আগামী বছর থেকেই নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মোকাবিলায় দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে সরকার। এজন্য নীতিনির্ধারকরা চাচ্ছেন, স্কুল পর্যায়েই শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তির হাতেখড়ি হোক।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আলোকে ২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে পর্যায়ক্রমে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত আইসিটি নামক নতুন বিষয়কে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
পরিতাপের বিষয় হলো, দেশের অধিকাংশ স্কুল-কলেজে এখনও আইসিটির বিষয়ভিত্তিক ও দক্ষ শিক্ষক নেই। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে পুরোনো ৩১৭টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোনটিতেই ‘আইসিটি’ বিষয়ের শিক্ষক নেই। এমনকি এ বিষয়ের পদও নেই। সম্প্রতি জাতীয়করণ হওয়া ২৮৯টি বিদ্যালয় এবং দুটি প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠিত নতুন ১৫টিসহ দেশে ছয় শতাধিক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কোন বিদ্যালয়ে আইসিটি শিক্ষক নেই। এ নিয়ে গতকাল শনিবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুয়ায়ী, প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপরীতে বর্তমানে বিদ্যালয় পর্যায়ে ১৩ হাজার ৯২৬ জন এবং কলেজ পর্যায়ে চার হাজার ছয়জন আইসিটি শিক্ষক রয়েছেন। এ হিসেবে ন্যূনতম একজন করে ধরা হলেও প্রায় ২২ হাজার প্রতিষ্ঠানে ‘আইসিটি’ শিক্ষক নেই।
স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় বিষয়ের শিক্ষকরা আইসিটি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঠদান করছেন। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বা খন্ডকালীন কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে আইসিটি বিষয়ে পাঠদান চলছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানিয়েছেন, আইসিটি বিষয়টি পড়াতে হলে গভীর জ্ঞান থাকা দরকার। সেই প্রশিক্ষণ সাধারণ শিক্ষকদের নেই। তাই তাদের পক্ষে আইসিটি বিষয়ের গভীরে গিয়ে পাঠদান সম্ভব নয়।
তাছাড়া নবম-দশম শ্রেণীতে আইসিটি বিষয়ে ‘বেসিক প্রোগ্রামিং’ রয়েছে। আইসিটি শিক্ষকরা বিভিন্ন ধরনের টুলস (শিক্ষা উপকরণ) ব্যবহার করে পাঠদান করতে পারেন, অনেক গভীরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝাতে পারেন। যারা আইসিটি বিষয়ের ওপর এক বা দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তারা সেভাবে গভীরে গিয়ে পাঠদান করতে পারছেন না। নিজেরাই নবম-দশম শ্রেণীর আইসিটি বিষয়ের ল্যাঙ্গুয়েজ, প্রোগ্রামিং, কোডিং-এগুলো বুঝতে পারেন না।
আমরা মনে করি, অগ্রধিকার ভিত্তিতে সরকারের বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক সমস্যার সমাধান করা দরকার। কারণ ২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকেও নতুন শিক্ষাক্রমে আইসিটি বিষয়টিকে আধুনিকায়ন করে ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ নামে পূর্বের মতো বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে যদি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়, তাহলে সরকারের এমন একটি যুগোপযোগী শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন শুধু পাঠ্যবই এবং কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে বলে শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
শুধু নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করে পাঠ্যপুস্তক ছাপালেই শিক্ষার্থীরা আপনাআপনি তথ্যপ্রযুক্তি শিখে যাবে না। বিষয়ভিত্তিক ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক থাকতে হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জোরালো পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
রোববার, ২১ নভেম্বর ২০২১
আগামী বছর থেকেই নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মোকাবিলায় দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে সরকার। এজন্য নীতিনির্ধারকরা চাচ্ছেন, স্কুল পর্যায়েই শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তির হাতেখড়ি হোক।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আলোকে ২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে পর্যায়ক্রমে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত আইসিটি নামক নতুন বিষয়কে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
পরিতাপের বিষয় হলো, দেশের অধিকাংশ স্কুল-কলেজে এখনও আইসিটির বিষয়ভিত্তিক ও দক্ষ শিক্ষক নেই। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে পুরোনো ৩১৭টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোনটিতেই ‘আইসিটি’ বিষয়ের শিক্ষক নেই। এমনকি এ বিষয়ের পদও নেই। সম্প্রতি জাতীয়করণ হওয়া ২৮৯টি বিদ্যালয় এবং দুটি প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠিত নতুন ১৫টিসহ দেশে ছয় শতাধিক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কোন বিদ্যালয়ে আইসিটি শিক্ষক নেই। এ নিয়ে গতকাল শনিবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুয়ায়ী, প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপরীতে বর্তমানে বিদ্যালয় পর্যায়ে ১৩ হাজার ৯২৬ জন এবং কলেজ পর্যায়ে চার হাজার ছয়জন আইসিটি শিক্ষক রয়েছেন। এ হিসেবে ন্যূনতম একজন করে ধরা হলেও প্রায় ২২ হাজার প্রতিষ্ঠানে ‘আইসিটি’ শিক্ষক নেই।
স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় বিষয়ের শিক্ষকরা আইসিটি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঠদান করছেন। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বা খন্ডকালীন কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে আইসিটি বিষয়ে পাঠদান চলছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানিয়েছেন, আইসিটি বিষয়টি পড়াতে হলে গভীর জ্ঞান থাকা দরকার। সেই প্রশিক্ষণ সাধারণ শিক্ষকদের নেই। তাই তাদের পক্ষে আইসিটি বিষয়ের গভীরে গিয়ে পাঠদান সম্ভব নয়।
তাছাড়া নবম-দশম শ্রেণীতে আইসিটি বিষয়ে ‘বেসিক প্রোগ্রামিং’ রয়েছে। আইসিটি শিক্ষকরা বিভিন্ন ধরনের টুলস (শিক্ষা উপকরণ) ব্যবহার করে পাঠদান করতে পারেন, অনেক গভীরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝাতে পারেন। যারা আইসিটি বিষয়ের ওপর এক বা দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তারা সেভাবে গভীরে গিয়ে পাঠদান করতে পারছেন না। নিজেরাই নবম-দশম শ্রেণীর আইসিটি বিষয়ের ল্যাঙ্গুয়েজ, প্রোগ্রামিং, কোডিং-এগুলো বুঝতে পারেন না।
আমরা মনে করি, অগ্রধিকার ভিত্তিতে সরকারের বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক সমস্যার সমাধান করা দরকার। কারণ ২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকেও নতুন শিক্ষাক্রমে আইসিটি বিষয়টিকে আধুনিকায়ন করে ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ নামে পূর্বের মতো বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে যদি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়, তাহলে সরকারের এমন একটি যুগোপযোগী শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন শুধু পাঠ্যবই এবং কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে বলে শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
শুধু নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করে পাঠ্যপুস্তক ছাপালেই শিক্ষার্থীরা আপনাআপনি তথ্যপ্রযুক্তি শিখে যাবে না। বিষয়ভিত্তিক ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক থাকতে হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জোরালো পদক্ষেপ নেয়া উচিত।