alt

জাতীয়

স্কুলগামী শিশু শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে: পিপিআরসি এবং বিআইজিডি’র গবেষণা

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১

২০২০ সালের মার্চ থেকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরণের সংকট দেখা দিয়েছে। যেসব শিশুরা সমাজের দরিদ্র শ্রেণীভুক্ত, তাদের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন। অনেকদিন ধরে বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষায় ঘাটতি, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া, মানসিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যাসহ দীর্ঘমেয়াদি নানান ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কোভিড-১৯ এর কারণে দেশে দারিদ্রতার রূপ কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা জানতে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশান রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি) যৌথভাবে পুরো দেশজুড়ে তিনধাপে একটি টেলিফোন জরিপ করে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত এটি করা হয়। এই গবেষণার ৩য় ধাপের দ্বিতীয় অংশ হল “কোভিড ইমপ্যাক্ট অন এডুকেশন লাইফ অফ চিলড্রেন”। ১০ মে সোমবার গবেষনার ফলাফল যৌথভাবে উপস্থাপন করেন পিপিআরসি’র চেয়ারম্যান ডঃ হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ডঃ ইমরান মতিন। ফলাফলে দেখা গেছে, শিক্ষণ ঘাটতির মুখে রয়েছে প্রাথমিক স্তরের ১৯% এবং মাধ্যমিক স্তরের ২৫% শিক্ষার্থী। ৩য় ধাপের ৬,০৯৯ টি পরিবারের মধ্যে দ্বিতীয় অংশের জরিপে ৪,৯৪০টি পরিবারের স্কুলগামী শিশুদের ওপরে গবেষণা করা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে ৩টি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে- স্কুলের ধরণ (প্রাথমিক/মাধ্যমিক), স্থান (শহর/গ্রাম) এবং লিঙ্গ (পুরুষ/নারী)। হতদরিদ্র, মাঝারি দরিদ্র, ঝুঁকিপূর্ণ দরিদ্র এবং দরিদ্র নয় এমন পরিবারগুলোর উপাত্ত থেকে এই ফল পাওয়া যায়।

এমনকি মহামারী শুরুর আগে মাধ্যমিক স্কুলগামী শিশুদের একটি বড় অংশ (২১%) ও প্রাথমিক স্কুলগামী শিশুদের একটি বড় অংশ (১৪%) স্কুলের বাইরে ছিল। গ্রামের চেয়ে শহরের বস্তিতে থাকা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশুদের মাঝে স্কুলের বাইরে থাকার হার বেশি। যারা স্কুলে ভর্তি হয়েছিলো, মহামারীতে বন্ধ থাকার কারণে তাদের সমস্ত রুটিন এলোমেলো হয়ে গেছে। যদিও অনেকেই পড়াশুনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে তবুও অধিকাংশ শিক্ষার্থী ছয়টি উপায়ে তাদের পড়াশোনা চালিয়েছে। এগুলো হলো তদারকিবিহীন নিজস্ব পড়াশোনা, পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় পড়াশোনা, অনলাইনে বা টিভির মাধ্যমে দূরবর্তী শিক্ষণ, কোচিং/প্রাইভেট এবং স্কুল থেকে মাদ্রাসায় ভর্তি। তবে এসব ক্ষেত্রেও অনেক অনিয়ম ছিল।

