করোনাকালে যে বাল্যবিয়ে বেড়েছে, তা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছিল। সমস্যাটি কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে সেটি বোঝা যায় সাতক্ষীরার একটি স্কুলেই ৫০ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের খবরে। গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে।
বাল্যবিয়ে কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে সেটা এই একটি স্কুলের পরিসংখ্যান থেকে অনুমান করা যায়। এই চিত্র দেখে ধারণা করা যায় যে দেশের সামগ্রিক অবস্থা সুখকর হবে না। মহামারীকালে কী পরিমাণ বাল্যবিয়ে হয়েছে, এর পেছনের কারণগুলো কী সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা জরুরি। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে কাজটি শুরু করতে হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হলে হালনাগাদ তথ্য থাকা জরুরি।
সম্প্রতি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় মন্তব্য করা হয় যে, অল্প বয়সে মেয়েরা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করার কারণে বাল্যবিয়ের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাতক্ষীরার উক্ত বিদ্যালয়ে যে ৫০টি বাল্যাবিয়ে হলো সেখানে কতজন পালিয়ে বিয়ে করেছে সেটার খোঁজ নেয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে বাল্যবিয়ের সংখ্যা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে গ্রামের পরিবারগুলোতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অভিবাসী শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এ সময়টায় গ্রামে ফিরেছে। সমাজ বাস্তবতায় প্রবাসে কাজ করা ছেলের ‘পাত্র’ হিসেবে চাহিদা বেশি। এমন ‘ভালো পাত্র’ পাওয়ায় অভিভাবকরা বিয়ে দিচ্ছেন তাড়াতাড়ি।
অন্যদিকে কারোনাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ছিল কম। এই সুযোগও কাজে লাগাচ্ছে কেউ কেউ। দরিদ্র অনেক অভিভাবকই মহামারীর সময় মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন কারণ এসময় খুব বেশি মানুষকে আপ্যায়ন করতে হয় না, বিয়েতে খরচও কম হয়। তাছাড়া দাদি-নানিদের ইচ্ছাপূরণ, বখাটেদের উৎপাত থেকে বাল্যবিয়ের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে বলে জানা যায়।
দেশে মা ও শিশুমৃত্যুর মূল কারণ বাল্যবিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোরী মায়ের মৃত্যুঝুঁকি প্রাপ্তবয়স্ক মায়ের তুলনায় অন্তত চারগুণ বেশি। কিশোরী মেয়ে মা হওয়ায় কীভাবে শিশুকে পরিচর্যা করবে সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকে না, তাই শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। তাছাড়া বাল্যবিয়ের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা, মাতৃমৃত্যু ও ঝুঁকি, অপরিণত গর্ভধারণ, প্রসবকালীন শিশুর মৃত্যুঝুঁকি, প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা, নারী শিক্ষার হার হ্রাস, স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ কমে যাওয়াসহ নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
যে কোন মূল্যে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা জরুরি। কেবল বাল্যবিয়ে বন্ধ করা গেলেই মাতৃমৃত্যু, অকালে শিশু মৃত্যু, শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার মতো বহু সমস্যার কাক্সিক্ষত সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। বিষয়টি সরকার গুরুত্ব সহকারে দেখবে- এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
করোনাকালে যে বাল্যবিয়ে বেড়েছে, তা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছিল। সমস্যাটি কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে সেটি বোঝা যায় সাতক্ষীরার একটি স্কুলেই ৫০ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের খবরে। গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৫০ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে।
বাল্যবিয়ে কতটা প্রকট আকার ধারণ করেছে সেটা এই একটি স্কুলের পরিসংখ্যান থেকে অনুমান করা যায়। এই চিত্র দেখে ধারণা করা যায় যে দেশের সামগ্রিক অবস্থা সুখকর হবে না। মহামারীকালে কী পরিমাণ বাল্যবিয়ে হয়েছে, এর পেছনের কারণগুলো কী সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা জরুরি। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে কাজটি শুরু করতে হবে। বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হলে হালনাগাদ তথ্য থাকা জরুরি।
সম্প্রতি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় মন্তব্য করা হয় যে, অল্প বয়সে মেয়েরা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করার কারণে বাল্যবিয়ের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাতক্ষীরার উক্ত বিদ্যালয়ে যে ৫০টি বাল্যাবিয়ে হলো সেখানে কতজন পালিয়ে বিয়ে করেছে সেটার খোঁজ নেয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে বাল্যবিয়ের সংখ্যা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে গ্রামের পরিবারগুলোতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অভিবাসী শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এ সময়টায় গ্রামে ফিরেছে। সমাজ বাস্তবতায় প্রবাসে কাজ করা ছেলের ‘পাত্র’ হিসেবে চাহিদা বেশি। এমন ‘ভালো পাত্র’ পাওয়ায় অভিভাবকরা বিয়ে দিচ্ছেন তাড়াতাড়ি।
অন্যদিকে কারোনাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ছিল কম। এই সুযোগও কাজে লাগাচ্ছে কেউ কেউ। দরিদ্র অনেক অভিভাবকই মহামারীর সময় মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন কারণ এসময় খুব বেশি মানুষকে আপ্যায়ন করতে হয় না, বিয়েতে খরচও কম হয়। তাছাড়া দাদি-নানিদের ইচ্ছাপূরণ, বখাটেদের উৎপাত থেকে বাল্যবিয়ের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে বলে জানা যায়।
দেশে মা ও শিশুমৃত্যুর মূল কারণ বাল্যবিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোরী মায়ের মৃত্যুঝুঁকি প্রাপ্তবয়স্ক মায়ের তুলনায় অন্তত চারগুণ বেশি। কিশোরী মেয়ে মা হওয়ায় কীভাবে শিশুকে পরিচর্যা করবে সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকে না, তাই শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। তাছাড়া বাল্যবিয়ের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা, মাতৃমৃত্যু ও ঝুঁকি, অপরিণত গর্ভধারণ, প্রসবকালীন শিশুর মৃত্যুঝুঁকি, প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা, নারী শিক্ষার হার হ্রাস, স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ কমে যাওয়াসহ নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
যে কোন মূল্যে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা জরুরি। কেবল বাল্যবিয়ে বন্ধ করা গেলেই মাতৃমৃত্যু, অকালে শিশু মৃত্যু, শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার মতো বহু সমস্যার কাক্সিক্ষত সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। বিষয়টি সরকার গুরুত্ব সহকারে দেখবে- এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।