রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা
প্রাণ ফিরে পেয়েছে নগরীর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক মহল্লাগুলো। খাঁ খাঁ করা মেসগুলো ফের ভরতে শুরু করেছে। অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী থাকেন ছাত্রাবাস কিংবা ছাত্রীনিবাসে। এর পাশপাশি সরকারী প্রতিষ্ঠানের হোস্টেলেও থাকেন অল্প সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী। স্কুল কলেজ খুললেও এখনো খোলেনি আবাসিক হল। ফলে বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে রাজশাহীর মেসগুলোকে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ও খুলছে। আবার ভর্তিচ্ছুরাও রয়েছে। ফলে আবাসন সঙ্কট প্র্রকটই হচ্ছে।
রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতির তথ্যমতে, রাজশাহীতে ছোট বড় বাড়ি, আবাসিক, অফিসিয়াল ও আন অফিসিয়াল মেস সুবিধা আছে প্রায় ৫ হাজার ভবনে। তবে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে ওঠা মেসের সংখ্যা সাড়ে ৪শ।
।
রাজশাহী সাহেব বাজার, আলুপট্টি, উপশহর, হেঁতেমখা, কুমারপাড়া, কাদিরগঞ্জ, কলাবাগান, কাজলা, বিনোদপুর, তালাইমারি, মেহেরচন্ডি এলাকায় মেসের সংখ্যা সব থেকে বেশি। এরমধ্যে কাজলা, বিনোদপুর, তালাইমারি, মেহেরচন্ডি এলাকার মেসগুলোতে মূলত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি থাকেন। বাকি এলাকাগুলোর বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রীই নগরীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী। এসব এলাকার প্রায় সব মেসেই টাঙ্গানো আছে সিট খালি নেই।
রাজশাহীর সব থেকে বড় ছাত্রাবাস হিসেবে পরিচিত সাহেব বাজার মোলা ভবন। সেখানকার ম্যানেজার জুয়েল বলেন, করোনায় পুরো ফাঁকা হয়ে গিয়েছিলো মেস। মাসের পর মাস ফাঁকা পড়ে ছিলো পুরো ছাত্রাবাস। তবে স্কুল খোলার ঘোষনার পর থেকেই মেসে চাহিদা বেড়েছে। এখন কোন সিট ফাঁকা নেই। পুরো মেস ভর্তি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষার জন্য আগামী ৩ থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত হোটেলে এমনই সিট সংকট দেখা দিয়েছে। একটি হোটেল কক্ষও যেন সোনার হরিণ এখানে। হোটেলের রুম খুঁজতে পরীক্ষার্থীর বন্ধু কিংবা স্বজনেরা হন্য হয়ে ঘুরছেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সপ্তাহ খানেক আগেই বুকিং দেওয়া শেষ।
আবাসিক হোটেল মালিক সমিতি, রাজশাহী মহানগরের সভাপতি খন্দকার হাসান কবির জানান, রাজশাহী শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে আবাসিক হোটেলের সংখ্যা ৬০ থেকে ৬৫টি। এতে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার মানুষকে রাখা সম্ভব। প্রতিবছরই রাবির ভর্তি পরীক্ষার সময় হোটেলের একটি কক্ষের জন্য হাহাকার দেখা দেয়।
নগরীর সাহেববাজার এলাকায় খন্দকার হাসান কবিরের হোটেলের নাম নাইস ইন্টারন্যাশনাল। হোটেলটির ব্যবস্থাপক হীরাঙ্গীর মোল্লা বলেন, ‘আমাদের রুমগুলো সব এসি। তাই চাহিদাও বেশি। দু’সপ্তাহ আগেই বুকিং শেষ। প্রতিদিন অন্তত ১০০ ফোন রিসিভ করছি, সবাই রুমের জন্য ফোন করছেন। আমরা দিতে পারছি না। অনেকে স্বশরীরে আসছেন রুম খুঁজতে। তাঁদেরকেও ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’
নগরীর রেলগেট এলাকার হোটেল গুলশানের ব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ জানালেন, তাঁদের হোটেলে সব শ্রেণির কক্ষে ৭২ জনকে রাখার ব্যবস্থা আছে। এক সপ্তাহ আগে বুকিং শেষ হয়ে গেছে। এখন আর বুকিং নেওয়া সম্ভব নয়। তিনিও প্রতিদিন ৩০-৩৫ জনকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। রাবির পরীক্ষার সময় প্রতিবছরই এমন হয়।
