নভেল করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারে- এমন আশঙ্কা আগে থেকেই করা হচ্ছিল। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আখ্যা পাওয়া করোনার এ ধরন দেশে প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইডিএসএইচআই) সম্প্রতি করোনভাইরাসের ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছে। এর মধ্যে ৪০টিতেই অর্থাৎ সংক্রমণের ৮০ শতাংশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গাসহ সীমান্তের অনেক জেলায় এ করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব জেলার আশপাশের এলাকাগুলোতেও করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন নানা বিধিনিষেধ ও লকডাউন দিচ্ছে। হাসপাতালগুলো করোনার রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সংকট। শয্যা আর আইসিইউর সংকট তো রয়েছেই।
সীমান্তে করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যথাযথ ভূমিকা রেখেছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করে বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সীমান্তে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেনি। বৈশ্বিক মহামারির সময়ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করার ঘটনায় জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের চরম উদাসীনতা আর অবহেলাই প্রকাশ পায়। দেশের বিভিন্ন সীমান্তে রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে নেয়া একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বরাদ্দকৃত অর্থে দেশের স্থলবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং সুবিধাসহ স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করার কাজ এক বছরেও শুরু হয়নি। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার কথা আটটি। এর একটিও হয়নি।
সমস্যা আরও আছে। আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার করা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০১৭ সালে কর্মসূচি নেয়। শুধু প্রশিক্ষণ দিয়েই সেই কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত টাকার ৫৮ ভাগ ব্যয় করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী বন্দর দিয়ে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর তাদের ওপর অর্পিত দায়দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরের কোনটাতেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে না বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে। অথচ এজন্য কারও কোন জবাবদিহি আদায় করা হয়েছে বলে জানা যায় না।
স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করছেন, এ খাতে কোন দুর্নীতি হয়নি। এই দাবির পক্ষে কোন তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে দেখা যায়নি। অভিযোগ তদন্ত না করেই কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি যদি বলেন, দুর্নীতি হয়নি তাহলে সেই মন্ত্রণালয়ের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কীভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে! স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে করোনার সংক্রমণে লাগাম টানা কঠিন হবে। সীমান্ত গলে আগামীতেও হয়তো দেশে নতুন কোন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঘটবে, এতে প্রাণহানির ঘটনা বাড়বে। দেশে একদিন হয়তো এমন অবস্থা হবে যে, আগে-পরে সবাই করোনায় সংক্রমিত হবে। তখন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবার মতো লোক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও অবশিষ্ট থাকবে না।
রোববার, ১৩ জুন ২০২১
নভেল করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারে- এমন আশঙ্কা আগে থেকেই করা হচ্ছিল। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আখ্যা পাওয়া করোনার এ ধরন দেশে প্রথম শনাক্ত হয় ৮ মে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইডিএসএইচআই) সম্প্রতি করোনভাইরাসের ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছে। এর মধ্যে ৪০টিতেই অর্থাৎ সংক্রমণের ৮০ শতাংশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গাসহ সীমান্তের অনেক জেলায় এ করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব জেলার আশপাশের এলাকাগুলোতেও করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন নানা বিধিনিষেধ ও লকডাউন দিচ্ছে। হাসপাতালগুলো করোনার রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সংকট। শয্যা আর আইসিইউর সংকট তো রয়েছেই।
সীমান্তে করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যথাযথ ভূমিকা রেখেছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করে বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সীমান্তে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেনি। বৈশ্বিক মহামারির সময়ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করার ঘটনায় জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের চরম উদাসীনতা আর অবহেলাই প্রকাশ পায়। দেশের বিভিন্ন সীমান্তে রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে নেয়া একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বরাদ্দকৃত অর্থে দেশের স্থলবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং সুবিধাসহ স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করার কাজ এক বছরেও শুরু হয়নি। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার কথা আটটি। এর একটিও হয়নি।
সমস্যা আরও আছে। আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার করা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০১৭ সালে কর্মসূচি নেয়। শুধু প্রশিক্ষণ দিয়েই সেই কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত টাকার ৫৮ ভাগ ব্যয় করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী বন্দর দিয়ে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর তাদের ওপর অর্পিত দায়দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরের কোনটাতেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে না বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে। অথচ এজন্য কারও কোন জবাবদিহি আদায় করা হয়েছে বলে জানা যায় না।
স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করছেন, এ খাতে কোন দুর্নীতি হয়নি। এই দাবির পক্ষে কোন তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে দেখা যায়নি। অভিযোগ তদন্ত না করেই কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি যদি বলেন, দুর্নীতি হয়নি তাহলে সেই মন্ত্রণালয়ের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কীভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে! স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে করোনার সংক্রমণে লাগাম টানা কঠিন হবে। সীমান্ত গলে আগামীতেও হয়তো দেশে নতুন কোন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঘটবে, এতে প্রাণহানির ঘটনা বাড়বে। দেশে একদিন হয়তো এমন অবস্থা হবে যে, আগে-পরে সবাই করোনায় সংক্রমিত হবে। তখন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবার মতো লোক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও অবশিষ্ট থাকবে না।