‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’-এর দাবি এটি ‘আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন’ হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যদিও এ নামে কোন সহযোগী সংগঠনকে স্বীকৃতি দেয়নি আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনদের সহযোগী মর্যাদা পেতে এ ধরনের শতাধিক সংগঠন থাকলেও বর্তমানে সক্রিয় আছে ২০টির অধিক।
বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. মনির খান ‘দর্জি’ মনির নামে পরিচিত। তার আরেকটি পরিচয় তিনি ঢাকা-২ সংসদীয় আসনে এমপি (সংসদ সদস্য) পদপ্রার্থী। এ ছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তিকারী তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার বাদী।
তিনি ‘অটিজম বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস সোসাইটি’র চেয়ারম্যান। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। ২০১৮ সালে ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পর্যবেক্ষক সমন্বয় উপকমিটিরও সদস্য ছিলেন।
তবে রোববার রাতে রাজধানী থেকে তাকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ-আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামে ভুঁইফোঁড় সংগঠনটি গড়ে তোলেন তিনি। এ সংগঠনে তিনি ‘বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের অনেক নেতাকে টাকার বিনিময়ে’ পদ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ।
এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ফটোশপে কারসাজি করে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নিজের ছবি জুড়ে দিয়ে ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের একটি ফেইসবুক পেইজ আছে। এ ছাড়া জেলা, উপজেলা ও পৌর শাখা কমিটির আছে পৃথক ফেইসবুক পেইজ।
একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এবং একটি পত্রিকার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবেও ‘ফেইসবুক ইন্ট্রো’তে নিজের বর্ণনা দিয়েছেন মনির খান।
ফেইসবুকে সংগঠনের প্রোফাইল পিকচারে দেয়া ছবিটিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতা বি এম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। এসএসএফ সদস্যরা তাকে ঘিরে রেখেছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ফটোগ্রাফার প্রধানমন্ত্রীর ওই কুশল বিনিময়ে মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করেন। ছবিতে দেখা যায়, এসএসএফের নিরাপত্তা বেষ্টনীর ফোঁকর দিয়ে মো. মনির খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত চিত্রগ্রাহকের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন।
ক্যাপশনে লেখা-‘পেশাজীবীদের সম্মানে ইফতার পার্টিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করলেন ঢাকা-২ আসনের এমপি প্রার্থী বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক মো. মনির খান। স্থান প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন, গণভবন। তারিখ-২৮-০৫-২০১৮ইং।’
এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশপাশে দাঁড়িয়ে আছেন এমন বেশকিছু ছবি তার ফেইসবুকে আছে। অন্য একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে ‘তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে গ্রুপফটোতে মো. মনির খান।’ জয়ের ডান পাশে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বাঁ পাশে দুইজনের পরই মনির খান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের জেষ্ঠ্য অনেক নেতার সঙ্গে ফটোসেশন করেছেন মনির খান।
অভিযোগ উঠেছে, অনেক ছবি ‘সুপার এডিট’ করা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে পোস্ট দিয়েছেন মনির খান। তাকে আটকের আগে এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির পাশপাশি জেলা, উপজেলা এমনকি পৌরসভা পর্যায়েও কমিটি আছে বলেই দাবি।
বগুড়া পৌর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান (রুপু) শনিবার বিকেলে তাদের কেন্দ্রীয় নেতা মনির খানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে ‘শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামের একটি ফেইসবুক আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কঠিন পদক্ষেপ নেবেন এমন প্রত্যাশার কথাও লিখেছেন রুপু।
কুমিল্লা মহানগর শাখার সভাপতি ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ একটি রাজনৈতিক সংগঠন, যা বতর্মান রাজনৈতিক অঙ্গনে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের সহযোগী এবং দেশবিরোধী অপশক্তি, গুজব ও দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকে প্রতিহত করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশকে উন্নয়ন করে এগিয়ে নিতে কাজ করছে।’
দেশে-বিদেশে সংগঠনটির হাজার হাজার নেতাকর্মী রয়েছে বলেও দাবি করা হয়।
বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মো. নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ধর্মবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মাওলানা নকশাবন্দী অংশ নিয়েছেন বলে ফেইসবুকে ছবি দিয়ে মন্তব্য করা হয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঘোষিত সহযোগী সংগঠন হিসেবে দাবি করে, দেশে এমন সংগঠন শতাধিক। নামের আগে-পরে ‘আওয়ামী’, ‘লীগ’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ জুড়ে দেয় এই সংগঠনগুলো।
এ ছাড়া আছে, বঙ্গমাতা, শেখ রাসেল এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ব্যবহার করে কিছু সংগঠন। আওয়ামী লীগ সভাপতির নামও সংযুক্ত করা হয়েছে নানা আঙ্গিকে। শেখ হাসিনার সমর্থক গোষ্ঠী, জননেত্রী পরিষদ, দেশরত্ন পরিষদ। বাদ যায়নি মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তর, ডিজিটাল বাংলাদেশও।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.) সংবাদকে বলেন, ‘ভুঁইফোঁড় সংগঠনগুলোর বিষয়ে দলীয় ফোরামে আগেও অনেক আলোচনা হয়েছে। দলের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণœ না হয়, সে বিষয়টি মাথায় রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের এসব সংগঠন থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। এরপরও কিছু (দলের) লোক কেন যে, ওদের সঙ্গে যায়!’
আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আমাদের দলের ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাই এ ধরনের সংগঠন দাঁড় করায়। কেউ একসময় ওয়ার্ড বা নগর কমিটিতে ছিল। কেউ আবার কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে না পেরে এসব দোকান খুলে ধান্দাবাজির চেষ্টা করে অনেকে। দলের শীর্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিজের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। অনেকে এডিট করে নিজের ছবি বসিয়ে দেয়। নিজের মূল্য বাড়াতে বাইরের কিছু লোকজন নেয় কমিটিতে। দলীয় কিছু কর্মীও পেয়ে যায় তারা। নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে অনেক সংগঠন ঠিকানা দেয় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ।’
এসব সংগঠন নিজস্ব ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবে দিবসভিত্তিক সভার আয়োজন করে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাবেক এক সহসম্পাদক বলেন, ‘সেখানে আওয়ামী লীগের পদ হারানো নেতা বা সাবেক মন্ত্রীদের আনাগোনাই বেশি দেখা যায়। মাঝে মধ্যে অবশ্য রানিং মন্ত্রী বা নেতারাও অংশ নেন।’
‘তবে পদ বা মন্ত্রিত্ব ফিরে পেলে তারা আবার নীরব হয়ে যান। তারা আসলে রাজনীতির দোকানগুলোকে ব্যবহার করেন পদপ্রাপ্তির সিঁড়ি হিসেবে। দোকানদারদের চেষ্টা থাকে, নেতার ঘাড়ে ভর করে যতটুকু পারা যায় রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় করা’-বলেন তিনি।
সম্প্রতি ব্যবসায়ী হেলানা জাহাঙ্গীরের ‘চাকরিজীবী লীগ’ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলের নির্দেশে তার কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য পদ বাতিল করা হয়। বিভিন্ন কায়দায় প্রতারণার অভিযোগ তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মাঠে নামে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, শতাধিক ভুঁইফোঁড় সংগঠন চিহ্নিত করে বর্তমানে সক্রিয় অন্তত ২৫টি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের আমলনামা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও তদবিরবাজিতে জড়িত, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় বর্তমানে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় আছেন-আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা যুব প্রজন্মলীগ সভাপতি আবির হোসেন কাফি, বাংলাদেশ আওয়ামী তথ্য প্রযুক্তি লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. সালাউদ্দিন ভূঁইয়া নয়ন, বাংলাদেশ আওয়ামী উদ্যোক্তা লীগের প্রস্তাবক মো. জসীম উদ্দীন রুমান, বাংলাদেশ আওয়ামী নবীন লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান সুইট, বাংলাদেশ আওয়ামী জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এইচ এম ওসমান গনি বেলাল, বাংলাদেশ আওয়ামী প্রজন্মলীগ সভাপতি মনির আহমেদ মনা, বাংলাদেশ আওয়ামী পর্যটন লীগের সভাপতি শামীম আল জাবের, বাংলাদেশ চেতনায় ৭১ লীগের সভাপতি মো. তাজু শেখ, বাংলা?দেশ আওয়ামী প্রচার লীগের সভাপ?তি শেখ ইকবাল, বাংলাদেশ প্রচার ও প্রকাশনা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম এইচ আলমগীর, বঙ্গবন্ধু তৃণমূল লীগের সভাপতি মো. কাশেম আলী, বাংলাদেশ আওয়ামী তৃণমূল লীগের সভাপতি শাহেদুল আলম টিপু, বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আল মামুন জুয়েল; বাংলাদেশ স্বাধীনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ শাহীন হায়দার, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বাধীনতা প্রজন্মলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী সজীব ওয়াজেদ জয় লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাসু সরদার এবং বাংলাদেশ জনসেবা লীগের চেয়ারম্যান ডা. ইয়াছিন হাওলাদার মঞ্জু।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক আরেক সহসম্পাদক বলেন, ‘যারা এসব সংগঠন দাঁড় করিয়েছেন, তাদের মধ্যে কিছু আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মীও আছেন। যাদের সামনে রেখে সংগঠন গঠন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তদন্ত করলে ত্যাগী নেতাদের জন্য ভালো হবে। তদবিরবাজরা ধরা খাবে।’
