চরম হতাশায় পদ প্রত্যাশীরা
আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদ এক বছর। সেই হিসেবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আরো প্রায় দুই বছর আগে। অন্যদিকে, প্রায় সাড়ে চার বছর আগের হল কমিটি নিয়ে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে হল কমিটির কার্যক্রম। সর্বশেষ, হল কমিটি হয়েছিল ২০১৬ সালে। অর্থাৎ হল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে।
এক বছর মেয়াদি হল কমিটি দিয়েই এখনো চলছে কার্যক্রম। সাড়ে তিন বছরেও কমিটি না দেওয়ায় অসন্তোষ আর হতাশা সৃষ্টি হয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। ইতোমধ্যে অনেকেই রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছে। কেউবা রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে পড়াশোনায় ঢুকে পড়ছে, কেউ চাকরিতে প্রবেশ করছে। আবার কেউবা বিয়ে করে নিচ্ছে বলেও শুনা যাচ্ছে।
আর যারা এখনো রাজনীতিতে সক্রিয়, তারাও চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত। তাদের ছাত্রত্ব নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। দ্রুত হল কমিটি দেওয়া হবে বলে বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও ঢাবি ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এখন পর্যন্ত তা করতে পারেননি। এর আগে বিভিন্ন সময় সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের হল কমিটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৮ জুন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান যথাক্রমে আবিদ আল হাসান ও মোতাহার হোসেন প্রিন্স। এর দেড় বছর পর ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর ঢাবির হল কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়। হল কমিটির শীর্ষ দুই নেতা দায়িত্ব পাওয়ার ১১ মাস পর ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর হল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ঢাবি শাখা সাংগঠনিক জেলার মর্যাদা পায়। আর জেলা শাখার মেয়াদ এক বছর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৮ সালের নভেম্বরে হল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর আগে ওই বছরের ২৯ এপ্রিল ঢাবি শাখার সম্মেলন হয়।
আর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন হয় ১১ ও ১২ মে। সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়। এতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্ব পান রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী।
এ ছাড়া সনজিত চন্দ্র দাসকে ঢাবি শাখার সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেনকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেয়াদপূর্তির দুই মাস আগে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের কমিটি দিতে পারেননি বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
নাম না প্রকাশের শর্তে একজন পদ প্রত্যাশী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে হল রাজনীতি করে আসছি। কিন্তু এখনো আমাদের নামের আগে কোনো পদ জোটেনি। এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক।
সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও আমরা সংকটে আছি। এরকমটা চলতে থাকলে নতুনরা রাজনীতিতে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে একটা দীর্ঘমেয়াদী শূণ্যতা তৈরী হবে। পরবর্তীতে যেটা কাটিয়ে উঠা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
অপর একজন পদ প্রত্যাশী বলেন, আমরা এখন এমন এক পর্যায়ে আছি যে চাইলেও পড়াশোনায় ফিরে যেতে পারি না। আবার রাজনীতিতেও আমাদের নিজস্ব কোনো পরিচয় নেই। ফলে আমরা এক ধরণের অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে আছি। আমাদের পরিবারেরওতো আমাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। এখন মনে হয় পরিবারের সেই স্বপ্নকে আমরা নিজ হাতে হত্যা করেছি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সংবাদকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা হল কমিটি দিতে পারছি না। এতে আমাদের মধ্যেও হতাশা কাজ করছে। নেতা-কর্মীদের মাঝেও স্বাভাবিক ভাবেই হতাশা কাজ করছে। হল কমিটি না থাকার কারণে সাংগঠনিক গতিশীলতাকে প্রত্যাশিত মাত্রায় নিয়ে আশা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া শেষ হলে হল খোলার পরপরই আমরা কমিটি দিয়ে দিবো। আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি আছে। সকল সমন্বয়ও শেষ হয়েছে। একইসাথে করোনা যদি দীর্ঘদিন পর্যন্ত অব্যহত থাকে তাহলে ভিন্ন কোন উপায়ে কমিটি দেওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারেও আমরা দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলছি।
চরম হতাশায় পদ প্রত্যাশীরা
আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক
সোমবার, ১৪ জুন ২০২১
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদ এক বছর। সেই হিসেবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আরো প্রায় দুই বছর আগে। অন্যদিকে, প্রায় সাড়ে চার বছর আগের হল কমিটি নিয়ে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে হল কমিটির কার্যক্রম। সর্বশেষ, হল কমিটি হয়েছিল ২০১৬ সালে। অর্থাৎ হল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে।
এক বছর মেয়াদি হল কমিটি দিয়েই এখনো চলছে কার্যক্রম। সাড়ে তিন বছরেও কমিটি না দেওয়ায় অসন্তোষ আর হতাশা সৃষ্টি হয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। ইতোমধ্যে অনেকেই রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছে। কেউবা রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে পড়াশোনায় ঢুকে পড়ছে, কেউ চাকরিতে প্রবেশ করছে। আবার কেউবা বিয়ে করে নিচ্ছে বলেও শুনা যাচ্ছে।
আর যারা এখনো রাজনীতিতে সক্রিয়, তারাও চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত। তাদের ছাত্রত্ব নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। দ্রুত হল কমিটি দেওয়া হবে বলে বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও ঢাবি ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এখন পর্যন্ত তা করতে পারেননি। এর আগে বিভিন্ন সময় সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের হল কমিটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৮ জুন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান যথাক্রমে আবিদ আল হাসান ও মোতাহার হোসেন প্রিন্স। এর দেড় বছর পর ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর ঢাবির হল কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়। হল কমিটির শীর্ষ দুই নেতা দায়িত্ব পাওয়ার ১১ মাস পর ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর হল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ঢাবি শাখা সাংগঠনিক জেলার মর্যাদা পায়। আর জেলা শাখার মেয়াদ এক বছর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৮ সালের নভেম্বরে হল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর আগে ওই বছরের ২৯ এপ্রিল ঢাবি শাখার সম্মেলন হয়।
আর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন হয় ১১ ও ১২ মে। সম্মেলনের আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়। এতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্ব পান রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী।
এ ছাড়া সনজিত চন্দ্র দাসকে ঢাবি শাখার সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেনকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেয়াদপূর্তির দুই মাস আগে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের কমিটি দিতে পারেননি বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
নাম না প্রকাশের শর্তে একজন পদ প্রত্যাশী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে হল রাজনীতি করে আসছি। কিন্তু এখনো আমাদের নামের আগে কোনো পদ জোটেনি। এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক।
সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবেও আমরা সংকটে আছি। এরকমটা চলতে থাকলে নতুনরা রাজনীতিতে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে একটা দীর্ঘমেয়াদী শূণ্যতা তৈরী হবে। পরবর্তীতে যেটা কাটিয়ে উঠা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
অপর একজন পদ প্রত্যাশী বলেন, আমরা এখন এমন এক পর্যায়ে আছি যে চাইলেও পড়াশোনায় ফিরে যেতে পারি না। আবার রাজনীতিতেও আমাদের নিজস্ব কোনো পরিচয় নেই। ফলে আমরা এক ধরণের অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে আছি। আমাদের পরিবারেরওতো আমাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। এখন মনে হয় পরিবারের সেই স্বপ্নকে আমরা নিজ হাতে হত্যা করেছি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সংবাদকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা হল কমিটি দিতে পারছি না। এতে আমাদের মধ্যেও হতাশা কাজ করছে। নেতা-কর্মীদের মাঝেও স্বাভাবিক ভাবেই হতাশা কাজ করছে। হল কমিটি না থাকার কারণে সাংগঠনিক গতিশীলতাকে প্রত্যাশিত মাত্রায় নিয়ে আশা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া শেষ হলে হল খোলার পরপরই আমরা কমিটি দিয়ে দিবো। আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি আছে। সকল সমন্বয়ও শেষ হয়েছে। একইসাথে করোনা যদি দীর্ঘদিন পর্যন্ত অব্যহত থাকে তাহলে ভিন্ন কোন উপায়ে কমিটি দেওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারেও আমরা দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলছি।