সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি
সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশা আব্দুল্লাহকে একটি বিষের আংটি ব্যবহার করে খুন করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা সিবিএসকে এক সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য দিলেন দেশটির সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা - সাদ আল-জাবরির তথ্য অনুযায়ী, ঘটনা ২০১৪ সালের। সেসময় মোহাম্মদ বিন সালমান তার চাচাতো ভাই সৌদি আরবের তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন নায়েফকে বলেছিলেন পিতা সালমান বিন আব্দুল আজিজের জন্য সিংহাসনের রাস্তা পরিস্কার করতে তিনি এ কাজ করতে চান।
ওই সময়টাতে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে সৌদি রাজপরিবারের অন্দরে টানাপোড়েন চলছিল।
তবে আল-জাবরির দেওয়া এই তথ্য প্রসঙ্গে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি একজন ‘স্খলিত’ সাবেক কর্মকর্তা। ‘বানোয়াট’ কথাবার্তা বলার ইতিহাস তার অনেক পুরোনো।
সিবিএসে দেওয়া ৬০ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে অপরিসীম সম্পদের মধ্যপ্রাচ্যে এক ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত, হত্যাকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন জাবরি। তাকে ‘দেশের মানুষের জন্য, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, তথা পুরো পৃথিবীর জন্য হুমকি’ বলে উল্লেখ করেন আল-জাবরি।
তার অভিযোগ, বিন নায়েফকে যুবরাজ সালমান বলেছিলেন তিনি নিজে বাদশা আব্দুল্লাহকে সরিয়ে দেওয়ার এই ব্যবস্থা করতে পারবেন।
আল-জাবরি বলেন, ”তিনি তাকে বলেছিলেন, আমি বাদশা আব্দুল্লাহকে হত্যা করতে চাই। আমি একটি বিষাক্ত আংটি রাশিয়ার কাছ থেকে পাবো। তার [বাদশা আব্দুল্লাহ] সঙ্গে একবার হাত মেলাতে পারলেই যথেষ্ট। তিনি শেষ হয়ে যাবেন।”
জাবরি আরো বলেন, ”তিনি হয়তো নিজের দম্ভ প্রকাশের জন্য এমন বলে থাকতে পারেন। কিন্তু তিনি তা বলেছিলেন। এবং আমরা তা খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলাম।“
আল-জাবরি জানান সেসময় এই বিষয়টা গোপনে সৌদি রাজকীয় আদালতে মীমাংসা করা হয়েছিল । তিনি দাবি করেন গোপনে সেই বৈঠকের চিত্রধারণ করা হয়েছিলো এবং তার দুটি ভিডিও কোথায় রাখা আছে তা তিনি জানেন।
বাদশা আব্দুল্লাহ ২০১৫ সালে ৯০ বছর বয়সেব মারা যান। তারপর তার স্থলাভিষিক্ত হন তার সৎভাই এবং বর্তমান যুবরাজ সালমানের বাবা আব্দুল আজিজ। সিংহাসনে বসে তিনি মোহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজ হিসেবে নিযুক্ত করেন।
তবে ২০১৭ সালে বিন নায়েফকে সরিয়ে নিজের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণা করেন। এসময় বিন নায়েফকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। কথিত আছে, এরপর থেকে নায়েফ গৃহবন্দী ছিলেন। গত বছর বিভিন্ন অভিযোগ এনে তাকে আটক করা হয়।
নায়েফকে উৎখাতের পরই কানাডা পালিয়ে যান আল-জাবরি।
সাক্ষাৎকারে জাবরি বলেন মধ্যপ্রাচ্যের একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক বন্ধু তাকে সতর্ক করেন যে তাকে হত্যার জন্য সালমান ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে গুপ্তঘাতকদের একটি দল পাঠাচ্ছে। সাংবাদিক জামাল খাসোগজিকে তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে হত্যা করার পরই তিনি এই সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন।
জাবরি বলেন সেসময় কানাডার অটোয়া বিমানবন্দরের নামার পর ডিএনএ পরীক্ষার সন্দেহজনক জিনিসপত্র পাওয়া গেলে ছ’জন সৌদি নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠায় কানাডার শুল্কবিভাগ।