কোভিড-১৯ এর কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিশুদের মাঝে সৃষ্ট শিক্ষণ ঘাটতি পর্যবেক্ষণে এই সমীক্ষাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো তৈরি করেছে। দেখা গেছে, এই ঝুঁকিটি সৃষ্টি হয়েছে পড়াশোনা না করা এবং সঠিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা না করার কারণে যেমন তদারকি ছাড়া নিজে নিজেই পড়া ও অনিয়মিত পড়া। প্রাথমিক স্তরের কমপক্ষে ১৯% এবং মাধ্যমিকের ২৫% শিক্ষার্থী শিক্ষণ ঘাটতিজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে। সঠিক ব্যবস্থা না নেয়া হলে এর ফলে ভবিষ্যতে শেখার ক্ষমতা কমে যাবে এবং স্কুলের বাইরে থাকার হার বাড়বে। শহরের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকি বেশি বলে পরিলক্ষিত হয়েছে- নারীদের ২৬% এবং পুরুষদের ৩০% রয়েছে এই ঝুঁকিতে। দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের মাঝে যারা অতি দরিদ্র, সেইসব পরিবারের মাধ্যমিক স্কুলগামী ৩৩% পুরুষ শিক্ষার্থীর কোভিড-সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধাক্কায় স্কুল ছেড়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফলাফলে আরও দেখা গেছে, দূরবর্তী শিক্ষণের জন্য যে সুবিধা থাকা দরকার তা আছে বা ব্যবহার করছে ১০% শিক্ষার্থী। ফলে সরকারি ও বেসরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে এই বন্ধে লেখাপড়া শেখার হার খুব কম। অবশ্য যারা দরিদ্র নয় এবং শহরের বস্তিতে থাকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সেসব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার একটু বেশি। একই সঙ্গে কোচিং-এ বা প্রাইভেট টিউশনে যাওয়ার প্রবণতা মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝেই বেশি (৬১%) বিশেষত যারা দরিদ্র নয়, তাদের মাঝে এই হার বেশি (৭৪%)। আবার শহরের বস্তি এলাকায় খরচ বেশি হওয়ার কারণে কোচিং এ যুক্ত হওয়ার হার কম। পড়াশোনায় যুক্ত থাকার আরেকটি পদ্ধতি হলো পিতামাতা বা ভাইবোনের সহায়তায় পড়া। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ের চেয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে এই সহায়তাপ্রাপ্তির হার কম। মাদ্রাসায় বদলী হওয়ার প্রবণতা বেড়ে আগের চেয়ে চার গুণ হয়েছে এবং মাধ্যমিকের চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ।

যদিও ৯৫% অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পুনরায় পাঠাতে আগ্রহী তবুও অর্থনৈতিক অবস্থাটি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মার্চ অবদি শিক্ষাখরচ বেড়েছে ১২ গুণ। ফলে শিক্ষার সুযোগপ্রাপ্তিতে সংকট তৈরি হয়েছে। স্কুলগামী ছেলে শিশুদের ৮% এবং মেয়ে শিশুদের ৩% কোনো না কোনো উপার্জন প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলে যেখানে শহরের তুলনায় মানুষের আয় পুনরুদ্ধারের ও কাজের ভালো সুযোগ রয়েছে সেখানেও এই হার বেশি।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে মহামারীতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন। শহরে বসবাসরত ১০ থেকে ২০ বছর বয়সীরা (১৫.৭%) গ্রামের (৮.৪%) তুলনায় দ্বিগুণ মানসিক চাপে রয়েছে। অভিভাবকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী এই মানসিক চাপের লক্ষনগুলো হলো অধৈর্য্য ভাব প্রকাশ, রাগ বা উগ্রভাব এবং বাইরে যেতে ভয় পাওয়া। ঘরের বাইরে যেতে ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা আবার গ্রামের চেয়ে শহরের তরুণদের মাঝে বেশি।

এই জরিপে পিতামাতার ব্যবহার ও সম্পৃক্ততাও পর্যবেক্ষন করা হয়েছে। অধিকাংশ অভিভাবক শিক্ষার ঘাটতি (৪৮%) এবং অনুৎসাহ (৫৯%) নিয়ে চিন্তিত। তারা (৪৬%) শিক্ষার ব্যয়ভার নিয়েও শঙ্কিত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বরং তারা (১৪%) কম চিন্তিত। যদিও অর্ধেক অভিভাবক বিলম্বিত/স্নাতক পাস সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন, প্রায় ৪৪% স্থগিত পরীক্ষা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাস হলে ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন ৩১% অভিভাবক।

ডঃ ইমরান মতিন বলেন, “স্কুলগামী শিশুদের একটা বড় অংশ শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে রয়েছে। সুতরাং, শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে শিশুদের খাপ খাওয়াতে স্কুল পুনরায় খোলার সময় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার একটি মিশ্র পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার।”

