alt

মুক্ত আলোচনা

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও চর উন্নয়ন

রোকাইয়া মাহজাবিন

: সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১

প্রাচীনকালে মানব সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো নদীকে কেন্দ্র করে। এর প্রধান কারণ কৃষিকাজ। আদিম মানুষ যখন কৃষিকাজের ধারণা পেল তখন তার অনুভব করলো পানির। আর তখন থেকেই মানব সভ্যতা গড়ে উঠতে শুরু করল নদীকে কেন্দ্র করে। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মানব সভ্যতার প্রধান জীবিকা হলো কৃষিকাজ। কৃষিকাজ বাংলাদেশের মানুষের প্রধান জীবিকা। দেশের শতকরা ৭০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সাথে জড়িত। কৃষি বাংলার মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

কৃষিকাজ করে দেশের হাজার হাজার কৃষক তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম উজার করে উৎপাদন করে ধান, গম, পাট, তিল, তিসিসহ নানা রকম সবজি। ফসলের মাঠের সোনার ফসলে লেগে থাকে কৃষকের ভালোবাসা এবং দিনরাত একাকার করে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটানোর প্রতিচ্ছবি। কি বৃষ্টি, কি ঝড় ফসলের মাঠ তাদের সঙ্গী। একটি ঘরে আনার পর কৃষকের মনে আকতে থাকে আরেকটি ফসলের ছবি। এভাবেই তারা সারাবছর গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের জন্য ফসল উৎপাদন করে।

কৃষকের উৎপাদিত ফসল পাট আমাদের অর্থকরী ফসল। যাকে আমরা সোনালি আঁশ হিসেবেও চিনি। পাটের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত প্রতিটি অংশই আমরা ব্যবহার করতে পারি। পাট শাক অত্যন্ত উপকারী এবং উপাদেয়। কমবেশি সব মানুষই এটা পছন্দ করে। তেমনি করে পাটকাঠি প্রতিটি বাঙালি নারীর রান্নাঘরে নিত্যদিনের জ্বালানি। গ্রামগঞ্জে ঘরের বেড়া ও ছাউনিতে এটা ব্যবহার করা হয়। আধুনিক যুগে পাটকাঠির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় পারটেক্সের ফার্নিচার তৈরিতে। অপরদিকে যে জিনিসটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল পাটের আঁশ। পাটের আশের নানামুখী ব্যবহার রয়েছে যেমন-পাটের ব্যাগ, মোরা, ঘর সাজানোর উপাদান ইত্যাদি। পাটের তৈরি জিনিস পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই। পরিবেশ রক্ষায় পাট সন্দেহাতীতভাবে আমাদের অনেক বড় অর্জন। পাটের চাহিদা বিদেশে অনেক বেশি। তাই আমরা যদি পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে পাটের উৎপাদন বাড়াতে পারি তাহলে বাড়তি পাট বিদেশে রপ্তানি করে আমরা অর্জন করতে পারি বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে পাট উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে।

আমাদের দেশে কৃষকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিজ উপাদান হলো আখ। আখ কমবেশি আমাদের সবার কাছে পরিচিত। আখের রস সুপরিচিত এবং সুপেয় পানীয়। আখের তৈরি গুড় এবং চিনি না হলে আমাদের একদিনও যেন চলে না। আখ উৎপাদন করা হয় সাধারণত বালু মাটিতে। আমরা আখ উৎপাদনে সম্ভাবনাময় দেশ। অথচ প্রতি বছর অন্য দেশ থেকে বিষেশ করে ভারত থেকে আমদানি করি কোটি কোটি টাকার চিনি। এককালে আমরা নাকি চিনি উৎপাদনে ছিলাম সেরা। বর্তমানে আখ চাষের সেরাত্ব আমরা হারিয়েছি। এখন প্রতি বছর চিনির জন্য চেয়ে থাকতে হয় অন্য দেশের দিকে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে বাংলাদেশের সুগার মিল কর্পোরেশন চালু হয়। সে সময় দেশে ৭২টি চিনিকল ছিলো। যার মধ্যে ৫৯টি চিনিকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে কর্পোরেশনের অধীনে রয়েছে ১৫টি চিনিকল। যার মধ্যে ৬টি চিনিকল উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। তার মানে চিনি উৎপাদন চলবে মাত্র ৯টিতে। উৎপাদিত চিনি ১৭ কোটি মানুষের জন্য অতি সামান্য। এতে দেখা দিবে ঘাটতি এবং প্রতি বছর অন্য দেশ থেকে চিনি আমদানি করতে হবে। এতে আমাদের দেশের কষ্টার্জিত টাকা চলে যাবে অন্যদেশের হাতে।

