alt

জাতীয়

আশি শতাংশ মানুষের টিকার কী হবে?

পরিকল্পনা তিন মাসেই আটকে গেছে

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : সোমবার, ১৭ মে ২০২১

প্রতিমাসে ২৫ লাখ করে প্রথম ছয়মাসে দেড় কোটি মানুষকে (১৮ বছরের নিচে নয়) করোনার টিকাদানের পরিকল্পনা ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এভাবে দুই বছরে পাঁচ ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকাদানের পরিকল্পনা রয়েছে কিন্তু টিকা স্বল্পতায় সেই পরিকল্পনা তিনমাসেই আটকে গেছে। গত ২৭ জানুয়ারি দেশে করোনার টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন হয়। এর তিন মাসের মাথায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকাদান বন্ধ হয়ে যায়।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মোট জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশকে টিকা কর্মসূচির আওতায় নিতে না পারলে এর মূল লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ এই টিকার কার্যকারিতা মানবদেহে কতদিন থাকতে পারে সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের মতে, টিকার কার্যক্ষমতা ক্ষেত্রভেদে তিন মাস থেকে এক বছর হতে পারে; কারও কারও ক্ষেত্রে ‘লাইফটাইম’ও হতে পারে। এ কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাইকে টিকার আওতায় নিতে না পারলে এবং করোনা সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না এলে পুনরায় একটি বড় জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিতে হতে পারে।

টিকার কার্যকারিতার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও খ্যাতিমান জনস্বাস্থ্যবিদ প্রফেসর ডা. বেনজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র টিকার কার্যকারিতার মেয়াদ ছয়মাস থেকে এক বছর হতে পারে বলে বলা হচ্ছে; এর বেশি হবে কিনা সেটি নিশ্চিত নয়... গবেষণা শেষ হয়নি। এক বছর পর কার্যকারিতা কমতে থাকবে। এ জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাইকে টিকার আওতায় নিতে না পারলে ‘তৃতীয়’ আরেকটি ‘বুস্টার ডোজ’ দিতে হতে পারে; যদি এতদিন করোনাভাইরাস থাকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিকদের বিদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রেও দীর্ঘদিন বিধিনিষেধের আওতায় থাকতে হতে পারে।’

এসব বিষয়ে জানার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘প্রথম ডোজ দেয়ার দুই থেকে তিনমাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দিলেই হয়। প্রথম ডোজ নেয়ার পর অ্যান্টিবডি অনেকদিন থাকে।’

নির্দিষ্ট সময়ে ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর সবাইকে টিকার আওতায় নিতে না পারলে মূল পরিকল্পনা ব্যাহত হতে পারে কিনা জানতে চাইলে বিশিষ্ট এই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, ‘আকস্মিক টিকার সংকট হয়েছে।’

ভারতের পাশাপাশি প্রথমদিকে বিকল্প উপায়ে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করলে সংকট কেটে যেত কিনা জানতে চাইলে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তা হয়তো করা যায়নি।’

চুক্তি অনুযায়ী ছয়মাসে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের কিন্তু সেরাম কর্তৃপক্ষ তিন ধাপে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে বাংলাদেশকে। চুক্তি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ায় প্রথম ডোজের টিকাদান বন্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের টিকাদানও ৫/৬ দিন পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার (১৭ মে) সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে আমরা চিন্তিত। দ্বিতীয় ডোজের জন্য ভারত, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও চেষ্টা করেছেন। ভারতের কাছে অর্ডার আছে তিন কোটি, পেয়েছি ৭০ লাখ।’

এদিকে টিকা সংকট কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও করোনার টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে আগামী দু’একদিনের মধ্যে জবাব দেবে দেশটি। সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাকে জানিয়েছেন, বিষয়টি তাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছে বলেও জানান তিনি।

দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে। সেরাম দুই ধাপে বাংলাদেশকে ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে আর ভারত সরকার উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে বাংলাদেশকে। এ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগ মোট এক কোটি তিন লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে।

মোট টিকার মধ্যে সোমবার পর্যন্ত দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ৯৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯৩৫ ডোজ টিকা প্রয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন (৮০ শতাংশের মধ্যে ৪ শতাংশ); আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার ২৩ জন (৮০ শতাংশের মধ্যে ২ শতাংশ)। এ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে এই মুহূর্তে মাত্র সাত লাখ ২৩ হাজার ৬৫ ডোজ টিকা রয়েছে।

