alt

মুক্ত আলোচনা

কুমুদিনীর আরও একটি স্বপ্নযাত্রা

জয়ন্তী রায়

: রোববার, ০৯ মে ২০২১

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লিমিটেডের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যান্সার রিসার্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এর সার্বিক সফলতা কামনা করেছেন। এ উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে কুমুদিনী কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জে আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। গণ্যমান্য অতিথিদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক শ্রীমতী সাহা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা।

বাংলাদেশের মানুষকে স্বল্প খরচে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা প্রদান ও উচ্চতর চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা এবং দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারের ওপর গবেষণার সুযোগ ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতেই নতুন এই প্রতিষ্ঠান গড়তে যাচ্ছে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, রায় বাহাদুর রণদা প্রসাদ সাহার স্বপ্নের ফসল কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম বেসরকারি জনকল্যাণকর সংস্থা। রণদা প্রসাদ সাহা নিজের চেষ্টায় বড় হয়েছিলেন এবং শিক্ষা বিস্তার ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ‘দানবীর’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কিন্তু অল্প বয়সে তিনি চিকিৎসার অভাবে তার মাকে হারিয়েছিলেন। তাই পরবর্তী সময়ে মায়ের স্মরণে জীবনে অর্জিত সব পুঁজি বিনিয়োগ করে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এই ট্রাস্ট দেশের মানুষের, বিশেষ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের শিক্ষা এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে : কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমুদিনী ফার্মা লিমিটেড, কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফট, কুমুদিনী পোর্টস লিমিটেড এবং কুমুদিনী মেডিকেল টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। এর সঙ্গে নতুন সংযোজন কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যান্সার রিসার্চ সংক্ষেপে কেআইআইএমএস কেয়ার।

১৮৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন রণদা প্রসাদ সাহা। সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্ম নেননি। শৈশবেই বাড়ি ছেড়ে কলকাতা গিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু করেন। তার জীবনটা রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। স্বদেশী আন্দোলনে জেল খেটেছেন আবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করে যোদ্ধার জীবনও বেছে নিয়েছেন। যুদ্ধ শেষে কয়লা, পাট ও নৌপরিবহনসহ নানা ব্যবসায়ে অভূতপূর্ব সফলতা লাভ করলে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ধনবান হয়ে তিনি ভোগের জীবন বেছে না নিয়ে ব্রতী হন জনকল্যাণে। ১৯৩৮ সালে ঠাকুরমার নামে শেভাসন্দরী ডিসপেনসারি এবং মায়ের নামে কুমুদিনী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবসেবার অধ্যায় শুরু করেন। বাংলাদেশে নারী শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমস, টাঙ্গাইলে কুমুদিনী মহিলা কলেজ এবং মানিকগঞ্জে দেবন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষানুরাগী হিসেবে রণদা প্রসাদ সাহা পরিচিতি পেয়েছেন। ১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘রায় বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত করেন। আরপি সাহা তার জীবনকালে আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ব্রিটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকের সঙ্গেই রণদা প্রসাদ সাহার ব্যক্তিগত পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি মানবসেবার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগগতি ও সমৃদ্ধির বিষয়টিকে সব সময় গুরুত্ব দিয়েছেন।

২০১৮ সালের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন একটি উপলক্ষে মির্জাপুরে কুমুদিনীতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি আলাপচারিতায় উল্লেখ করেছিলেন, রণদা প্রসাদ সাহার কর্মকাণ্ড এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এতটাই অনুরক্ত ছিলেন যে, তিনি তার বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে ভারতেশ্বরী হোমসে ভর্তি করার কথাও ভেবেছিলেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশীয় সহচরদের সহযোগিতায় রণদা প্রসাদ সাহা এবং তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসেননি। রণদা প্রসাদ সাহার পরবর্তী প্রজন্মও তার আদর্শ ও দীক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষের কল্যাণে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পরিচালিত প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ করে চলেছে। কুমুদিনী যতটা না ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তারচেয়ে বেশি একটি মানুষের কল্যাণে নিবেদিত একটি আদর্শের নাম।

ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও কুমুদিনীর কীর্তির কথা উঠে এসেছে। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শ্রীমতী সাহার নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, শ্রীমতী সাহা বুকে পাথর বেধে এই প্রতিষ্ঠানকে আগলে রেখেছেন। অত্যন্ত অল্প বয়সে স্বামী (ভবানী সাহা) এবং শ্বশুরকে (আর পি সাহা) হারিয়ে শিশুপুত্র রাজীবকে নিয়ে দিশেহারা না হয়ে শক্ত মনের পরিচয় দিয়ে কুমুদিনীকে শুধু রক্ষা নয় একে বিস্তৃত করছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন এ কথা বলছিলেন তখন তার চোখ যেমন জল ছলছল হয়েছে তেমনি শ্রীমতী সাহাও চোখের জল সামলাতে পারেননি। শেখ হাসিনা পঁচাত্তরে পিতা-মাতা ভাই ভ্রাতিবধূসহ স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে নিরলস কাজ করছেন। শ্রীমতী সাহাও মুক্তিযুদ্ধে স্বামী ও শ্বশুরকে হারিয়ে মানবসেবার কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেননি, নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল হতে দেননি বরং মান ও সংখ্যা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হয়েছেন। দুই দুঃখী অথচ আত্মপ্রত্যয়ী নারীর চোখের জল অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত অতিথিদেরও আবেগআপ্লুত করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন, তার সরকারের আমলে গত ১২ বছরে দেশে নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে। নার্সের চাহিদা মেটাতে নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের বিনামূল্যে ৩০ রকমের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। সরকারের ধারাবাহিক চেষ্টায় মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর ৬ মাসে পৌঁছেছে। করোনালে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানুষের ভালো করাই তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য। পৃথিবীর অনেক দেশ করোনার টিকা সংগ্রহ করতে না পারলেও বাংলাদেশ পেরেছে। সরকারের আগাম উদ্যোগ ও পরিকল্পনার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। কুমুদিনীর নতুন প্রতিষ্ঠান সরকারের সাফল্যের সহযাত্রী হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কুমুদিনী নার্সিং ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী, কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে করোনার টিকা গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতায় শ্রীমতী সাহা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেছেন, শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যান্সার রিসার্চ বহুমুখী ভূমিকা পালন করবে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক দর্শন হবে মানবকল্যাণমূলক নানা ধরনের কার্যক্রম, বিস্তৃত উদ্যোগ, সম্পদের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করে শিক্ষাখাত, চিকিৎসাখাত এবং গবেষণা ও জাতীয় অর্থনীতিতে উন্নয়নমূলক ভূমিকা রাখা।

কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা তার বক্তব্যে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৪৭ বর্গফুট নিজস্ব জমিতে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেআইআইএমএস কেয়ার। চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা প্রদান ও গবেষণার লক্ষ্যে নির্মিতব্য এই টারশিয়ারি এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট সাধারণ হাসপাতালে ইনডোর, আউটডোর ও ইমার্জেন্সি বিভাগসহ থাকবে ল্যাবরেটরি, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা পাবে। ক্যান্সারের রোগ নির্ণয়, উন্নত চিকিৎসা এবং উপশমের জন্য থাকবে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত বিভাগ এবং উন্নতমানের প্রযুক্তি সম্বলিত যন্ত্র সরঞ্জামাদি। এছাড়া আরও থাকবে চিকিৎসাবিদ্যার বিভিন্ন বিভাগে গবেষণার জন্য উন্নত প্রযুক্তির গবেষণা সামগ্রী সম্বলিত একটি গবেষণা কেন্দ্র।

একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে রোগী প্রতি একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসার গড় ব্যয় বার্ষিক ১৪ হাজার ৬১৮ টাকা। অথচ কুমুদিনী হাসপাতালে একই চিকিৎসার জন্য মাথাপিছু বার্ষিক গড় খরচ ৬ হাজার ৬৮৫ টাকা। অর্থাৎ কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে জনপ্রতি রোগীর ৭ হাজার ৯৩৩ টাকা সাশ্রয় হয়। কেআইআইএমএস কেয়ার-এর চিকিৎসার খরচ একই প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত হবে বলে এটা বলা যায় যে ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৬০০ কোটি টাকা বছরে সাশ্রয় সম্ভব হবে। তাছাড়া বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসাসেবা গ্রহণের জন্য বিদেশ গমনের প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। এভাবেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করা সম্ভব হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই পড়বে।

মানবতার কল্যাণে কুমুদিনীর এই স্বপ্নযাত্রার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

