alt

মুক্ত আলোচনা

বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির পথ

ফারজানা অনন্যা

: সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১

আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে বেকারত্ব এখন এক গভীর ও জাতীয় অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে; যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘কাজ প্রত্যাশী হওয়া সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি সপ্তাহে এক দিন বা এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজের সুযোগ না পেলে ওই ব্যক্তিকে বেকার হিসেবে ধরা হবে।’

বাংলাদেশে সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ হয়েছে ২০১৭ সালে। সেই জরিপ অনুযায়ী দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। আর তাদের মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ। দুই সংখ্যার মধ্যে বিয়োগ দিলেই পাওয়া যায় বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা।আর সেটি হলো ২৭ লাখ। গত বছর (২০২০) থেকে করোনা মহামারীর কারণে বেকারত্বের অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

বাংলাদেশে বেকার যুবসমাজের অর্ধেকের বেশি শিক্ষিত বেকার। আর এ শিক্ষিত বেকারত্বের অন্যতম কারণ হলো সর্বক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই বেকারত্বের হার বেশি।বাংলাদেশের বেকারত্বের পরিস্থিতির বিশেষ কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে উচ্চ শিক্ষিতদের। আর তাদের নাম দেয়া হচ্ছে ‘বেকার’। এরাই সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগা!

বিখ্যাত সাময়িকী ‘দ্য ইকোনোমিস্ট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৪৭ শতাংশ স্নাতক (সম্মান) পাস করা শিক্ষার্থীরাই এই বেকারের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বলতে খারাপ লাগলেও একথা সত্য যে, এদেশের তরুণ-তরুণীরা যতো বেশি পড়াশুনা করছে, ততোই তাদের বেকার থাকার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমাদের দেশে ঘুষ নিয়ে চাকরি দেয়ার ফলে যে যার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছে না, ফলে বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্র মেধাহীন হয়ে পড়ছে। যারা সর্বক্ষেত্রে ঘুষ নিয়ে চাকরি দিচ্ছে তাদেরও মাথায় রাখা উচিত যে, একটি দেশের উন্নতির জন্য অবশ্যই মেধাবী মানুষের প্রয়োজন। বর্তমানে প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই লাখ লাখ টাকা ঘুষ ছাড়া চাকরি নেই।

বর্তমানে বেশিরভাগ কর্মহীন তরুণ-তরুণীরা বিনোদন প্রিয় হয়ে পড়ছে। অনলাইন আসক্তিতে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে; যেমন- ফেসবুক, টিকটক, ফানি পোস্ট, লাইকি, ইউটিউব, অনলাইন গেইম ইত্যাদি। যেকোনো বুদ্ধিজীবীর কথা কিংবা মূল্যবান বিষয়ের চেয়ে এরা মূল্যহীন বিষয়ের প্রতি অধিক আকর্ষিত হয়ে পড়েছে। যা তাদের নিম্নমুখী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশক এবং এতে তারা অদক্ষ হয়েও পড়ছে। গুণীজনের কদর না করলে গুণীজন শূন্য দেশে পরিণত হবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। তাই দেশকে রক্ষা করার জন্য তরুণ সমাজকে প্রথমে রক্ষা করতে হবে।

অপরদিকে, একটি হতাশাগ্রস্ত বেকার গোষ্ঠী চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি, রাহাজানি, মাদকদ্রব্য সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আমাদের সমাজকে কলুষিত করছে। এ সামাজিক ব্যাধি থেকে আমাদের দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন সরকার ও নাগরিকদের সম্মিলিত উদ্যোগ, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা, দক্ষ জনবল এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির। শিক্ষিত জনবলকে সরকারি চাকরির দিকে বেশি না ঝুঁকে বেসরকারি চাকরি বা নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন চেষ্টা করার চাইতে স্বল্প পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করলে মূল্যবান সময়েরও অপচয় হয় না এবং হতাশাগ্রস্ত হতে হয় না। বর্তমানে অনলাইন ব্যবসার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক অস্বচ্ছল ছাত্রছাত্রী, গৃহবধূ, পঙ্গু জীবন অতিবাহিতকারী জনগোষ্ঠী অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করেছেন, যা সকল স্তরের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। এছাড়াও অনেকে শাক-সব্জির চাষ করছেন, কেউবা খামার গঠন করে সফল হচ্ছেন। তবে অনেক সময়ই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মূলধনের অভাবে অনেকেই উদ্যোক্তা হতে পারেন না।

বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের জন্য রাষ্ট্রকে কারিগরি শিক্ষার প্রসার, বেকার ভাতা প্রদান, দেশীয় কুটির শিল্পের প্রসার সৃষ্টি করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। একবিংশ শতাব্দীর সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবেই বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে সত্যিকারের সফল রাষ্ট্র হিসেবে সমাসীন হবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির পথ