কিন্তু টিকা পরিবহন, স্থানান্তর ও কর্মসূচি চলাকালে যদি ১ শতাংশ টিকাও নষ্ট বা অপচয় হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে মজুদ আরও এক লাখ ডোজ কমে যাবে। পাশর্^বর্তী দেশ ভারতে টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় ৫ থেকে ৬ শতাংশ টিকা নষ্ট হয়েছে দেশটির সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ টিকার মজুদ রয়েছে তাতে প্রথম ডোজ নেয়া প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে তাদের ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র ‘কোভিশিল্ড’ টিকাই দিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম ১৬ মে এক স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেন, ‘আমাদের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া চলছে। এখন পর্যন্ত যা মজুদ আছে দ্বিতীয় ডোজ যাদের পাওয়ার কথা তাদের শতভাগকে আমরা দিতে পারবো না।’

টিকা পেতে বিভিন্ন কূটনৈতিক মাধ্যমসহ অন্যান্য চ্যানেলে যোগাযোগ চলছে- জানিয়ে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার যে ঘাটতি আছে, ভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারব। আমরা ৮ সপ্তাহের ব্যবধানে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটি কোন কোন দেশে ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। কাজেই সেক্ষেত্রে কিছু সময় আমরা পাচ্ছি।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীনের যে ভ্যাকসিন এসেছে সেটির প্রথম ডোজ আগামী ২৫ মে থেকে দেয়া শুরু হবে। এ ছাড়া আমরা রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলেছি ভ্যাকসিনের জন্য। ফাইনাল কিছু হলে জানতে পারবেন।’

টিকা পরিকল্পনায় যা ছিল

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ডিসেম্বরেই করোনার টিকাদানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই বছরে পাঁচ ধাপে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার কথা। বাকি ২০ শতাংশ শিশু ও নানা জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদের টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেই।

এ হিসেবে টিকা পাওয়ার উপযুক্ত নাগরিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন। মোট তিন পর্বে (ফেজ) পাঁচ ধাপে তাদের করোনা টিকা দেয়া হবে। টিকায় অগ্রাধিকার পাবে করোনা প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ। জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা অনুযায়ী, জনপ্রতি দুটি করে মোট ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ১৬ ডোজ টিকা দেয়া হবে।

পরিকল্পনায় প্রথম ফেজের টিকা দুই দুই ধাপে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন টিকা পাবে, যা মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন টিকার আওতায় নেয়ার কথা।

প্রথম পর্যায়ে দুই ধাপে বিতরণ শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকা দেয়া শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ পর্যায়ে ১০ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮ জন (মোট জনসংখ্যার ১১ থেকে ২০ শতাংশ) টিকা পাওয়ার কথা।

তৃতীয় পর্যায়েও দুই ধাপে করোনা টিকা দেয়া হবে। এ পর্যায়ের প্রথম ধাপে জনসংখ্যার আরও ২০ শতাংশ অর্থাৎ তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জনকে টিকা দেয়া হবে। শেষ ধাপে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জনকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

ছবি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে : আরাফাত

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং মুজিবনগর দিবস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মেকে জানাতে হবে

ছবি

স্থানীয় সরকার নির্বাচ‌নে ভোটার উপ‌স্থি‌তি সংসদ নির্বাচ‌নের ‌চে‌য়ে বে‌শি থাকবে

ছবি

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

ছবি

থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

জুন-জুলাইয়ে দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার হার বেশি

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

এথেন্স সম্মেলনে দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ছবি

কৃষকরাই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি: স্পিকার

ছবি

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাবেক ইউপি সদস্য গুলিবিদ্ধ

ছবি

তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ভোট ২৯ মে

ছবি

এমভি আবদুল্লাহ : ২১ নাবিক দেশে ফিরবেন জাহাজে, বাকি দুজন বিমানে

ছবি

৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগে প্রক্রিয়া শুরু, আবেদনের নিয়ম

ছবি

ঢাকায় গ্রিসের দূতাবাস স্থাপন ও জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা

ছবি

টিসিবির তালিকা হালনাগাদ করতে চাই:বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গমের আবাদ কম

ছবি

ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে চায় ব্যবসায়ীরা আপত্তি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

অনিবন্ধিত অনলাইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবো : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিখাত : মন্ত্রী

