রাজধানীর পুরান ঢাকায় আরমানিটোলায় একটি বহুতল ভবনে অগ্নিকান্ডে মারা গেছেন ৪ জন ও আহত হয়েছেন অন্তত ২১ জন। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ভবনটির নিচতলায় অবস্থিত রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।
উক্ত ভবনে যেসব রাসায়নিক পদার্থ ছিল সেগুলোকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা কিলিং এজেন্ট বলে মত দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কোন আবাসিক ভবনে এ ধরনের রাসায়নিক আসে কোথা থেকে আর বছরের পর বছরে সেখানে থাকেই বা কী করে। পুরান ঢাকায় রাসায়নিক গুদামের অস্তিত্ব রয়েছে যুগ যুগ ধরে। রাসায়নিকের গুদামের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট-বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ২০১০ সালে নিমতলীতে এমনই এক অগ্নিকান্ডে ১২৪ জন মারা যান। ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টায় ৭১ জন অগ্নিকান্ডে মারা যান।
পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো সরু। সেখানে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। আরমানিটোলায় ভোর রাতে আগুন লাগায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়নি। দিনের বেলায় ব্যস্ত সময়ে আগুন লাগলে আরমানিটোলাও হয়ে উঠতে পারত আরেকটা নিমতলী বা চুড়িহাট্টা।
পুরান ঢাকায় বারবার কেন আগুন লাগছে সেটা একটা প্রশ্ন। অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনায় দায় আসলে কার? এগুলো কি শুধুই দুর্ঘটনা নাকি সংশ্লিষ্টদের অবহেলাজনিত মৃত্যু সেটা আমরা জানতে চাইব। পুরান ঢাকায় কোন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেই শুরু হয় দোষারোপের খেলা। সরকার আঙুল তোলে রাসায়নিকের ব্যবসায়ীদের দিকে। ব্যবসায়ীরা আঙুল তোলেস সরকারের দিকে। সরকার বলে, ব্যবসায়ীরা রাজি না হওয়ায় রাসায়নিক কারখানাগুলো সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। ব্যবসায়ীরা বলেন, উপযুক্ত জায়গা পেলে তারা সরে যেতে রাজি আছেন। গুদাম বন্ধ করার লোক দেখানো অভিযান চলে কিছুদিন। গুদাম সরানোর পরিকল্পনার কথা জানা যায় কিন্তু এর বাস্তবায়ন আর হয় না।
আরমানিটোলায় আগুন লাগার ঘটনায় পুরান ঢাকা থকে রাসায়নিকের গুদামগুলো সরিয়ে নেয়ার কথা আবারও আলোচনা হচ্ছে। তবে এবারও সেটা বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ আছে।
২০২২ সালের মধ্যে মুন্সীগঞ্জে রাসায়নিক শিল্পপল্লী প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। বাস্তবে প্রকল্পের জমিতে মাটি ভরাটের কাজই শুরু হয়নি বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে। শ্যামপুর আর টঙ্গীর কাঁঠালদিয়ায় দুটি অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম তৈরির কাজও এগোয়নি। নিমতলী অগ্নিকান্ডের ১১ বছর পরও কাজগুলো সম্পন্ন না হওয়ার কারণ খুঁজতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অগ্নিকান্ড থেকে জনগণের জানমাল রক্ষা করতে আসলেই আন্তরিক কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। সরকার আন্তরিক হলে রাসায়নিকের গুদাম গত প্রায় এক যুগেও সরানো যাবে না- সেটা হতে পারে না। পুরান ঢাকায় হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী রাসায়নিকের ব্যবসা করেন বলে জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে, রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
পুরান ঢাকার গুদামগুলোতে আছে কমবেশি পাঁচ হাজার রকমের রাসায়নিক। যার মধ্যে অতি দাহ্য রাসায়নিকও রয়েছে। সেখানে প্লাস্টিকের কারখানা ও গুদামের সংখ্যাও কম নয়। এ কারণে এলাকাটি বরাবরাই অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে থাকে। যতদিন না রাসায়নিকের গুদামগুলো সেখান থেকে অন্যত্র পুরোপুরি সরানো হবে ততদিন এই ঝুঁকি কমবে না। সরকারকে অবশ্যই এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাময়িক অভিযান চালিয়ে কিছুদিনের জন্য অবৈধ গুদাম বন্ধ করে সমাধান মিলবে না।
শনিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২১
