ঋণের ফাঁদে আটকা পড়েছে গাইবান্ধার কৃষক। গত বছর তিন দফা বন্যায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত অনেক কৃষকই এলাকার মহাজন ও এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। সময়ের ব্যবধানে এসব ঋণের চড়া সুদ দিতে হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিরে ১০ হাজার টাকায় মাসিক সুদ ১ হাজার টাকা। ১ হাজার টাকায় ‘কারেন্ট’ সুদ দিনে ১০০ টাকা। ১ হাজার টাকায় ‘হাটরা’ সুদ সপ্তাহে ১৬০ টাকা। তাছাড়া এক লাখ টাকায় বোরো মৌসুমে ২০ মণ ধান ও আমন মৌসুমে ১০ মণ ধান দিতে হয়। ১৮-২০টি এনজিও জেলায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসব এনজিওর ঋণের সুদের হার ১২ থেকে ১৩ শতাংশ। এই সুদের জের টানতে হচ্ছে কৃষকদের।
বোরো মৌসুম শেষে ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকদের চার-পাঁচ মাস কোন কাজ থাকে না। এ সময় সময় কাজের সন্ধানে তারা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় যান। এবার করোনা পরিস্থিতিতে দফায় দফায় কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় কাজে যেতে পারেননি। তাই নিরুপায় হয়ে সংসারের খাওয়া-খরচ মেটাতে কৃষকরা ঋণগ্রস্ত হয়েছেন।
জেলার ১৯টি ব্যাংক ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) গত অর্থবছরে ২১৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কৃষি ঋণ দিয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা কৃষিঋণ কমিটির মাধ্যমে বিতরণ করা এ ঋণের সুদের হার ৮ শতাংশ। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রান্তিক কৃষকরা এ ঋণ পায়নি। সরাকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে কৃষি ঋণের সুদের হার তুলনামূলক কম। প্রশ্ন হচ্ছে, সুদের হার কম হওয়া সত্ত্বেও কৃষকদের বেশি সুদে এনজিওর কাছ থেকে এবং চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে কেন।
অভিযোগ আছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রক্রিয়া জটিল। কাগজপত্রের ঝামেলা, হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে কৃষকদের ব্যাংক ঋণ নিতে আগ্রহ কম। সেই তুলনায় এনজিওর কাছ থেকে ঋণ পাওয়া সহজ। আর মহাজনদের কাছ থেকে পাওয়া তো আরও সহজ। চাওয়া মাত্রই কৃষকরা ঋণ পেয়ে যান। এর জন্য কী খেসারত দিতে হবে সেটার পূর্বাপর না জেনে বা অনেক ক্ষেত্রে জেনেও তারা ঋণের দিকে হাত বাড়ান। তারপর সরল ঋণের গরল সুদ টানতে টানতে নাভিশ্বাস ওঠে। ঋণ নিয়ে শোধ করতে না পেরে অনেকে জমি বন্ধক রাখছেন, কৃষকরা আরও গরিব হচ্ছেন। মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর শুধু সুদই দিয়ে যাচ্ছেন; আসল টাকা তো থেকেই যায়! আর আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে মহাজনরা, অধিক মুনাফা লুফে নিচ্ছে এনজিওগুলো।
সরকার কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যাবস্থা করেছে। তারপরও যদি তারা মহাজনি ঋণের ফাঁদে পড়ে সেটা মেনে নেয়া যায় না। করোনাকালে প্রণোদনাও দেয়া হয়েছে। সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছেছে কিনা সেটাও জানা দরকার। নইলে কৃষকরা ঋণের জন্য মহাজনের দ্বারস্থ হবে কেন।
ব্যাংকগুলো বড় ঋণদাতাদের ঋণ দিতে যতটা আগ্রহী, কৃষকদের ক্ষেত্রে ততটাই উদাসীন। কৃষকরা অসচেতন, ব্যাংক ঋণ পেতে অনাগ্রহী এগুলো বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দায় সারলে হবে না। কৃষকরা কেন ব্যাংকঋণ নিতে অনাগ্রহী তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঋণদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে।
শুধু সুযোগ-সুবিধার দ্বার উন্মোচন করাই যথেষ্ট নয়। নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী সেটির উপকারভোগী হলো কিনা, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সেবা পৌঁছল কিনা- সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বলতে চাই, গাইবান্ধায় যারা মহাজনি ঋণের জালে আবদ্ধ হয়েছেন তাদের ব্যাংক ঋণের আওতায় আনতে হবে এবং সেটা হতে হবে সহজ শর্তে। মহাজনি ঋণের কবল থেকে তাদের মুক্ত করতে হবে।
গাইবান্ধার মতো দেশের অন্য জেলাগুলোতেও কৃষকরা ঋণের জালে আটকা পড়েছেন কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা চাই না দেশের একজন কৃষকও ‘ঋণ-সুদ-ঋণ’ এমন দুষ্টচক্রে পড়ে সর্বস্বান্ত হন।
রোববার, ২৯ আগস্ট ২০২১