ছবি

দেশে ফিরতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে নাবিকদের

ছবি

মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর ৩ ছবি প্রকাশ

ছবি

২ মে বসছে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন

ছবি

কারো যাতে ডেঙ্গু না হয় সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

মুক্তিপণ দেওয়ার ছবি নিয়ে যা বললেন নৌ প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লঞ্চে বেড়েছে ঢাকায় ফেরা যাত্রীর চাপ

ছবি

নববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট ভবিষ্যৎ নির্মাণে একযোগে কাজ করার আহ্বান অর্থ প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

জিম্মি জাহাজটি কীভাবে মুক্ত হলো, জানাল মালিকপক্ষ

ছবি

সোমানিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে এমভি আব্দুল্লাহ মুক্ত ২৩ নাবিক অক্ষত

ছবি

মুক্তিপণ নিয়ে তীরে উঠেই ৮ জলদস্যু গ্রেপ্তার

ছবি

দেশের প্রতি ভালোবাসার বার্তা এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের

ছবি

কত টাকায় মুক্তি পেলেন জিম্মি ২৩ বাংলাদেশি নাবিক

ছবি

সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক মুক্ত

ছবি

আজ পহেলা বৈশাখ,নতুন বছর বরণের দিন,বাঙালির উৎসবের দিন

ছবি

চালের বস্তায় যেসব লেখা বাধ্যতামূলক করল সরকার

ছবি

নাবিকরা শিগগিরই মুক্তি পাবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

tab

জাতীয়

আশি শতাংশ মানুষের টিকার কী হবে?

পরিকল্পনা তিন মাসেই আটকে গেছে

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

সোমবার, ১৭ মে ২০২১

প্রতিমাসে ২৫ লাখ করে প্রথম ছয়মাসে দেড় কোটি মানুষকে (১৮ বছরের নিচে নয়) করোনার টিকাদানের পরিকল্পনা ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এভাবে দুই বছরে পাঁচ ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকাদানের পরিকল্পনা রয়েছে কিন্তু টিকা স্বল্পতায় সেই পরিকল্পনা তিনমাসেই আটকে গেছে। গত ২৭ জানুয়ারি দেশে করোনার টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন হয়। এর তিন মাসের মাথায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকাদান বন্ধ হয়ে যায়।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মোট জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশকে টিকা কর্মসূচির আওতায় নিতে না পারলে এর মূল লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ এই টিকার কার্যকারিতা মানবদেহে কতদিন থাকতে পারে সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের মতে, টিকার কার্যক্ষমতা ক্ষেত্রভেদে তিন মাস থেকে এক বছর হতে পারে; কারও কারও ক্ষেত্রে ‘লাইফটাইম’ও হতে পারে। এ কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাইকে টিকার আওতায় নিতে না পারলে এবং করোনা সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না এলে পুনরায় একটি বড় জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিতে হতে পারে।

টিকার কার্যকারিতার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও খ্যাতিমান জনস্বাস্থ্যবিদ প্রফেসর ডা. বেনজির আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র টিকার কার্যকারিতার মেয়াদ ছয়মাস থেকে এক বছর হতে পারে বলে বলা হচ্ছে; এর বেশি হবে কিনা সেটি নিশ্চিত নয়... গবেষণা শেষ হয়নি। এক বছর পর কার্যকারিতা কমতে থাকবে। এ জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাইকে টিকার আওতায় নিতে না পারলে ‘তৃতীয়’ আরেকটি ‘বুস্টার ডোজ’ দিতে হতে পারে; যদি এতদিন করোনাভাইরাস থাকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিকদের বিদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রেও দীর্ঘদিন বিধিনিষেধের আওতায় থাকতে হতে পারে।’

এসব বিষয়ে জানার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘প্রথম ডোজ দেয়ার দুই থেকে তিনমাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দিলেই হয়। প্রথম ডোজ নেয়ার পর অ্যান্টিবডি অনেকদিন থাকে।’

নির্দিষ্ট সময়ে ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর সবাইকে টিকার আওতায় নিতে না পারলে মূল পরিকল্পনা ব্যাহত হতে পারে কিনা জানতে চাইলে বিশিষ্ট এই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, ‘আকস্মিক টিকার সংকট হয়েছে।’

ভারতের পাশাপাশি প্রথমদিকে বিকল্প উপায়ে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করলে সংকট কেটে যেত কিনা জানতে চাইলে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তা হয়তো করা যায়নি।’