সমাপনী বক্তব্যে ডঃ হোসেন জিল্লুর রহমান স্কুল বন্ধের ফলে সৃষ্ট ৩টি প্রধান সংকটের কথা তুলে ধরেন- শিক্ষণ ঘাটতি, শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন স্তরের সামাজিক দূরত্ব। তিনি বলেন, আমরা কোভিডের কারণে একটি অনিশ্চয়তার মাঝে বাস করছি। কোভিড এর ২য় ঢেউকে আমলে নিয়ে পিপিআরসি-বিআইজিডি’র পরামর্শ হচ্ছে শিক্ষার ঘাটতি ঠেকাতে, শিক্ষায় অনাগ্রহ কমাতে এবং অভিভাবকদের শিক্ষা সংক্রান্ত আশংকা দূর করতে পুনরায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া দরকার। তিনি আরও বলেন, কোভিড পরবর্তী পর্যায়ে মানবসম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য অতিরিক্ত কার্যক্রম, ক্লাসের বাইরের শিক্ষণ কর্মসূচিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ শুধুমাত্র শিক্ষা থেকেই দূরে সরে যাবে না, অদক্ষ হিসেবে বেড়ে উঠবে।

ছবি

ঢাকায় গ্রিসের দূতাবাস স্থাপন ও জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা

ছবি

টিসিবির তালিকা হালনাগাদ করতে চাই:বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গমের আবাদ কম

ছবি

ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে চায় ব্যবসায়ীরা আপত্তি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

অনিবন্ধিত অনলাইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবো : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিখাত : মন্ত্রী

ছবি

দেশে ফিরতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে নাবিকদের

ছবি

মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর ৩ ছবি প্রকাশ

ছবি

২ মে বসছে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন

ছবি

কারো যাতে ডেঙ্গু না হয় সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

মুক্তিপণ দেওয়ার ছবি নিয়ে যা বললেন নৌ প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লঞ্চে বেড়েছে ঢাকায় ফেরা যাত্রীর চাপ

ছবি

নববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট ভবিষ্যৎ নির্মাণে একযোগে কাজ করার আহ্বান অর্থ প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

জিম্মি জাহাজটি কীভাবে মুক্ত হলো, জানাল মালিকপক্ষ

ছবি

সোমানিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে এমভি আব্দুল্লাহ মুক্ত ২৩ নাবিক অক্ষত

ছবি

মুক্তিপণ নিয়ে তীরে উঠেই ৮ জলদস্যু গ্রেপ্তার

ছবি

দেশের প্রতি ভালোবাসার বার্তা এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের

ছবি

কত টাকায় মুক্তি পেলেন জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিক

ছবি

সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক মুক্ত

ছবি

আজ পহেলা বৈশাখ,নতুন বছর বরণের দিন,বাঙালির উৎসবের দিন

ছবি

চালের বস্তায় যেসব লেখা বাধ্যতামূলক করল সরকার

ছবি

নাবিকরা শিগগিরই মুক্তি পাবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

পহেলা বৈশাখে নারীরা হেনস্তার শিকার হলে জানাবেন: র‌্যাব ডিজি

ছবি

নববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচছা, ‘সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে’ একযোগে কাজ করার আহবান

ছবি

বৈশাখের শুরুতে বৃষ্টির আভাস, বাড়বে গরম

ছবি

সদরঘাটে দুর্ঘটনা: দুই লঞ্চের আটক ৫

ছবি

সদরঘাটে দুর্ঘটনায় ২ লঞ্চের রুট পারমিট বাতিলসহ তদন্তে কমিটি গঠন

ছবি

ঢাকা মিরপুর চিড়িয়াখানায় হাতির আছাড়ে নিহত কিশোর

ছবি

পরিদর্শনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী: ছুটিতে হাসপাতাল কেমন চলছে?

ছবি

দেশ থেকে অপরাজনীতি চিরতরে দূর হওয়া প্রযোজন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

আওয়ামী লীগ নিতে নয় মানুষকে দিতে এসেছে:

ঢকায় বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত

ছবি

আজ ঈদুল ফিতর, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব

ছবি

প্রধানমন্ত্রী ঈদের দিন গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন

ছবি

রাষ্ট্রপতি ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন

ছবি

প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন

tab

জাতীয়

স্কুলগামী শিশু শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে: পিপিআরসি এবং বিআইজিডি’র গবেষণা

