অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। স্বাধীনতার প্রায় পঞ্চাশ বছরেও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। এর করুণ শিকার হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সাম্প্রদায়িক হামলা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রশ্ন হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক বলে পরিচিত রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় তখন কেন প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্যাতিত হতে হচ্ছে।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ বলেছে, ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগে গত ১৩ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তিন দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭০টি পূজামন্ডপে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৯টি। অর্থাৎ গত আট বছর নয় মাসে গড়ে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও অন্তত একটি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এই তথ্য। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
আমাদের আশঙ্কা, সাম্প্রদায়িক হামলার প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ। কারণ অনেক হামলার খবরই সংবাদকর্মীদের জানার বাইরে থেকে যায়। হামলার শিকার হন যেসব ব্যক্তিবর্গ তাদের অনেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারস্থ হন না। তাদের ধারণা, থানা-পুলিশ করে কোন লাভ হয় না। বরং অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়ে।
দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার বড় কোন ঘটনায় যেসব মামলা হয় তার একটি প্রবণতা হচ্ছে শত শত মানুষকে আসামি করা। যার বড় একটি অংশই হচ্ছে অজ্ঞাতনামা। আসামিদের কাউকে কাউকে ধরা হলেও তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। অজ্ঞাতনামা আসামির নামে প্রায়ই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো হয়। প্রকৃত অপরাধীরা রয়ে যায় পর্দার আড়ালে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নাটেরগুরুদের খুঁজে বের করার প্রয়োজন বোধ করে না। ফলে সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার আর এগোয় না। দেশে দীর্ঘকাল ধরেই এমনটা ঘটে আসছে।
সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে চলে রাজনৈতিক দোষারোপের খেলা। এক দল আরেক দলের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় সারে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দোষারোপের এই খেলায় লাভবান হচ্ছে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। আর ক্ষতিটা হচ্ছে দেশের, জাতির। দোষারোপের খেলা চললে প্রশাসনের পক্ষে সাম্প্রদায়িক হামলার সুষ্ঠু বিহিত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে দেশে যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে তার বিচার করতে হবে। রামু-উখিয়া, নাসিরনগর, শাল্লা, বোরহানউদ্দীনের মতো এরও যদি বিচার না হয় তাহলে এখনও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটুকুও আর একসময় থাকবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।
বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর ২০২১
অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। স্বাধীনতার প্রায় পঞ্চাশ বছরেও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। এর করুণ শিকার হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সাম্প্রদায়িক হামলা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রশ্ন হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক বলে পরিচিত রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় তখন কেন প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্যাতিত হতে হচ্ছে।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ বলেছে, ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগে গত ১৩ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তিন দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭০টি পূজামন্ডপে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৯টি। অর্থাৎ গত আট বছর নয় মাসে গড়ে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও অন্তত একটি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এই তথ্য। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
আমাদের আশঙ্কা, সাম্প্রদায়িক হামলার প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ। কারণ অনেক হামলার খবরই সংবাদকর্মীদের জানার বাইরে থেকে যায়। হামলার শিকার হন যেসব ব্যক্তিবর্গ তাদের অনেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারস্থ হন না। তাদের ধারণা, থানা-পুলিশ করে কোন লাভ হয় না। বরং অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়ে।
দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার বড় কোন ঘটনায় যেসব মামলা হয় তার একটি প্রবণতা হচ্ছে শত শত মানুষকে আসামি করা। যার বড় একটি অংশই হচ্ছে অজ্ঞাতনামা। আসামিদের কাউকে কাউকে ধরা হলেও তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। অজ্ঞাতনামা আসামির নামে প্রায়ই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো হয়। প্রকৃত অপরাধীরা রয়ে যায় পর্দার আড়ালে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নাটেরগুরুদের খুঁজে বের করার প্রয়োজন বোধ করে না। ফলে সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার আর এগোয় না। দেশে দীর্ঘকাল ধরেই এমনটা ঘটে আসছে।
সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে চলে রাজনৈতিক দোষারোপের খেলা। এক দল আরেক দলের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় সারে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দোষারোপের এই খেলায় লাভবান হচ্ছে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। আর ক্ষতিটা হচ্ছে দেশের, জাতির। দোষারোপের খেলা চললে প্রশাসনের পক্ষে সাম্প্রদায়িক হামলার সুষ্ঠু বিহিত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে দেশে যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে তার বিচার করতে হবে। রামু-উখিয়া, নাসিরনগর, শাল্লা, বোরহানউদ্দীনের মতো এরও যদি বিচার না হয় তাহলে এখনও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যেটুকু অবশিষ্ট আছে সেটুকুও আর একসময় থাকবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।