আমাদের অর্থকরী ফসল পাট ও আখসহ আরো যে কৃষিজ উপাদান রয়েছে যেগুলোর উৎপাদন বাড়াতে হবে। যদি আমরা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে চাই। আখ ও পাট দেশের অর্থনীতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ফসল; যা আমরা হেলায় হারাচ্ছি। আখ সাধারণত উৎপাদিত হয়ে থাকে বালু মাটিতে এবং পাট উৎপাদিত হয় নদীকেন্দ্রিক অঞ্চলে। বালুময় মাটি ও নদী একত্রে আমরা পেয়ে থাকি চর অঞ্চলে। তাই দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে আমাদের আগে বাঁচাতে হবে চর অঞ্চলকে।

দেশে ৭০০টিরও বেশি নদী রয়েছে। এ সমস্ত নদীর বুকে জেগে ওঠে ছোট-বড় অসংখ্য চর। চর অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের ফল মাটি থাকে। যার কারণে সেখানে উৎপাদিত হয় হরেক রকমের ফসল। চরের মানুষ দিনরাত এক করে কাঠফাটা রোদে পুড়ে উৎপাদন করে এ সমস্ত ফসল। চর অঞ্চলে সাধারণত সারা বছর ধরে চলে ফসল উৎপাদনের কাজ। তাই বলা যায়, তারাই মূলত দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রধান চালিকাশক্তি। সেজন্য তাদের বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন। চর জেগে ওঠে নদীর বুকে এবং সেখানে উৎপাদিত হয় ফসল। ফসল মাড়াই করা শেষে সেগুলো বিক্রি করার সময় চরাঞ্চলের মানুষ পড়ে চরম ভোগান্তিতে। নদীতে নৌকা যোগে তাদের ফসল বাজারে আনতে হয় অক্লান্ত পরিশ্রম করে। কিন্তু তারা তাদের ন্যায্যমূল্য পায় না। যার কারণে কাটে না তাদের দুঃখ কষ্ট।

চর অঞ্চলে মানুষের ফসল উৎপাদন প্রধান প্রতিবন্ধকতা নদীকেন্দ্রিক জটিলতা। নদীর বুকে সামান্য চরে চলে তাদের ফসল উৎপাদনের কাজ। মাটির বুক চিরে মাঠে ফসলের সোনালি হাসি ফুটলেও হাসি ফোটে না কেবল চরের মানুষের মুখে। তাদের সব সময় সংকায় কাটতে হয়। এর বিশেষ কারণ নদী ভাঙন এবং বন্যা; যা বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। চরের মানুষ তাদের সবটুকু দিয়ে ফসল উৎপাদন করে কিন্তু নদী ভাঙন এবং বন্যা তাদের স্বপ্নে আঘাত হানে। নদী ভাঙনের ফলে যে কেবল তারা তাদের ফসল হারায় তাই নয়, তাদের হারাতে হয় ঘরবাড়িও। এই নদী ভাঙন রোধ করার জন্য প্রয়োজন যথাযথ ব্যবস্থা। নদীর পাড় বাঁধাই করা সম্ভব হলে চরাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তির এবং দুশ্চিন্তা কমবে।

এছাড়াও সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত চরের মানুষের ন্যূনতম শিক্ষার দিকে। কারণ যথাযথ শিক্ষার অভাবে তারা তাদের ফসলের পরিচর্যার ব্যাপারে কম অভিহিত। শিক্ষার হার বাড়লে তারা নিজেরাই নিজেদের উন্নত করতে পারবে তাদের অঞ্চলকে। এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে কৃষকের ন্যায্যমূল্য, নদী ভাঙন এবং উপযুক্ত শিক্ষার দিকে। এসবের করণেই চরাঞ্চলের মানুষ পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়াও কিছু কিছু অর্থকরী ফসল উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে ন্যায্যমূল্যের অভাবে। দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে চরাঞ্চলের বিকল্প নাই। আর সেজন্য দরকার চর অঞ্চলের উন্নয়ন এবং উন্নয়নের জন্য দরকার সরকারের বিশেষ দৃষ্টি।

[লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও চর উন্নয়ন

রোকাইয়া মাহজাবিন

সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১

প্রাচীনকালে মানব সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো নদীকে কেন্দ্র করে। এর প্রধান কারণ কৃষিকাজ। আদিম মানুষ যখন কৃষিকাজের ধারণা পেল তখন তার অনুভব করলো পানির। আর তখন থেকেই মানব সভ্যতা গড়ে উঠতে শুরু করল নদীকে কেন্দ্র করে। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মানব সভ্যতার প্রধান জীবিকা হলো কৃষিকাজ। কৃষিকাজ বাংলাদেশের মানুষের প্রধান জীবিকা। দেশের শতকরা ৭০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সাথে জড়িত। কৃষি বাংলার মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

কৃষিকাজ করে দেশের হাজার হাজার কৃষক তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম উজার করে উৎপাদন করে ধান, গম, পাট, তিল, তিসিসহ নানা রকম সবজি। ফসলের মাঠের সোনার ফসলে লেগে থাকে কৃষকের ভালোবাসা এবং দিনরাত একাকার করে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটানোর প্রতিচ্ছবি। কি বৃষ্টি, কি ঝড় ফসলের মাঠ তাদের সঙ্গী। একটি ঘরে আনার পর কৃষকের মনে আকতে থাকে আরেকটি ফসলের ছবি। এভাবেই তারা সারাবছর গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের জন্য ফসল উৎপাদন করে।

কৃষকের উৎপাদিত ফসল পাট আমাদের অর্থকরী ফসল। যাকে আমরা সোনালি আঁশ হিসেবেও চিনি। পাটের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত প্রতিটি অংশই আমরা ব্যবহার করতে পারি। পাট শাক অত্যন্ত উপকারী এবং উপাদেয়। কমবেশি সব মানুষই এটা পছন্দ করে। তেমনি করে পাটকাঠি প্রতিটি বাঙালি নারীর রান্নাঘরে নিত্যদিনের জ্বালানি। গ্রামগঞ্জে ঘরের বেড়া ও ছাউনিতে এটা ব্যবহার করা হয়। আধুনিক যুগে পাটকাঠির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় পারটেক্সের ফার্নিচার তৈরিতে। অপরদিকে যে জিনিসটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল পাটের আঁশ। পাটের আশের নানামুখী ব্যবহার রয়েছে যেমন-পাটের ব্যাগ, মোরা, ঘর সাজানোর উপাদান ইত্যাদি। পাটের তৈরি জিনিস পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই। পরিবেশ রক্ষায় পাট সন্দেহাতীতভাবে আমাদের অনেক বড় অর্জন। পাটের চাহিদা বিদেশে অনেক বেশি। তাই আমরা যদি পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে পাটের উৎপাদন বাড়াতে পারি তাহলে বাড়তি পাট বিদেশে রপ্তানি করে আমরা অর্জন করতে পারি বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে পাট উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে।

আমাদের দেশে কৃষকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিজ উপাদান হলো আখ। আখ কমবেশি আমাদের সবার কাছে পরিচিত। আখের রস সুপরিচিত এবং সুপেয় পানীয়। আখের তৈরি গুড় এবং চিনি না হলে আমাদের একদিনও যেন চলে না। আখ উৎপাদন করা হয় সাধারণত বালু মাটিতে। আমরা আখ উৎপাদনে সম্ভাবনাময় দেশ। অথচ প্রতি বছর অন্য দেশ থেকে বিষেশ করে ভারত থেকে আমদানি করি কোটি কোটি টাকার চিনি। এককালে আমরা নাকি চিনি উৎপাদনে ছিলাম সেরা। বর্তমানে আখ চাষের সেরাত্ব আমরা হারিয়েছি। এখন প্রতি বছর চিনির জন্য চেয়ে থাকতে হয় অন্য দেশের দিকে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে বাংলাদেশের সুগার মিল কর্পোরেশন চালু হয়। সে সময় দেশে ৭২টি চিনিকল ছিলো। যার মধ্যে ৫৯টি চিনিকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে কর্পোরেশনের অধীনে রয়েছে ১৫টি চিনিকল। যার মধ্যে ৬টি চিনিকল উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। তার মানে চিনি উৎপাদন চলবে মাত্র ৯টিতে। উৎপাদিত চিনি ১৭ কোটি মানুষের জন্য অতি সামান্য। এতে দেখা দিবে ঘাটতি এবং প্রতি বছর অন্য দেশ থেকে চিনি আমদানি করতে হবে। এতে আমাদের দেশের কষ্টার্জিত টাকা চলে যাবে অন্যদেশের হাতে।