রাজধানীর পুরান ঢাকায় আরমানিটোলায় একটি বহুতল ভবনে অগ্নিকান্ডে মারা গেছেন ৪ জন ও আহত হয়েছেন অন্তত ২১ জন। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ভবনটির নিচতলায় অবস্থিত রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অগ্নিকান্ডের ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।
উক্ত ভবনে যেসব রাসায়নিক পদার্থ ছিল সেগুলোকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা কিলিং এজেন্ট বলে মত দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কোন আবাসিক ভবনে এ ধরনের রাসায়নিক আসে কোথা থেকে আর বছরের পর বছরে সেখানে থাকেই বা কী করে। পুরান ঢাকায় রাসায়নিক গুদামের অস্তিত্ব রয়েছে যুগ যুগ ধরে। রাসায়নিকের গুদামের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট-বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ২০১০ সালে নিমতলীতে এমনই এক অগ্নিকান্ডে ১২৪ জন মারা যান। ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টায় ৭১ জন অগ্নিকান্ডে মারা যান।
পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো সরু। সেখানে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। আরমানিটোলায় ভোর রাতে আগুন লাগায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়নি। দিনের বেলায় ব্যস্ত সময়ে আগুন লাগলে আরমানিটোলাও হয়ে উঠতে পারত আরেকটা নিমতলী বা চুড়িহাট্টা।
পুরান ঢাকায় বারবার কেন আগুন লাগছে সেটা একটা প্রশ্ন। অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনায় দায় আসলে কার? এগুলো কি শুধুই দুর্ঘটনা নাকি সংশ্লিষ্টদের অবহেলাজনিত মৃত্যু সেটা আমরা জানতে চাইব। পুরান ঢাকায় কোন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেই শুরু হয় দোষারোপের খেলা। সরকার আঙুল তোলে রাসায়নিকের ব্যবসায়ীদের দিকে। ব্যবসায়ীরা আঙুল তোলেস সরকারের দিকে। সরকার বলে, ব্যবসায়ীরা রাজি না হওয়ায় রাসায়নিক কারখানাগুলো সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয় না। ব্যবসায়ীরা বলেন, উপযুক্ত জায়গা পেলে তারা সরে যেতে রাজি আছেন। গুদাম বন্ধ করার লোক দেখানো অভিযান চলে কিছুদিন। গুদাম সরানোর পরিকল্পনার কথা জানা যায় কিন্তু এর বাস্তবায়ন আর হয় না।
আরমানিটোলায় আগুন লাগার ঘটনায় পুরান ঢাকা থকে রাসায়নিকের গুদামগুলো সরিয়ে নেয়ার কথা আবারও আলোচনা হচ্ছে। তবে এবারও সেটা বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ আছে।
২০২২ সালের মধ্যে মুন্সীগঞ্জে রাসায়নিক শিল্পপল্লী প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। বাস্তবে প্রকল্পের জমিতে মাটি ভরাটের কাজই শুরু হয়নি বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে। শ্যামপুর আর টঙ্গীর কাঁঠালদিয়ায় দুটি অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম তৈরির কাজও এগোয়নি। নিমতলী অগ্নিকান্ডের ১১ বছর পরও কাজগুলো সম্পন্ন না হওয়ার কারণ খুঁজতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অগ্নিকান্ড থেকে জনগণের জানমাল রক্ষা করতে আসলেই আন্তরিক কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। সরকার আন্তরিক হলে রাসায়নিকের গুদাম গত প্রায় এক যুগেও সরানো যাবে না- সেটা হতে পারে না। পুরান ঢাকায় হাজারেরও বেশি ব্যবসায়ী রাসায়নিকের ব্যবসা করেন বলে জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে, রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
পুরান ঢাকার গুদামগুলোতে আছে কমবেশি পাঁচ হাজার রকমের রাসায়নিক। যার মধ্যে অতি দাহ্য রাসায়নিকও রয়েছে। সেখানে প্লাস্টিকের কারখানা ও গুদামের সংখ্যাও কম নয়। এ কারণে এলাকাটি বরাবরাই অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে থাকে। যতদিন না রাসায়নিকের গুদামগুলো সেখান থেকে অন্যত্র পুরোপুরি সরানো হবে ততদিন এই ঝুঁকি কমবে না। সরকারকে অবশ্যই এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাময়িক অভিযান চালিয়ে কিছুদিনের জন্য অবৈধ গুদাম বন্ধ করে সমাধান মিলবে না।