alt

আন্তর্জাতিক

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট: ‘ওমিক্রন’ নিয়ে এত উদ্বেগ কেন?

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক: : শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন (Omicron) শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, হংকং, বেলজিয়াম ও ইসরায়েলে মাত্র কয়েক ডজন মানুষের দেহে ভাইরাসের এ নতুন ধরনটির সংক্রমণ ধরা পড়লেও এর জিন বিন্যাস ভয় দেখাচ্ছে।

ডব্লিউএইচও গ্রিক বর্ণমালা অনুযায়ী নতুন এই বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্টের নাম দিয়েছে ওমিক্রন (Omicron)। স্পাইক প্রোটিনে ৩০ বারের বেশি নিজের রূপ বদলে ফেলায় এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনার এই নতুন ধরনকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে আখ্যা দেওয়ায় দেশে দেশে ফিরতে শুরু করেছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। ইতোমধ্যে অনেক দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য দরজা বন্ধ করেও দিয়েছে।

ওমিক্রন (Omicron) এর জিন কাঠামো এত বেশিবার পরিবর্তিত (মিউটেট) হয়েছে যে আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় ওমিক্রন অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং টিকাও এর বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন।

অবশ্য বিজ্ঞানীরা এটাও বলছেন, এ ভ্যারিয়েন্ট কতটা সংক্রামক বা এর আক্রমণের ধরন কতটা তীব্র হবে, টিকার সুরক্ষা এড়াতে পারবে কিনা কিংবা এর কারণে মহামারী পরিস্থিতির অবনতি হবে কিনা- এসব প্রশ্নের উত্তর অনুমানের ভিত্তিতে দেওয়া যাবে না। সেজন্য দরকার আরও পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ।

ফলে ওমিক্রন অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে বিশ্বজুড়ে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

ওমিক্রনের উৎপত্তি?

আফ্রিকার মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হওয়ার খবর মিলেছে। গত ২৪ নভেম্বর প্রথমবার এই ভ্যারিয়েন্টটি দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। দেশটিতে গত ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যায়।

যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, গত ৯ নভেম্বর বতসোয়ানায় সংগৃহীত একটি নমুনাতেও বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে। বিশ্বজুড়ে তুলকালাম ফেলে দেওয়া এই ভ্যারিয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও ইতোমধ্যে বতসোয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং এবং ইসরায়েলে শনাক্ত হয়েছে।

নতুন শনাক্ত হওয়া রূপান্তরিত ধরনটির স্পাইক প্রোটিন মূল করোনাভাইরাসের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। ফলে মূল করোনাভাইরাস থেকে এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অনেক বেশি—এমন শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।

এটা কি খুব বিপজ্জনক?

ডব্লিউএইচওর তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের যে কয়েকটি ধরন শনাক্ত হয়েছে; তার মধ্যে ওমিক্রনের ‘রি-ইনফেকশন’ বা পুনরায় সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি। অর্থাৎ—কেউ একবার এই ধরনে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও ফের একই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হতে পারেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সিকোয়েন্সিং প্ল্যাটফর্মের পরিচালক তুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৫২৯ এর রূপ বদলে ফেলার গতি-প্রকৃতি অত্যন্ত অস্বাভাবিক। এই ভ্যারিয়েন্টটি ইতোমধ্যে ৩০বারের বেশি মিউটেশন ঘটিয়েছে তার স্পাইক প্রোটিনে।

সাধারণত সব ধরনের ভাইরাসই সময় এবং প্রকৃতি-পরিবেশের ওপর নির্ভর করে নিজের রূপ বদলে ফেলে। অনেক সময় এই রূপ বদল তেমন কোনো প্রভাব না ফেললেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আগের চেয়ে শক্তিশালী রূপে হাজির। ওমিক্রনের অস্বাভাবিক এই রূপ বদল সেই শঙ্কাই বাড়িয়ে তুলেছে।

বি.১.১.৫২৯ এর মিউটেশন

গত ১১ নভেম্বর আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানার বিজ্ঞানীদের একটি দল একটি নমুনায় বি.১.১.৫২৯ শনাক্ত করেন। ভ্যারিয়েন্টটির স্পাইক প্রোটিনে ৩০ বারের বেশি পরিবর্তন ঘটায় তারা অবাক হয়ে যান। যদিও শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার গৌতেং প্রদেশে প্রথম শনাক্ত হলেও ভ্যারিয়েন্টটি দেশটির অন্য ৮টি প্রদেশেও পৌঁছে গেছে।

এর আগে, বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রকোপ ডেকে আনা করোনার আরেক সংক্রামক ধরন ডেল্টার মিউটেশনের তুলনায় নতুন শনাক্ত ওমিক্রনের রূপ বদলে ফেলার এই হার প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়া স্পাইক প্রোটিনে এত বেশিবার রূপ বদলে ফেলার কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদে অসুস্থ কোনো ব্যক্তি অথবা দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতার কোনো ব্যক্তির শরীরে হয়তো ভ্যারিয়েন্টটি জেঁকে বসেছিল।

টিকায় কাজ হবে?

নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনই নিরেট কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে বারণ করেছেন। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে তুলকালাম শুরু হওয়ায় বিদ্যমান টিকা এটিকে ঠেকাতে পারবে কি-না সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ওমিক্রনের ব্যাপারে বিশদ জানতে এবং বিদ্যমান টিকায় কাজ হবে কি-না; তা পরিষ্কার হতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

বিজ্ঞানীদের হাতে এখন পর্যন্ত যে তথ্য এসেছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওমিক্রনের রূপ বেশিবার বদল হয়েছে মূলত স্পাইক প্রোটিনে। স্পাইক প্রোটিনের জিনগত কাঠামোতে বদল হয়েছে ৩০ বার। জিনের প্রোটিনের অ্যামাইনো অ্যাসিডের স্থানে এই বদল ঘটেছে। এছাড়া ফিউরিন ক্লিভেজ সাইটেও মিউটেশন ঘটেছে ৩ বার। এই তিনবারে রূপ বদল না ঘটলেও চরিত্র বদলে ফেলেছে ওমিক্রন।

উদ্বেগ কি অহেতুক?

ওমিক্রনের রূপ বদল এত বেশিবার ঘটেছে, যা নিয়ে বিজ্ঞানীরাও রীতিমতো চিন্তিত। কারণ এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসের যে কয়েকটি টিকা আবিষ্কার হয়েছে; তার কোনোটি করোনার জেনেটিক উপাদান এমআরএনএর ওপর ভিত্তি করে আবার কোনোটি স্পাইক প্রোটিনের গঠনকে ধরে।

এছাড়া নিষ্ক্রিয় করোনাভাইরাসকে ব্যবহার করেও ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। চিন্তার কারণ এখানেই। যেহেতু এই ভাইরাসটি রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড ভাইরাস বা আরএনএ ভাইরাস তাই বিপদটা বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত হয়েছে যাদের শরীরে তাদের বেশিরভাগই টিকা নেওয়া ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে ২ হাজার ৪৬৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন করে আক্রান্তের এই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বি.১.১৫২৯ ভূমিকা রেখে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেসের (এনআইসিডি) বিজ্ঞানীরা।

আন্তর্জাতিক মহামারিবিদ ও জীবাণু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়েকবার রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কারণে ওমিক্রন ধরনটি টিকাপ্রতিরোধী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ করোনা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা ব্যক্তিরাও এই ধরনটির দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন।

বেশিরভাগ বিজ্ঞানীরই মত, গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে আরো পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যাবে কিন্তু প্রকৃতিতে এই ভাইরাস কেমন আচরণ করে, তা পর্যবেক্ষণ করলেও কিছু প্রশ্নের উত্তর খানিকটা আগে পাওয়া সম্ভব।

আমাদেরও সম্ভবত সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।

উদ্বেগ, আতঙ্ক থেকেই বিশ্বের অনেক দেশ এরই মধ্যে সতর্কতামূলক পদক্ষেপও নিয়ে নিয়েছে। কেননা মহামারীর শিক্ষাই হচ্ছে- সবসময় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে আপনার চলবে না, আগেই পদক্ষেপ নিতে হবে, সম্ভাব্য বিপদ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।

উত্তর কোরিয়া-রাশিয়া অস্ত্র হস্তান্তরের সাথে চীনের জাহাজ নোঙর করে রাখা

ছবি

পশ্চিমবঙ্গের ২০ জায়গায় তাপমাত্রা ছাড়াল ৪০ ডিগ্রি

ছবি

স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, দায়িত্বপালন বন্ধ করলেন সানচেজ

ছবি

মায়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠাল বিজিবি

ছবি

ইউক্রেনকে আরও ৬২ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা ব্রিটেনের

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে কে প্রশ্ন বাইডেনের

ছবি

ফের হামলা হলে ইসরায়েলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে : ইরান

ছবি

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল জ্যামাইকা

ছবি

বন্যার পর এবার আরব আমিরাতে ঘন কুয়াশার প্রকোপ

ছবি

গাজায় গণকবরে শত শত লাশ, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকারপ্রধান

ছবি

জলবায়ু বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এশিয়া

ছবি

মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেইন, ইসরায়েল সহায়তা বিল পাস

ছবি

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের ভেতর গভীরতম হামলা চালাল হিজবুল্লাহ

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের মূল আঘাত যাচ্ছে এশিয়ার ওপর দিয়ে: জাতিসংঘ

রুয়ান্ডা বিল পাস: কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইংলিশ চ্যানেলে ডুবে নিহত ৫