কুমুদিনীর আরও একটি স্বপ্নযাত্রা

জয়ন্তী রায়

রোববার, ০৯ মে ২০২১

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লিমিটেডের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যান্সার রিসার্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এর সার্বিক সফলতা কামনা করেছেন। এ উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে কুমুদিনী কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জে আমার উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। গণ্যমান্য অতিথিদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক শ্রীমতী সাহা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা।

বাংলাদেশের মানুষকে স্বল্প খরচে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা প্রদান ও উচ্চতর চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা এবং দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারের ওপর গবেষণার সুযোগ ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতেই নতুন এই প্রতিষ্ঠান গড়তে যাচ্ছে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, রায় বাহাদুর রণদা প্রসাদ সাহার স্বপ্নের ফসল কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম বেসরকারি জনকল্যাণকর সংস্থা। রণদা প্রসাদ সাহা নিজের চেষ্টায় বড় হয়েছিলেন এবং শিক্ষা বিস্তার ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ‘দানবীর’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কিন্তু অল্প বয়সে তিনি চিকিৎসার অভাবে তার মাকে হারিয়েছিলেন। তাই পরবর্তী সময়ে মায়ের স্মরণে জীবনে অর্জিত সব পুঁজি বিনিয়োগ করে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এই ট্রাস্ট দেশের মানুষের, বিশেষ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের শিক্ষা এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে : কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমুদিনী ফার্মা লিমিটেড, কুমুদিনী হ্যান্ডিক্রাফট, কুমুদিনী পোর্টস লিমিটেড এবং কুমুদিনী মেডিকেল টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। এর সঙ্গে নতুন সংযোজন কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যান্সার রিসার্চ সংক্ষেপে কেআইআইএমএস কেয়ার।

১৮৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন রণদা প্রসাদ সাহা। সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্ম নেননি। শৈশবেই বাড়ি ছেড়ে কলকাতা গিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু করেন। তার জীবনটা রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। স্বদেশী আন্দোলনে জেল খেটেছেন আবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করে যোদ্ধার জীবনও বেছে নিয়েছেন। যুদ্ধ শেষে কয়লা, পাট ও নৌপরিবহনসহ নানা ব্যবসায়ে অভূতপূর্ব সফলতা লাভ করলে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ধনবান হয়ে তিনি ভোগের জীবন বেছে না নিয়ে ব্রতী হন জনকল্যাণে। ১৯৩৮ সালে ঠাকুরমার নামে শেভাসন্দরী ডিসপেনসারি এবং মায়ের নামে কুমুদিনী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবসেবার অধ্যায় শুরু করেন। বাংলাদেশে নারী শিক্ষার অনন্য প্রতিষ্ঠান মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমস, টাঙ্গাইলে কুমুদিনী মহিলা কলেজ এবং মানিকগঞ্জে দেবন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষানুরাগী হিসেবে রণদা প্রসাদ সাহা পরিচিতি পেয়েছেন। ১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘রায় বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত করেন। আরপি সাহা তার জীবনকালে আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ব্রিটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকের সঙ্গেই রণদা প্রসাদ সাহার ব্যক্তিগত পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি মানবসেবার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগগতি ও সমৃদ্ধির বিষয়টিকে সব সময় গুরুত্ব দিয়েছেন।

২০১৮ সালের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন একটি উপলক্ষে মির্জাপুরে কুমুদিনীতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি আলাপচারিতায় উল্লেখ করেছিলেন, রণদা প্রসাদ সাহার কর্মকাণ্ড এবং তার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এতটাই অনুরক্ত ছিলেন যে, তিনি তার বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে ভারতেশ্বরী হোমসে ভর্তি করার কথাও ভেবেছিলেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশীয় সহচরদের সহযোগিতায় রণদা প্রসাদ সাহা এবং তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসেননি। রণদা প্রসাদ সাহার পরবর্তী প্রজন্মও তার আদর্শ ও দীক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষের কল্যাণে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পরিচালিত প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ করে চলেছে। কুমুদিনী যতটা না ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তারচেয়ে বেশি একটি মানুষের কল্যাণে নিবেদিত একটি আদর্শের নাম।

ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও কুমুদিনীর কীর্তির কথা উঠে এসেছে। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শ্রীমতী সাহার নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, শ্রীমতী সাহা বুকে পাথর বেধে এই প্রতিষ্ঠানকে আগলে রেখেছেন। অত্যন্ত অল্প বয়সে স্বামী (ভবানী সাহা) এবং শ্বশুরকে (আর পি সাহা) হারিয়ে শিশুপুত্র রাজীবকে নিয়ে দিশেহারা না হয়ে শক্ত মনের পরিচয় দিয়ে কুমুদিনীকে শুধু রক্ষা নয় একে বিস্তৃত করছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন এ কথা বলছিলেন তখন তার চোখ যেমন জল ছলছল হয়েছে তেমনি শ্রীমতী সাহাও চোখের জল সামলাতে পারেননি। শেখ হাসিনা পঁচাত্তরে পিতা-মাতা ভাই ভ্রাতিবধূসহ স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে নিরলস কাজ করছেন। শ্রীমতী সাহাও মুক্তিযুদ্ধে স্বামী ও শ্বশুরকে হারিয়ে মানবসেবার কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেননি, নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল হতে দেননি বরং মান ও সংখ্যা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হয়েছেন। দুই দুঃখী অথচ আত্মপ্রত্যয়ী নারীর চোখের জল অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত অতিথিদেরও আবেগআপ্লুত করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন, তার সরকারের আমলে গত ১২ বছরে দেশে নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে। নার্সের চাহিদা মেটাতে নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের বিনামূল্যে ৩০ রকমের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। সরকারের ধারাবাহিক চেষ্টায় মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর ৬ মাসে পৌঁছেছে। করোনালে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানুষের ভালো করাই তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য। পৃথিবীর অনেক দেশ করোনার টিকা সংগ্রহ করতে না পারলেও বাংলাদেশ পেরেছে। সরকারের আগাম উদ্যোগ ও পরিকল্পনার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। কুমুদিনীর নতুন প্রতিষ্ঠান সরকারের সাফল্যের সহযাত্রী হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কুমুদিনী নার্সিং ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী, কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে করোনার টিকা গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতায় শ্রীমতী সাহা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেছেন, শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস অ্যান্ড ক্যান্সার রিসার্চ বহুমুখী ভূমিকা পালন করবে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক দর্শন হবে মানবকল্যাণমূলক নানা ধরনের কার্যক্রম, বিস্তৃত উদ্যোগ, সম্পদের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করে শিক্ষাখাত, চিকিৎসাখাত এবং গবেষণা ও জাতীয় অর্থনীতিতে উন্নয়নমূলক ভূমিকা রাখা।

কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা তার বক্তব্যে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৪৭ বর্গফুট নিজস্ব জমিতে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেআইআইএমএস কেয়ার। চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা প্রদান ও গবেষণার লক্ষ্যে নির্মিতব্য এই টারশিয়ারি এবং বিশেষায়িত হাসপাতালে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট সাধারণ হাসপাতালে ইনডোর, আউটডোর ও ইমার্জেন্সি বিভাগসহ থাকবে ল্যাবরেটরি, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা পাবে। ক্যান্সারের রোগ নির্ণয়, উন্নত চিকিৎসা এবং উপশমের জন্য থাকবে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বিশেষায়িত বিভাগ এবং উন্নতমানের প্রযুক্তি সম্বলিত যন্ত্র সরঞ্জামাদি। এছাড়া আরও থাকবে চিকিৎসাবিদ্যার বিভিন্ন বিভাগে গবেষণার জন্য উন্নত প্রযুক্তির গবেষণা সামগ্রী সম্বলিত একটি গবেষণা কেন্দ্র।

একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে রোগী প্রতি একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসার গড় ব্যয় বার্ষিক ১৪ হাজার ৬১৮ টাকা। অথচ কুমুদিনী হাসপাতালে একই চিকিৎসার জন্য মাথাপিছু বার্ষিক গড় খরচ ৬ হাজার ৬৮৫ টাকা। অর্থাৎ কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে জনপ্রতি রোগীর ৭ হাজার ৯৩৩ টাকা সাশ্রয় হয়। কেআইআইএমএস কেয়ার-এর চিকিৎসার খরচ একই প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত হবে বলে এটা বলা যায় যে ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৬০০ কোটি টাকা বছরে সাশ্রয় সম্ভব হবে। তাছাড়া বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসাসেবা গ্রহণের জন্য বিদেশ গমনের প্রয়োজন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। এভাবেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করা সম্ভব হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই পড়বে।

মানবতার কল্যাণে কুমুদিনীর এই স্বপ্নযাত্রার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।

back to top