‘দেশের যে অবস্থা তাতে কিছু বলতেও ভয় হয়।’ কথাটি বলেছেন সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশ। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চলমান সাম্প্রদায়িক হামলার প্রেক্ষাপটে তিনি বলেছেন, ‘স্বাধীনভাবে বাঁচার অবস্থা সংখ্যালঘুদের জন্য নেই।’
হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বক্তব্যের প্রতিবাদে গত ১৬ মার্চ ফেসবুকে একটি মন্তব্য করেছিলেন ঝুমন দাশ। তার প্রেক্ষিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা এক মামলায় ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকতে হয়েছে তাকে। দফায় দফায় তার জামিন আবেদন খারিজ হয়েছে। অবশেষে শর্তসাপেক্ষে এক বছরের জামিন মিলেছে। তিনি দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। মনে করছেন যে, দেশে সংখ্যালঘুদের স্বাধীনভাবে বাঁচার অবস্থা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের একজন মানুষের বিচ্ছিন্ন ভাবনা। নাকি তিনি দেশের ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের’ সব মানুষের মনের কথাটি বলেছেন?
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত কিছুদিন আগে বলেছেন, ‘আমাদের হাজার হাজার মন্দির যখন জ্বালিয়ে দেয়া হয়, তখন নাকি আমাদের বলতে হবে, আমরা সুখে আছি। অন্যদের ধর্মীয় অনুভূতি থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি থাকতে পারবে না- আজকের বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতিই সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
স্বাধীন গণতান্ত্রিক একটি দেশে একজন মানুষ মুক্তভাবে তার মত প্রকাশ করতে ভয় কেন পাচ্ছে, কেন ভাবছে যে তার আবেগ-অনুভূতি থাকতে নেই, এখানে সংখ্যালঘুদের স্বাধীনভাবে বাঁচার অবস্থা নেই? এই অবস্থার সৃষ্টি হলো কীভাবে? এর পেছনে কারও কী কোন দায় রয়েছে? এগুলো কি উড়িয়ে দেয়ার মতো প্রশ্ন?
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দেশে নিজের বা তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভোগার খবর প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে তারা আস্থা সংকটে ভুগছে। সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল কেউই যে তাদের আশ্বস্ত করতে পারছে না সেটা তারা জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, হামলার আগে প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা ঘটনা ঘটার অনেক পরে হাজির হয়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম কোন অবস্থান নিতে দেখা যায় না। হামলার পর মেলে না বিচার। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হলেও তারা একসময় ঠিকই ছাড়া পেয়ে যায়। আর কারাগারে থাকতে হয় শাল্লার ঝুমন দাশের মতো মানুষকে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের আস্থা সংকট দূর করা হবে কীভাবে সেটা রাষ্ট্রকে নির্ধারণ করতে হবে। বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির অবসান ঘটানো না গেলে, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে পরাস্ত করা না গেলে শুধু মুখের কথায় আস্থা ফিরবে না। বরং সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়বে। যেটা কোন গণতান্ত্রিক দেশে কাম্য নয়। তাদের কথা বলার ভীতি, অনুভূতি প্রকাশের দ্বিধা দূর করতে হবে। এই বিশ্বাস প্রতিটি মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে থাকতে হবে যে, ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী নির্বিশেষে সব মানুষেরই এ দেশে স্বাধীনভাবে বাঁচার পরিবেশ আছে, অধিকার আছে।
রোববার, ২৪ অক্টোবর ২০২১
‘দেশের যে অবস্থা তাতে কিছু বলতেও ভয় হয়।’ কথাটি বলেছেন সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশ। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চলমান সাম্প্রদায়িক হামলার প্রেক্ষাপটে তিনি বলেছেন, ‘স্বাধীনভাবে বাঁচার অবস্থা সংখ্যালঘুদের জন্য নেই।’
হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বক্তব্যের প্রতিবাদে গত ১৬ মার্চ ফেসবুকে একটি মন্তব্য করেছিলেন ঝুমন দাশ। তার প্রেক্ষিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা এক মামলায় ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকতে হয়েছে তাকে। দফায় দফায় তার জামিন আবেদন খারিজ হয়েছে। অবশেষে শর্তসাপেক্ষে এক বছরের জামিন মিলেছে। তিনি দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। মনে করছেন যে, দেশে সংখ্যালঘুদের স্বাধীনভাবে বাঁচার অবস্থা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের একজন মানুষের বিচ্ছিন্ন ভাবনা। নাকি তিনি দেশের ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের’ সব মানুষের মনের কথাটি বলেছেন?
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত কিছুদিন আগে বলেছেন, ‘আমাদের হাজার হাজার মন্দির যখন জ্বালিয়ে দেয়া হয়, তখন নাকি আমাদের বলতে হবে, আমরা সুখে আছি। অন্যদের ধর্মীয় অনুভূতি থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি থাকতে পারবে না- আজকের বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতিই সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
স্বাধীন গণতান্ত্রিক একটি দেশে একজন মানুষ মুক্তভাবে তার মত প্রকাশ করতে ভয় কেন পাচ্ছে, কেন ভাবছে যে তার আবেগ-অনুভূতি থাকতে নেই, এখানে সংখ্যালঘুদের স্বাধীনভাবে বাঁচার অবস্থা নেই? এই অবস্থার সৃষ্টি হলো কীভাবে? এর পেছনে কারও কী কোন দায় রয়েছে? এগুলো কি উড়িয়ে দেয়ার মতো প্রশ্ন?
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দেশে নিজের বা তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভোগার খবর প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে তারা আস্থা সংকটে ভুগছে। সরকার, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল কেউই যে তাদের আশ্বস্ত করতে পারছে না সেটা তারা জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, হামলার আগে প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা ঘটনা ঘটার অনেক পরে হাজির হয়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম কোন অবস্থান নিতে দেখা যায় না। হামলার পর মেলে না বিচার। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হলেও তারা একসময় ঠিকই ছাড়া পেয়ে যায়। আর কারাগারে থাকতে হয় শাল্লার ঝুমন দাশের মতো মানুষকে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের আস্থা সংকট দূর করা হবে কীভাবে সেটা রাষ্ট্রকে নির্ধারণ করতে হবে। বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির অবসান ঘটানো না গেলে, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে পরাস্ত করা না গেলে শুধু মুখের কথায় আস্থা ফিরবে না। বরং সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়বে। যেটা কোন গণতান্ত্রিক দেশে কাম্য নয়। তাদের কথা বলার ভীতি, অনুভূতি প্রকাশের দ্বিধা দূর করতে হবে। এই বিশ্বাস প্রতিটি মানুষের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে থাকতে হবে যে, ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী নির্বিশেষে সব মানুষেরই এ দেশে স্বাধীনভাবে বাঁচার পরিবেশ আছে, অধিকার আছে।