ছবি

পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি

ছবি

মালয়েশিয়ায় সামরিক মহড়ার সময় ২ হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ, নিহত ১০

ছবি

দফায় দফায় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো তাইওয়ান

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় ভারতীয় ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি

পাকিস্তান সফরে ইরানি প্রেসিডেন্ট

ছবি

ফের শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল তাইওয়ান

ছবি

ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের পদত্যাগ

ছবি

সরিয়ে নেওয়া হলো হাজার হাজার মানুষকে

ছবি

ফের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া

ছবি

মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মইজ্জুর দলের বড় জয়

ছবি

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করবেন নেতানিয়াহু

ছবি

রাফাহতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ১০, বেশিরভাগই শিশু

ছবি

সোমালি দস্যুদের মুক্তিপণ দেওয়ায় ইইউর উদ্বেগ, হুঁশিয়ারি

ছবি

মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে যাত্রীবাহী ফেরিডুবি, নিহত অন্তত ৫৮

ছবি

সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত

ছবি

মায়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা

ছবি

ইরাকে ইরানপন্থি মিলিশিয়া বাহিনীর ঘাঁটিতে বোমা হামলা

ছবি

মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল

ছবি

কাতার ছাড়তে চায় হামাস!

ছবি

বিমান হামলায় ৮ জন নিহতের পর রাশিয়ার বোম্বার নামানোর দাবি কিইভের

tab

আন্তর্জাতিক

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট: ‘ওমিক্রন’ নিয়ে এত উদ্বেগ কেন?

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক:

শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন (Omicron) শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, হংকং, বেলজিয়াম ও ইসরায়েলে মাত্র কয়েক ডজন মানুষের দেহে ভাইরাসের এ নতুন ধরনটির সংক্রমণ ধরা পড়লেও এর জিন বিন্যাস ভয় দেখাচ্ছে।

ডব্লিউএইচও গ্রিক বর্ণমালা অনুযায়ী নতুন এই বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্টের নাম দিয়েছে ওমিক্রন (Omicron)। স্পাইক প্রোটিনে ৩০ বারের বেশি নিজের রূপ বদলে ফেলায় এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনার এই নতুন ধরনকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে আখ্যা দেওয়ায় দেশে দেশে ফিরতে শুরু করেছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। ইতোমধ্যে অনেক দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য দরজা বন্ধ করেও দিয়েছে।

ওমিক্রন (Omicron) এর জিন কাঠামো এত বেশিবার পরিবর্তিত (মিউটেট) হয়েছে যে আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় ওমিক্রন অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং টিকাও এর বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন।

অবশ্য বিজ্ঞানীরা এটাও বলছেন, এ ভ্যারিয়েন্ট কতটা সংক্রামক বা এর আক্রমণের ধরন কতটা তীব্র হবে, টিকার সুরক্ষা এড়াতে পারবে কিনা কিংবা এর কারণে মহামারী পরিস্থিতির অবনতি হবে কিনা- এসব প্রশ্নের উত্তর অনুমানের ভিত্তিতে দেওয়া যাবে না। সেজন্য দরকার আরও পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ।

ফলে ওমিক্রন অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে বিশ্বজুড়ে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

ওমিক্রনের উৎপত্তি?

আফ্রিকার মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হওয়ার খবর মিলেছে। গত ২৪ নভেম্বর প্রথমবার এই ভ্যারিয়েন্টটি দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। দেশটিতে গত ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যায়।

যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, গত ৯ নভেম্বর বতসোয়ানায় সংগৃহীত একটি নমুনাতেও বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে। বিশ্বজুড়ে তুলকালাম ফেলে দেওয়া এই ভ্যারিয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও ইতোমধ্যে বতসোয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং এবং ইসরায়েলে শনাক্ত হয়েছে।

নতুন শনাক্ত হওয়া রূপান্তরিত ধরনটির স্পাইক প্রোটিন মূল করোনাভাইরাসের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। ফলে মূল করোনাভাইরাস থেকে এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অনেক বেশি—এমন শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।

এটা কি খুব বিপজ্জনক?

ডব্লিউএইচওর তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের যে কয়েকটি ধরন শনাক্ত হয়েছে; তার মধ্যে ওমিক্রনের ‘রি-ইনফেকশন’ বা পুনরায় সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি। অর্থাৎ—কেউ একবার এই ধরনে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও ফের একই ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হতে পারেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সিকোয়েন্সিং প্ল্যাটফর্মের পরিচালক তুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৫২৯ এর রূপ বদলে ফেলার গতি-প্রকৃতি অত্যন্ত অস্বাভাবিক। এই ভ্যারিয়েন্টটি ইতোমধ্যে ৩০বারের বেশি মিউটেশন ঘটিয়েছে তার স্পাইক প্রোটিনে।