আমাদের অর্থকরী ফসল পাট ও আখসহ আরো যে কৃষিজ উপাদান রয়েছে যেগুলোর উৎপাদন বাড়াতে হবে। যদি আমরা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে চাই। আখ ও পাট দেশের অর্থনীতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ফসল; যা আমরা হেলায় হারাচ্ছি। আখ সাধারণত উৎপাদিত হয়ে থাকে বালু মাটিতে এবং পাট উৎপাদিত হয় নদীকেন্দ্রিক অঞ্চলে। বালুময় মাটি ও নদী একত্রে আমরা পেয়ে থাকি চর অঞ্চলে। তাই দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে আমাদের আগে বাঁচাতে হবে চর অঞ্চলকে।

দেশে ৭০০টিরও বেশি নদী রয়েছে। এ সমস্ত নদীর বুকে জেগে ওঠে ছোট-বড় অসংখ্য চর। চর অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের ফল মাটি থাকে। যার কারণে সেখানে উৎপাদিত হয় হরেক রকমের ফসল। চরের মানুষ দিনরাত এক করে কাঠফাটা রোদে পুড়ে উৎপাদন করে এ সমস্ত ফসল। চর অঞ্চলে সাধারণত সারা বছর ধরে চলে ফসল উৎপাদনের কাজ। তাই বলা যায়, তারাই মূলত দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রধান চালিকাশক্তি। সেজন্য তাদের বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন। চর জেগে ওঠে নদীর বুকে এবং সেখানে উৎপাদিত হয় ফসল। ফসল মাড়াই করা শেষে সেগুলো বিক্রি করার সময় চরাঞ্চলের মানুষ পড়ে চরম ভোগান্তিতে। নদীতে নৌকা যোগে তাদের ফসল বাজারে আনতে হয় অক্লান্ত পরিশ্রম করে। কিন্তু তারা তাদের ন্যায্যমূল্য পায় না। যার কারণে কাটে না তাদের দুঃখ কষ্ট।

চর অঞ্চলে মানুষের ফসল উৎপাদন প্রধান প্রতিবন্ধকতা নদীকেন্দ্রিক জটিলতা। নদীর বুকে সামান্য চরে চলে তাদের ফসল উৎপাদনের কাজ। মাটির বুক চিরে মাঠে ফসলের সোনালি হাসি ফুটলেও হাসি ফোটে না কেবল চরের মানুষের মুখে। তাদের সব সময় সংকায় কাটতে হয়। এর বিশেষ কারণ নদী ভাঙন এবং বন্যা; যা বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। চরের মানুষ তাদের সবটুকু দিয়ে ফসল উৎপাদন করে কিন্তু নদী ভাঙন এবং বন্যা তাদের স্বপ্নে আঘাত হানে। নদী ভাঙনের ফলে যে কেবল তারা তাদের ফসল হারায় তাই নয়, তাদের হারাতে হয় ঘরবাড়িও। এই নদী ভাঙন রোধ করার জন্য প্রয়োজন যথাযথ ব্যবস্থা। নদীর পাড় বাঁধাই করা সম্ভব হলে চরাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তির এবং দুশ্চিন্তা কমবে।

এছাড়াও সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত চরের মানুষের ন্যূনতম শিক্ষার দিকে। কারণ যথাযথ শিক্ষার অভাবে তারা তাদের ফসলের পরিচর্যার ব্যাপারে কম অভিহিত। শিক্ষার হার বাড়লে তারা নিজেরাই নিজেদের উন্নত করতে পারবে তাদের অঞ্চলকে। এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে কৃষকের ন্যায্যমূল্য, নদী ভাঙন এবং উপযুক্ত শিক্ষার দিকে। এসবের করণেই চরাঞ্চলের মানুষ পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়াও কিছু কিছু অর্থকরী ফসল উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে ন্যায্যমূল্যের অভাবে। দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে চরাঞ্চলের বিকল্প নাই। আর সেজন্য দরকার চর অঞ্চলের উন্নয়ন এবং উন্নয়নের জন্য দরকার সরকারের বিশেষ দৃষ্টি।

[লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top