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে স্বীকৃত আটটি সহযোগী ও তিনটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে-যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতি লীগ ও আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ। ভ্রাতৃপ্রতিম তিনটি সংগঠন হলো-ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগ।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলাসহ কয়েকটি সংগঠন বেশ পুরনো। এ বিষয়ে দলের নেতাদের মনোভাব ইতিবাচক। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমতি নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ।
এর বাইরে আওয়ামী লীগ শীর্ষ মহলের মৌখিক সম্মতিতে কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী মোটর চালক লীগ, হকার্স লীগ ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া সংবাদকে বলেন, ‘জাতির পিতা বা তার পরিবারের সদস্যদের নামে সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান করতে হলে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক, অন্যথায় তা বেআইনি। কেউ অনুমতি ছাড়া কিছু করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রীর।’
আওয়ামী লীগের টানা ক্ষমতায় গত এক যুগে বেশ কিছু ‘ভুঁইফোঁড় ও প্যাডসর্বস্ব সংগঠন’ গড়ে উঠেছে স্বীকার করে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে সেগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ যেন অন্যায় কিছু না করতে পারে। কিন্তু এত হুঁশিয়ারির পরও থামানো যায়নি। গড়ে উঠছে নিত্য নতুন সংগঠন।’
সোমবার, ০২ আগস্ট ২০২১
‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’-এর দাবি এটি ‘আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন’ হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যদিও এ নামে কোন সহযোগী সংগঠনকে স্বীকৃতি দেয়নি আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনদের সহযোগী মর্যাদা পেতে এ ধরনের শতাধিক সংগঠন থাকলেও বর্তমানে সক্রিয় আছে ২০টির অধিক।
বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. মনির খান ‘দর্জি’ মনির নামে পরিচিত। তার আরেকটি পরিচয় তিনি ঢাকা-২ সংসদীয় আসনে এমপি (সংসদ সদস্য) পদপ্রার্থী। এ ছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তিকারী তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার বাদী।
তিনি ‘অটিজম বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস সোসাইটি’র চেয়ারম্যান। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। ২০১৮ সালে ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পর্যবেক্ষক সমন্বয় উপকমিটিরও সদস্য ছিলেন।
তবে রোববার রাতে রাজধানী থেকে তাকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ-আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামে ভুঁইফোঁড় সংগঠনটি গড়ে তোলেন তিনি। এ সংগঠনে তিনি ‘বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের অনেক নেতাকে টাকার বিনিময়ে’ পদ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ।
এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ফটোশপে কারসাজি করে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নিজের ছবি জুড়ে দিয়ে ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের একটি ফেইসবুক পেইজ আছে। এ ছাড়া জেলা, উপজেলা ও পৌর শাখা কমিটির আছে পৃথক ফেইসবুক পেইজ।
একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এবং একটি পত্রিকার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবেও ‘ফেইসবুক ইন্ট্রো’তে নিজের বর্ণনা দিয়েছেন মনির খান।