ফরিদ আহমেদ যখন কথা বলছিলেন, তখনই রুমের সন্ধানে আসেন আজমল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ঢাকা ও কিশোরগঞ্জ থেকে তাঁর চারজন স্বজন পরীক্ষা দিতে আসবেন। তাঁদের জন্যই রুম খুঁজছেন। সকাল থেকে অন্তত ১০টি হোটেল ঘুরেছেন। কোথাও একটিও রুম পাননি। আজমল জানান, শহরে তিনি মেসে ভাড়া থাকেন। এখন পরীক্ষার্থীদের কোথায় রাখবেন তা নিয়ে পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর বলেন, এখনও অনেক মেস খোলেনি। আবার মেসে অভিভাবকদেরও থাকার সুযোগ নেই। সে কারণেই রাবির ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের খুব বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
আগামী ৪ অক্টোবর রাবিতে ‘সি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন ৫ অক্টোবর ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষাও তিনটি শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। ৬ অক্টোবর হবে ‘বি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) পরীক্ষা। সবমিলিয়ে আসবেন প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী। আগের বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, রিডিং রুম, পেপার রুম, মসজিদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করলে এবার কোথাও তাঁদের থাকতে না দেওয়ার এক রকম সিদ্ধান্ত আছে।
এদিকে রাজশাহীতে ছোট-বড় মিলিয়ে মেস আছে প্রায় পাঁচ হাজার। সেখানে এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী থাকেন। রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সভাপতি এনায়েতুর রহমান বলেন, রাবির পরীক্ষা নিয়ে যে সমস্যা সেটি নিয়ে তাঁরাও ভাবছেন। রাবি উপাচার্য, জেলা প্রশাসক ও নগর পুলিশের কমিশনারের সাথে আলোচনা করে তাঁরা একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কল্যাণ চৌধুরীও জানিয়েছেন, পরীক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নিয়ে তাঁরা ভাবছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা
বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রাণ ফিরে পেয়েছে নগরীর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক মহল্লাগুলো। খাঁ খাঁ করা মেসগুলো ফের ভরতে শুরু করেছে। অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী থাকেন ছাত্রাবাস কিংবা ছাত্রীনিবাসে। এর পাশপাশি সরকারী প্রতিষ্ঠানের হোস্টেলেও থাকেন অল্প সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী। স্কুল কলেজ খুললেও এখনো খোলেনি আবাসিক হল। ফলে বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে রাজশাহীর মেসগুলোকে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ও খুলছে। আবার ভর্তিচ্ছুরাও রয়েছে। ফলে আবাসন সঙ্কট প্র্রকটই হচ্ছে।
রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতির তথ্যমতে, রাজশাহীতে ছোট বড় বাড়ি, আবাসিক, অফিসিয়াল ও আন অফিসিয়াল মেস সুবিধা আছে প্রায় ৫ হাজার ভবনে। তবে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে ওঠা মেসের সংখ্যা সাড়ে ৪শ।
।
রাজশাহী সাহেব বাজার, আলুপট্টি, উপশহর, হেঁতেমখা, কুমারপাড়া, কাদিরগঞ্জ, কলাবাগান, কাজলা, বিনোদপুর, তালাইমারি, মেহেরচন্ডি এলাকায় মেসের সংখ্যা সব থেকে বেশি। এরমধ্যে কাজলা, বিনোদপুর, তালাইমারি, মেহেরচন্ডি এলাকার মেসগুলোতে মূলত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি থাকেন। বাকি এলাকাগুলোর বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রীই নগরীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী। এসব এলাকার প্রায় সব মেসেই টাঙ্গানো আছে সিট খালি নেই।