ঋণের ফাঁদে আটকা পড়েছে গাইবান্ধার কৃষক। গত বছর তিন দফা বন্যায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত অনেক কৃষকই এলাকার মহাজন ও এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। সময়ের ব্যবধানে এসব ঋণের চড়া সুদ দিতে হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিরে ১০ হাজার টাকায় মাসিক সুদ ১ হাজার টাকা। ১ হাজার টাকায় ‘কারেন্ট’ সুদ দিনে ১০০ টাকা। ১ হাজার টাকায় ‘হাটরা’ সুদ সপ্তাহে ১৬০ টাকা। তাছাড়া এক লাখ টাকায় বোরো মৌসুমে ২০ মণ ধান ও আমন মৌসুমে ১০ মণ ধান দিতে হয়। ১৮-২০টি এনজিও জেলায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসব এনজিওর ঋণের সুদের হার ১২ থেকে ১৩ শতাংশ। এই সুদের জের টানতে হচ্ছে কৃষকদের।
বোরো মৌসুম শেষে ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকদের চার-পাঁচ মাস কোন কাজ থাকে না। এ সময় সময় কাজের সন্ধানে তারা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় যান। এবার করোনা পরিস্থিতিতে দফায় দফায় কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় কাজে যেতে পারেননি। তাই নিরুপায় হয়ে সংসারের খাওয়া-খরচ মেটাতে কৃষকরা ঋণগ্রস্ত হয়েছেন।
জেলার ১৯টি ব্যাংক ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) গত অর্থবছরে ২১৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কৃষি ঋণ দিয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা কৃষিঋণ কমিটির মাধ্যমে বিতরণ করা এ ঋণের সুদের হার ৮ শতাংশ। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রান্তিক কৃষকরা এ ঋণ পায়নি। সরাকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে কৃষি ঋণের সুদের হার তুলনামূলক কম। প্রশ্ন হচ্ছে, সুদের হার কম হওয়া সত্ত্বেও কৃষকদের বেশি সুদে এনজিওর কাছ থেকে এবং চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে কেন।
অভিযোগ আছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রক্রিয়া জটিল। কাগজপত্রের ঝামেলা, হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে কৃষকদের ব্যাংক ঋণ নিতে আগ্রহ কম। সেই তুলনায় এনজিওর কাছ থেকে ঋণ পাওয়া সহজ। আর মহাজনদের কাছ থেকে পাওয়া তো আরও সহজ। চাওয়া মাত্রই কৃষকরা ঋণ পেয়ে যান। এর জন্য কী খেসারত দিতে হবে সেটার পূর্বাপর না জেনে বা অনেক ক্ষেত্রে জেনেও তারা ঋণের দিকে হাত বাড়ান। তারপর সরল ঋণের গরল সুদ টানতে টানতে নাভিশ্বাস ওঠে। ঋণ নিয়ে শোধ করতে না পেরে অনেকে জমি বন্ধক রাখছেন, কৃষকরা আরও গরিব হচ্ছেন। মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর শুধু সুদই দিয়ে যাচ্ছেন; আসল টাকা তো থেকেই যায়! আর আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে মহাজনরা, অধিক মুনাফা লুফে নিচ্ছে এনজিওগুলো।
সরকার কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যাবস্থা করেছে। তারপরও যদি তারা মহাজনি ঋণের ফাঁদে পড়ে সেটা মেনে নেয়া যায় না। করোনাকালে প্রণোদনাও দেয়া হয়েছে। সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছেছে কিনা সেটাও জানা দরকার। নইলে কৃষকরা ঋণের জন্য মহাজনের দ্বারস্থ হবে কেন।
ব্যাংকগুলো বড় ঋণদাতাদের ঋণ দিতে যতটা আগ্রহী, কৃষকদের ক্ষেত্রে ততটাই উদাসীন। কৃষকরা অসচেতন, ব্যাংক ঋণ পেতে অনাগ্রহী এগুলো বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দায় সারলে হবে না। কৃষকরা কেন ব্যাংকঋণ নিতে অনাগ্রহী তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঋণদানের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে।
শুধু সুযোগ-সুবিধার দ্বার উন্মোচন করাই যথেষ্ট নয়। নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী সেটির উপকারভোগী হলো কিনা, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সেবা পৌঁছল কিনা- সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বলতে চাই, গাইবান্ধায় যারা মহাজনি ঋণের জালে আবদ্ধ হয়েছেন তাদের ব্যাংক ঋণের আওতায় আনতে হবে এবং সেটা হতে হবে সহজ শর্তে। মহাজনি ঋণের কবল থেকে তাদের মুক্ত করতে হবে।
গাইবান্ধার মতো দেশের অন্য জেলাগুলোতেও কৃষকরা ঋণের জালে আটকা পড়েছেন কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা চাই না দেশের একজন কৃষকও ‘ঋণ-সুদ-ঋণ’ এমন দুষ্টচক্রে পড়ে সর্বস্বান্ত হন।