ফেইসবুকে সংগঠনের প্রোফাইল পিকচারে দেয়া ছবিটিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতা বি এম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। এসএসএফ সদস্যরা তাকে ঘিরে রেখেছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ফটোগ্রাফার প্রধানমন্ত্রীর ওই কুশল বিনিময়ে মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করেন। ছবিতে দেখা যায়, এসএসএফের নিরাপত্তা বেষ্টনীর ফোঁকর দিয়ে মো. মনির খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত চিত্রগ্রাহকের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন।
ক্যাপশনে লেখা-‘পেশাজীবীদের সম্মানে ইফতার পার্টিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করলেন ঢাকা-২ আসনের এমপি প্রার্থী বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক মো. মনির খান। স্থান প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন, গণভবন। তারিখ-২৮-০৫-২০১৮ইং।’
এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশপাশে দাঁড়িয়ে আছেন এমন বেশকিছু ছবি তার ফেইসবুকে আছে। অন্য একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে ‘তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে গ্রুপফটোতে মো. মনির খান।’ জয়ের ডান পাশে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বাঁ পাশে দুইজনের পরই মনির খান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের জেষ্ঠ্য অনেক নেতার সঙ্গে ফটোসেশন করেছেন মনির খান।
অভিযোগ উঠেছে, অনেক ছবি ‘সুপার এডিট’ করা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে পোস্ট দিয়েছেন মনির খান। তাকে আটকের আগে এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির পাশপাশি জেলা, উপজেলা এমনকি পৌরসভা পর্যায়েও কমিটি আছে বলেই দাবি।
বগুড়া পৌর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান (রুপু) শনিবার বিকেলে তাদের কেন্দ্রীয় নেতা মনির খানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে ‘শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামের একটি ফেইসবুক আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কঠিন পদক্ষেপ নেবেন এমন প্রত্যাশার কথাও লিখেছেন রুপু।
কুমিল্লা মহানগর শাখার সভাপতি ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ একটি রাজনৈতিক সংগঠন, যা বতর্মান রাজনৈতিক অঙ্গনে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের সহযোগী এবং দেশবিরোধী অপশক্তি, গুজব ও দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকে প্রতিহত করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশকে উন্নয়ন করে এগিয়ে নিতে কাজ করছে।’
দেশে-বিদেশে সংগঠনটির হাজার হাজার নেতাকর্মী রয়েছে বলেও দাবি করা হয়।
বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মো. নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ধর্মবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মাওলানা নকশাবন্দী অংশ নিয়েছেন বলে ফেইসবুকে ছবি দিয়ে মন্তব্য করা হয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঘোষিত সহযোগী সংগঠন হিসেবে দাবি করে, দেশে এমন সংগঠন শতাধিক। নামের আগে-পরে ‘আওয়ামী’, ‘লীগ’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ জুড়ে দেয় এই সংগঠনগুলো।
এ ছাড়া আছে, বঙ্গমাতা, শেখ রাসেল এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ব্যবহার করে কিছু সংগঠন। আওয়ামী লীগ সভাপতির নামও সংযুক্ত করা হয়েছে নানা আঙ্গিকে। শেখ হাসিনার সমর্থক গোষ্ঠী, জননেত্রী পরিষদ, দেশরত্ন পরিষদ। বাদ যায়নি মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তর, ডিজিটাল বাংলাদেশও।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.) সংবাদকে বলেন, ‘ভুঁইফোঁড় সংগঠনগুলোর বিষয়ে দলীয় ফোরামে আগেও অনেক আলোচনা হয়েছে। দলের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণœ না হয়, সে বিষয়টি মাথায় রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের এসব সংগঠন থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। এরপরও কিছু (দলের) লোক কেন যে, ওদের সঙ্গে যায়!’
আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আমাদের দলের ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাই এ ধরনের সংগঠন দাঁড় করায়। কেউ একসময় ওয়ার্ড বা নগর কমিটিতে ছিল। কেউ আবার কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে না পেরে এসব দোকান খুলে ধান্দাবাজির চেষ্টা করে অনেকে। দলের শীর্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিজের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। অনেকে এডিট করে নিজের ছবি বসিয়ে দেয়। নিজের মূল্য বাড়াতে বাইরের কিছু লোকজন নেয় কমিটিতে। দলীয় কিছু কর্মীও পেয়ে যায় তারা। নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে অনেক সংগঠন ঠিকানা দেয় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ।’
এসব সংগঠন নিজস্ব ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবে দিবসভিত্তিক সভার আয়োজন করে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাবেক এক সহসম্পাদক বলেন, ‘সেখানে আওয়ামী লীগের পদ হারানো নেতা বা সাবেক মন্ত্রীদের আনাগোনাই বেশি দেখা যায়। মাঝে মধ্যে অবশ্য রানিং মন্ত্রী বা নেতারাও অংশ নেন।’
‘তবে পদ বা মন্ত্রিত্ব ফিরে পেলে তারা আবার নীরব হয়ে যান। তারা আসলে রাজনীতির দোকানগুলোকে ব্যবহার করেন পদপ্রাপ্তির সিঁড়ি হিসেবে। দোকানদারদের চেষ্টা থাকে, নেতার ঘাড়ে ভর করে যতটুকু পারা যায় রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় করা’-বলেন তিনি।
সম্প্রতি ব্যবসায়ী হেলানা জাহাঙ্গীরের ‘চাকরিজীবী লীগ’ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলের নির্দেশে তার কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য পদ বাতিল করা হয়। বিভিন্ন কায়দায় প্রতারণার অভিযোগ তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মাঠে নামে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, শতাধিক ভুঁইফোঁড় সংগঠন চিহ্নিত করে বর্তমানে সক্রিয় অন্তত ২৫টি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের আমলনামা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও তদবিরবাজিতে জড়িত, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় বর্তমানে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় আছেন-আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা যুব প্রজন্মলীগ সভাপতি আবির হোসেন কাফি, বাংলাদেশ আওয়ামী তথ্য প্রযুক্তি লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. সালাউদ্দিন ভূঁইয়া নয়ন, বাংলাদেশ আওয়ামী উদ্যোক্তা লীগের প্রস্তাবক মো. জসীম উদ্দীন রুমান, বাংলাদেশ আওয়ামী নবীন লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান সুইট, বাংলাদেশ আওয়ামী জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এইচ এম ওসমান গনি বেলাল, বাংলাদেশ আওয়ামী প্রজন্মলীগ সভাপতি মনির আহমেদ মনা, বাংলাদেশ আওয়ামী পর্যটন লীগের সভাপতি শামীম আল জাবের, বাংলাদেশ চেতনায় ৭১ লীগের সভাপতি মো. তাজু শেখ, বাংলা?দেশ আওয়ামী প্রচার লীগের সভাপ?তি শেখ ইকবাল, বাংলাদেশ প্রচার ও প্রকাশনা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম এইচ আলমগীর, বঙ্গবন্ধু তৃণমূল লীগের সভাপতি মো. কাশেম আলী, বাংলাদেশ আওয়ামী তৃণমূল লীগের সভাপতি শাহেদুল আলম টিপু, বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আল মামুন জুয়েল; বাংলাদেশ স্বাধীনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ শাহীন হায়দার, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বাধীনতা প্রজন্মলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী সজীব ওয়াজেদ জয় লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাসু সরদার এবং বাংলাদেশ জনসেবা লীগের চেয়ারম্যান ডা. ইয়াছিন হাওলাদার মঞ্জু।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক আরেক সহসম্পাদক বলেন, ‘যারা এসব সংগঠন দাঁড় করিয়েছেন, তাদের মধ্যে কিছু আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মীও আছেন। যাদের সামনে রেখে সংগঠন গঠন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তদন্ত করলে ত্যাগী নেতাদের জন্য ভালো হবে। তদবিরবাজরা ধরা খাবে।’
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে স্বীকৃত আটটি সহযোগী ও তিনটি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে-যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতি লীগ ও আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ। ভ্রাতৃপ্রতিম তিনটি সংগঠন হলো-ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগ।
এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলাসহ কয়েকটি সংগঠন বেশ পুরনো। এ বিষয়ে দলের নেতাদের মনোভাব ইতিবাচক। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমতি নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ।
এর বাইরে আওয়ামী লীগ শীর্ষ মহলের মৌখিক সম্মতিতে কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী মোটর চালক লীগ, হকার্স লীগ ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া সংবাদকে বলেন, ‘জাতির পিতা বা তার পরিবারের সদস্যদের নামে সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান করতে হলে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক, অন্যথায় তা বেআইনি। কেউ অনুমতি ছাড়া কিছু করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রীর।’
আওয়ামী লীগের টানা ক্ষমতায় গত এক যুগে বেশ কিছু ‘ভুঁইফোঁড় ও প্যাডসর্বস্ব সংগঠন’ গড়ে উঠেছে স্বীকার করে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে সেগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ যেন অন্যায় কিছু না করতে পারে। কিন্তু এত হুঁশিয়ারির পরও থামানো যায়নি। গড়ে উঠছে নিত্য নতুন সংগঠন।’