বাড়ছে কোটিপতি, বেড়েছে দারিদ্র্য
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। তা অনেক দিন ধরেই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এমনকি এই করোনা মহামারীর সময়ও গত এক বছরে ব্যাংকে রাখা আমানতের ভিত্তিতে কোটি টাকা অঙ্কের হিসাব বেড়েছে ১১ হাজার ৬৪৭টি, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি। গত ১২ বছরে ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৭৭ শতাংশ বেড়ে গত মার্চের শেষে দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ২৭২। এ নিয়ে সংবাদ-এ আজ (২৬ জুলাই) বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
অনেকেই বলবেন এতো খুশির খবর। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে তারই ফল এটি। কিন্তু এর উল্টো চিত্রও আছে।
বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাস দেশের অর্থনীতিতে যে প্রতিঘাত সৃষ্টি করেছে তার প্রভাবে গত দুই বছরে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ বেড়েছে। একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ।
অর্থাৎ করোনাকালে একদিকে যেমন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে তেমনি ধনীর সংখ্যা বাড়ছে। সমস্যাটা সেখানেই।
একদিকে দারিদ্র্য অন্যদিকে ধনীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে আয় বৈষম্যের যোগসূত্র যে রয়েছে তা বুঝতে বিশেষ কোনো জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রবৃদ্ধির সুফল দেশের সব মানুষের কাছে সমানভাবে পৌঁছাচ্ছে না। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির উপকারভোগী হয়েছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ। আয় বৈষম্যের শিকার মানুষ মহামারীর অভিঘাত সামলাতে পারছে না। অনেকেই কাজ হারিয়েছে, আয় কমেছে অনেক মানুষের।
এর বিপরীতে মহামারী বিত্তশালীদের সামনে নতুন নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচন করেছে। কেবল বাংলাদেশেই নয় বিশ্বজুড়ে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। একটি শ্রেণীর ধন-সম্পদ বৃদ্ধির পেছনে দুর্নীতি মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করেন অনেক অর্থনীতিবিদ।
আয় বৈষম্য মাপার যে সূচক সেই জিনি বা গিনি সহগ ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে ছিল ০.৩৬। জিনি সহগ যত বেশি তা তত বেশি আয় বা সম্পদ বৈষম্যেরই ইঙ্গিত দেয় এবং এই সূচক ০.৫ এর কাছাকাছি বা তার থেকে বেশি হলে বুঝতে হবে সেই দেশ বা সমাজে চরম বৈষম্য আছে।
উদ্বেগের বিষয় ২০২০ সালে বাংলাদেশে জিনি সহগ হয়েছে ০.৫২। এর চার বছর আগেও অর্থাৎ ২০১৬ সালে এটা ছিল ০.৪৮। দেশের আয় বৈষম্য দিন দিন যে প্রকট হচ্ছে সেটা এ থেকে সহজে অনুমান করা যায়।
এর অর্থ কোথাও একটা বড় সমস্যা রয়ে গেছে। দেশের সম্পদ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল যেন সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছে যায় সেই লক্ষ্যে সরকারকে কাজ করতে হবে। পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। মহামারীর কারণে এই কাজটি আরও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৈধ উপায়ে, সৎপথে কেউ ধন-সম্পদ অর্জন করলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সম্পদ মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কাছে কেন্দ্রীভূত হলে তা অনেক বড় সমস্যা তৈরি করে। আর অনিয়ম-দুর্নীতি করে, কর ফাঁকি দিয়ে ধন-সম্পদ অর্জন গ্রহণযোগ্য নয়। কোন হিসাবে কত টাকা আছে সেই তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমরা আশা করব, এসব অর্থের উৎস কি সেটাও তারা খুঁজে বের করবে।
বাড়ছে কোটিপতি, বেড়েছে দারিদ্র্য
সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। তা অনেক দিন ধরেই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এমনকি এই করোনা মহামারীর সময়ও গত এক বছরে ব্যাংকে রাখা আমানতের ভিত্তিতে কোটি টাকা অঙ্কের হিসাব বেড়েছে ১১ হাজার ৬৪৭টি, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি। গত ১২ বছরে ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৭৭ শতাংশ বেড়ে গত মার্চের শেষে দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ২৭২। এ নিয়ে সংবাদ-এ আজ (২৬ জুলাই) বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
অনেকেই বলবেন এতো খুশির খবর। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে তারই ফল এটি। কিন্তু এর উল্টো চিত্রও আছে।
বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাস দেশের অর্থনীতিতে যে প্রতিঘাত সৃষ্টি করেছে তার প্রভাবে গত দুই বছরে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ বেড়েছে। একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ।
অর্থাৎ করোনাকালে একদিকে যেমন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে তেমনি ধনীর সংখ্যা বাড়ছে। সমস্যাটা সেখানেই।
একদিকে দারিদ্র্য অন্যদিকে ধনীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে আয় বৈষম্যের যোগসূত্র যে রয়েছে তা বুঝতে বিশেষ কোনো জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রবৃদ্ধির সুফল দেশের সব মানুষের কাছে সমানভাবে পৌঁছাচ্ছে না। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির উপকারভোগী হয়েছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ। আয় বৈষম্যের শিকার মানুষ মহামারীর অভিঘাত সামলাতে পারছে না। অনেকেই কাজ হারিয়েছে, আয় কমেছে অনেক মানুষের।
এর বিপরীতে মহামারী বিত্তশালীদের সামনে নতুন নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচন করেছে। কেবল বাংলাদেশেই নয় বিশ্বজুড়ে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। একটি শ্রেণীর ধন-সম্পদ বৃদ্ধির পেছনে দুর্নীতি মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করেন অনেক অর্থনীতিবিদ।
আয় বৈষম্য মাপার যে সূচক সেই জিনি বা গিনি সহগ ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে ছিল ০.৩৬। জিনি সহগ যত বেশি তা তত বেশি আয় বা সম্পদ বৈষম্যেরই ইঙ্গিত দেয় এবং এই সূচক ০.৫ এর কাছাকাছি বা তার থেকে বেশি হলে বুঝতে হবে সেই দেশ বা সমাজে চরম বৈষম্য আছে।
উদ্বেগের বিষয় ২০২০ সালে বাংলাদেশে জিনি সহগ হয়েছে ০.৫২। এর চার বছর আগেও অর্থাৎ ২০১৬ সালে এটা ছিল ০.৪৮। দেশের আয় বৈষম্য দিন দিন যে প্রকট হচ্ছে সেটা এ থেকে সহজে অনুমান করা যায়।
এর অর্থ কোথাও একটা বড় সমস্যা রয়ে গেছে। দেশের সম্পদ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল যেন সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছে যায় সেই লক্ষ্যে সরকারকে কাজ করতে হবে। পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। মহামারীর কারণে এই কাজটি আরও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৈধ উপায়ে, সৎপথে কেউ ধন-সম্পদ অর্জন করলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সম্পদ মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কাছে কেন্দ্রীভূত হলে তা অনেক বড় সমস্যা তৈরি করে। আর অনিয়ম-দুর্নীতি করে, কর ফাঁকি দিয়ে ধন-সম্পদ অর্জন গ্রহণযোগ্য নয়। কোন হিসাবে কত টাকা আছে সেই তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আমরা আশা করব, এসব অর্থের উৎস কি সেটাও তারা খুঁজে বের করবে।