সাধারণত সব ধরনের ভাইরাসই সময় এবং প্রকৃতি-পরিবেশের ওপর নির্ভর করে নিজের রূপ বদলে ফেলে। অনেক সময় এই রূপ বদল তেমন কোনো প্রভাব না ফেললেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আগের চেয়ে শক্তিশালী রূপে হাজির। ওমিক্রনের অস্বাভাবিক এই রূপ বদল সেই শঙ্কাই বাড়িয়ে তুলেছে।

বি.১.১.৫২৯ এর মিউটেশন

গত ১১ নভেম্বর আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানার বিজ্ঞানীদের একটি দল একটি নমুনায় বি.১.১.৫২৯ শনাক্ত করেন। ভ্যারিয়েন্টটির স্পাইক প্রোটিনে ৩০ বারের বেশি পরিবর্তন ঘটায় তারা অবাক হয়ে যান। যদিও শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার গৌতেং প্রদেশে প্রথম শনাক্ত হলেও ভ্যারিয়েন্টটি দেশটির অন্য ৮টি প্রদেশেও পৌঁছে গেছে।

এর আগে, বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রকোপ ডেকে আনা করোনার আরেক সংক্রামক ধরন ডেল্টার মিউটেশনের তুলনায় নতুন শনাক্ত ওমিক্রনের রূপ বদলে ফেলার এই হার প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়া স্পাইক প্রোটিনে এত বেশিবার রূপ বদলে ফেলার কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদে অসুস্থ কোনো ব্যক্তি অথবা দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতার কোনো ব্যক্তির শরীরে হয়তো ভ্যারিয়েন্টটি জেঁকে বসেছিল।

টিকায় কাজ হবে?

নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনই নিরেট কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে বারণ করেছেন। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে তুলকালাম শুরু হওয়ায় বিদ্যমান টিকা এটিকে ঠেকাতে পারবে কি-না সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ওমিক্রনের ব্যাপারে বিশদ জানতে এবং বিদ্যমান টিকায় কাজ হবে কি-না; তা পরিষ্কার হতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

বিজ্ঞানীদের হাতে এখন পর্যন্ত যে তথ্য এসেছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওমিক্রনের রূপ বেশিবার বদল হয়েছে মূলত স্পাইক প্রোটিনে। স্পাইক প্রোটিনের জিনগত কাঠামোতে বদল হয়েছে ৩০ বার। জিনের প্রোটিনের অ্যামাইনো অ্যাসিডের স্থানে এই বদল ঘটেছে। এছাড়া ফিউরিন ক্লিভেজ সাইটেও মিউটেশন ঘটেছে ৩ বার। এই তিনবারে রূপ বদল না ঘটলেও চরিত্র বদলে ফেলেছে ওমিক্রন।

উদ্বেগ কি অহেতুক?

ওমিক্রনের রূপ বদল এত বেশিবার ঘটেছে, যা নিয়ে বিজ্ঞানীরাও রীতিমতো চিন্তিত। কারণ এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসের যে কয়েকটি টিকা আবিষ্কার হয়েছে; তার কোনোটি করোনার জেনেটিক উপাদান এমআরএনএর ওপর ভিত্তি করে আবার কোনোটি স্পাইক প্রোটিনের গঠনকে ধরে।

এছাড়া নিষ্ক্রিয় করোনাভাইরাসকে ব্যবহার করেও ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। চিন্তার কারণ এখানেই। যেহেতু এই ভাইরাসটি রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড ভাইরাস বা আরএনএ ভাইরাস তাই বিপদটা বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি শনাক্ত হয়েছে যাদের শরীরে তাদের বেশিরভাগই টিকা নেওয়া ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে ২ হাজার ৪৬৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন করে আক্রান্তের এই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বি.১.১৫২৯ ভূমিকা রেখে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেসের (এনআইসিডি) বিজ্ঞানীরা।

আন্তর্জাতিক মহামারিবিদ ও জীবাণু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়েকবার রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কারণে ওমিক্রন ধরনটি টিকাপ্রতিরোধী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ করোনা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করা ব্যক্তিরাও এই ধরনটির দ্বারা সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন।

বেশিরভাগ বিজ্ঞানীরই মত, গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে আরো পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যাবে কিন্তু প্রকৃতিতে এই ভাইরাস কেমন আচরণ করে, তা পর্যবেক্ষণ করলেও কিছু প্রশ্নের উত্তর খানিকটা আগে পাওয়া সম্ভব।

আমাদেরও সম্ভবত সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।

উদ্বেগ, আতঙ্ক থেকেই বিশ্বের অনেক দেশ এরই মধ্যে সতর্কতামূলক পদক্ষেপও নিয়ে নিয়েছে। কেননা মহামারীর শিক্ষাই হচ্ছে- সবসময় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে আপনার চলবে না, আগেই পদক্ষেপ নিতে হবে, সম্ভাব্য বিপদ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।

back to top