ফারজানা অনন্যা

সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১

আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে বেকারত্ব এখন এক গভীর ও জাতীয় অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে; যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘কাজ প্রত্যাশী হওয়া সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি সপ্তাহে এক দিন বা এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজের সুযোগ না পেলে ওই ব্যক্তিকে বেকার হিসেবে ধরা হবে।’

বাংলাদেশে সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ হয়েছে ২০১৭ সালে। সেই জরিপ অনুযায়ী দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। আর তাদের মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ। দুই সংখ্যার মধ্যে বিয়োগ দিলেই পাওয়া যায় বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা।আর সেটি হলো ২৭ লাখ। গত বছর (২০২০) থেকে করোনা মহামারীর কারণে বেকারত্বের অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

বাংলাদেশে বেকার যুবসমাজের অর্ধেকের বেশি শিক্ষিত বেকার। আর এ শিক্ষিত বেকারত্বের অন্যতম কারণ হলো সর্বক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই বেকারত্বের হার বেশি।বাংলাদেশের বেকারত্বের পরিস্থিতির বিশেষ কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে উচ্চ শিক্ষিতদের। আর তাদের নাম দেয়া হচ্ছে ‘বেকার’। এরাই সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগা!

বিখ্যাত সাময়িকী ‘দ্য ইকোনোমিস্ট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৪৭ শতাংশ স্নাতক (সম্মান) পাস করা শিক্ষার্থীরাই এই বেকারের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বলতে খারাপ লাগলেও একথা সত্য যে, এদেশের তরুণ-তরুণীরা যতো বেশি পড়াশুনা করছে, ততোই তাদের বেকার থাকার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমাদের দেশে ঘুষ নিয়ে চাকরি দেয়ার ফলে যে যার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছে না, ফলে বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্র মেধাহীন হয়ে পড়ছে। যারা সর্বক্ষেত্রে ঘুষ নিয়ে চাকরি দিচ্ছে তাদেরও মাথায় রাখা উচিত যে, একটি দেশের উন্নতির জন্য অবশ্যই মেধাবী মানুষের প্রয়োজন। বর্তমানে প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই লাখ লাখ টাকা ঘুষ ছাড়া চাকরি নেই।

বর্তমানে বেশিরভাগ কর্মহীন তরুণ-তরুণীরা বিনোদন প্রিয় হয়ে পড়ছে। অনলাইন আসক্তিতে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে; যেমন- ফেসবুক, টিকটক, ফানি পোস্ট, লাইকি, ইউটিউব, অনলাইন গেইম ইত্যাদি। যেকোনো বুদ্ধিজীবীর কথা কিংবা মূল্যবান বিষয়ের চেয়ে এরা মূল্যহীন বিষয়ের প্রতি অধিক আকর্ষিত হয়ে পড়েছে। যা তাদের নিম্নমুখী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশক এবং এতে তারা অদক্ষ হয়েও পড়ছে। গুণীজনের কদর না করলে গুণীজন শূন্য দেশে পরিণত হবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। তাই দেশকে রক্ষা করার জন্য তরুণ সমাজকে প্রথমে রক্ষা করতে হবে।

অপরদিকে, একটি হতাশাগ্রস্ত বেকার গোষ্ঠী চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি, রাহাজানি, মাদকদ্রব্য সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আমাদের সমাজকে কলুষিত করছে। এ সামাজিক ব্যাধি থেকে আমাদের দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন সরকার ও নাগরিকদের সম্মিলিত উদ্যোগ, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা, দক্ষ জনবল এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির। শিক্ষিত জনবলকে সরকারি চাকরির দিকে বেশি না ঝুঁকে বেসরকারি চাকরি বা নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন চেষ্টা করার চাইতে স্বল্প পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করলে মূল্যবান সময়েরও অপচয় হয় না এবং হতাশাগ্রস্ত হতে হয় না। বর্তমানে অনলাইন ব্যবসার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক অস্বচ্ছল ছাত্রছাত্রী, গৃহবধূ, পঙ্গু জীবন অতিবাহিতকারী জনগোষ্ঠী অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করেছেন, যা সকল স্তরের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। এছাড়াও অনেকে শাক-সব্জির চাষ করছেন, কেউবা খামার গঠন করে সফল হচ্ছেন। তবে অনেক সময়ই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মূলধনের অভাবে অনেকেই উদ্যোক্তা হতে পারেন না।

বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের জন্য রাষ্ট্রকে কারিগরি শিক্ষার প্রসার, বেকার ভাতা প্রদান, দেশীয় কুটির শিল্পের প্রসার সৃষ্টি করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। একবিংশ শতাব্দীর সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবেই বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে সত্যিকারের সফল রাষ্ট্র হিসেবে সমাসীন হবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top