চুক্তি অনুযায়ী ছয়মাসে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের কিন্তু সেরাম কর্তৃপক্ষ তিন ধাপে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে বাংলাদেশকে। চুক্তি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ায় প্রথম ডোজের টিকাদান বন্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের টিকাদানও ৫/৬ দিন পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার (১৭ মে) সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে আমরা চিন্তিত। দ্বিতীয় ডোজের জন্য ভারত, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও চেষ্টা করেছেন। ভারতের কাছে অর্ডার আছে তিন কোটি, পেয়েছি ৭০ লাখ।’

এদিকে টিকা সংকট কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও করোনার টিকা চেয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে আগামী দু’একদিনের মধ্যে জবাব দেবে দেশটি। সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাকে জানিয়েছেন, বিষয়টি তাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছে বলেও জানান তিনি।

দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে। সেরাম দুই ধাপে বাংলাদেশকে ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে আর ভারত সরকার উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে বাংলাদেশকে। এ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগ মোট এক কোটি তিন লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে।

মোট টিকার মধ্যে সোমবার পর্যন্ত দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ৯৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯৩৫ ডোজ টিকা প্রয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন (৮০ শতাংশের মধ্যে ৪ শতাংশ); আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার ২৩ জন (৮০ শতাংশের মধ্যে ২ শতাংশ)। এ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে এই মুহূর্তে মাত্র সাত লাখ ২৩ হাজার ৬৫ ডোজ টিকা রয়েছে।

কিন্তু টিকা পরিবহন, স্থানান্তর ও কর্মসূচি চলাকালে যদি ১ শতাংশ টিকাও নষ্ট বা অপচয় হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে মজুদ আরও এক লাখ ডোজ কমে যাবে। পাশর্^বর্তী দেশ ভারতে টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় ৫ থেকে ৬ শতাংশ টিকা নষ্ট হয়েছে দেশটির সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ টিকার মজুদ রয়েছে তাতে প্রথম ডোজ নেয়া প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে তাদের ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র ‘কোভিশিল্ড’ টিকাই দিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম ১৬ মে এক স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেন, ‘আমাদের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া চলছে। এখন পর্যন্ত যা মজুদ আছে দ্বিতীয় ডোজ যাদের পাওয়ার কথা তাদের শতভাগকে আমরা দিতে পারবো না।’

টিকা পেতে বিভিন্ন কূটনৈতিক মাধ্যমসহ অন্যান্য চ্যানেলে যোগাযোগ চলছে- জানিয়ে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার যে ঘাটতি আছে, ভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারব। আমরা ৮ সপ্তাহের ব্যবধানে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটি কোন কোন দেশে ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। কাজেই সেক্ষেত্রে কিছু সময় আমরা পাচ্ছি।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীনের যে ভ্যাকসিন এসেছে সেটির প্রথম ডোজ আগামী ২৫ মে থেকে দেয়া শুরু হবে। এ ছাড়া আমরা রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলেছি ভ্যাকসিনের জন্য। ফাইনাল কিছু হলে জানতে পারবেন।’

টিকা পরিকল্পনায় যা ছিল

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ডিসেম্বরেই করোনার টিকাদানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই বছরে পাঁচ ধাপে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার কথা। বাকি ২০ শতাংশ শিশু ও নানা জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদের টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেই।

এ হিসেবে টিকা পাওয়ার উপযুক্ত নাগরিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন। মোট তিন পর্বে (ফেজ) পাঁচ ধাপে তাদের করোনা টিকা দেয়া হবে। টিকায় অগ্রাধিকার পাবে করোনা প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ। জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা অনুযায়ী, জনপ্রতি দুটি করে মোট ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ১৬ ডোজ টিকা দেয়া হবে।

পরিকল্পনায় প্রথম ফেজের টিকা দুই দুই ধাপে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন টিকা পাবে, যা মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশ। দ্বিতীয় ধাপে মোট জনসংখ্যার সাত শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন টিকার আওতায় নেয়ার কথা।

প্রথম পর্যায়ে দুই ধাপে বিতরণ শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ে টিকা দেয়া শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ পর্যায়ে ১০ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮ জন (মোট জনসংখ্যার ১১ থেকে ২০ শতাংশ) টিকা পাওয়ার কথা।

তৃতীয় পর্যায়েও দুই ধাপে করোনা টিকা দেয়া হবে। এ পর্যায়ের প্রথম ধাপে জনসংখ্যার আরও ২০ শতাংশ অর্থাৎ তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জনকে টিকা দেয়া হবে। শেষ ধাপে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জনকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

back to top