রাজশাহীর সব থেকে বড় ছাত্রাবাস হিসেবে পরিচিত সাহেব বাজার মোলা ভবন। সেখানকার ম্যানেজার জুয়েল বলেন, করোনায় পুরো ফাঁকা হয়ে গিয়েছিলো মেস। মাসের পর মাস ফাঁকা পড়ে ছিলো পুরো ছাত্রাবাস। তবে স্কুল খোলার ঘোষনার পর থেকেই মেসে চাহিদা বেড়েছে। এখন কোন সিট ফাঁকা নেই। পুরো মেস ভর্তি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষার জন্য আগামী ৩ থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত হোটেলে এমনই সিট সংকট দেখা দিয়েছে। একটি হোটেল কক্ষও যেন সোনার হরিণ এখানে। হোটেলের রুম খুঁজতে পরীক্ষার্থীর বন্ধু কিংবা স্বজনেরা হন্য হয়ে ঘুরছেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সপ্তাহ খানেক আগেই বুকিং দেওয়া শেষ।
আবাসিক হোটেল মালিক সমিতি, রাজশাহী মহানগরের সভাপতি খন্দকার হাসান কবির জানান, রাজশাহী শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে আবাসিক হোটেলের সংখ্যা ৬০ থেকে ৬৫টি। এতে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার মানুষকে রাখা সম্ভব। প্রতিবছরই রাবির ভর্তি পরীক্ষার সময় হোটেলের একটি কক্ষের জন্য হাহাকার দেখা দেয়।
নগরীর সাহেববাজার এলাকায় খন্দকার হাসান কবিরের হোটেলের নাম নাইস ইন্টারন্যাশনাল। হোটেলটির ব্যবস্থাপক হীরাঙ্গীর মোল্লা বলেন, ‘আমাদের রুমগুলো সব এসি। তাই চাহিদাও বেশি। দু’সপ্তাহ আগেই বুকিং শেষ। প্রতিদিন অন্তত ১০০ ফোন রিসিভ করছি, সবাই রুমের জন্য ফোন করছেন। আমরা দিতে পারছি না। অনেকে স্বশরীরে আসছেন রুম খুঁজতে। তাঁদেরকেও ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’
নগরীর রেলগেট এলাকার হোটেল গুলশানের ব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ জানালেন, তাঁদের হোটেলে সব শ্রেণির কক্ষে ৭২ জনকে রাখার ব্যবস্থা আছে। এক সপ্তাহ আগে বুকিং শেষ হয়ে গেছে। এখন আর বুকিং নেওয়া সম্ভব নয়। তিনিও প্রতিদিন ৩০-৩৫ জনকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। রাবির পরীক্ষার সময় প্রতিবছরই এমন হয়।
ফরিদ আহমেদ যখন কথা বলছিলেন, তখনই রুমের সন্ধানে আসেন আজমল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ঢাকা ও কিশোরগঞ্জ থেকে তাঁর চারজন স্বজন পরীক্ষা দিতে আসবেন। তাঁদের জন্যই রুম খুঁজছেন। সকাল থেকে অন্তত ১০টি হোটেল ঘুরেছেন। কোথাও একটিও রুম পাননি। আজমল জানান, শহরে তিনি মেসে ভাড়া থাকেন। এখন পরীক্ষার্থীদের কোথায় রাখবেন তা নিয়ে পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর বলেন, এখনও অনেক মেস খোলেনি। আবার মেসে অভিভাবকদেরও থাকার সুযোগ নেই। সে কারণেই রাবির ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের খুব বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
আগামী ৪ অক্টোবর রাবিতে ‘সি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন ৫ অক্টোবর ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষাও তিনটি শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। ৬ অক্টোবর হবে ‘বি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) পরীক্ষা। সবমিলিয়ে আসবেন প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী। আগের বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, রিডিং রুম, পেপার রুম, মসজিদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করলে এবার কোথাও তাঁদের থাকতে না দেওয়ার এক রকম সিদ্ধান্ত আছে।
এদিকে রাজশাহীতে ছোট-বড় মিলিয়ে মেস আছে প্রায় পাঁচ হাজার। সেখানে এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী থাকেন। রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সভাপতি এনায়েতুর রহমান বলেন, রাবির পরীক্ষা নিয়ে যে সমস্যা সেটি নিয়ে তাঁরাও ভাবছেন। রাবি উপাচার্য, জেলা প্রশাসক ও নগর পুলিশের কমিশনারের সাথে আলোচনা করে তাঁরা একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কল্যাণ চৌধুরীও জানিয়েছেন, পরীক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নিয়ে তাঁরা ভাবছেন।