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

মঙ্গলবার, ১১ মে ২০২১

২০২০ সালের মার্চ থেকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরণের সংকট দেখা দিয়েছে। যেসব শিশুরা সমাজের দরিদ্র শ্রেণীভুক্ত, তাদের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন। অনেকদিন ধরে বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষায় ঘাটতি, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া, মানসিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যাসহ দীর্ঘমেয়াদি নানান ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কোভিড-১৯ এর কারণে দেশে দারিদ্রতার রূপ কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা জানতে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশান রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি) যৌথভাবে পুরো দেশজুড়ে তিনধাপে একটি টেলিফোন জরিপ করে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত এটি করা হয়। এই গবেষণার ৩য় ধাপের দ্বিতীয় অংশ হল “কোভিড ইমপ্যাক্ট অন এডুকেশন লাইফ অফ চিলড্রেন”। ১০ মে সোমবার গবেষনার ফলাফল যৌথভাবে উপস্থাপন করেন পিপিআরসি’র চেয়ারম্যান ডঃ হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ডঃ ইমরান মতিন। ফলাফলে দেখা গেছে, শিক্ষণ ঘাটতির মুখে রয়েছে প্রাথমিক স্তরের ১৯% এবং মাধ্যমিক স্তরের ২৫% শিক্ষার্থী। ৩য় ধাপের ৬,০৯৯ টি পরিবারের মধ্যে দ্বিতীয় অংশের জরিপে ৪,৯৪০টি পরিবারের স্কুলগামী শিশুদের ওপরে গবেষণা করা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে ৩টি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে- স্কুলের ধরণ (প্রাথমিক/মাধ্যমিক), স্থান (শহর/গ্রাম) এবং লিঙ্গ (পুরুষ/নারী)। হতদরিদ্র, মাঝারি দরিদ্র, ঝুঁকিপূর্ণ দরিদ্র এবং দরিদ্র নয় এমন পরিবারগুলোর উপাত্ত থেকে এই ফল পাওয়া যায়।

এমনকি মহামারী শুরুর আগে মাধ্যমিক স্কুলগামী শিশুদের একটি বড় অংশ (২১%) ও প্রাথমিক স্কুলগামী শিশুদের একটি বড় অংশ (১৪%) স্কুলের বাইরে ছিল। গ্রামের চেয়ে শহরের বস্তিতে থাকা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশুদের মাঝে স্কুলের বাইরে থাকার হার বেশি। যারা স্কুলে ভর্তি হয়েছিলো, মহামারীতে বন্ধ থাকার কারণে তাদের সমস্ত রুটিন এলোমেলো হয়ে গেছে। যদিও অনেকেই পড়াশুনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে তবুও অধিকাংশ শিক্ষার্থী ছয়টি উপায়ে তাদের পড়াশোনা চালিয়েছে। এগুলো হলো তদারকিবিহীন নিজস্ব পড়াশোনা, পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় পড়াশোনা, অনলাইনে বা টিভির মাধ্যমে দূরবর্তী শিক্ষণ, কোচিং/প্রাইভেট এবং স্কুল থেকে মাদ্রাসায় ভর্তি। তবে এসব ক্ষেত্রেও অনেক অনিয়ম ছিল।

কোভিড-১৯ এর কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিশুদের মাঝে সৃষ্ট শিক্ষণ ঘাটতি পর্যবেক্ষণে এই সমীক্ষাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো তৈরি করেছে। দেখা গেছে, এই ঝুঁকিটি সৃষ্টি হয়েছে পড়াশোনা না করা এবং সঠিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা না করার কারণে যেমন তদারকি ছাড়া নিজে নিজেই পড়া ও অনিয়মিত পড়া। প্রাথমিক স্তরের কমপক্ষে ১৯% এবং মাধ্যমিকের ২৫% শিক্ষার্থী শিক্ষণ ঘাটতিজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে। সঠিক ব্যবস্থা না নেয়া হলে এর ফলে ভবিষ্যতে শেখার ক্ষমতা কমে যাবে এবং স্কুলের বাইরে থাকার হার বাড়বে। শহরের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকি বেশি বলে পরিলক্ষিত হয়েছে- নারীদের ২৬% এবং পুরুষদের ৩০% রয়েছে এই ঝুঁকিতে। দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের মাঝে যারা অতি দরিদ্র, সেইসব পরিবারের মাধ্যমিক স্কুলগামী ৩৩% পুরুষ শিক্ষার্থীর কোভিড-সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধাক্কায় স্কুল ছেড়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফলাফলে আরও দেখা গেছে, দূরবর্তী শিক্ষণের জন্য যে সুবিধা থাকা দরকার তা আছে বা ব্যবহার করছে ১০% শিক্ষার্থী। ফলে সরকারি ও বেসরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে এই বন্ধে লেখাপড়া শেখার হার খুব কম। অবশ্য যারা দরিদ্র নয় এবং শহরের বস্তিতে থাকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সেসব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার একটু বেশি। একই সঙ্গে কোচিং-এ বা প্রাইভেট টিউশনে যাওয়ার প্রবণতা মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝেই বেশি (৬১%) বিশেষত যারা দরিদ্র নয়, তাদের মাঝে এই হার বেশি (৭৪%)। আবার শহরের বস্তি এলাকায় খরচ বেশি হওয়ার কারণে কোচিং এ যুক্ত হওয়ার হার কম। পড়াশোনায় যুক্ত থাকার আরেকটি পদ্ধতি হলো পিতামাতা বা ভাইবোনের সহায়তায় পড়া। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ের চেয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে এই সহায়তাপ্রাপ্তির হার কম। মাদ্রাসায় বদলী হওয়ার প্রবণতা বেড়ে আগের চেয়ে চার গুণ হয়েছে এবং মাধ্যমিকের চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ।