গত বছর মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে মামলাও করেন জাবরি।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান অবশ্য বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। খাসোগজির খুনেও সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন না তিনি, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়ন, সেই কাজ তিনি অনুমোদন করেছিলেন।
সিবিএসে আল-জাবরির সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের পরই ওয়াশিংটনে সৌদি দুতাবাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “নিজের আর্থিক দুর্নীতির তথ্য আড়াল করতে দীর্ঘদিন থেকেই আল-জাবরি এ ধরনের বানোয়াট কথাবার্তা বলে আসছেন।”
বিবৃতিতে বলা হয় “দুর্নীতির মাধ্যমে কামানো কয়েকশ কোটি ডলার দিয়েই তিনি এখন পরিবারসহ বিলাসী জীবন যাপন করছেন।”
সৌদি আরবের বিভিন্ন সংস্থা তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে। ‘তার সম্পত্তিতে জালিয়াতির অঢেল প্রমাণ রয়েছে’ উল্লেখ করে তার সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছে কানাডার একটি আদালতও।
২০২০ সালের মার্চে মাসে সৌদি কর্তৃপক্ষ আল-জাবরির ছেলে ওমর ও মেয়ে সারাকে আটক করে। সৌদি আরবের এই পদক্ষেপকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে জাবরিকে দেশে নেওয়ার কৌশল হিসেবে সমালোচনা করে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
আল-জাবরি সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে মামলার করার দু মাসের মাথায় গত বছর নভেম্বর মাসে মুদ্রাপাচার ও দেশ থেকে পালানোর চেষ্টার অভিযোগে তার ছেলেকে নয় বছর ও মেয়েকে সাড়ে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেয় সৌদি আরবের আদালত। পরে দেশটির আপীল আদালতও এই দুইজনের অনুপস্থিতিতেই এক গোপন শুনানিতে সেই সাজা বহাল রাখে।
সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি
মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১
সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশা আব্দুল্লাহকে একটি বিষের আংটি ব্যবহার করে খুন করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা সিবিএসকে এক সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য দিলেন দেশটির সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা - সাদ আল-জাবরির তথ্য অনুযায়ী, ঘটনা ২০১৪ সালের। সেসময় মোহাম্মদ বিন সালমান তার চাচাতো ভাই সৌদি আরবের তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন নায়েফকে বলেছিলেন পিতা সালমান বিন আব্দুল আজিজের জন্য সিংহাসনের রাস্তা পরিস্কার করতে তিনি এ কাজ করতে চান।
ওই সময়টাতে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে সৌদি রাজপরিবারের অন্দরে টানাপোড়েন চলছিল।
তবে আল-জাবরির দেওয়া এই তথ্য প্রসঙ্গে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি একজন ‘স্খলিত’ সাবেক কর্মকর্তা। ‘বানোয়াট’ কথাবার্তা বলার ইতিহাস তার অনেক পুরোনো।
সিবিএসে দেওয়া ৬০ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে অপরিসীম সম্পদের মধ্যপ্রাচ্যে এক ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত, হত্যাকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন জাবরি। তাকে ‘দেশের মানুষের জন্য, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, তথা পুরো পৃথিবীর জন্য হুমকি’ বলে উল্লেখ করেন আল-জাবরি।
তার অভিযোগ, বিন নায়েফকে যুবরাজ সালমান বলেছিলেন তিনি নিজে বাদশা আব্দুল্লাহকে সরিয়ে দেওয়ার এই ব্যবস্থা করতে পারবেন।
আল-জাবরি বলেন, ”তিনি তাকে বলেছিলেন, আমি বাদশা আব্দুল্লাহকে হত্যা করতে চাই। আমি একটি বিষাক্ত আংটি রাশিয়ার কাছ থেকে পাবো। তার [বাদশা আব্দুল্লাহ] সঙ্গে একবার হাত মেলাতে পারলেই যথেষ্ট। তিনি শেষ হয়ে যাবেন।”
