদপ্তর, ১১টি শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটি কলেজ), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে কর্মরত রয়েছেন।
রাকিব উদ্দিন
রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
চাকরি জীবনের ১৯ বছরে মাত্র একবার পদোন্নতি পেয়েছেন ২৬’শ বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের পৌঁনে ৮শ’ সদস্য। এই ব্যাচের ক্যাডার সদস্যরা ২০০৬ সালের এপ্রিলে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতায় যোগ দেন। পরে তারা ২০১৩-২০১৪ সালে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর পৌঁনে ৮শ’র মতো শিক্ষা ক্যাডার সদস্য আর পদোন্নতি পাননি বলে ক্যাডার সংগঠনগুলোর দাবি
কয়েকজন শিক্ষা ক্যাডার সদস্য জানিয়েছেন, ২৬’শ বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ব্যাচের মাত্র দশজন সদস্য কয়েক বছর আগে সহকারি থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চাকরিতে দশ বছর পূর্ণ হলেও বাকি ৭৭৭ জনের পদোন্নতি ‘ঝুঁলিয়ে’ রেখেছে শিক্ষা প্রশাসন।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পদোন্নতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তারা শিক্ষকদের পদোন্নতির চেষ্টা করছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে জানা গেছে, বিসিএস ২৪তম ব্যাচ থেকে ২৯তম ব্যাচ এবং ৩০তম ব্যাচ থেকে ৩৬তম ব্যাচ পর্যন্ত প্রায় সবাই যথাক্রমে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক এবং প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির ‘যোগ্যতা অর্জন ও শর্ত’ পূরণ করেছেন। এসব ব্যাচের প্রায় সাত হাজার শিক্ষক এখন পদোন্নতির ‘যোগ্যতা অর্জন ও শর্ত’ পূরণ করেছে।
জানতে চাইলে ২৬’শ বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার ফোরামের সভাপতি রাকিবুল হাসান সংবাদকে বলেছেন, ‘চাকরির ১৯ বছরে আমরা এখনও সহকারী অধ্যাপক। পদোন্নতি হচ্ছে না। আমরা এই বৈষম্যের অবসান চাই।’
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে দেয়া এক চিঠিতে ‘বঞ্চিত’ শিক্ষকরা বলেন, ‘তারা চাকরির ১৯ বছরে পদার্পন করেও শুধু একবার পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। ক্যাডার বা নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে দেশে আর কোনো দ্বিতীয় কর্মচারী নেই যে তারা চাকরির ১৯ বছরে মাত্র একটি পদোন্নতি পেয়েছেন।’
সমসাময়িক যোগদান করা নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারাও বর্তমানে চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন উল্লেখ করে ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘ক্যাডার হিসেবে ২৪’শ বিসিএস ব্যাচের কিছু কর্মকর্তা এখনও সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত থাকলেও তারা ১০ বছর পূর্তিতে টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পাওয়ায় ৫ম গ্রেড কর্মকর্তার আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।’
আবেদনে বলা হয়, ২৫’শ বিসিএস ব্যাচের পিএসসির সার্কুলার আগে হওয়ায় তারা ২৬শ’ ব্যাচের পাঁচমাস পরে চাকরিতে যোগদান করেও জেষ্ঠ্যতার নীতিমালায় সিনিয়র হওয়ায় ইতোমধ্যে তাদের বেশির ভাগ সদস্যই ৫ম গ্রেডে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
কিন্তু ২৬’শ বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাাডার কর্মকর্তারা সবচেয়ে বেশি ‘বঞ্চিত, অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার’ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
২৪’শ ব্যাচেও ‘বঞ্চনার ক্ষোভ’:
বিসিএস ২৪’শ ক্যাডার ব্যাচের অন্তত ৭৫০ জন সদস্য আট থেকে দশ বছর ধরে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। একই ব্যাচের এক হাজার ৩৫০ জন সদস্য বিভিন্ন সময়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন।
কিন্তু ‘পদ স্বল্পতার অজুহাত’ দেখিয়ে সাড়ে ছয়শ’ শিক্ষকের পদোন্নতি ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে বলে পদোন্নতিপ্রত্যাশী কয়েকজন ক্যডার সদস্য জানিয়েছেন। তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে শুধু অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হয়েছে; নিচের স্তরগুলোতে কোনো পদোন্নতি হয়নি।
জানতে চাইলে ২৪’শ বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ফোরামের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিখন সংবাদকে বলেছেন, তারা ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি চান। ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি হলে এই ‘সঙ্কটের’ অবসান ঘটবে।
দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত থাকায় ক্যাডার শিক্ষকদের মধ্যে ‘হতাশা’ বিরাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, পদোন্নতি দাবি করতে করতে তারা ‘ক্লান্ত’।
শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের আলাদা আলাদা ফোরাম রয়েছে। সবগুলো ফোরাম ও সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ওই সমিতিও কার্যত ‘নিস্কিয়’ হয়ে পড়ে। কারণ সরকার পতনের পর থেকে সমিতির সভাপতি ও মহাসচিব সাংগঠনিক দায়িত্বপালনে ‘অপারগতা’ প্রকাশ করেন। বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের ঢাকার বাইরে বদলি করে শিক্ষা প্রশাসন।
এ বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক মহাসচিব শওকত মোল্ল্যা সংবাদকে বলেছেন, ‘২৪ ব্যাচ থেকে ২৯তম ব্যাচ পর্যন্ত-সবাই ইতোমধ্যে সহকারী থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে এবং ৩০ ব্যাচ থেকে ৩৬তম ব্যাচ পর্যন্ত- সবাই (প্রভাষক থেকে) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। কিন্তু পদোন্নতি হচ্ছে না।’
তিনি পদোন্নতির ‘ব্যাকলক’ বা অচলাবস্থা কাটাতে প্রশাসন ক্যাডারের ন্যায় ‘সুপার নিউমারারি’ (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ সৃষ্টির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আপাতত সুপার নিউমারারি পদোন্নতি দিয়ে এই ব্যাকলক কাটিয়ে উঠা যায়। এরপর নিয়মিত পদোন্নতি দিলেও চলবে।’
শওকত মোল্ল্যা জানান, ইতোমধ্যে যেসব শিক্ষক পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন, তারা আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। এ কারণে বঞ্চিত শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের পদোন্নতি দেয়া হলেও সরকারের বাড়তি কোনো অর্থের প্রয়োজন হবে না।
শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রশাসন ‘ভেঙে ভেঙে’ বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতিই দিয়ে আসছেন। এতে অনেক ক্ষেত্রেই জুনিয়র কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন; এর বিপরীতে সিনিয়র সদস্যরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ‘অসন্তোষ’ বিরাজ করছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে ৯২২ জনকে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু নীচের পদগুলোতে আর পদোন্নতি হয়নি।
মাউশি থেকে জানা গেছে, সদস্য সংখ্যার নিরিখে বিসিএস স্বাস্থ্যা ক্যাডারের পরই বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের অবস্থান। এই ক্যাডারে মোট ১৫ হাজার ৯৫০টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন প্রায় ১৪ হাজারের মতো শিক্ষক।
শিক্ষা ক্যাডারের এসব সদস্য সারাদেশের তিন শতাধিক সরকারি কলেজ এবং মাউশি অধিদপ্তর, ১১টি শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটি কলেজ), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে কর্মরত রয়েছেন।