প্রিন্স উপাধি হারানো ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য অ্যান্ড্রুকে আপাতত তাঁর রাজকীয় বাসভবন ‘রয়েল লজ’ ছাড়তে হবে না। ফলে নতুন বছরের আগপর্যন্ত তাঁকে রাজা তৃতীয় চার্লসের স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটে স্থানান্তর হতে হচ্ছে না। বিবিসি জানিয়েছে, বড়দিনের সময় বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে তাঁর স্থানান্তর কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাজা তৃতীয় চার্লস তাঁর ছোট ভাই অ্যান্ড্রুর রাজকীয় উপাধি ও সম্মাননা বাতিল করেন। তিনি জানান, অ্যান্ড্রুকে এখন থেকে ‘অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর’ নামে ডাকা হবে। পাশাপাশি উইন্ডসরে বরাদ্দ পাওয়া রাজকীয় বাসভবন ‘রয়েল লজ’ ছাড়ার নির্দেশ দেন রাজা। সেখান থেকে সরে গিয়ে অ্যান্ড্রু স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটের একটি বাড়িতে উঠবেন— যার যাবতীয় খরচ বহন করবেন রাজা চার্লস নিজেই।
তবে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, বড়দিনের সময় রাজপরিবারের সদস্যরা ঐতিহ্যগতভাবে স্যান্ড্রিংহামে একত্র হন। তাই ওই সময় অ্যান্ড্রুর উপস্থিতি অস্বস্তিকর হতে পারে। সে কারণেই তাঁর স্থানান্তর নতুন বছরের পর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অ্যান্ড্রু ২০০৪ সাল থেকে উইন্ডসরের রয়েল লজে বসবাস করছেন। এর আগের বছর তিনি ক্রাউন এস্টেটের সঙ্গে ৭৫ বছরের জন্য একটি ইজারা চুক্তি করেন। ক্রাউন এস্টেট ব্রিটিশ রাজপরিবারের সম্পত্তি হলেও এটি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
বাকিংহাম প্যালেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব অ্যান্ড্রু উইন্ডসরের রয়েল লজ থেকে স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটে সরে যাবেন। তবে এখনো জানা যায়নি, রাজা তাঁর ভাইয়ের জন্য কোন বাড়িটি নির্ধারণ করেছেন।
অ্যান্ড্রুকে ঘিরে বিতর্কের সূত্র যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইন। এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে যুক্তরাজ্যে গত কয়েক মাস ধরে তীব্র সমালোচনার মুখে আছেন অ্যান্ড্রু। এ অবস্থায়ই রাজা চার্লস তাঁর উপাধি ও রাজকীয় মর্যাদা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন। যদিও অ্যান্ড্রু বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
এর আগে, এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ককে কেন্দ্র করে সমালোচনার পর গত মাসের শুরুতে অ্যান্ড্রু ঘোষণা দেন, তিনি আর ‘ডিউক অব ইয়র্ক’সহ কোনো রাজকীয় পদবি ব্যবহার করবেন না। বিশেষ করে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগকারী নারী ভার্জিনিয়া জিউফ্রের স্মৃতিকথা প্রকাশের পর অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে সমালোচনা নতুন করে তীব্র হয়।
স্মৃতিকথায় জিউফ্রে দাবি করেছেন, কিশোরী বয়সে তাঁর সঙ্গে অ্যান্ড্রুর একাধিকবার যৌন সম্পর্ক হয়। জীবিত থাকাকালেও জিউফ্রে একই অভিযোগ তুলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালে অ্যান্ড্রু অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে মামলাটি মীমাংসা করেন।
এপস্টেইনকে ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নাবালিকার সঙ্গে যৌন সম্পর্কের চেষ্টার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পরে ২০১৯ সালে যৌনপণ্য পাচারের মামলায় বিচারাধীন অবস্থায় নিউইয়র্কের একটি কারাগারে আত্মহত্যা করেন তিনি।
এদিকে, ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, অ্যান্ড্রুকে রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ দেওয়ার জন্য নতুন কোনো আইন পাস করার পরিকল্পনা তাদের নেই। তিনি এখনো ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকার তালিকায় অষ্টম স্থানে আছেন।
তবে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, অ্যান্ড্রুর যেন ভবিষ্যতে রাজা হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকে, তা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করা উচিত। কিন্তু এ ধরনের আইন পাস করতে হলে শুধু যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নয়, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ অন্যান্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশের সম্মতিও প্রয়োজন হবে— যা একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া।
নরফোকে অবস্থিত ঐতিহাসিক স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটটি ১৮৬২ সালে তৎকালীন ওয়েলসের প্রিন্স (পরবর্তী সময়ে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড) ব্যক্তিগত গ্রামীণ বিশ্রামস্থল হিসেবে কিনেছিলেন। প্রায় ৩১ বর্গমাইল বা ৮০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এই এস্টেটের আয়তন প্রায় নটিংহাম বা ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ শহরের সমান।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