জাবরি আরো বলেন, ”তিনি হয়তো নিজের দম্ভ প্রকাশের জন্য এমন বলে থাকতে পারেন। কিন্তু তিনি তা বলেছিলেন। এবং আমরা তা খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলাম।“
আল-জাবরি জানান সেসময় এই বিষয়টা গোপনে সৌদি রাজকীয় আদালতে মীমাংসা করা হয়েছিল । তিনি দাবি করেন গোপনে সেই বৈঠকের চিত্রধারণ করা হয়েছিলো এবং তার দুটি ভিডিও কোথায় রাখা আছে তা তিনি জানেন।
বাদশা আব্দুল্লাহ ২০১৫ সালে ৯০ বছর বয়সেব মারা যান। তারপর তার স্থলাভিষিক্ত হন তার সৎভাই এবং বর্তমান যুবরাজ সালমানের বাবা আব্দুল আজিজ। সিংহাসনে বসে তিনি মোহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজ হিসেবে নিযুক্ত করেন।
তবে ২০১৭ সালে বিন নায়েফকে সরিয়ে নিজের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণা করেন। এসময় বিন নায়েফকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। কথিত আছে, এরপর থেকে নায়েফ গৃহবন্দী ছিলেন। গত বছর বিভিন্ন অভিযোগ এনে তাকে আটক করা হয়।
নায়েফকে উৎখাতের পরই কানাডা পালিয়ে যান আল-জাবরি।
সাক্ষাৎকারে জাবরি বলেন মধ্যপ্রাচ্যের একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক বন্ধু তাকে সতর্ক করেন যে তাকে হত্যার জন্য সালমান ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে গুপ্তঘাতকদের একটি দল পাঠাচ্ছে। সাংবাদিক জামাল খাসোগজিকে তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে হত্যা করার পরই তিনি এই সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন।
জাবরি বলেন সেসময় কানাডার অটোয়া বিমানবন্দরের নামার পর ডিএনএ পরীক্ষার সন্দেহজনক জিনিসপত্র পাওয়া গেলে ছ’জন সৌদি নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠায় কানাডার শুল্কবিভাগ।
গত বছর মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে মামলাও করেন জাবরি।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান অবশ্য বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। খাসোগজির খুনেও সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন না তিনি, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়ন, সেই কাজ তিনি অনুমোদন করেছিলেন।
সিবিএসে আল-জাবরির সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের পরই ওয়াশিংটনে সৌদি দুতাবাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “নিজের আর্থিক দুর্নীতির তথ্য আড়াল করতে দীর্ঘদিন থেকেই আল-জাবরি এ ধরনের বানোয়াট কথাবার্তা বলে আসছেন।”
বিবৃতিতে বলা হয় “দুর্নীতির মাধ্যমে কামানো কয়েকশ কোটি ডলার দিয়েই তিনি এখন পরিবারসহ বিলাসী জীবন যাপন করছেন।”
সৌদি আরবের বিভিন্ন সংস্থা তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে। ‘তার সম্পত্তিতে জালিয়াতির অঢেল প্রমাণ রয়েছে’ উল্লেখ করে তার সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছে কানাডার একটি আদালতও।
২০২০ সালের মার্চে মাসে সৌদি কর্তৃপক্ষ আল-জাবরির ছেলে ওমর ও মেয়ে সারাকে আটক করে। সৌদি আরবের এই পদক্ষেপকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে জাবরিকে দেশে নেওয়ার কৌশল হিসেবে সমালোচনা করে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
আল-জাবরি সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে মামলার করার দু মাসের মাথায় গত বছর নভেম্বর মাসে মুদ্রাপাচার ও দেশ থেকে পালানোর চেষ্টার অভিযোগে তার ছেলেকে নয় বছর ও মেয়েকে সাড়ে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেয় সৌদি আরবের আদালত। পরে দেশটির আপীল আদালতও এই দুইজনের অনুপস্থিতিতেই এক গোপন শুনানিতে সেই সাজা বহাল রাখে।