যদিও ৯৫% অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পুনরায় পাঠাতে আগ্রহী তবুও অর্থনৈতিক অবস্থাটি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মার্চ অবদি শিক্ষাখরচ বেড়েছে ১২ গুণ। ফলে শিক্ষার সুযোগপ্রাপ্তিতে সংকট তৈরি হয়েছে। স্কুলগামী ছেলে শিশুদের ৮% এবং মেয়ে শিশুদের ৩% কোনো না কোনো উপার্জন প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলে যেখানে শহরের তুলনায় মানুষের আয় পুনরুদ্ধারের ও কাজের ভালো সুযোগ রয়েছে সেখানেও এই হার বেশি।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে মহামারীতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন। শহরে বসবাসরত ১০ থেকে ২০ বছর বয়সীরা (১৫.৭%) গ্রামের (৮.৪%) তুলনায় দ্বিগুণ মানসিক চাপে রয়েছে। অভিভাবকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী এই মানসিক চাপের লক্ষনগুলো হলো অধৈর্য্য ভাব প্রকাশ, রাগ বা উগ্রভাব এবং বাইরে যেতে ভয় পাওয়া। ঘরের বাইরে যেতে ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা আবার গ্রামের চেয়ে শহরের তরুণদের মাঝে বেশি।

এই জরিপে পিতামাতার ব্যবহার ও সম্পৃক্ততাও পর্যবেক্ষন করা হয়েছে। অধিকাংশ অভিভাবক শিক্ষার ঘাটতি (৪৮%) এবং অনুৎসাহ (৫৯%) নিয়ে চিন্তিত। তারা (৪৬%) শিক্ষার ব্যয়ভার নিয়েও শঙ্কিত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বরং তারা (১৪%) কম চিন্তিত। যদিও অর্ধেক অভিভাবক বিলম্বিত/স্নাতক পাস সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন, প্রায় ৪৪% স্থগিত পরীক্ষা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাস হলে ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন ৩১% অভিভাবক।

ডঃ ইমরান মতিন বলেন, “স্কুলগামী শিশুদের একটা বড় অংশ শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে রয়েছে। সুতরাং, শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে শিশুদের খাপ খাওয়াতে স্কুল পুনরায় খোলার সময় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার একটি মিশ্র পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার।”

সমাপনী বক্তব্যে ডঃ হোসেন জিল্লুর রহমান স্কুল বন্ধের ফলে সৃষ্ট ৩টি প্রধান সংকটের কথা তুলে ধরেন- শিক্ষণ ঘাটতি, শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন স্তরের সামাজিক দূরত্ব। তিনি বলেন, আমরা কোভিডের কারণে একটি অনিশ্চয়তার মাঝে বাস করছি। কোভিড এর ২য় ঢেউকে আমলে নিয়ে পিপিআরসি-বিআইজিডি’র পরামর্শ হচ্ছে শিক্ষার ঘাটতি ঠেকাতে, শিক্ষায় অনাগ্রহ কমাতে এবং অভিভাবকদের শিক্ষা সংক্রান্ত আশংকা দূর করতে পুনরায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া দরকার। তিনি আরও বলেন, কোভিড পরবর্তী পর্যায়ে মানবসম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য অতিরিক্ত কার্যক্রম, ক্লাসের বাইরের শিক্ষণ কর্মসূচিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ শুধুমাত্র শিক্ষা থেকেই দূরে সরে যাবে না, অদক্ষ হিসেবে বেড়ে উঠবে।

back to top