প্রিন্স উপাধি হারানো ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য অ্যান্ড্রুকে আপাতত তাঁর রাজকীয় বাসভবন ‘রয়েল লজ’ ছাড়তে হবে না। ফলে নতুন বছরের আগপর্যন্ত তাঁকে রাজা তৃতীয় চার্লসের স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটে স্থানান্তর হতে হচ্ছে না। বিবিসি জানিয়েছে, বড়দিনের সময় বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে তাঁর স্থানান্তর কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাজা তৃতীয় চার্লস তাঁর ছোট ভাই অ্যান্ড্রুর রাজকীয় উপাধি ও সম্মাননা বাতিল করেন। তিনি জানান, অ্যান্ড্রুকে এখন থেকে ‘অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর’ নামে ডাকা হবে। পাশাপাশি উইন্ডসরে বরাদ্দ পাওয়া রাজকীয় বাসভবন ‘রয়েল লজ’ ছাড়ার নির্দেশ দেন রাজা। সেখান থেকে সরে গিয়ে অ্যান্ড্রু স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটের একটি বাড়িতে উঠবেন— যার যাবতীয় খরচ বহন করবেন রাজা চার্লস নিজেই।
তবে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, বড়দিনের সময় রাজপরিবারের সদস্যরা ঐতিহ্যগতভাবে স্যান্ড্রিংহামে একত্র হন। তাই ওই সময় অ্যান্ড্রুর উপস্থিতি অস্বস্তিকর হতে পারে। সে কারণেই তাঁর স্থানান্তর নতুন বছরের পর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অ্যান্ড্রু ২০০৪ সাল থেকে উইন্ডসরের রয়েল লজে বসবাস করছেন। এর আগের বছর তিনি ক্রাউন এস্টেটের সঙ্গে ৭৫ বছরের জন্য একটি ইজারা চুক্তি করেন। ক্রাউন এস্টেট ব্রিটিশ রাজপরিবারের সম্পত্তি হলেও এটি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
বাকিংহাম প্যালেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব অ্যান্ড্রু উইন্ডসরের রয়েল লজ থেকে স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটে সরে যাবেন। তবে এখনো জানা যায়নি, রাজা তাঁর ভাইয়ের জন্য কোন বাড়িটি নির্ধারণ করেছেন।
অ্যান্ড্রুকে ঘিরে বিতর্কের সূত্র যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইন। এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে যুক্তরাজ্যে গত কয়েক মাস ধরে তীব্র সমালোচনার মুখে আছেন অ্যান্ড্রু। এ অবস্থায়ই রাজা চার্লস তাঁর উপাধি ও রাজকীয় মর্যাদা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন। যদিও অ্যান্ড্রু বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
এর আগে, এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ককে কেন্দ্র করে সমালোচনার পর গত মাসের শুরুতে অ্যান্ড্রু ঘোষণা দেন, তিনি আর ‘ডিউক অব ইয়র্ক’সহ কোনো রাজকীয় পদবি ব্যবহার করবেন না। বিশেষ করে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগকারী নারী ভার্জিনিয়া জিউফ্রের স্মৃতিকথা প্রকাশের পর অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে সমালোচনা নতুন করে তীব্র হয়।
স্মৃতিকথায় জিউফ্রে দাবি করেছেন, কিশোরী বয়সে তাঁর সঙ্গে অ্যান্ড্রুর একাধিকবার যৌন সম্পর্ক হয়। জীবিত থাকাকালেও জিউফ্রে একই অভিযোগ তুলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালে অ্যান্ড্রু অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে মামলাটি মীমাংসা করেন।
এপস্টেইনকে ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নাবালিকার সঙ্গে যৌন সম্পর্কের চেষ্টার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পরে ২০১৯ সালে যৌনপণ্য পাচারের মামলায় বিচারাধীন অবস্থায় নিউইয়র্কের একটি কারাগারে আত্মহত্যা করেন তিনি।
এদিকে, ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, অ্যান্ড্রুকে রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ দেওয়ার জন্য নতুন কোনো আইন পাস করার পরিকল্পনা তাদের নেই। তিনি এখনো ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকার তালিকায় অষ্টম স্থানে আছেন।
তবে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, অ্যান্ড্রুর যেন ভবিষ্যতে রাজা হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকে, তা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করা উচিত। কিন্তু এ ধরনের আইন পাস করতে হলে শুধু যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নয়, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ অন্যান্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশের সম্মতিও প্রয়োজন হবে— যা একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া।
নরফোকে অবস্থিত ঐতিহাসিক স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটটি ১৮৬২ সালে তৎকালীন ওয়েলসের প্রিন্স (পরবর্তী সময়ে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড) ব্যক্তিগত গ্রামীণ বিশ্রামস্থল হিসেবে কিনেছিলেন। প্রায় ৩১ বর্গমাইল বা ৮০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এই এস্টেটের আয়তন প্রায় নটিংহাম বা ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ শহরের সমান।